আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৪ #Arshi_Ayat

0
33

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৪
#Arshi_Ayat

হঠাৎ করেই ইনশিরা ইনানের গলা চেপে ধরলো।তারপর আবার ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে বসলো।ইনান সাহস জুটিয়ে বলল

“ইনশু কাদিস না প্লিজ।ক্ষমা করে দে।”

“তোকে আমি জীবনেও ক্ষমা করবো না।এই মুহুর্তে গাড়ি ঘুরা আর বাসায় দিয়ে আয় আমাকে।”

“সেটা সম্ভব না।আমরা পনেরোদিন পরই আবার ঢাকায় ফিরবো।”

“আমি তোর সাথে পনেরো দিন কেনো এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না।”

“থাকতে হবে তোকে।গত চার বছরে তো তোকে ভালোবাসা বোঝাতে পারি নি তবে এই পনেরো দিনে বুঝিয়ে দেবো।”

“আমি তোকে কখনো ভালোবাসবো না।আর আয়াশ বন্ধু ভাবলে গাড়ি ঘোরা আমাকে বাসায় দিয়ে আয়।”

“না রে একবার যখন চলে এসেছি এতোদূর আর ফেরা সম্ভব নয়।” (আয়াশ)

“ইনশু তোকে একটা কথা বলি শোন সবদোষ তুই একা ইনানকে দিতে পারবি না। তোরও দোষ আছে।চারবছরে কি একবারও মনে হয় নি তোর ইনান তোকে ভালোবাসে?ছেলেটা তোর জন্য কতোকিছু করলো আর তুই কিছুই ভাবলি না একেবারে উড়িয়ে দিলি।তোর ইনানের সম্পর্কে ভাবা উচিত ছিলো।আর ও ছেলে হিসেবে খারাপ না তো!!তাহলে কেনো তুই ওকে ভালোবাসতে পারবি না?যা হয়েছে সেটা মেনে নে ইনশু।ইনানকে আর কষ্ট দিস না।”

“তাহলে তুই কেনো মানছিস না আয়াশকে?” (ইনশিরা)

এই কথায় যেনো ওদের তিনজনের উপরেই বাজ পড়লো।আয়াশের মুখ কালো হয়ে গেলো।আদ্রি বিস্ফোরিত চোখে ইনশিরার দিকে তাকিয়ে রইলো।যেনো কথাটা ঠিক হজম হচ্ছে না।আদ্রি ভ্রুকুচকেই বলল

“মানে বুঝলাম না।”

ইনশিরা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল

“এখনতো বুঝবি ই না।কেনো আয়াশও তো তোকে ভালোবাসে তুই কেনো ওর ভালোবাসা বুঝতে পারছিস না বল?”

আদ্রি কিছু বলতে পারলো না।খুব বড় একটা শকের মধ্যে আছে ও।আর আয়াশ যেনো খুব বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছে তাই আদ্রির দিকে তাকাচ্ছে না।আদ্রি কোনো উত্তর না পেয়ে ইনশিরা আবার বলল

“হ্যাঁ এখন তোর কাছে কোনো উত্তর নেই আমি জানি।তোর মতো আমিও বুঝতে পারি নি।এখন তোর মনে যা চলছে আমার মনে এর চেয়েও হাজার গুণ চলছে।”

ইনান ইনশিরার হাত ধরে বলল

“ইনশু ওদেরটা ওরা দেখবে। ওদের কথা এখানে এলো কেনো?আর তুই ঘুমিয়ে পড় তোর শরীর খারাপ করবে এমনিতেই ঘুম হয় নি তোর।”

“আমার সর্বনাশ করে এখন ঘুমাতে বলছিস?আমি এখানে ঘুমাবো আর আমার বাবা মা অপমানিত হবে?”

“এগুলো বলে লাভ নেই।এখন কিচ্ছু পাল্টাবে না।আর আমি তোকে কথা দিচ্ছি যদি এই পনেরোদিনে তুই আমাকে ভালো না বাসতে পারিস তাহলে আমি আর কখনো তোর সামনে দাড়াবো না।”

ইনশিরা কোনো জবাব দিলো না।গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।চোখ দিয়ে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে।থাম বার নাম নেই।ইনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো।এদিকে আদ্রির মনে উথাল পাথাল ঝড় বইছে।একটু আগে কি শুনলো সে?এটা কি সম্ভব?আদ্রি আয়াশের দিকে তাকালো।আয়াশ কিন্তু একটু পরপর চোরা চোখে আদ্রিকে দেখছিলো।আদ্রির চোখে চোখ পড়তেই তাড়াতাড়ি সামনে তাকালো যেনো আদ্রির দিকে তাকানো কোনো অপরাধ।আদ্রি মনে মনে ভাবছে আচ্ছা আমি কেনো বুঝতে পারি নি?আমি কি আয়াশকে ভালোবাসি?না কি বাসি না!আয়াশ কি শুধুই বন্ধু আমার?নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু!!আদ্রি মনে পড়ে গেলো ছয়মাস আগের কথা।

ওদের ডিপার্টমেন্টে রিয়া নামের একটা মেয়ে আছে ওই মেয়েটার সাথে আয়াশের তখন খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো কারণ আয়াশ ওর সব প্র্যাকটিক্যাল ওকে দিয়ে করাতো।প্র্যাকটিক্যাল করাতো সেটা বিষয় না।বিষয় হলো মেয়েটা আয়াশকে পছন্দ করতো তাই আয়াশের সাথে সব সময় আঠার মতো লেগে থাকতো ওর জ্বালায় আয়াশ ঠিক মতো আড্ডাও দিতে পারতো না।একদিন আয়াশ আর রিয়া হাটছিলো একসাথে আচমকা আদ্রি এসে রিয়াকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।রিয়া পড়ে গেলো এবং রেগে বলল

“হাউ ডেয়ার ইউ?তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেনো?”

“ছেলেদের গায়ে পড়ে কথা বলা কোন ধরনের স্বভাব?”

“হোয়াট?”

“বুঝিস না?তুই আয়াশের সাথে এতো ঘেষাঘেষি করে কথা বলিস কেনো?”

“কোথায় ঘেষাঘেষি করলাম?আর এটা তো আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার তোমার কি?”

“তোর ব্যাক্তিগত ব্যাপার নিয়া তুই থাক কিন্তু আয়াশের সাথে আর একদিনও যাতে না দেখি?”

“তুমি বলার কে?তুমি কি ওর গার্লফ্রেন্ড?”

রিয়ার কথা শুনে রাগের বসে আদ্রি বলেই ফেললো

“হ্যাঁ ও আমার বয়ফ্রেন্ড।আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আর একদিন দেখলো মেরে হাড্ডি গুড়ো করে ফেলবো।”

আয়াশ সেখানে নিরব দর্শকের মতো দাড়িয়ে ছিলো তবে আদ্রি শেষের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে ফেললো।আদ্রি আয়াশের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল

“আরে রিয়া মাইয়াটারে সহ্য হয় না।গায়েপড়া।আর তুই লাস্টের কথায় মাইন্ড করিস না।এটা তো আমি ওর থেকে বাচার জন্য বলছি।”

ইনানের ডাকে আদ্রির ধ্যান ভাঙ্গলো।

“কি রে।কই হারাইছিস?”

“না না এমনি কিছু বলবি?”

“কতক্ষণ ধরে ডাকছি কথাই বলছিস না।আচ্ছা তুই তোর সিম অফ করে দে।আয়াশেরটা ও অফ করছে।আমারটাও করছি।”

আদ্রি নিজের ফোন অফ করলো।তারপর আবারও চুপ করে বসে আছে।গাড়িতে এখন নিরব পরিবেশ।এমন কখনো হয় নি ওরা চারজন একসাথে কিন্তু কোনো কথা হবে না।সবসময় বকবক লেগেই থাকতো কিন্তু আজ উল্টো কেউ কোনো কথা বলছে না।বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়তো নতুনরুপ লাভ করবো নয়তো শেষ হয়ে যাবে।

সিলেট পৌঁছুতে দুপুর লেগে গেলো।সিলেটের একটা হোটেলে উঠলো সবাই।ইনান এই হোটেলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখেছিলো।দুইটা রুম ই ছিলো।একটাতে ইনান আর আয়াশ আরেকটাকে আদ্রি আর ইনশিরা থাকবে।রিসেপশন থেকে রুমের চাবি নিয়ে সবাই রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে লাগেজ বেডের উপর রেখে আদ্রি বলল

“ইনশু শাওয়ার নিয়ে নে।তোর তো ড্রেস নেই।তুই আমার ড্রেস নিতে পারিস।”

ইনশিরা কিচ্ছু বলল না।দম মেরে বসে রইলো।আদ্রি গিয়ে ওর গা ঘেষে বসে বলল

“বইন প্লিজ মাফ করে দে।এভাবে চুপ করে থাকিস না।”

“……..”

“এখন কি তোর পা ধরতে হবে?”

“……..”

“বুঝলাম তোর পা ধরা ছাড়া উপায় নেই।”

এটা বলেই আদ্রি নিচে ঝুকতে নিলেই ইনশিরা ওকে তুলে বুকে জড়িয়ে নিলো।আর কাদতে শুরু করলো।আদ্রি মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

“কাদিস না ইনশু।আল্লাহ ভালোর জন্যই সবকিছু করে হয়তো তোর এতে ভালো আছে।”

ইনশিরা কিছুই বলল না শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।এদিকে আয়াশ ইনানের কাঁধে হাত রেখে বলল

“মন খারাপ করিস না দোস্ত।ও তোকে ভালোবাসবে দেখিস।”

“না বাসলে?”

“নেগেটিভ কথা বলিস না।অবশ্যই ভালোবাসবে।কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে আদ্রি কে নিয়ে সেই তখন থেকে একটা কথাও বলল না।আমি ওকে মুখ দেখাবো কেমনে?”

“ধূর শালা তোর কি রেপ হইছে যে মুখ দেখাইতে পারবি না।ও কথাটা শুনে শক খাইছে তাই কথা বলে নাই।ওরে সময় দে।ও নিজেই কথা বলবে তোর সাথে।”

“হুম দেখি কি করে।এখন ফ্রেশ হ।তারপর খেতে যেতে হবে সাথে ওই দুইজনকে নিয়ে।যারা মুখে আলু দিয়ে রেখেছে।”

“সিরিয়াসলি দোস্ত মেয়েরা এমন কেনো কিছু হলেই মুখে আলু ঢুকিয়ে রাখে।”

“এটা জন্মগত স্বভাব।”

ইনান হাসতে হাসতে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।আয়াশও হাসছে।

এদিকে ইনশিরার কান্না থামছে না।আদ্রি বলল

“ইনশু বইন প্লিজ আর কাদিস না।যা শাওয়ার নিয়ে আয়।তারপর খেতে যেতে হবে।”

“তুই যা আমার কিচ্ছু ভালে লাগছে না।”

“লাগবে যা তুই।”

একপ্রকার জোর করেই ইনশিরাকে শাওয়ার নিতে পাঠালো আদ্রি।জামা কাপড় ভাজ করতে করতে আদ্রি ভাবছে আয়াশকে নিয়ে।আদ্রি মনে হচ্ছে ও আয়াশকে ভালোবাসে না।ও কি এটা আয়াশকে বলে দিবে।আচ্ছা এটা বললে কি আয়াশ কষ্ট পাবে?নাকি ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হবে?আর যদি আয়াশের খুশির জন্য আদ্রি সম্পর্কে যায় তাহলেতো সে শান্তি পাবে না।যে সম্পর্কে মন নেই সেটা আদৌ শান্তি কি দিতে পারে?আদ্রি কি করবে এখন?আয়াশকে না ই বা বলবে কিভাবে?কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।এটা কি বন্ধুত্বে কাটা হয়ে দাড়াবে?

ঝর্ণার পানি ফোটায় ফোঁটায় শরীর বেয়ে পড়ছে ইনশিরার গা বেয়ে।সাথে চোখের পানিও।কি থেকে কি হলো।মরে যেতে ইচ্ছে করছে ইনশিরার।ইনান এটা কিভাবে করলো?ইনশিরা কিছুতেই মানতে পারছে না।আচ্ছা যার জন্য একবার ঘৃণা জন্মে যায় তার জন্য কি কখনো ভালোবাসা জন্মে? সারাজীবন কি ঘৃণাই থেকে যায় নাকি কখনো ভালোবাসার রঙ ও লাগে।আজ চারজনের মনের অবস্থা চার রকম।কেউ বুঝতে পারছে না কারো মনের অবস্থা।কি চলছে তাদের ভিতর!আদৌ কি এই পনেরোদিনে ইনশিরা ভালোবাসতে পারবে ইনান কে!!আদ্রি কি আয়াশকে মানা করে দিবে।নাকি এই পনেরোদিনে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নতুন রুপ লাভ করবে।

চলবে…..🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here