#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat
ইনশিরা মোটামুটি লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে আদ্রির নীল রঙের একটা থ্রি পিছ পরেছে।তারপর আদ্রি শাওয়ার নিতে গেলো।এদিকে ইনান আর আয়াশ দুজনেরই গোসল শেষ।ইনান চুল ঠিক করতে করতে বলল
“দোস্ত এখন বাইরে গিয়ে খাবো তারপর হোটেলে এসে ঘুম দেবো কালকে রাত থেকে ঠিক করে ঘুম হয় নি।”
“হুম আমারও।এইজন্যই মাথা ব্যাথা করছে।”
“আদ্রির সাথে কথা হইছিলো?”
“না ওই কথা শোনার পর আর কথাই বলে নাই।”
“মামা মাইয়ারা এমনি।দেখিস তোরে না করে দিবে।”
“না করে দিলে কি করমু?”
“জোর করবি বিরক্ত করবি দেখবি কাজ হয়ে গেছে।”
“দোস্ত জোর করেতো ভালোবাসা হয় না।”
“ধূর শালা, কবি বলেছে বিরক্ত না করলে নাকি মেয়েরা প্রেমে পড়ে না।”
“তুই তো আদ্রিরে চিনিসই। এমন করলে উল্টো হাতে চারটা থাপ্পড় দিবে।”
“থাপ্পড় খাইতে পারবা না আবার আসছো প্রেম করতে শখ কতো।থাপ্পড়ের ভয় করলে আমি ইনশুরে নিয়ে পালাইতাম না।আজকে ওর বিয়ে দেখতাম দাড়াইয়া।আরে গাড়িতে থাকতেইতো একটা খাইছি।উফফ জ্বলে গেছে।”
আয়াশ হেসে বলল
“হ গুন্ডা টাইপ মাইয়া।”
ইনান ঠোঁট বাকা করে বলল
“তোমারটাও কম যায় না।”
এদিকে আদ্রি চুল মুছতে মুছতে বলল
“ইনশু চল খেতে হবে কালকে রাত থেকে কিচ্ছু খাস নাই।ইভেন আজকে সকালেও খাস নাই।এখন খেতে হবে।”
“আমার ভাল্লাগছে না।তোরা খেয়ে আয়।”
“এমন বললে হবে না প্লিজ আয় না।দেখ তুই তো ইনানের সাথে রাগ করে আছিস।খাবারের সাথে তো আর না।তো খেতে সমস্যা কোথায়?”
ইনশিরা চিল্লিয়ে বলল
“যা এখান থেকে।”
শত জোরাজুরির পরও আদ্রি ইনশিরাকে রাজি করাতে পারলো না।উদাস মুখে রুম থেকে বের হয়ে দেখে আয়াশ আর ইনান দুজনে একদিকেই আসছে।আয়াশকে দেখে কেমন জেনো অস্থির লাগছে আদ্রির।ইনান এসেই আদ্রিকে জিগ্যেস করল
“কিরে ইনশু কই?”
“ও নাকি খাবে না।”
“কিহ!!সকালেও তো খায় নাই।এই মেয়েটাকে যে কি করতে ইচ্ছা করে।উফফ!!”
“আমি অনেক জোরাজুরি করছি কিন্তু আসছে না।”
“আচ্ছা তোরা দাড়া আমি ওকে নিয়ে আসছি।”
এটা বলেই ইনান রুমে চলে গেলো।আয়াশ আর আদ্রি দাড়িয়ে আছে রুমের বাইরে।কারো মুখে কোনো কথা নাই।দুজনেই নার্ভাস ফিল করছে।এমন কখনো হয় নি আদ্রি আয়াশ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবে।ওরা একসাথে থাকলে সবসময় বকবক করবেই।কিন্তু আজ ব্যাতিক্রম।এদিকে ইনান ঘরে এসে দেখে ইনশিরা শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।কিন্তু চোখের পাতা নড়ছে।তারমানে ইনান আসছে এটা টের পেয়েই চোখ বন্ধ করে আছে।ইনান মুচকি একটা হাসি দিয়ে ইনশিরার পাশে গিয়ে বসলো।তারপর ভেজা চুলে হাত ঢুকিয়ে বলল
“ইনশু আমি জানি তুই ঘুমাস নি।চল খেতে যেতে হবে।”
“……..”
“ঢং করে লাভ নাই জানু।উঠে পড়ো।”
ইনশিরা এবর চোখ খুলে বলল
“আমি যাবো না বলছি তো তারপরও কেনো জোর করছিস?”
“ও বুঝতে পারছি তুই পায়ে হেটে যেতে চাস না।কোলে করে নিতে হবে।আগে বললেই পারতিস।অবশ্য তুই ওতো মোটা না।কোলে নিয়ে হাটতে অসুবিধা নেই।আর বিয়ের আগে প্র্যাকটিস রাখা ভালো। তাই না!!”
এটা বলে ইনশিরা কে যেই কোলে নিতে যাবে তখনই ইনশিরা চিল্লিয়ে উঠে বলল
“আমি কখন বললাম কোলে নিতে?না একদম কোলে নিবি না আমাকে।”
“তাহলে খেতে আয় আমার সাথে নাহলে জানু বোঝাইতো কি হবে!!”
ইনশিরা রাগে হাত মুট করে ফেললো কিন্তু কিছু বলল না।বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো।ইনানও হাসতে হাসতে বের হলো।তারপর চারজনে সিলেট জিন্দাবাজার পানশী হোটেলে খেতে গেলো।সবাই পছন্দমতো খাবার অর্ডার করলো কিন্তু ইনশিরা পাথরের মতো বসে আছে তাই ইনান ওর জন্য আর ইনশিরার জন্য বিরিয়ানী অর্ডার দিলো।সবাই খাওয়া শুরু করলেও ইনশিরা এখনো পাথরের মতো বসে আছে।ইনান ইনশিরার কানে কানে বলল
“আমি কি খাইয়ে দিবো?না মানে তুই যদি এভাবে মুর্তির মতো বসে থাকিস তাহলেতো আমার সেটাই করতে হবে।”
ইনশিরা কিচ্ছু বলল না।চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো।ইনানও হালকা হেসে খাওয়া শুরু করলো।ওদের বিপরীত পাশে আয়াশ আর আদ্রি বসে বসে ইনান আর ইনশিরার কাহিনিটা দেখছিলো।আয়াশ দেখছিলো এটা বললে ভুল হবে কারণ আয়াশ বারবার আদ্রি দিকে তাকাচ্ছিলো।কলকে ইনশিরার বলা কথাগুলোর পর থেকে আদ্রি এক সেকেন্ডের জন্যেও আয়াশের সাথে কথা বলে নি যার সাথে সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকতো আদ্রির।আয়াশের মনে হচ্ছে সম্পর্কে ফাটল ধরছে।মোটামুটি সবারই খাওয়া শেষ।তারপর সবাই আবার হোটেলে এসে যে যার যার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।আয়াশ আর ইনান দুজনই গভীর ঘুমে।আদ্রিও ঘুমিয়ে গেছে।কিন্তু ইনশিরার ঘুম আসছে না।
বিকেলে ৫.০০ টা….
ইনশিরা শোয়া থেকে উঠে গেলো।এখনো ওরা কেউ ঘুম থেকে ওঠে নি।হঠাৎ করে ইনশিরার মাথায় পালানোর ভূত চড়ে বসলো।ভালোমন্দ কিছু না ভেবেই থ্রি পিছের ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।খুব তাড়াতাড়ি গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো।কিন্তু এখন যাবে কোথায় হাতে টাকা পয়সা কিচ্ছু নেই।আবার এখানের রাস্তাঘাটও ভালোমতো কিছু চেনা নেই।হাতঘড়ি চেক করে দেখলো বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে।সাথে আদ্রির ফোনটা এনেছে বলেই রক্ষা। হাটতে হাটতে ফোনটা অন করলো ইনশিরা কিন্তু ফোনে সিম নেই।সিম ছাড়াতো কাউকে ফোন দেওয়াও সম্ভব না।ইনশিরা পাশের একটা শপিংমলে ঢুকে গেলো।তারপর সেখানের ওয়াইফাই ব্যবহার করে সিলেট ছেড়ে ঢাকার বাস কখন ছাড়ে সেটা দেখলো।
এদিকে আদ্রি ঘুম থেকে উঠে ইনশিরাকে না পেয়ে দৌড়ে ইনানদের রুমে ধাক্কানো আরম্ভ করলো।ইনান চোখ কচলাতে কচলাতে বেরিয়ে এসে দেখে আদ্রি দাড়িয়ে আছে।চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।আদ্রি আয়াশকে ধরে বলল
“দোস্ত শর্বনাশ হয়ে গেছে।ইনশু বোধহয় পালাইছে।ঘুম থেকে উঠে ওরে পাই নাই রুমে।”
ইনানের বুকটা ধক করে উঠলো।আতঙ্কিত গলায় বলল
“কি বলিস!!পুরো হোটেল ঠিক করে দেখছিস?ছাদে দেখছিস?”
“না আমিতো রুমে না পেয়ে তোর কাছে আসছি।”
ওদের দুজনের চিল্লানিতে আয়াশের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।আয়াশ উঠে এসে জিগ্যেস করলো কি হইছে।ইনান বলল
“ইনশুকে পাওয়া যাচ্ছে না।পুরো হোটেলটা খুজতে হবে।”
তিনজনই পুরো হোটেল ভালোভাবে খুজলো কিন্তু পেলো না।ওরা তিনজনই বুঝলো ইনশিরা পালিয়েছে।কিন্তু ইনানের ভয় লাগছে এইভেবে যে ইনশিরা সিলেটের কিচ্ছু চিনে না। কোথায় গেছে! কি করছে!বিপদ হয় নি তো এইভেবে।তিনজনই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
এখন প্রায় সন্ধ্যা।
ইনশিরা নিজের গলার স্বর্ণের চেইনটা বিক্রি করে বাস কাউন্টার থেকে ঢাকা যাওয়ার একটা টিকিট কিনলো।বাস সাতটায় ছাড়বে।কিন্তু এখন সাড়ে ছয়টা বাজে।ইনশিরা কিছু টাকা দিয়ে একটা ব্যাগ কিনলো।বাকি টাকা গুলো ব্যাগে রেখে বাসের লাস্টের সিটের আগের সিটে গিয়ে বসে পড়লো।
এদিকে ইনান প্রচুর ঘামছে।আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করছে।সবাই চিন্তায় আছে।এখন পর্যন্ত ইনশিরাকে পাওয়া যাচ্ছে না।কিছু হলো না তো ওর!!হঠাৎ ইনান বলল
“দোস্ত বাস কাউন্টারের দিকে যা তো।আমার মনে হয় ও ওইদিকে গেছে।কারণ ও যদি পালায় তাহলে ও ঢাকা ব্যাক করার চেষ্টা করবে।”
আয়াশ বাস কাউন্টারের দিকে যাচ্ছে।এখন ঘড়িতে সাতটা বাজতে দশমিনিট।দশমিনিট পরই বাস ছাড়বে।আয়াশ দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে।এদিকে ইনশিরা মনে মনে ভাবছে’ঢাকায় গিয়ে আর ওদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না।আর কিছু সময় পরই বাস ছাড়বে ওরা চেষ্টা করেও ইনশিরাকে খুজে পাবে না।এইভেবেই ইনশিরার মুখে চওড়া একটা হাসি ফুটে উঠলো।অবশেষে মুক্তি!!
৬.৫৫ বাজে…
বাস কাউন্টারে এসে ওরা তিনজনই নামলো।এদিক ওদিকে খোজা শুরু করে দিলো তিনজনই।এত্তগুলো বাসের মধ্যে এখন কোন বাসে ইনশিরা উঠেছে।এটা জানাই মুশকিল।পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব বাস খোঁজাও সম্ভব না।ইনান কাউন্টারে এসে জিগ্যেস করলো ইনশিরা নামের কেউ ঢাকার বাসে যাচ্ছে কি না?তারপর জানতে পারলো শেষের বাসটায় যাচ্ছে।ইনান দেরি করলো দৌড় দিলো বাস ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে।
চলবে…..🍂
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)