#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২০
#Arshi_Ayat
ইনশিরা আর আদ্রি বসে বসে বকবক করছে।হঠাৎ ইনশিরা বলে উঠলো
“আদ্রি তুই কিন্তু কাজটা ঠিক করছিস না।”
“কোন কাজ?”
“এই যা তুই আয়াশকে ধোকা দিচ্ছিস।ওকে কেনো বলিস না তুই ওকে ভালোবাসিস না।”
“আমি চাই না ওর খুশীটা নষ্ট হোক।”
“কিন্তু যখন ও সত্যটা জানবে তখন আরো কষ্ট পাবে তার চেয়ে ভালো তুই এখনি সত্যিটা বলে দে।”
“হ্যাঁ মিথ্যে সম্পর্কতো আর টিকিয়ে রাখা যায় না।বলে দেওয়াই ভালো হবে।আমি দুই একদিনের মধ্যেই ওকে বলে দেব।”
“হুম সেটাই ভালো।”
হঠাৎ আয়াশ এসে বলল
“কি নিয়ে ফুসুরফাসুর হচ্ছে রে?”
“তোর বিয়া নিয়ে।” (ইনশিরা)
আয়াশ হাসতে হাসতে বলল
“আমার বিয়া নিয়ে আবার কি ফুসুরফাসুর?”
“এই যে তোর বিয়েতে তোকে ধরে ইচ্ছামতো হলুদ মাখাবো।”
“মাখবি তো সমস্যা কই?তবে আমার বউ যদি আপত্তি না করে।”
এটা বলে আদ্রির দিকে চেয়ে একটা চোখ মারলো তারপর আদ্রিকে উদ্দেশ্য করে বলল
“তাই না বউ।”
আদ্রি না পারতে একটা হাসি দিলো কারণ সে চাইলেও কিছু বলতে পারবে না এখন আয়াশকে।এভাবেই তিনজন বকবক করতে থাকলো আর ইনান ওইদিকে পড়েপড়ে ঘুমাচ্ছে।আজ আর কোথায় যাওয়া হলো না ইনশিরা আর ইনান দুজনেই অসুস্থ বলে।দুপুরে খেয়ে ইনশিরা শুয়ে একটু চোখ বন্ধ করলো সাথে সাথেই ইনানের মুখটা ভেসে উঠলো।সেই প্রথম দিনের ঘটনা একে একে সব মনে পড়তে লাগলো।ভার্সিটির প্রথম ইয়ারের দিকে ইনান খুবই চুপচাপ ছিলো তেমন কারো সাথে কথা বলতো না শুধু আয়াশ ছাড়া তারপর আস্তে আস্তে কিভাবে যেনো ওদের চারজনের একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়।ইনশিরা কখনো ইনানকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবে নি কিন্তু আজ কেনো যেনো অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে মনে।ওইতো সেদিনো তিয়াসের ভয়াল থাবা থেকে ইনান ই ওকে বাঁচিয়েছে আর সব শেষে সেদিন ইনানের সেই চুমুটাও মনে পড়ছে যেটা ও রেগে করেছিলো ইনশিরা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলো বলে।ইনশিরা চট করে চোখ খুলে ফেললো তারপর আদ্রিকে বলল
“দোস্ত আমি একটু ইনানের কাছে যাচ্ছি।”
বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল
“সত্যি?”
“হুম সত্যি।”
আদ্রি হেসে বলল
“ওয়াও দিল মে লাড্ডু ফুটা।”
ইনশিরা হাসলো শুধু।আদ্রি আবারো চোখ নাচিয়ে বলল
“তা ট্রিট কবে দিচ্ছিস?”
“ধূর সরতো যেতে দে।”
“না না তা তো হবে না।ট্রিট কবে দিচ্ছিস সেটা বললেই যেতে দেবো।”
এবার ইনশিরা ঢং করে বলল
“ভাবী সেটা আপনার ভাইকে জিগ্যেস করুন সেই জানে।”
আদ্রি কনুই দিয়ে ইনশিরার পেটে গুতা দিয়ে বলল
“তাই না!!আচ্ছা যা যেতে দিলাম।”
ইনশিরা হাসতে হাসতে চলে গেলো।ওদের রুমে নক করতেই আয়াশ দরজা খুলে দিলো।ইনশিরাকে দেখতেই আয়াশ বলে উঠলো
“কি রে তুই এখানে?”
“হুম ওর কাছে যাবো।”
আয়াশ চোখ মেরে বলল
“আয় হায় ভালোবাসা উথলিয়ে পড়ছে।আচ্ছা ঠিকাছে যা আমি একটু আমার জান্টুসের কাছে যাই।”
এই বলে আয়াশ চলে গেলো।ইনশিরা আস্তে আস্তে ঘরে এসে দেখে ইনান ঘুমাচ্ছে।ও ইনানের পাশে গিয়ে বসলো তারপর ওর চুলে হাত দিয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলো।হঠাৎ ইনানের ঘুম ভাঙ্গায় ও চোখ খুললো।ইনানকে চোখ খুলতে দেখে ইনশিরা দ্রুত হাতটা সরিয়ে নিলো ওর চুলের ভিতর থেকে।ইনান উঠে বসে ইনশিরার কপালে হাত দিয়ে বলল
“এখনতো জ্বর নেই।ওষুধ খেয়েছিস তো?”
ইনশিরা ওর দিকে চেয়ে ভাবছে এই ছেলেটা তাকে এতো ভালোবাসে কেনো নিজের গায়ে জ্বর তবুও তার খবর নিচ্ছে।ইনশিরার কোনো উত্তর না পেয়ে ইনান ওর মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল
“কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি।”
ইনানের কথায় ইনশিরা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো তারপর বলল
“হ..হ্যাঁ তোর কি অবস্থা?”
“আমার আবার কি হবে?”
“আমি মনে হয় কিছু জানি না তাই না?”
“তোর ও তো জ্বর এসেছে।”
“ওইটা কিছু না।”
“নিজের খুব সুপারম্যান ভাবো?”
ইনান হাসতে হাসতে বলল
“আচ্ছা তোর কি হলো রে আজ?”
“কই কি হলো!!”
“এই যে আমাকে শাসাচ্ছিস।”
“ওহ!!কিচ্ছু করার নেই এবার থেকে তোকে প্রতিদিন শাসাবো।”
ইনান ভ্রু কুচকে বলল
“কেনো?”
“কেনো মানে তোর ওপর তো আমার অধিকার তো আমি শাসাবো না তো কে শাসাবে প্রয়োজনে মার খাবি।”
ইনান ইনশিরার কথায় শুনে বিষ্ময়ে বলল
“কিহ!!!ইনশু তুই আমাকে ভালোবাসিস?”
ইনশিরা হেসে বলল
” না না আমি তোকে ভালোবাসবো কেনো?আমিতো ইনান চৌধুরীকে ভালোবাসি যে আমাকে নিয়ে পালিয়েছিলো।”
ইনান ইনশিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল
“তাই না!!”
“হুম তাই।আচ্ছা ইনান তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস কেনো?”
“কেনো ভালোবাসি জানি না কিন্তু অনেক ভালোবাসি।”
“হুম তো আমরা ফিরছি কবে?”
“ভেবেছিলাম পনেরোদিন থাকবো কিন্তু এখন ভাবছি না পনেরোদিন না কালকে গিয়েই বিয়েটা করে ফেলবো।”
“যাহ!!সত্যি করে বল।”
“এই তো আর দুদিন থাকবো তারপর ফিরবো কালকে আর পরশু ইচ্ছামতো ঘুরবো এর পরেরদিন ফিরে যাবো।”
“ওহ আচ্ছা কিন্তু বাবা মাকে মানাবো কিভাবে?”
“সেটা আমি দেখবো তুই চিন্তা করিস না।”
ইনান ইনশিরা দুজনেই খুশী।অবশেষে ইনশিরা ইনানকে ভালোবেসেই ফেললো দুজনের মুখেই হাসি।
এদিকে আয়াশ এই রুমে এসে আদ্রির পাশাপাশি বসে বলল
“জানু।”
“হুম বল।”
“ইশ এভাবে কেউ বলে?রোমান্টিক করে বল হ্যাঁ গো বলো এভাবে।”
“আইছে তোরে আমি জীবনেও এমনে কমু না।”
“বল না দেখ তোর দশটা না পাচটা একটা মাত্র বয়ফ্রেন্ড আমি।এমন জুলুম করিস না।”
“আহারে শখ দেখলে মন চাই পুকুরে ঝাপ দেই।”
আয়াশ আহ্লাদ করে বলল
“হ্যাঁ হ্যাঁ দে।তুই তো সাতার পারিস না আমি কিন্তু পারি আমি ঝাপ দিয়ে তোকে বাচাবো।উফফ কি রোমান্টিক!!”
আদ্রি ওর মুখে ঝামটা মেরে বলল
“উড়া বন্ধ কর।আমি এখনো ঝাপ দেই নাই।”
“হুম সমস্যা নাই তুই দেওয়া লাগবো আমিই তোরে ফালায় দিমু।”
আদ্রি ভাবলো এটাই সঠিক সময় আয়াশকে সব বলে দেওয়ার। তাই আদ্রি আয়াশের কথায় কিছু না বলে বলল
“তোর সাথে একটু কথা আছে।”
“হুম বল।”
“আসলে আমি না..”
“কি তুই?”
“আমি তোকে ভালোবাসি না।”
আয়াশ হেসে বলল
“আমাকে গাধা বানাতে পারবি না।আমি জানি তুই মজা করছিস।”
“মজা না আয়াশ।”
আয়াশ এবার হাসা বন্ধ করে সিরিয়াস গলায় বলল
“কেনো?”
“আমি তোকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারবো না।”
“তাহলে সেদিন বললি কেনো ভালোবাসিস?”
“আসলে জুইকে শায়েস্তা করার জন্য বলেছিলাম কারণ ও তোর সাথে খালি ঘুরঘুর করছিলো তাই।”
আয়াশ আদ্রি গালে হাত দিয়ে বলল
“এভাবে কষ্ট না দিলও পারতি।”
এটা বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো।আর আদ্রি কেমন যেনো একটা অপরাধ বোধে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।
এদিকে ইনান ইনশিরাকে জব্দ করার জন্য বলল
“আচ্ছা শোন বিয়ের পর তুই যখন রাগ করে খাবি না তখন আমি তোকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে জোর করে খাওয়াবো কিন্তু আমি যখন রাগ করে খাবো না তখন তুই কিভাবে খাওয়াবি?”
ইনশিরাও একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“এটা আর কঠিন কি চলায় একটা চামুচ লাল করে গরম করবো তারপর তোর সামনে নিয়ে দাড়াবো।তুই না খেয়ে যাবি কই?না খেলেই চলে গরম চামুচ লাগায় দিমু।”
ইনান ভ্রু কুচকে বলল
“কই লাগাবি?”
চলবে….🍁
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর দেরি করে দেওয়ার জন্য দুখিঃত কারণ আমি অনেক অসুস্থ তাই দেরি হলো।)