# আরশিযুগল প্রেম❤
#লেখিকা-নৌশিন আহমেদ রোদেলা
#পর্ব-৩
— “আপনি বরং পাশের ব্রেঞ্চটাই বসুন। কতক্ষণ আর দাঁড়িয়ে থাকবেন?”
শুভ্রতা জবাব দিলো না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশে রাখা আধভেজা ব্রেঞ্চটাতে বসে পড়লো। ডানহাতে বামহাতের বাহু ঘষতে ঘষতে মিন মিন করে কিছু একটা বললো কিন্তু সেই কন্ঠ সাদাফের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। পৌঁছানোর কথাও নয়। বৃষ্টির এমন ঝংকারে চিৎকার করে বলা কথাও যেখানে কানে পৌঁছানো দায় সেখানে শুভ্রতার বিরবির কান পর্যন্ত পৌঁছাবে না এটাই স্বাভাবিক। শুভ্রতা এবার গলা পরিষ্কার করে চেঁচিয়ে বললো,
—” আমরা কি ঢাকা থেকে অনেক বেশি দূরে আছি, ভাইয়া?”
সাদাফ ঘুরে তাকালো। অন্ধকারে কারো মুখই স্পষ্ট নয়। গলা উঁচিয়ে বললো,
— ” ঢাকা থেকে ৯০ কি.মি. দূরে আছি। খুব বেশি দূরে বলতে পারি না।”
— “আচ্ছা? এখানে কোনো হোটেল নেই?”
সাদাফ শুভ্রতার অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝাপসা মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। খানিক নীরব থেকে বললো,
— ” উপজেলা শহর যেহেতু হোটেল তো অবশ্যই আছে। কিন্তু কোথায় আছে সেটা বলতে পারছি না। কোথায় দাঁড়িয়ে আছি তাই তো বুঝতে পারছি না।”
সাদাফ বিরক্ত নিয়ে ব্রেঞ্চের এককোণে মাথা নিচু করে বসলো। রাগে শরীরটা রিরি করলেও বেশ শান্ত হয়ে বসে আছে সে। ঝড়ের জন্য লোডশেডিং হচ্ছে। সারা শহর অন্ধকারে ঢাকা। গুগল ম্যাপেও নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারছে না সাদাফ। নেটওয়ার্কের খুবই বাজে অবস্থা। তারওপর ফোনের চার্জও প্রায় শেষের দিকে। নিজে একা থাকলে এতোটা ভাবতে হতো না তাকে কিন্তু সে একা নয়। সাথে আছে একটি মেয়ে! অপরিচিত হলেও মেয়েটিকে সেইভ রাখার দায়িত্ব এখন তার। সাদাফ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। প্রায় সাথে সাথেই বৃষ্টির শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে বেজে উঠলো তার ফোন। ফোনের স্ক্রিনে আরাফের নাম ভাসতে দেখে ফোনটা রিসিভ করলো সে।
—” হ্যালো?”
—” সাদাফ?”
—“হুম”
—” কিছু ব্যবস্থা করতে পারছিস?”
—“না। এই বৃষ্টির মাঝে কি ব্যবস্থা করতে বলিস আমায়? বিরক্ত না করে ফোনটা রাখ।”
—” আরে রাগিস কেন? শুন তো! তুই কি কোনোভাবে রায়পুরা পর্যন্ত আসতে পারবি? রায়পুরায় আমার দুলাভাই আর বড় আপা থাকে। আজ রাতটা ওদের ওখানে কাটিয়ে কাল সকালে বাস ধরে চলে আসবি। পারবি না?”
— “আশুগঞ্জ থেকে কতটুকু দূরে? তাছাড়া এখানে তো গাড়িঘোড়া কিছু নাই। তারওপর মুশলধারায় বৃষ্টি, কেমনে যাবো?”
— “বেশি দূরে না। ৩৩/ ৩৪ মিনিট লাগবে। আশুগঞ্জ থেকে ২২ কিলোর মতো হবে। একটু ট্রাই করে দেখ। সিএনজি টিএনজি পাইয়া যাইতেও পারিস। এমনে কতক্ষণ খাড়ায় থাকবি? দুলাভাইয়ের বাসায় গিয়া আজকের রাতটা কাটিয়ে কাল সকালে চলে আসলি।”
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো সাদাফ।হঠাৎ করেই শুভ্রতার কথা মনে পড়লো তার। শান্ত গলায় বললো,
—” আরেকটা সমস্যা দোস্ত। আমি একা নই সাথে মেয়ে আছে।”
আরাফ যেন আকাশ থেকে পড়লো। ফোনের ওপাশ থেকে সন্দেহী গলায় বললো,
— “মাইয়া? কোন মাইয়া? পৃথা?”
—” আরে! পৃথা হইলে কি মেয়ে বলতাম? নাম ধরেই তো বলতাম। আর ওরে নিয়ে আমি ঢাকা আসবো কেন? তারওপর সামনে ওর এক্সাম না?”
আরাফ এবার চেঁচিয়ে উঠলো,
— “তাইলে কোন মাইয়া? এমনে তো খুব পার্ট নাও মামু, তো এখন কি? রাইত-বিরাইতে মাইয়া লইয়া ঘুরা বেড়াও? তলে তলে ট্যাম্পু চালাও মিয়া?”
সাদাফ বিরক্তি নিয়ে বললো,
—“ফালতু কথা বন্ধ কর।এসব কিছু না। ট্রেনের এক কেবিনেই ছিলাম। মাঝরাতে ট্রেনে একা একটা মেয়ে থাকাটা রিস্ক না? তাই আমার সাথেই নেমে এসেছে এখন তো…”
আরাফ আগ্রহ নিয়ে বললো,
—” নাম কি দোস্ত? দেখতে কেমন? প্রেমে পড়ছো নি?”
সাদাফের ভ্রু কুঁচকে এলো। আরাফকে ফোন দেওয়াটাই সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে তার। বিরক্তি নিয়ে বললো,
— “ফোন রাখ ডাফার। তোর হেল্পের দরকার নাই আমার।”
আরাফ ক্ষুন্ন মনে বললো,
—“চেতোছ কেন? আচ্ছা যা বলা লাগবো না। ফিরে বলিস। এখন রায়পুর যাওয়ার ব্যবস্থা কর। আমি দুলাভাইরে বইলা দিতাছি।”
সাদাফ ফোন রেখে উঠে দাঁড়ালো। শুভ্রতাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—“আপনি এখানেই বসুন আমি আরেকটু এগিয়ে দেখি সিএনজি টিএনজি পাই কি না। এখান থেকে রায়পুরা যেতে পারলে একটা থাকার ব্যবস্থা হবে। আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?”
শুভ্রতা কি বলবে বুঝতে পারছে না। “হ্যাঁ” বলবে নাকি “না” বলবে তা নিয়েও বিরাট সমস্যা। সাদাফ ওর উত্তরের অপেক্ষা না করে ঘড়িটা খুলে ব্রেঞ্চের উপর রেখে বৃষ্টি মাথায় বেরিয়ে গেলো। কোথায় গেলো কে জানে?সাদাফ বের হওয়ার খানিকবাদেই ঠান্ডা,ভয় আর দুশ্চিন্তায় মর মর অবস্থা শুভ্রতার। এতোক্ষন শুধু বাড়ি ফেরার টেনশন থাকলেও এখন তারসাথে যোগ হয়েছে ভূতের টেনশন। চারপাশে বৃষ্টির শব্দ ছাড়া কিছুই কানে আসছে না। অন্ধকারে নিজের হাত দেখাটাও যেখানে দুষ্কর সেখানে শুভ্রতার মনে হচ্ছে তার পাশেই হয়তো কেউ দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্রী চোখদুটো দিয়ে তারদিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এক্ষুণি ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে হামলে পড়াবে তার উপর। শুভ্রতা ঢোক গিলে। কাঁপা কাঁপা বুক নিয়ে পাশে তাকায়। অন্ধকার ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না তার। তবুও ভয়, প্রচন্ড রকম ভয়! শুভ্রতা মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়তে থাকে।দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে বিরবির করে সে,
— “হে মা’বুদ! হে রক্ষাকর্তা! এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও। আই প্রমিস আর জীবনেও এমন বোকামো করবো না আমি। প্লিজ! প্লিজ! এবারই শেষ।”
শুভ্রতার এবার কান্না পাচ্ছে। ট্রেনে থাকতে শেষ কথা হয়েছিলো বাসায়। না জানি কতো চিন্তা করছে মা। এই অন্ধকারে ফোনটাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলেটা কোথায় গেলো কে জানে? শুভ্রতার মনে হচ্ছে ঘড়ির কাটা ঘুরছে না। একদম স্থির হয়ে উৎসাহী চোখে শুভ্রতার করুণ পরিণতি দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে। শুভ্রতার “ফারদিন হাসান” নামক ছেলেটিকে কেঁচোয় ভরা ডোবায় ডুবিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে। একমাত্র এই ব্যক্তিটির জন্যই এতোটা করুণ অবস্থা তার। এই ছেলে তাকে দেখতে এসেছিলো বলেই তো মামুর সাথে রাগ করে বেরিয়ে এসেছে সে। কি দরকার ছিলো তাকে দেখতে আসার?আর দেখতে যদি আসতেই হতো তাহলে রাতে কেন? দিনে আসতে পারলো না? তাহলে তো দিনের বেলায় রাগ করে ব্যাগ উঠিয়ে চলে আসতো শুভ্রতা। এমন সময় জ্ঞানহীন একজন মানুষ কি করে প্রফেসার হয় বুঝে উঠতে পারে না শুভ্রতা। বেয়াদব একটা! ভয়ে যখন স্ট্রোক করবে করবে অবস্থা ঠিক তখনই কারো ডাক কানে এলো তার। রাস্তায় একটা সিএনজি থেকে তাকে উদ্দেশ্য করেই ডাকছে কেউ। শুভ্রতার ভয়টা শিরায় উপশিরায় ছুটতে লাগলো ক্রমাগত। শুভ্রতার সাড়াশব্দ না পেয়ে সিএনজি থেকে নেমে তার সামনে এসে দাঁড়ালো কেউ।বললো,
—” কখন থেকে ডাকছিলাম সাড়া দিচ্ছিলেন না কেন? দ্রুত চলুন। অনেক কষ্ট একটা সিএনজি জোগার করেছি।”
শুভ্রতা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
— “এই সিএনজি ঢাকা যাবে?”
সাদাফ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘড়িটা পকেটে পুড়ে ভেজা চুপচুপে শরীর থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
—” নাহ। রায়পুরা পর্যন্ত যাবে। ওখানে আমার বন্ধুর দুলাভাইয়ের বাসা।প্লিজ তাড়াতাড়ি চলুন।”
কথা শেষ করে শুভ্রতার লাগেজটাও নিজের হাতে তুলে নিয়ে সিএনজির দিকে এগিয়ে গেলো সে। শুভ্রতা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ছুটে গিয়ে উঠে পড়লো সিএনজিতে। সাদাফের গা বেয়ে জল গড়াচ্ছে। ঠান্ডাটা বোধহয় এবার লেগেই যাবে। সিএনজির দুই ধারেই পর্দা টেনে দেওয়া হয়েছে। বাতাসের তেজে পর্দা সরে গিয়ে বারবারই ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে শরীর।অন্ধকারে দুটো পর্দার আড়ালে বসে আছে অচেনা দু’জন মানুষ। কি একটা দমবন্ধকর পরিস্থিতি! না আছে মুখে কোন কথা। আর না আছে বলার কোন ইচ্ছে। দু’জনেই দুশ্চিন্তায় অস্থির। প্রায় আধাঘন্টা- চল্লিশ মিনিট পর রায়পুরা গিয়ে পৌঁছালো তারা। আরাফ যে রাস্তায় দাঁড়াতে বলেছিলো সেখানেই একটা ভাঙা ঘরের কাছে দাঁড়ালো ওরা। বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছে এখন। দু-একটা ফোটা পড়ছে মাত্র। সাদাফ ভাড়া মিটিয়ে আরাফকে কল করলো কিন্তু রিসিভ হলো না। দু-তিনবার ট্রাই করার পর বিরক্ত হয়ে পড়লো সাদাফ। আরাফ এতোটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারে ভাবতে পারছে না সে। প্রায় দশমিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো শুভ্রতা,
—” কি হয়েছে? আমরা এখন কোথায় যাবো?”
সাদাফ সোজাসাপ্টা জবাব দিলো,
— “জানি না।”
শুভ্রতার চোখ কপালে উঠে গেলো। বিস্ময় নিয়ে বললো,
— “মানে? জানেন না মানে কি? আমরা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবো এখন? মনে হচ্ছে জায়গাটা গ্রামের দিকে।”
সাদাফ জবাব দিলো না। আবারও ফোন লাগালো আরাফকে এবার ফোনটাই বন্ধ। এই মুহূর্তে আরাফকে ধরে ইচ্ছে মতো পেটাতে ইচ্ছে করছে সাদাফের। একটা মানুষ এতোটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারে? সাদাফরা যে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার পাশের ঘরের জানালাটা খুলে গেলো হঠাৎ। কেউ একজন তীক্ষ্ণ আলো ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
— “কেডায় কতা কয়? কে ওইহানে? হাশমত?”
সাদাফ-শুভ্রতা উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। কি বলবে গুছিয়ে নেওয়ার আগেই বাইরের দরজাটা খুলে বেরিয়ে এলো একটি লোক। টর্চের আলো লোকটির বিপরীতে হওয়ায় লোকটির মুখ দেখতে পারলো না তারা। লোকটি গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো,
— “আব্বা? হাশমত না একটা মাইয়া আর একটা পোলা খাড়ায় আছে। চিনতাছি না। ও ব্যাটা বাড়ি কই?মাইয়া মানুষ লইয়া রাইতের বেলা এইখানে দাঁড়ায় আছো কেন? মতলব কি?”
সাদাফ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললো,
— “আসলে আমরা ঢাকা যাচ্ছিলাম। গাড়িটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আটকে পড়েছি। এই রাতে তো গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।”
সাদাফের কথাটা বিশ্বাসযোগ্য হলো কি না বুঝা গেলো না। লোকটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। টর্চের আলো ওদের মুখে ফেলে ভালো করে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো। ততক্ষণে আরো দুজন লোক এসে দাঁড়িয়েছে তার পাশে। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ। বৃদ্ধ লোকটি বললো,
— “তা তোমার সাথে মাইয়াটা কিডা? ভাগাইয়া লইয়া আইছো নাকি?”
সাদাফ স্পষ্ট গলায় বললো,
—” না। ভাগিয়ে আনবো কেন? ও আমার বউ। ”
লোকটির চোখে-মুখে সন্দেহ। সন্দেহী গলায় বললো,
— “কিন্তু মাইয়ার গায়ে তো বিয়াত্তের কোনো চিন্হ নাই। নাকফুল, চুড়ি কিছুই তো নাই।”
সাদাফ নির্লিপ্ত গলায় বললো,
— “এখন কি মেয়েরা এসব মানে চাচা?”
— “তাও ঠিক।”
— “চাচা আজকের রাতটা কি থাকা যাবে এখানে? আশেপাশে হোটেল টাইপ কিছু আছে?”
— “হোটেল তো শহরের মাইধ্যে এইহানে পাইতা না। তয় আমাগো বাড়ি থাকতে পারো। স্বামী-স্ত্রী যখন তখন আর সমস্যা নাই।”
সাথে সাথেই পাশে থেকে বলে উঠলো কেউ,
— “মামা? এখনকার মানুষ কি বিশ্বাস করুন যায়?বিয়া আসলেই হইছে কিনা কেডা জানে? থাকতে দিয়া যদি ঝামেলায় পড়েন। আপনি হইলেন হাজী মানুষ! মানসম্মান আছে না?
লোকটি এবার চিন্তায় পড়ে গেলো। খানিক চুপ থেকে বললো,
— “তয় কি করতাম? এই পোলাপাইন দুইডা এই রাইতে কই যাইবো? আল্লাহর দুনিয়ায় বিপদে মানুষরে সাহায্য না করলে আল্লায় বেজার হবো।”
ছেলেটি এবার ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— “মামা? আমি কই কি? আপনি তো কাজী। এককাম করেন, হেগোর আবার বিয়া পড়ায় দেন। কোনো ঝামেলা হইলে তো প্রমাণ দিতে পারবেন যে হেতিরা জামাই বউ।”
লোকটির কথায় চমকে উঠলো সাদাফ-শুভ্রতা। এসব কি বলছে এরা? লোকটিকে ঠাডিয়ে চড় বসাতে ইচ্ছে করছে সাদাফের। এমন ফালতু আর বলদ মার্কা আইডিয়া দেওয়ার জন্য লোকটিকে গুণে গুনে দু’শো থাপ্পড় দেওয়া উচিত। শুভ্রতা একদম “থ” মেরে দাড়িয়ে আছে। কি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? সবই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। তবে বৃদ্ধ লোকটির গলা খুশি খুশি। ভাগ্নের আইডিটা চমৎকার লেগেছে তার।
— “ভালা বলছো মিজান। তোমরা ঘরে আহো। আলামিনের মা? ও আলামিনের মা? মেহমান আইছে সমাদর করো। ”
সাদাফ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। এর থেকে ওই ভাঙা চায়ের দোকানে ঝিম ধরে বসে থাকাটাও ভালো ছিলো। কেন যে এই আরাফকে ভরসা করতে গেলো ও! তাকে এমন বিপদে ফেলো নির্ঘাত নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে ফাজিলটা।
_____________
একটা শক্ত চৌকিতে বসে আছে সাদাফ। তার থেকে একটু দূরেই গুটিশুটি হয়ে বসে আছে শুভ্রতা। বৃদ্ধ লোকটি কিসব খাতাপত্র নিয়ে বসেছেন তাদের বিয়ে পড়াবে বলে। সাদাফ অনেকবার বলেছে এসবের দরকার নেই। কিন্তু কে শুনে কার কথা? এদিকে শুভ্রতা কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা। রাগ জিনিসটা যে খুবই খারাপ আর রাগ করে নেওয়া সিদ্ধান্তটা যে তার থেকেও ভয়ানক খারাপ তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শুভ্রতা। হাজারবার বোঝানোর পরও বদ্ধপরিকর বৃদ্ধ গম্ভীর গলায় জিগ্যেস করলেন,
— “তোমার নাম কি বাবা? পুরো নাম?”
সাদাফ বাধ্য হয়ে বললো,
—” রাফাত আল সাদাফ”
বৃদ্ধ এবার শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বললো,
—” তোমার নাম কি মা?”
শুভ্রতা উত্তর দিলো না। বৃদ্ধের কন্ঠ তার কান পর্যন্ত পৌঁছালোই না। তিনবার জিগ্যেস করার পর অসহায় মুখে বললো,
—“রৌশিন আহমেদ শুভ্রতা”
শুভ্রতার নামটা এই প্রথম শুনলো সাদাফ। এতোটুকু সময় একসাথে থাকার পরও কেউ কারো নামটুকু জিগ্যেস করার সময় পায় নি বা প্রয়োজন বোধ করে নি। শুধু নাম কেন? শুভ্রতার চেহারাটাও তেমন ভালো করে খেয়াল করে নি সাদাফ। বৃদ্ধের কথায় ভাবনার সুতো ছিঁড়লো সাদাফের,
— বাবা? দেনমহর কতো লেখুম? ১০১ টাকায় লেখি। চলবো?
শেষ পর্যন্ত জোরে পড়ে বিয়েটা হয়েই গেল। কবুল বলার সময় শুভ্রতার গলা চেপে আসছিলো। মনে হচ্ছিলো গলায় কোনো ধারালো ছুরি ধরে আছে কেউ। বৃদ্ধ লোকটির কথার তোড়ে তৎক্ষনাৎ ১০১ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করতে হলো সাদাফের। দেনমোহর দিতে গিয়ে শুরু হলো আরেক বিপত্তি। ১০০ টাকা আছে কিন্তু এক টাকা তো নাই। এখন উপায়? বৃদ্ধ পড়লেন মহাদুশ্চিন্তায়। সবশেষে বৃদ্ধের ভাগ্নের থেকে দশ টাকার পরিবর্তে এক টাকা নিয়ে দেনমোহর পরিশোধ করলো সাদাফ। শুভ্রতার এই মুহূর্তে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তার মা ঠিকই বলে তার মতো স্থুলবুদ্ধি সম্পন্ন মেয়ে কোনো একদিন স্বেচ্ছায় ভয়ানক ধরনের বিপদে পড়বে। লেগে গেলো তো কথা?
#চলবে…
(বাসায় প্রবলেম থাকায় দুইগল্প লিখতে পারি নি। সরি! কাল তাড়াতাড়ি দিবো)