আরশিযুগল প্রেম পর্ব — ৩৯
# লেখনীতে — নৌশিন আহমেদ রোদেলা
এই মুহুর্তে শুভ্রবের মুখটা দেখার তীব্র ইচ্ছে জাগতে লাগল। জানতে ইচ্ছে করতে লাগল, শুভ্রবের সুপ্ত মনের সত্য সেই কথাগুলো। শুভ্রব কি সত্যিই কষ্ট পাচ্ছে না? একটুও না? শুভ্রতাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও প্রশ্ন করল শুভ্রব,
—-” কিছু বলবি?”
—-” হু।”
—-” তাহলে বল। রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
শুভ্রতা মাথা তুলে ভাইয়ের দিকে তাকাল। অন্ধকারে শুভ্রবের মুখের অভিব্যক্তি বুঝা যাচ্ছে না। শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে উশখুশ করতে লাগল শুভ্রতা। বড় ভাইকে হুট করে এমন একটা প্রশ্ন কি করে করবে বুঝে উঠতে পারছে না সে। শুভ্রতা আবারও চুপ হয়ে যাওয়ায় রূঢ় গলায় ধমকে উঠল শুভ্রব,
—-” আশ্চর্য! কিছু বলার হলে বল নয়ত নিচে যা। আমার সামনে এভাবে গাধার মতো দাঁড়িয়ে থাকবি না।”
শুভ্রতা মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,
—-” তনুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে ভাইয়া।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিল শুভ্রব,
—-” তাই নাকি? ভালো তো।”
শুভ্রবের এমন কথায় বেশ ধাক্কা খেল শুভ্রতা। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
—-” কাল পরশুই ওর গাঁয়ে হলুদ ভাইয়া।”
—-” ওহ আচ্ছা। তো, বান্ধবীর সাথে সাথে তোরও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে ইচ্ছে করছে নাকি? আম্মুকে বলব?”
এমন একটা পরিস্থিতিতে শুভ্রবের শুকনো রসিকতা অত্যন্ত তেতো ঠেকলো শুভ্রতার। বিরক্তি নিয়ে বলল,
—-” তুই কিছুই করবি না? কথাটা শুনে তোর একটুও খারাপ লাগছে না?”
শুভ্রব অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
—-” মানে? তোর বান্ধবীর বিয়ে হবে সেখানে আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগার কথা কোথা থেকে আসছে?”
শুভ্রতা মাথা নিচু করে বলল,
—-” তুই যে তনুকে পছন্দ করিস তা আমি জানি ভাইয়া।”
শুভ্রব অবাক চোখে তাকাল। পরক্ষনেই রেলিং এ ঠেস দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
—-” তুই কিছু করছিস না কেন ভাইয়া? এভাবে তনুর বিয়ে হয়ে যেতে দিবি তুই?”
—-” অনেক রাত হয়েছে শুভি। নিচে যা।”
শুভ্রতা কোমল কন্ঠে বলল,
—-” তনু কাঁদছে ভাইয়া। ও তোকে ভালোবাসে।”
শুভ্রব এবার বোনের দিকে তাকাল। অন্ধকারেও চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে তার। শুভ্রতার হঠাৎ করেই মনে হল, শুভ্রব কাঁদছে। শুভ্রতার ভাবনাকে ঠেলে দিয়ে শান্ত গলায় জবাব দিল শুভ্রব,
—-” আমিও বাসি কিন্তু ভালোবাসা দিয়েই সব হয় না। মাঝে মাঝে পরিস্থিতির কাছে ভালোবাসাটা অসহায় হয়ে পড়ে। তখন আর বলা বা করার মত কিছু থাকে না।”
—-” পরিস্থিতির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে, মানে কি? তোদের মাঝে বাজে কোনো সিচুয়েশন তো দেখতেই পাচ্ছি না আমি। তনুকে তুই ভালোবাসিস। তনু তোকে ভালোবাসে তাহলে সমস্যাটা কোথায়? মা-বাবা তনুকে মেনে নিবে না এমন কোনো ব্যাপারও তো নয়, তাহলে?”
—-” তনয়ার ফ্যামিলির আমাকে মেনে নেওয়াটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বৈকি শুভি !”
শুভ্রতা অবাক চোখে তাকাল। বিস্ময় নিয়ে বলল,
—-” আশ্চর্য! তনুর ফ্যামিলি তোকে মেনে নিবে না কেন? আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কোনো অংশেই ওদের থেকে খারাপ নয়। আমরা রেস্পেক্টিভ ফ্যামিলি থেকে বিলং করি তাহলে সমস্যাটা কোথায়?”
বোনকে উত্তেজিত হতে দেখে হালকা হাসল শুভ্রব। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—-” তোর ভাই যে বেকার সে কথা কি ভুলে গিয়েছিস শুভি? নাকি নিজের ভাই বলে সেই দোষটাকে ঢেকে রাখতে চাইছিস?”
—-” বেকার তো কি হয়েছে? আজ বেকার বলে কি সারাজীবনই বেকার থাকবি নাকি? মাত্রই মাস্টার্স কমপ্লিট করলে, চাকরীর জন্য কিছুটা সময় তো লাগবেই। আমাদের এতো বড় বাসায় কি তনুর জায়গা হবে না?সে কি না খেতে পেয়ে মরে যাবে?”
বোনের বাচ্চামো কথাবার্তায় আবারও হাসল শুভ্রব। ভারি নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—-” তা মরবে না কিন্তু এই দোহাই দিয়ে কি কোনো বাবা তার মেয়ে দেয়? মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির বাবা-মায়েরা সরকারি চাকুরীজীবি ছেলে খুঁজে শুধুমাত্র মেয়ের ভবিষ্যত সুরক্ষিত থাকবে ভেবে। সেখানে, ছেলে ভবিষ্যতে চাকরী পাবে এমন আশায় বুক বেঁধে কে মেয়ে দিবে বল?”
শুভ্রতার মুখটা মুহূর্তেই চুপসে গেল। অধৈর্য্য হয়ে বলল,
—-” আগেই আশা ছাড়ছিস কেন ভাইয়া? তনুর বাবা-মার সাথে কথা টথা বল। এক-দুই বছরের সময় চা। মেয়ের ভালোবাসার জন্য এটুকু সময় কি তারা দিতে পারবে না?”
শুভ্রব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—-” না। পারবে না। তোর কি ধারণা? ওদের সাথে কথা বলি নি আমি? অসংখ্য বার অনুরোধ করেছি উনাদের কিন্তু…….”
এটুকু বলে থামে শুভ্রব। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। শুভ্রতা কাতর চোখে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকায়। বেশ কিছুক্ষণ পর নিজ থেকেই কথা বলে শুভ্রব,
—-” তনুর পরে আরো দুটো মেয়ে আছে উনাদের। তনুর মেজো বোন তমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। শুধুমাত্র তনুর বিয়ের জন্যই আটকে আছে সব। তাছাড়া, সরকারি চাকরি ওয়ালা ছেলে হাতের কাছে পেয়ে আমার মত বেকার ছেলের মুখ চেয়ে বসে থাকতে রাজি নন তারা। দু’বছর পর যে চাকরি পাবোই তারই বা কি গ্যারেন্টি আছে? তাদের এত এত স্ট্রং যুক্তির মাঝে আমার আর তনয়ার ভালোবাসাটা বড্ড যুক্তিহীন রে শুভি। বড্ড অপ্রয়োজনীয়।”
শুভ্রতা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল। শুভ্রব আবারও বলল,
—-” আমার নিজেরও একটা বোন আছে। বোন যে ভাইয়ের জন্য কতটা তা আমি বুঝি। তুই যদি কখনও কোনো ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে যাস তাহলে আমাদের বাবা-মা যে বেঁচে থেকেও মরে যাবে তাও আমি বুঝি। নিজের বাবা-মাকে যে কষ্টের মধ্যে দেখতে পারব না , অন্যের বাবা-মাকে সেই কষ্টটাই কি করে দিই বল তো? কি করে কেড়ে নিই তাদের মেয়েকে?”
শুভ্রতা ভেজা কন্ঠে বলল,
—-” আর কি কিছুই করার নেই ভাইয়া?”
শুভ্রব হঠাৎই ছাঁদের ফ্লোরে বসে পড়ল। শুভ্রতাও ভাইয়ের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসল। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছে তার। শুভ্রব রেলিং এ ঠেস দিয়ে বিষাদময় গলায় বলল,
—-” বাবা-মা সন্তানের ভালো করতে গিয়ে সন্তানের আত্মাটাকেই খুন করে ফেলে রে শুভি । আমাকে আর তনুকেও খুন করে ফেলল ওরা। বাঁচার একটা সুযোগও দিল না। একটুও না…..মেয়েটা কাঁদছিল আর… আর আমার করার মতো কিচ্ছু ছিল না। কিচ্ছু না! প্রিয় জিনিসগুলোর ক্ষেত্রেই আল্লাহ আমাদের এতোটা অসহায় করে দেন কেন বল তো?”
শুভ্রবের কথা শেষ হতেই ফুঁপিয়ে উঠল শুভ্রতা। শুভ্রব চমকে তাকাল। শুভ্রতাকে জোরেসোরে ধমক দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কিছু বলল না। কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কান্না পেলে কাঁদুক। যা ইচ্ছে করুক। কারো স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া উচিত নয় কিন্তু এই মুহুর্তে শুভ্রতার ফ্যাচফ্যাচে কান্নাও সহ্য হচ্ছে না তার। মেয়েটা অতিরিক্ত ছিঁচকাদুনে, ছোট থেকেই শুভ্রবের বদলে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে আসছে এই মেয়ে। খেলতে গিয়ে শুভ্রবের হাত-পা কাটলেও কাঁদে এই মেয়ে, জ্বর হলেও কাঁদে, মা বকলেও কাঁদে। আজ শুভ্রব নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে তবুও মেয়েটা কাঁদছে। শুভ্রবের চারবছর বয়স থেকে তার হয়ে কেঁদে কেঁদেই বড় হয়েছে শুভ্রতা। এতো কান্না, এতো ভালোবাসা কোথায় রাখে মেয়েটা? সারাদিন ঝগড়াঝাটির পরও শুভ্রবের দুঃখে ভাগ বসাতে কত শত আয়োজন তার। আচ্ছা? বোনটাকে কি একবার বুকে টেনে নিবে? জ্বলে যাওয়া বুকটাতে কি একটু হলেও প্রশান্তি আসবে? শুভ্রতার ফুঁপানো কান্না শুনতে শুনতে, শুভ্রবের হঠাৎ করেই মনে হল, এই বোনটিকে ছাড়া তার চলবে না। তাকে অন্যকারো ঘরে পাঠিয়ে চোখের পাতায় ঘুম নামবে না। কিছুতেই না।
____________________
সকাল দশটা। শরৎ এর সোনালী রোদ কার্পেটে মোড়া ফ্লোরে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে। কখনো জাপটে পড়ছে তো কখনও মলিন হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। রোদের এই হঠাৎ মিলিয়ে যাওয়ার খেলায় মগ্ন চিত্তে তাকিয়ে আছে চার জোড়া চোখ। সবার চোখেই এক আকাশ বিষণ্ণতা, এক আকাশ শূন্যতা।চিন্তামাখা মুখগুলোও শুকিয়ে রক্তশূণ্য।
—-” শুভ্রব ভাইয়ার চুপ থাকাটা মেনে নিতে পারছি না আমি। কিছু একটা তো করা উচিত।”
দীর্ঘশ্বাসে ঘেরা নিঃশব্দ কক্ষে অর্পনের বাক্য দুটো যেন শব্দ পতন ঘটালো। তিন জোড়া চোখ বিমর্ষ ভঙ্গিতে তার মুখের দিকে তাকাল। শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—-” ভাইয়ার হাতে কিছু থাকলে নিশ্চয় করত। এভাবে ফেলে রাখত না সব।”
অর্পন তেজ দেখিয়ে বলল,
—-” ছাতা করত। ছেলেরা এমনই হয়, ঠেকবাজ টাইপ। যখনই বিয়ের কথা ওঠে তখনই দৌঁড়ে পালায়। সত্যিকারে ভালোবাসলে কি আর এভাবে হাল ছেড়ে দিতে পারত? আমার তো মনে হচ্ছে শুভ্রব ভাই জাস্ট টাইমপাস করেছে। উনার মধ্যে তনুকে নিয়ে কোনো সিরিয়াসনেসই নেই।”
অর্পনের কথায় কপাল কুঁচকে তাকাল শুভ্রতা। অবাধ্য রাগটা মাথাময় কুটকুট করে কামড়াতে লাগল। মুহূর্তেই অর্পনকে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগল। শুভ্রতা কিছু বলার আগেই কাতর গলায় বলে উঠল তনয়া,
—-” প্লিজ! প্লিজ, ওকে নিয়ে এমন কোনো কথা বলবি না অর্পন। শুধুমাত্র আমি জানি আমার জন্য কতোটা স্ট্রাগল করেছে ও। কতটা নিচু হয়েছে, অপমানিত হয়েছে। বাবার…. ”
এটুকু বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল তনয়া। অর্পন বিরক্ত চোখে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকাল। ল্যাপটপের ওপর খানিকটা ঝুঁকে এসে বলল,
—-” একদম ফ্যাঁচফ্যাচ করে কাঁদবি না। তোর এই কান্নাটা একদম সহ্য করা যাচ্ছে না। আমাদেরকে তো ফ্রেন্ডই ভাবিস না তুই। এতোকিছু হয়ে গেল তবু একটা বার…. একটা বার বলার প্রয়োজন মনে করলি না? কাল যদি আন্টি ফোন করে হলুদে আসার জন্য না বলত তাহলে তো খুঁজই পেতাম না। আর কি এমন করেছে তোর প্রেমিক পুরুষ? হ্যাঁ, কি করেছে?”
—-” শুধুমাত্র একটা বছর ভিক্ষা চেয়েছিল ও। আমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য বাবার পা’দুটো পর্যন্ত খাঁমচে ধরেছিল। নিজের আত্মসম্মান ত্যাগ করে কারো সামনে মাথা ঝুঁকানোটা যে কতটা কষ্টের তা আমি জানি না। কিন্তু, আমার সামনে ও এতোটা অপমানিত হবে তা আমি সহ্য করতে পারব না। কি এমন মেয়ে হলাম আমি, যার জন্য এতোটা ছোট হতে হবে তাকে? নিজের আত্মসম্মানটাকে তুচ্ছ করতে হবে। বাবার পর তাকেই সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে এসেছি আমি। বিশ্বাস কর, আমি…. আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব কিন্তু সেই মানুষটাকে কারো কাছে অপমানিত হতে দেখতে পারব না। কিছুতেই না। তোদের কিচ্ছু করতে হবে না। শুধু, লাস্টবারের মতো ওকে দেখার সুযোগ করে দে, প্লিজ। শুধু একটাবার কাছ থেকে দেখব ওকে। শুধু একবার….”
আবারও নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল পুরো রুম। তনয়ার বলা শব্দগুলো দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে তীব্র আর্তনাদে মত্ত হলো। বান্ধবীদের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল জল। সবার মনেই বাজতে লাগল একই ধ্বনি, ‘ভালোবাসা নামক অনুভূতিগুলো কেন এতো অসহায়?”
আলোতে ঝলমল করছে বাড়ির চারপাশ। ভেতর ঘর থেকে ভেসে আসছে বাচ্চা-মহিলাদের হৈ-চৈ, উচ্ছ্বাস। বাড়ির পেছনের বড় রাস্তাটার পাশেই বিরাট এক জারুল গাছ। সেই গাছের ছায়াতেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে। বারবার হাসফাস করে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। চারপাশে গজিয়ে উঠা ঘন জঙ্গলের মাথায় শেষ সন্ধ্যার কালো রঙগুলো যেন জমাট বেঁধে আকাশ-পাতাল ষড়যন্ত্র করছে। ছেলেটি দু’হাতে মুখ চেপে জোড়ালো শ্বাস টেনে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই অচমকা কেউ একজন ঝাপটে ধরলো তাকে। আকস্মিক এই আক্রমনে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে সচেতন চোখে তাকাল। প্রায় সাথে সাথেই হাউমাউ কান্নার শব্দ এলো কানে। মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁপা গলায় বলল,
—-” তনুজা!”
—-” আমি পারব না। এখনই দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তুমি… তুমি প্লিজ কিছু একটা করো। নয়ত নয়ত আমাকে মেরে ফেলো তবু অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলো না। প্লিজ।”
—-” শান্ত হও তনুজা। শান্ত হও।”
তনয়া অসহায় চোখ তুলে তাকাল। ভেজা গলায় বলল,
—-” প্লিজ!”
শুভ্রব এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সংযত করে নিয়ে বলল,
—-” তুমি কি আমার সাথে যেতে চাও? তুমি চাইলে এক্ষুনি নিয়ে যাব তোমায়। বিচ্ছেদের সময় এগিয়ে আসছে তনুজা।”
তনয়া কান্না ভেজা চোখে তাকাল। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোঁটা জল। কষ্টমাখা গলায় বলল,
—-” তুমি ছোট হও এমন কিছুই করতে চাই না আমি। আর করবও না।”
—-” তনুজা প্লিজ।”
—-” আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে প্লিজ? এতোটাই শক্ত করে ধরবে যেন কারো আলিঙ্গন এই ছোঁয়া মুছে দিতে না পারে। ধরবে?”
শুভ্রব জবাব না দিয়ে তনয়ার ছোট্ট, নরম শরীরটাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। শুভ্রবের স্পর্শ পেয়েই আবারও হাউমাউ করে কেঁদে উঠল তনয়া। তাদের থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে এই ভয়ানক বিচ্ছেদের সাক্ষী হতে লাগল আরো চার জোড়া চোখ। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তনয়াকে সোজা করে দাঁড় করালো শুভ্রব। কপালে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
—-” সুখী হও।”
তনয়া বিস্ময় নিয়ে বলল,
—-” আদৌ সম্ভব?”
শুভ্রব হাসার চেষ্টা করে বলল,
—-” সম্ভব। আমার সুখের খাতাটাই আজ তোমার নামে লিখে দিলাম তনুজা। আজ থেকে আমার সব সুখ তোমার, তবু সুখী হও।”
এটুকু বলে থামলো শুভ্রব। তনয়ার চোখে-মুখে গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
—-” আমার না হয়েও স্বামী সোহাগী হও।”
তনয়া কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে পায়ে পায়ে পিছিয়ে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল। বিরবির করে বলল, ‘প্রচন্ড ভালোবাসি ‘। শুভ্রব ঠোঁটদুটো প্রসারিত করে বলল, ‘আমিও’। ততক্ষণে বাড়ির ভেতর হাক-ডাক শুরু হয়েছে। সারা বাড়িতে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি কানে আসছে। অর্পন-পুষ্পি তাড়া দিচ্ছে। তনয়া এখনও একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে হারিয়ে ফেলা ভালোবাসাটার দিকে। চোখদুটো তৃষ্ণার্ত থেকে তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠছে। শুভ্রব টলমলে চোখে মৃদু হাসল। হালকা গলায় বলল,
—-” যাও।”
#চলবে….
[ আরো বেশ খানিকটা লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে বলে লেখা হয়ে উঠল না। রি-চেইকও করা হয়ে উঠল না। দুঃখিত]