আলোয় অন্ধকার🍁পর্ব-৩

0
3038

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 3
— আমার বাধন গুলো খুলে দিন প্লিজ আমি পালাবোনা!!
.
টিয়ার কথা শুনে ছেলেটা বাঁকা হাসলো। তারপর বললো।
.
— আমি না চাইলে এখান থেকে পিপড়াও বাইরে যেতে পারেনা!! তুমি তো তাও মানুষ!!পালানোর কথা চিন্তা করলেও ভুলে যাও মিস। এনিওয়ে তোমার নাম???
.
কথা গুলো বলেই ছেলেটা উঠে টিয়ার দিকে এগুতে লাগলো।টিয়া নামকি বলবে ভয়ে বলতে শুরু করলো।
.
— আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি স্তব্ধের কেউ না৷ আমি ওর প্রাণ নই৷ ওর ওয়াইফ ওর প্রাণ। প্লিজ আমায় যেতে দিন৷ স্তব্ধ আমায় একটুও পছন্দ করেনা। আমি মরে গেলেও ও আমায় খুজবেও না…..
.
টিয়ার কথা শেষ না হতেই ছেলেটা হুংকার এর সাথে বললো।
.
— তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি??শুধু নাম টা বলবে!! আর কিছু শুনতে চাইনা!!
.
ছেলের ভয়ংকর হুংকার শুনে টিয়া প্রায় সাথে সাথেই বললো।
.
— ট… টিয়া হূরি রহমান…..
.
টিয়ার নাম শুনেই ছেলেটা একটা বিদঘুটে হাসি দিলো। তারপর টিয়ার একদম কাছে এসে ঝুকে টিয়ার বসে থাকা চেয়ারের দুই হাতায় নিজের হাত রেখে টিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো একদৃষ্টিতে।টিয়া ভয়ে চুপসে বসে আছে। চোখ দিয়ে ভয়ে আপনা আপনি পানি গরিয়ে পড়ছে। আর ছেলেটা কি জেনো বিরবির করছে টিয়া শুনতে পারছেনা!
.
— স্তব্ধ খান তোর কাছেই কেনো সব সময় হূর পরি ছুটে আসে হোয়াই?? বাট আসলেই কি?? তোর হূর পরি এখন আমার খাচায় বন্দি!! তুই চাইলেও আর এই টিয়া পাখিকে মুক্ত করতে পারবিনা আমার কাছ থেকে৷ এতে আমার লাভ দুই টা এমন হূর পরি পাওয়া গেলো ফ্রী। সাথে তোর শাস্তি!!
.
ছেলেটাকে এতো কাছে দেখে প্রচণ্ড অস্বস্তি হচ্ছে টিয়ার।শ্বাস ফেলতে পারছেনা টিয়া ঠিক করে তাই বললো।
.
— প্লিজ একটু দূরে দাড়ান আপনি!! আমি তো নাম বলেছি৷
.
ছেলেটা বাঁকা হেসে বললো।
.
— নাম টা বলেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছো মিস টিয়া!!
.
কথা টা বলেই ছেলেটা টিয়ার চোখের পলকে তার সাথে কিছু করলো বুঝে উঠতে পারলো না টিয়া।তার আগেই চোখ বন্ধ হয়ে এলো টিয়া। মুহূর্তে সব অন্ধকার হয়ে গেলো। ঢোলে পরলো ছেলেটার বুকে। ছেলেটা বাঁকা হেসে টিয়াকে কোলে তুলে নিলো আর টিয়া নেতিয়ে পরে রইলো অচেনা ছেলের কোলে। জ্ঞান টিয়া নিশ্চিত ছেলেটার মাথা ফাটিয়ে দিতো!! কিন্তু আফসোস টিয়া বুঝলোই না কিছু।
.
.
.
.
স্তব্ধ বসে আছে জেসিয়ার সামনে। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে শুয়েই আছে। থাকবে নাইবা কেনো৷ জেসিয়া কোমায় আছে আজ তিন মাস ধরে৷ এতদিন মায়া হতো স্তব্ধ ওর জেসিয়ার জন্য কিন্তু আজ হচ্ছে না ৷ মেয়েটা স্তব্ধের কথা শুনলে আজ এসব কিছুই হতো না৷ না টিয়াকে তার লাইফে আনতে হতো৷ না এখন তাকে আরো হিংস্র হতে হতো।
.
স্তব্ধ জেসিয়ার দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুই ভাবছিলো তখনি তার ফোনটা বেজে ওঠে। সে হন্তদন্ত হয়ে ফোনটা পিক করে বাইরে চলে যায়।
.
— হ্যালো??
–…..
— স্টোর রুমে নিয়ে আসো!!
.
এই টুকু বলে ফোন কেটে দেয় স্তব্ধ তারপর। টিয়াকে যেই রুমটায় রাতে কাদতে দেখেছিলো সেই রুমে যায়৷ টিয়ার ফোনটা খুঁজে বের করে স্তব্ধ ড্রেসিং এর সামনে পড়ে ছিলো ফোনটা। বেশি খুজতে হয়নি। ফোনটায় স্তব্ধের হাত লাগতেই ফোনেই স্ক্রিনে টিয়ার হাস্যজ্বল একটা কিউট পিক দেখতে পায় স্তব্ধ। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে স্তব্ধ পিকটায়। তারপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে স্টোর রুমের দিকে ছুটে সে।
.
স্টোর রুমের সামনেই আস্ফিকে দেখতে পায় কিন্তু স্তব্ধ আস্ফির সাথে কথাও না বলে সোজা স্টোর রুমে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পিছনে আস্ফিও। স্তব্ধ রুমে ঢুকে দেখতে পায়। দুইটা মাঝ বয়স্ক লোক এর হাত পা বাধা সাথে মুখ টাও। স্তব্ধ ওদের এক নজর দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার। সে আস্ফির হাত থেকে ধারালো ছুরি টা নিয়ে আর ১ সেকেন্ড ও দেরি করেনা। দুইটা লোকের শরীরেই এলোপাতাড়ি ছুরি চালানো শুরু করে এপার ওপার করে। লোক গুলো গলা কাটা মুরগীর মত ছোটফোট করছে শুধু। মুখ দিয়ে আওয়া ও করতে পারছেনা শুধু গোঙানোর শব্দ হচ্ছে ঘরে। স্তব্ধ মায়াদোয়াহীন ভাবে মেরেই যাচ্ছে মেরেই যাচ্ছে৷ তার শরীর ওদের তাজা রক্তে ভিজে গিয়েছে তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই স্তব্ধের।
.
.
.
প্রায় আধাঘণ্টা ছুরি চালিয়ে থামে স্তব্ধ। সোজা হয়ে দাড়িয়ে ছুরিটার দিকে এক নজর তাকিয়ে। তাও কিছু দূর ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর পিছনে তাকিয়ে দেখে আস্ফি নিচে পড়ে আছে। ছেলেটা স্তব্ধ ওর হিংস্রতা বেশীক্ষণ দেখতে পারেনি। রক্ত দেখে আর লোক গুলোর কাটাছেঁড়া অবস্থা দেখে সে স্তব্ধ কে থামতে বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
.
স্তব্ধ আস্ফির দিকে তাকিয়েই পকেট থেকে ফোন বের করে রক্ত মাখা হাতেই আলতো করে কাকে জেনো কল লাগিয়ে কানে রেখে বলে উঠে।
.
— স্টোর রুমে আয়!! এখানে সবকিছু আগের মত চাই।
.
বলেই ফোন রেখে একবার লোকগুলোর দিকে তাকায়৷ লোক দুইটার চেহারা বুঝার মতন রাখেনি স্তব্ধ। নারিভুড়ি বের করে ফেলেছে একদম৷ সারা ঘর রক্তে টইটুম্বুর। একনজরে সব দেখে মৃত লোক দুইটার দিকে তাকিয়েই স্তব্ধ বলে উঠে।
.
— বেঈমানী করার ফল আমি এর থেকেও ভয়ংকর ভাবে দিয়ে থাকি৷ তোদের ভাগ্য ভালো এটা আমার বাড়ী তাই অল্পতেই বেঁচে গেলি… উপসস মারা গেলি!!
.
বলেই হন হন করে স্টোর রুম থেকে বেরিয়ে। নিজের রুমে চলে গেলো। টিয়াকে যেই রুম টা স্তব্ধ দিয়েছিলো আসলে সেই রুম টাই স্তব্ধ ওর। স্তব্ধ সোজা রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। শাওয়ার অন করে প্রথমে শার্ট তারপর টিশার্ট টা খুলে। দু হাত দেয়ালে রেখে দাড়িয়ে রইলো স্তব্ধ। আর ধীরে ধীরে লোক গুলোর তাজা হাল্কা শুকিয়ে যাওয়া রক্ত গুলো স্তব্ধের শরীর থেকে ধুয়ে মুছে যেতে লাগলো।
.
স্তব্ধ নিচে তাকিয়ে আছে দেখতে পাচ্ছে পানি কিভাবে তার শরীরকে পরিষ্কার করে দিচ্ছে।
কিন্তু স্তব্ধের মন টা এই পানির বিন্দুকণা গুলো পরিষ্কার করতে পারবে না। কারণ পানি তো আর মন স্পর্শ করতে পারবেনা!! কিন্তু স্তব্ধ এর খুব ইচ্ছা করছে তার মনের চাপা কষ্ট গুলো শরীর টার মত করে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে। যাতে করে মনে আর কষ্ট না হয়! কিন্তু তা সম্ভব না। ভেবেই শাওয়ার শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসে সে৷
আস্ফির খোজ নিতে হবে ছেলেটা বড্ড ছোট এসব নিতে পারেনা তাও স্তব্ধ কে ছেড়েও পালায় না। ভেবেই তৈরী হয়ে বেরিয়ে পরে রুম থেকে।
.
.
.
টিয়ার সামনে বসে আছে তাকে কিডনাপ করা ছেলেটা!! টিয়া অজ্ঞান অবস্থায় বেডে পড়ে আছে !! ছেলেটা একটা লেডি সার্ভেন্ট কে ডেকে বললো।
.
— ওর ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দাও!! আর হ্যাঁ জ্ঞান ফিরলে ডিনার করিয়ে দিবে!! এন্ড সাবধান উল্টা পাল্টা কিছু জেনো করতে না পারে!! গট ইট?
— ইয়েস স্যার!!
.
ছেলেটা চলে যেতেই। লেডি সার্ভেন্ট ছেলেটার কথা মতন ড্রেস চেঞ্জ করে দেয় টিয়ার। চেঞ্জ করিয়ে লেডি সার্ভেন্ট রুমের বাইরে চলে যেতেই। টিয়া মাথায় দুই হাত চেপে ধরে উঠে বসে৷আশপাশে দেখেই লাফ দিয়ে উঠে টিয়া।
.
— ইয়া আল্লাহ এটা আবার কোথায়???? আমি কোথায়?? এটা আবার কোন যায়গা??
.
কথা টা বলেই দৌড়ে টিয়া দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
.
— প্লিজ হ্যাল্প কেউ আছেন। দরজা খুলুন প্লিজ।
.
বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কিয়ে টিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো ফ্লোরে। একটা মাস্টার বেড রুমে টিয়া আছে এখন। সব বিবেচনা করে টিয়ার বুঝতে বাকি নেই। সে কোনও সাধারণ ঝামেলায় পরেনি।ওকে কিডনাপ করা লোক গুলো ও সাধারণ কেউ নয়। তারা চুটকিতেই টিয়ার যে কোনও ক্ষতি করতে পারে। টিয়া দরজার সামনেই কাপতে কাপতে বসে পরলো তার প্রচুর ভয় করছে। কি হবে তার সাথে সামনে আর কি অপেক্ষা করছে?? টিয়া বিরবির করতে লাগলো।
.
— প্রত্যয় কই আপনি?? প্লিজ হ্যাল্প আমি আপনার কোথায় রাজী হয়েছিলাম স্তব্ধের শর্তে। কিন্তু দেখুন কি থেকে কি হয়ে গেলো। স্তব্ধ ওর রহস্য বের কর‍তে গিয়ে আমি নিজেই ফেসে গেলাম…… প্লিজ সামবাডি হ্যাল্প মি….. আমি বাসায় যাবো থাকবোনা এখানে! স্তব্ধ কে তুমি?? কেনো এলে আমার জীবনে?? হোয়াই!!
.
দরজায় খুট করে আওয়াজ হওয়ায়৷ টিয়া ভয়ে তারাতাড়ি দরজা থেকে পিছিয়ে উঠে দাড়ায়। আর সেই লেডি সার্ভেন্ট টা রুমে ঢুকে খাবার নিয়ে। টিয়া মহিলা কে আপাদমস্তক দেখে একটু নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করে।
.
— এটা কোথায় মানে আমি কোথায় আছি??
— ম্যাম এটা আমেরিকা আর আপনি ডেনিয়াল স্যার এর পার্সোনাল হাউজে আছেন!!
.
টিয়া চোখ বড়বড় করে বললো।
— আ..মেরিকা?
— ইয়েস ম্যাম
.
টিয়া ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো এই কথা শুনে!! আকাশ মাথায় ভেঙে পড়লেও এতো টা শক টিয়া খেতো না। যতোটা সে আমেরিকা আছে শুনে খেলো। ভয়ে টিয়া হাত পা গুটিয়ে বসে কাপতে লাগলো। সে কোনদিন একা কোথা ও এতোটা দূরে অজানা অচেনা যায়গায় কিডনাপ হবে সে ভাবতে পারেনি তারা তাকে এতদূর নিয়ে আসবে কিভাবে বা আনলো টিয়া তো কিছু টেরি পায়নি৷ আর এখন। তার মা বাবার কাছে কি করে যাবে সে ??? কি করে এখান থেকে বাঁচবে ওরা কারা ভেবেই ভয়ে টিয়া হাটুতে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো!! লেডি সার্ভেন্ট টিয়ার অবস্থা দেখে বললো।
.
— ম্যাম আর ইউ ওকে!!
— নো……….
.
টিয়া চিৎকার করে কাদতে লাগলো। তার প্রচুপ আফসোস হচ্ছে — আমার বাধন গুলো খুলে দিন প্লিজ আমি পালাবোনা!!
.
আমার কথা শুনে ছেলেটা বাঁকা হাসলো। তারপর বললো।
.
— আমি না চাইলে এখান থেকে পিপড়াও বাইরে যেতে পারেনা!! তুমি তো তাও মানুষ!!
……… এর কথা সে কেনো শুনেছে। প্রত্যয় এর কথা গুলাও যে একটা চক্রান্ত ছিলো বুঝতে বাকি নেই টিয়ার। সব দিক অন্ধকার লাগছে টিয়া সব সব……
.
.
.
চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here