আলোয় অন্ধকার🍁পর্ব-৯

0
2537

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 9
স্তব্ধ প্রত্যয় এর বসা চেয়ারটা লাথি দিয়ে ফেলে দিলো। তাতে প্রত্যয় সহ চেয়ারটা কাত হয়ে পরে গেলো। স্তব্ধ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে মৃত প্রত্যয় এর পেটে লাথি দিতে দিতে বললো!

— তোকেও আগেই মেরে ফেলা উচিৎ ছিলো বন্ধু বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম! কিন্তু এই একটা ভুলের জন্য আমি টিয়ার কিছু হতে দেবোনা!! নেভার! স্তব্ধ খান নিজের জিনিস নিজের করতে জানে!!

স্তব্ধ মারতে মারতে কথা গুলো! বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে! পরে রইলো প্রত্যয় এর মৃত বডি টা রুমে!! আস্ফি আর স্তব্ধের গার্ড রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো তারা স্তব্ধকে রুম থেকে বেরুতে দেখে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে সবাই ভয় পেলো স্তব্ধকে ভয়ংকর লাগছে দেখতে! আস্ফি রীতিমত ভয়ে ঘামছে! স্তব্ধের চোখ মুখ রক্ত লাল হয়ে আছে যেমন ভেতরে সব ভস্ম করে এসেছে সে! কপালে রাগের ভাজ স্তব্ধের ! আস্ফি ভয় পাচ্ছে রাগের মাথায় না জানি স্তব্ধ কি করে বসে যদিও স্তব্ধ রাগের মাথায় আরো স্মুক্ষ ভাবে কাজ করে! কিন্তু এবার ব্যাপার টা আলাদা যদি রাগের মাথায় কিছু করে বসে স্তব্ধ সব শেষ হয়ে যাবে। টিয়াকে পেতে যদি লিংকোনের সব ডিটেলস স্তব্ধ দিয়ে দেয় রাইজিং এর লোক দের তো…… না সে বাচবে না টিয়া! রাইজিং তখন টিয়াকে লিংকোনের ডিটেলস পেয়ে ছেড়ে দিলেও!! লিংকোন কি ছেড়ে দিবে স্তব্ধকে না! কোনদিন ছাড়বে না! মেরে ফেলবে সবাইকে! কি করবে এখন স্তব্ধ!! ভেবে পাচ্ছেনা আস্ফি!!

স্তব্ধ রুম থেকে বেরিয়ে অদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ! চোখে মুখে রাগি ভাব থাকলেও! সে কি ভাবছে বা চাইছে বা করবে কেউই বুঝতে পারছেনা!! হঠাৎ স্তব্ধ কি ভেবে আস্ফিকে কড়া গলায় বললো,

— আমাদের মধ্যে কেউ আছে আস্ফি!! যে প্রত্যয় কে জানিয়েছে আমি টিয়াকে বিয়ে করছি তাই প্রত্যয় এসব করতে পেরেছে! আমার তাকে চাই আস্ফি!! সে যেই হোক আমার কাছের মানে এখানেরি কেউ আমার চাই ওকে! এনি কোস্ট! বের কর ওকে!!

আস্ফি চুপ করে আছে সে জেনো বোবা হয়ে গেছে স্তব্ধের কোথায়! স্তব্ধ আস্ফিকে কথাটা বলেই! সন্দেহর দৃষ্টিতে আস্ফির পিছনে থাকা গার্ডদের দিকে একবার চোখ বুলালো সবাই মাথা নিচু করে আছে!! স্তব্ধের বাসার লোক না এরা! বাসার গার্ড আলাদা! ৫/৬ জন তার মধ্যে ২ জনকে মেরে ফেলেছে স্তব্ধ! আর বাহিরে স্তব্ধের সাথে ৩ জন থাকে যারা আস্ফির পিছনে দাঁড়িয়ে! এদের মধ্যে ১ জনি নিউজ টা লিক করেছে সেটা শিউর স্তব্ধ! রাগে স্তব্ধের গাঁ কাঁপছে তাই স্তব্ধ চলে গেলো আস্ফিকে আর কিছু না বলে!!

আস্ফি স্তব্ধ যেতেই তিন জনের দিকে পেছন ফিরে তাকালো! আস্ফির চেহারা থেকে বোকা ভাব যায় নি কারণ! সে এটা মানতে পারছেনা রায়হান, দিয়ান, মুগ্ধ! এই তিন জন তাদের সাথে গাদ্দারী করতে পারে! স্তব্ধের সাথে ওরা অনেক বছর ধরে কাজ করছে! স্তব্ধের গার্ডের কোন প্রয়োজন নেই তাও অদের বিশ্বাস করে সাথে রাখে সব সময়! আর এরা তিন তিন জন ও স্তব্ধ বলতে পাগল! কত বার স্তব্ধের প্রাণ বাঁচিয়েছেও ওরা তিন জন মিলে ! আর এখন কি শুনছে এসব আস্ফি?? টিয়া স্তব্ধের জন্য কি এটা স্তব্ধের আশেপাশের সবার জানা! তাও এসব কিভাবে করলো ওরা?? মানে টাকার জন্য মানুষ সব করতে পারে? বিশ্বাস ও বিক্রি করতে পারে? এত বড় ক্ষতি করতে পারে যেই ক্ষতিতে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে স্তব্ধ ?? আর ভাবতে পারলোনা আস্ফি মুগ্ধ এর কাধ ধরে লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো!

— মুগ্ধ এটা কার কাজ! দেখ আমি তোদের তিন জনকে মরতে দেখতে পারবোনা!! তোরা ভালো করেই জানিস! তিন জনের মধ্যে কে এই কাজ করেছে সেটা ভাই জানতে না পারলে! তোদের তিন জনকেই মেরে ফেলবে! সেটা আমি চাই না….

আস্ফি আর কিছু বলার আগেই রায়হান কাঁপা কাঁপা হাতে রিভলভার টা কোমর থেকে বের করে হুট করেই আস্ফির কোপালে ঠেকিয়ে ধরলো! সাথে সাথে মুগ্ধ আর দিয়ান তাদের গান বের করে একটু দূরে গিয়ে রায়হানের দিকে তাক করলো! আস্ফি বুঝলো রায়হান বিয়ের ব্যাপার টা প্রত্যয় কে জানিয়েছে! রায়হান দাঁতে দাঁত চেপে! মুগ্ধ আর দিয়ানকে বললো,

— ভুলেও সুট করার কথা ভাবিস না। নাহলে তোদের প্রিয় ছোট স্যার মরবে!

মুগ্ধ বললো,
— করবোনা সুট তুই গান নামা!

রায়হান বিশ্রী হেসে বললো,
— তা হবে না! আস্ফি স্যার আমিই প্রত্যয় ভাইকে হেল্প করেছি! টাকার জন্য সব করতে পারি আমি! বাট এখন যদি আপনি আমায় এই স্তব্ধ নামক বাঘের গুহা থেকে বের হওয়ার সুযোগ না করে দেন তো। আপনাকে সুট করে আমি নিজেও নিজেকে সুট করে দেবো। আপনি নিশ্চয় মরতে চান না……

রায়হান আর কিছু বলার আগেই পেছন থেকে কেউ সুট করে বসলো তাকে। রায়হান মাটিতে পরে কাতরাতে কাতরাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো! আস্ফির এই প্রথম কাউকে মরতে দেখে খারাপ লাগছেনা! কারণ রায়হান কে দেখে বুঝা যায় মানুষ কত খারাপ হতে পারে!

ডেনিয়াল তার রুমে দাঁড়িয়ে গ্লাস ভেদ করে বাইরের দৃশ্য দেখছে! তার পেছনে দাঁড়িয়ে আমেরিকান এক ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়ে তাকে শাসাচ্ছে!

— ডেনিয়াল?? তুমি কি করছিলে ঐ মেয়ের এতো কাছে?

ঐ সময় টিয়ার রূপে নেশাগ্রস্ত ডেনিয়াল যখন টিয়া পেটে মুখ ডুবাবে তখনি এই ধবধরে সুন্দরীর আগমন ঘটে টিয়ার রুমে! মেয়েটার আওয়াজ পেয়ে ডেনিয়াল নিজেকে সামলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মেয়েটা টিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ডেনিয়াল এর রুমে গিয়ে নক করে খুলে না ডেনিয়াল! চিৎকার করে বলে দেয় একা থাকতে চায় সে!! তাকে ডিস্টার্ব না করতে!

ডেনিয়ালের চিৎকার এ আর কিছু না বলে! মেয়েটা আবার টিয়ার রুমে যায় টিয়া এলোমেলো ভাবে পরে ছিলো বেডে! তাকে ঠিক করে শুয়াতে গিয়ে মেয়েটা বুঝতে পারে টিয়ার প্রচণ্ড জ্বর! আর গলায় লাল দাগ,হাতেও ! মেয়েটা সাথে সাথে লেডি সার্ভেন্ট ক্রিশ্চানকে দিয়ে ডক্টর ডাকায়!! ডক্টর চেকয়াপ করে বলে যায় স্ট্রেস মুক্ত রাখতে টিয়াকে সে অনেক দুর্বল এবং কোন কিছু নিয়ে ভয়ে আছে! তাকে স্পেস দেওয়ার কথা বলে ডক্টর কিছু মেডিসিন দিয়ে যায় জ্বর এর জন্য! আর ইনজেকশন দিয়ে যায় জেনো টিয়ার ঘুম ভালো হয়!!

ডক্টর চলে গেলে টিয়ার জ্ঞান হীন অবস্থায় ঘুমিয়ে যায়!! মেয়েটাও চলে যায় ঐ রাত টাও চলে যায়! মেয়েটা থেকে যায় ডেনিয়াল এর বাসায়। সকাল হতেই মেয়েটা ডেনিয়াল এর রুমে গিয়ে দেখে সে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে তাকিয়ে আর তখনি মেয়েটা জিজ্ঞেস করে ঐ সময় এর কথা! ডেনিয়াল উত্তর
দেয় না! তাতে মেয়েটা এবার রেগেই জিজ্ঞেস করে!

— ডেনিয়াল?? বলছো না কেনো তুমি ঐ মেয়েটার এতো কাছে কি করছিলে!!

ডেনিয়াল পাশের টেবিল থেকে সদ্য সার্ভেন্ট এর রেখে যাওয়া কফিটা হাতে নিয়ে চুমুক দেয়। কফি থেকে এখনো ধোঁয়া উড়ছে?? মেয়েটা কেনো জেনো আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা ডেনিয়াল কে! সে রেগেই তাকিয়ে আছে ডেনিয়ালের দিকে! ডেনিয়াল নিজের কফিটা শেষ করে!! পিছন ফিরে বলে উঠে!

— কায়রা বেইবি তোমার প্রশ্ন শেষ??

কায়রা মেয়েটা অবাক হয়ে বললো,
— ডেনিয়াল কি হয়েছে তোমার??

ডেনিয়াল কায়রাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। কাছে টেনে কায়রার ঠোঁটে ঠোঁট বসায়! কায়রা অবাক হলেও ডেনিয়ালের স্পর্শে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা আবেশে চোখ বন্ধ করে ডেনিয়ালের সাথে তাল মেলায়! বেশকিছু ক্ষণ পর ডেনিয়াল কায়রাকে ছেড়ে তাকে কোলে তুলে নেয়! আর বেডে এগিয়ে যেতে যেতে বলে!!

— লটে’স ইনজয় দ্যা মর্নিং বেইবি??

কায়রা মুচকি হেসে মুখ বারিয়ে চুমু খায় ডেনিয়ালের ঘাড়ে!! দুজন মেতে উঠে রঙিন খেলেয়!!

বেলা ১২ টায় টিয়া দুহাতে মাথা চেপে ধরে! উঠে বসে বেডে শরীরে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করছে টিয়া। নিজের হাতের কব্জি ধরে টিয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়!! হাতে ডেনিয়ালের হাতের চাপে দাগ হয়ে আছে লাল। কাল রাতের কথা মনে পরে যায় টিয়ার নিজের গলা ধরে কেঁদে দেয় টিয়া!! ভয়ে শরীল কাঁপছে!! এর মধ্যে দরজা খুবলোবার শব্দে টিয়া দ্রুত সেদিকে তাকায় ভয়ে!!

যা ভয় পাচ্ছিলো তাই ডেনিয়াল দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে! এক হাত পকেট ঢুকানো। অন্য হাতে আপেল খাচ্ছে!! দৃষ্টি তার টিয়ার গলায়!! টিয়া ডেনিয়ালের চাহুনি দেখে! নিজেকে চাদর দিয়ে ঢাকতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো!!

টিয়ার মোটেও আজ ডেনিয়ালকে ভালো লাগছেনা! ডেনিয়ালের চোখে হিংস্রতা দেখতে পাচ্ছে টিয়া! যা ওর জন্য ভালোনা!! টিয়া জানতো ডেনিয়ালের এমন একটা রূপ আছে কিন্তু সে এতোদিন সেটা দেখায়নি টিয়াকে! কি কারণে দেখায়নি তা টিয়া বুঝতে পারেনি! কিন্তু টিয়া ভালোই বুঝতে পারছিলো সব টাই অভিনয় করেছে ডেনিয়াল তার সাথে ভালো সাজার! কিন্তু ডেনিয়াল হিংস্র এটাই সত্য!! যা তার চোখে মুখে ভাসে! বিশাল বডি ডেনিয়ালের! লম্বায় খাম্বা! সোনালি ঝলমলে চুল! ঈগলের মতো তীক্ষ্ণ খোয়রি বর্ণের চোখ, তীরের মত খাড়া নাক, হাল্কা গোলাপি ঠোঁট, অতিরিক্ত ফর্শা শরীর! সব মিলিয়ে বোঝায় ই যায় সাদা বিলাই! আমেরিকান সে!

ডেনিয়ালের তীক্ষ্ণ চাহুনি দেখে! টিয়া নিজেকে শক্ত রাখতে চাইলেও খুব ভয় করছে তার কালকের ডেনিয়ালের ব্যাবহার এ!

ডেনিয়াল তার কোন ক্ষতি করে দেয় যদি তো ! ভয়ে টিয়া চাদর চেপে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! ডেনিয়াল এবার তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টিয়ার মুখে! আর এগোয় টিয়ার দিকে তা দেখে টিয়া ভয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে কাঁদতে কাদতে বলে উঠে!

— প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন! আমি কিছু জানি না! প্লিজ…..আমার সাথে কিছু করবেন না দোয়া করুণ!!

ডেনিয়াল টিয়ার কথা পাত্তা না দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতে টিয়ার একদম কাছে হাত থেকে আপেল টা ছুড়ে ফেলে। টিয়ার ঘাড়ে এক হাত রেখে টেনে টিয়াকে নিজের মুখের সামনে এনে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে!

— কিছু করতে চাইনি কিন্তু তুমি বাধ্য করেছো!!……..

চলবে!

[ আমি এতো গুছিয়ে লিখি তাও নাকি অনেকে বুঝেনা গল্প? তাদের মাথার উপর দিয়ে যায় সব! এখন এটা কি আমার প্রবলেম ধরবো না ওদের?😒]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here