#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 13
পিউ নিজেই কিছুক্ষণ বকবক করে যখন দেখলো আস্ফি কিছু বলছেনা তখন একবার ফোন এর দিকে তাকিয়ে আবার ফোন কানে রেখে বললো!
— কিরে আছিস??? হ্যালো???
আস্ফি খুবি শান্ত স্বরে বললো,
— আছি!! কংগ্রেস বিয়ের করছিস তাই! তা কবে বিয়ে !!
পিউ লজ্জিত হেসে বললো,
— সামনের সাপ্তাহে! কাল এসেছিলো দেখতে ছেলে টা খুব হ্যান্ডছাম জানিস। তাই বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছি ভালো করিনি???
আস্ফি কিঞ্চিৎ হেসে বললো,
— একদম ঠিক করেছিস। দেখা হচ্ছে বিয়েতে অকা? তুই ভালো করে শপিং কর! রাখছি!!
পিউ কপাল কুচকে দ্রুত বললো,
— এই কি শপিং কর?? তোর কষ্ট হচ্ছে না আমার বিয়ের কথা শুনে??
আস্ফি এবার উচ্চস্বরে হেসে। আবার আগের মত সোফায় শুয়ে! মিউট করা টিভির দিকে তাকিয়ে বললো,
— হাসালি পিউ!! আমার কেনো কষ্ট হবে তোর বিয়ের কথা শুনে???
পিউ যেনো শক খেলো আস্ফির কথায়। পিউ চুপ করে রইলো। আস্ফির এহেম বিহেভিয়ার খারাপ লাগছে পিউ এর! আস্ফি এক্টু বললো ও না তাকে বিয়ে করিস না পিউ! সে তো মজা করেই বলেছে এমন কিছু শুনার জন্য! কিন্তু আস্ফি তেমন কিছুই বললো না৷ বরং আস্ফির নতুন রূপ দেখলো পিউ! এত ডোন্ট কেয়ার ভাব আস্ফির??
আস্ফি হঠাৎ বললো,
— পিউ ফান, ড্রামা এগুলার একটা লিমিট আছে! যদিও এগুলা সব জায়গায় যায় না! আমি ট্যান্স ছিলাম দুদিন তোর ফোন বন্ধ পেয়ে! পিউ আমি যেমনি হইনা কেনো আই লাভ ইউ! তাই চিন্তা হয় আমার তোর জন্য! কিন্তু তুই আমায় বুঝতেই পারিসনি কখনো! না পারার কথা? কজ তুইতো আর আমায় ভালোবাসিস না তাই না! ফাইন তুই ফান করে বলেছিস বা যাই করে বলেছিস তুই বিয়ে করেনে। আমি তোকে আর জ্বালাতন করবো না। ইভেন আমার ফেইসও তোকে দেখাবো না। টেক কেয়ার, গুড বায় !
আস্ফি আর এক সেকেন্ড সময়ও পিউকে দিলোনা কিছু বলার। ফোন কেটে দিলো।
পিউ তাও হ্যালো হ্যালো করলো। কিন্তু ঐপাশ থেকে আস্ফির ভয়েস আর শুনা গেলোনা৷ পিউ ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দিয়ে আজ পানি পড়ছে আস্ফির বলা কথা গুলোয়৷ আস্ফির কথা গুলো পিউ এর মনে দাগ করছে আজ। আস্ফি আর পিউ এর সামনে আসবে না বিরক্ত করবে না এটা জেনো পিউ ভাবতেই পারছেনা! পিউ তো ফান করেই কথাটা বলেছিলো। শুধু দেখতে আস্ফি কি বলে? পিউ নিজেই বলতে লাগলো।
— কেনো ফান করে এই কথা বলতে গেলাম আমি । আর কেনোই হারামি টা বলে ফেললো আমার সামনে আসবেনা? আমায় জ্বালাবে না ? আমার মনে আগুন জ্বালিয়ে সে নাকি আমায় আর জ্বালাবে না! রে কুত্তা হারামি জ্বালিয়ে তো দিয়েছিসই এবার পানি ঢাল আগুন নিভাতে!
পিউ ভ্যা ভ্যা করে কাদছে ইদানীং পিউ এর শুধুই আস্ফির কথা মাথায় ঘুরে! ব্যাপার টা ঐ সন্ধ্যার পর থেকেই হচ্ছে পিউ এর সাথে। তাই পিউ রাগ করে ফোন বন্ধ করে রেখেছে যেনো আস্ফি আর কল দিতে না পারে৷ তবে আস্ফির থেকে এবার পিউ নিজেই পুরেছে ফোন বন্ধ করে আস্ফির সাথে কথা বলতে না পেরে! আজ না পেরে পিউ ফোন অন করতেই আস্ফির মেসেজ দেখে পিউ এর মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চাপলো আস্ফিকে জ্বালাতন করার। তাই এই কথাটা বলেছে আস্ফিকে বাট কে জানতো? হিতে বিপরীত হয়ে যাবে!!
পিউ বার বার কল দিচ্ছে আস্ফিকে। তার মনে হচ্ছে এখন যদি আস্ফি ফোন না ধরে তো পিউ মরেই যাবে! পিউ এর কানে এখুনি আস্ফির ভয়েস চাই মানে চাই! কিন্তু না আস্ফি ফোন রিসিভ করছে না। পিউ নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে লাগলো!
এদিকে আস্ফি পটেটো ফ্রাই খাচ্ছে! আর ম্যাচ দেখছে। টিভিতে বাংলাদেশ / ইন্ডিয়ার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে৷ ম্যাচ টায় বাংলাদেশ জিতবে আস্ফি ভীষণ খুশী৷ আড় চোখে পিউ এর আসা কলেও নজর দিচ্ছে আস্ফি যা তাকে এক পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে আস্ফি মনে মনে বললো,
— বেইবি অনেক পুড়িয়েছো কল দিতে থাকো। তোমার কলি আমার বুকের আগুন নিভাতে সাহায্য করবে৷ যেটা তুমি তোমার বিয়ের কথা বলে ধরিয়েছো৷ হিহি পিউ তুমি ফেসে গেছো বেইবি এই আস্ফির চক্করে এবার আমার খেলা দেখবে। অনেক ঘুরিয়েছো এবার সব সোধ তুলবো!!
বলেই আস্ফি ফোন অফ করে দিলো। আর ট্রিকেট ম্যাচ দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো! একদিকে আস্ফি ফোন অফ করে দিয়েছে দেখে পিউ এর নাজেহাল অবস্থা।
.
স্তব্ধ ড্রাইভ করছে৷ পাশের সিটে পোর্টার বসে। লেজ গুটিয়ে বসে দুইপায়ে ভর রেখে বাইরে দেখছে পোর্টার!! স্তব্ধ হঠাৎ বললো!
— পোর্টার??
উত্তরে পোর্টার স্তব্ধের দিকে তাকালো। স্তব্ধ কিছুক্ষণ পড় আবার বললো!
— তুমি কি জানো সব থেকে বোকামি কাজ কি??
পোর্টার সেই থেকে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে। এবার পোর্টার উত্তরে ঘেউ ঘেউ করলো! স্তব্ধ এক নজর পোর্টার এর দিকে তাকিয়ে বললো,
— পাবো না জেনেও বেশী ভালোবাসা! একটা বোমামি!
পোর্টার কি বুঝলোকে জানে? সে দ্রুত তার সিট থেকে উঠে স্তব্ধের দুই হাতের মাধ্যে ঢুকে স্তব্ধের কোলে বসে স্তব্ধের সাথে মিশে রইলো। এটা দেখে স্তব্ধের চকলেট কালো ঠোঁট দুটো হাল্কা প্রশারিত করে বললো!
— আই নো পোর্টার তুমি সব সময় আমার পাশে আছো!!
জবাবে পোর্টার ঘেউ ঘেউ করে আস্তে আস্তে মিয়িয়ে গেলো৷ স্তব্ধ আর কিছু বললোনা। পোর্টার সেভাবেই বসে রইলো স্তব্ধের কোলে। যেমন স্তব্ধকে একা ফিল করতে দিবেনা পোর্টার….বেশকিছু ক্ষণ ড্রাইভা করার পড় স্তব্ধ তার গন্তব্যে পৌঁছে গাড়ী থামালো! গাড়ীর দরজা খুলতেই পোর্টার আগে লাফ দিয়ে নেমে স্পীডে দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। স্তব্ধও গেলো পিছন পিছন। স্তব্ধ হেটে একদম তার বাবা রুমে ঢুকে দাড়ালো!
পোর্টার আগেই এসে স্তব্ধের বাবার গা ঘেষে বসে আছে বেডে। আর স্তব্ধের বাবা কবির খান পোর্টারকে আদর করে দিচ্ছে৷ দেখেই বুঝা যাচ্ছে দুজনের মধ্যে অনেক ভাব।
স্তব্ধ তার বাবার কাছে এসে সালাম দিলো। কবির উত্তর দিয়ে বললো!
— এতো দেরি করলে কেনো?? আরও আগে আসতে কতদিন দেখিনা পোর্টারকে!
পোর্টার ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। যেনো অভিযোগ দিচ্ছে! আমি আসতে চাই কিন্তু তোমার ছেলে আমায় নিয়ে আসেনা। কিছুক্ষণ ঘেউ ঘেউ করে পোর্টার উঠে লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে চলে গেলো রুম থেকে। কেনোনা সে জানে এখন তার মালিকেরা জরুরি কথা বলবে! কবির পোর্টার এর কাজে হেসে বললো।
— এর জন্যই আমার তোমার কুকুর টাকে এতো ভালোলাগে সব বুঝে!!
— হ্যাঁ সব বুঝে… বাবা তোমার শরীল ভালো তো! আসলে ঝামেলা ছিলো তাই আসতে পারিনি!
কবির কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কি করে ভালো থাকি যার ছেলে ভালো নেই!!
স্তব্ধ এবার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— কাম অন বাবা! আই এম অল রাইট!
কবির হেসে বললো,
— তোমায় শক্ত আমি বানিয়েছি! যখন তোমায় শক্ত বানিয়েছি তখন থেকেই জানি তোমার মন কতটা নরম আর কি…তাই আমায় বুঝাতে এসোনা!!,
স্তব্ধ আর কিছু বললো না বলে লাভও নেই৷ সবার চোখে ফাকি দিতে পারলেও এই ব্যাক্তির সাথে পারবে না। কারণ ইনি বাবা। মা বাবার কাছে সব বলতে হয় না তারা এমনি বুঝে যায়! স্তব্ধকে চুপ থাকতে দেখে কবির বললো,
— আমি একটা গুড নিউজ দিতে তোমায় ডেকেছি!
স্তব্ধ দ্রুত বাবা চোখের দিকে তাকালো কথাটা শুনে স্তব্ধের এর কান গরম হয়ে গেছে। মূহুর্তে হার্ডবিট দ্রুত চলতে লাগলো স্তব্ধ ওর। সে ভালোই জানে গুড নিউজ টা কি হতে পারে।
কবির স্তব্ধের অবস্থা বুঝে বললো,
— তুমি যেটা ভেবেছো তাই!!
স্তব্ধ ওর দ্রুত জবাব,
— কিন্তু বাবা এটা কিভাবে সম্ভব?
— স্তব্ধ… বাপের ও বাপ থাকে! ওরা যদি নিজেকে বাপ ভাবে থাকে তো তাদের ও বাপ আছে নিশ্চয়। আর সবারি রায়হানের মতন টাকার প্রয়োজন আছে!
কবির বেডে আধ শোয়া হয়ে বসে ছিলো।
স্তব্ধ বাচ্চাদের মতন বাবাকে জরিয়ে ধরলো এই কথা শুনে সে বললো।
— বাবা এটা তোমার দেওয়া বেস্ট বার্থডে গিফট আমার জন্য! আই লাভ ইউ!!
কবির ছেলের পিঠে হাত রেখে ভাবতে লাগলো। দুনিয়ায় কাছে তার পাথর ছেলেটা এখনো বাবার সামনে বাচ্চাদের মত ব্যবহার করছে! বাইরের কেউ হয়তো এটা বিশ্বাসই করবে না! নিজেই নিজের ছেলেকে এতোই শক্ত বানিয়েছে যে এখন স্তব্ধ ওর এই এক খণ্ড শক্ত মুখের হাসি দেখতে তিনি নিজের জীবন টাও দিয়ে দিতে পারেন। স্তব্ধের কথায় ধ্যান ভাঙে কবিরের!
স্তব্ধ হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাড়িয়ে বলে,
— বাবা আমি আজি যেতে চাই প্লিজ বাবা!!
কবির হেসে নিজের বালিশের তলা থেকে একটা টিকেট স্তব্ধের হাতে দিয়ে বললো,
— কাল ফ্লাইট তোমার সন্ধ্যা ৬ টায়! এখন তুমি বাসায় যাবে আস্ফি, মুগ্ধকে সব বুঝিয়ে দেবে এদিকটা সামলাতে! আর জেসিয়ার খেয়াল রাখতে বলবে! তারপর একটা লম্বা ঘুম দিবে খেয়ে৷ আমি জানি তুমি টিয়া কিডনাপ হওয়ার পর থেকে খাওয়া ঘুম ছেড়ে দিয়েছো! এটা ঠিক নয়। যেতে হলে আমার কথা শুনেই যেতে হবে৷
স্তব্ধ বাধ্য ছেলের মতন বললো,
— ওকেই ড্যাড আমি যাচ্ছি!
স্তব্ধ চলে যাওয়ার আগেই কবির পিছু ডাকলো। স্তব্ধ বললো,
— বলো বাবা?
— ডেনিয়ালকে তুমি মারবে না স্তব্ধ!
স্তব্ধ বাঁকা হেসে বললো,
— ইয়াহ শিউর!
— আর শোনো পোর্টার আমার কাছে থাকবে! তুমি আশার আগ পর্যন্ত!
স্তব্ধ দুই হাত হাল্কা মেলে বললো,
— বাবা?
— প্লিজ মাই সোন!
স্তব্ধ রুম থেকে বেরুতে বেরুতে বললো,
— ডান বায়!!
— বায় ডিয়ার কথা হবে৷
স্তব্ধ চেচিয়ে বললো,
— ওকে ড্যাড…
স্তব্ধ তার বাবার এক তলার এই ছোট্ট বাড়ীটা থেকে বেরিয়ে দেখলো পোর্টার গাড়ীর উপরে উঠে বসে আছে হাতপা গুটিয়ে। স্তব্ধ গিয়ে কিছুক্ষণ আদর করে দিয়ে বললো।
— তুমি বাবার সাথে থাকবে! আমি মিশনে যাচ্ছি! পারবেনা আমায় ছাড়া থাকতে??
পোর্টার উত্তরে ঘেউ ঘেউ করলো। যার অর্থ তুমি তোমার বাবা কথায় রাজী হয়ে ঠিক করোনি৷ স্তব্ধ আস্তে করে বললো,
— সরি তুমি তো জানো আমি বাবার কথা ফেলতে পারিনা!
পোর্টার আর কিছু না করে লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে চলে গেলো ভেতরে। স্তব্ধ পোর্টার ভেতরে যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে রইলো। তারপর গাড়ীতে বসে টিকেটে তাকিয়ে বললো!
— আম কামিং টিয়া পাখি আর জাস্ট দুইটা দিন……..
চলবে!
[আনফ্রেন্ড হতে না চাইলে প্লিজ কেউ নেক্সট লিখবেন না আমি আনফ্রেন্ড করতে করতে ক্লান্ত! গঠন মূলক কমেন্ট করুন এতে নেক্সট পার্ট আরো সুন্দর হবে]