আলোয় অন্ধকার পর্ব-৪৩

0
2603

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 43 (প্রথম অংশ)

সারাদিন টিয়া আর স্তব্ধের সাথে একটা কথাও বলেনি। দূরে দূরেই থেকেছে ওর থেকে। স্তব্ধ ও ওর সাথে কথা বলতে একবারো চেষ্টা করেনি৷ সেটা ভেবেও টিয়ার গা জ্বলে যাচ্ছিলো। একটু ও ভালোবাসেনা খারুসটা ওকে। তাহলে কি এভাবে ওকে রাগ করে থাকতে দিত? কখনইনা! হাজার টনেক অভিমান নিয়ে টিয়া রাতে রুমে ঢুকতেই পেছন থেকে ধারাম করে দরজা লাগানোর শব্দ হলো। টিয়া চমকে দ্রুত পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো। স্তব্ধ তীক্ষ্ণ চোখ জোরা ওর উপর নিবদ্ধ বরখে গেলো টিয়া! স্তব্ধ কিছুটা ওর দিকে এগিয়ে আসলে। দু তিন পা পিছিয়ে দাঁড়ালো টিয়া। কেমন গাঁ ভয়ে শির শির করছে স্তব্ধকে দেখে। এলোমেলো চুল তার, ব্ল্যাক শার্ট, স্লিভ গুলো কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা বুকের দিকে কয়েকটা বোতাম খোলা, ব্ল্যাক জিন্স। চেহারায় কেমন রাগী রাগী ভাব! নাকের ডগাটা কেমন লাল হয়ে আছে? চোখ দু টো বরাবরই তীক্ষ্ণ কালো। এই মুহূর্তে যেন আরো একটু বেশিই তীক্ষ্ণ লাগছে! সব মিলিয়ে বলিষ্ঠ দেহ হতে রূপ উপচে পরছে!

স্তব্ধ টিয়ার একহাত দূরে দাঁড়িয়ে ভ্রুকুঞ্চন করে অসহায় রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
–” যানো এই পৃথিবীতে আমাকে কে সব থেকে বেশি বুঝতে পারে?”

টিয়া অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়েছে! এই মুহূর্তে এমন একটা প্রশ্ন আশা করেনি! স্তব্ধ এক দৃষ্টে উত্তরের আশায় তাকিয়ে ওর দিকে! টিয়া নিজেকে ধাতস্থ করলো! অতঃপর কে সব থেকে বেশি বুঝে স্তব্ধকে! সেটা বলতে গিয়ে দেখলো। কে বুঝে স্তব্ধকে সব থেকে বেশি সে ও জানেনা! আশ্চর্য হয়ে গেলো টিয়া! ও জানে স্তব্ধকে টিয়া ভয়ংকর ভাবে ভালোবাসলেও স্তব্ধকে ও কখনওই বুঝে উঠতে পারেনা! তাই ও তো নয়ই! তাহলে আস্ফি? না বাবা হয়তো! হ্যাঁ এটাই ফাইনাল করে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে বলল,
–” বাবা?”

স্তব্ধ মাথা দুলালো! বলল,
–” ইউ রঙ! ”

টিয়া অবাক স্বরে বলল,
–” তাহলে কে?”

স্তব্ধ টিয়ার হাত টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
–” পোর্টার! ”

টিয়া এবার চিন্তিত হয়ে পরলো! এই পোর্টার কে? ছেলে না মেয়ে নামে তো বোঝাই যাচ্ছে না। কিন্তু ভাবনা চিন্তায় বেশি মনোযোগ দিতে পারলোনা। স্তব্ধ টিয়ার ঘারে ছোট ছোট চুমু খাচ্ছে শব্দ করে! টিয়া কেমন বেসামাল হয়ে যাচ্ছে তাতে চিন্তা শক্তি লোভ পাচ্ছে। ধীরে ধীরে স্তব্ধের স্পর্শ গুলোও কেমন বেসামাল হয়ে যাচ্ছে! নিজেকে ঠিক না রাখতে পেরে টিয়া স্তব্ধের শার্টের কোণা খাঁমচে ধরলো। তাতে স্তব্ধ মাতাল চোখে টিয়ার দিকে চোখে তুলে তাকালো। টিয়া খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে! গাল দুটো লাল হয়ে আছে! ঠোঁট জোড়া কাঁপছে! স্তব্ধের নজর সেদিকে যেতেই অস্থির হয়ে টিয়ার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। নিজের ঠোঁটে স্তব্ধের ঠোঁটের তীব্র স্পর্শ পেতেই টিয়া একবার চোখ খুলে তাকালো স্তব্ধের দিকে। স্তব্ধের চোখের কোনা বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রুকণা গরিয়ে পরছে। টিয়া তাতে হতবিমহ্বল হয়ে গেলো সেটা দেখে। তারপর সারারাত একটা প্রেমময় রাত হিসেবে ঘোষিত হলো। স্তব্ধ পাগলের মতো তার প্রিয়শীকে নিজের করে নিলো। আর টিয়া স্তব্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতেই ব্যাস্ত ছিলো! কেন দেখবে না। সেখানে যে ওর জন্য অসংখ্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছিলো। যেটা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছে যেন টিয়ার সামনে স্তব্ধ। টিয়ার আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব রইলোনা মনে এরকম একটি ভালোবাসার মানুষের সাথে সারাজীবন অনায়াসে পার করে দেওয়া যায়! সারাজীবন!

স্তব্ধ টিয়াকে শক্ত করে যখন শুয়ে তখনও টিয়া স্তব্ধের চোখের দিকেই তাকিয়ে! টিয়া ভেবেছিলো স্তব্ধ গভীর ঘুমে মগ্ন! কিন্তু স্তব্ধের হঠাৎ ঘুম জোরানো কণ্ঠে কথা বলায় টিয়া ভরখে গেলো,
–” এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু মারাত্মক লাগে!”

টিয়া চোখ বড় বড় করে বলল,
–” মানে!”

স্তব্ধ চোখ খুলে টিয়ার সাদা চোখ জোরায় রাখলো! টিয়া আর স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে থাকার শক্তি পেলো না। স্তব্ধের চোখ প্রচণ্ড অন্যরকম লাগছে আজ। মারাত্মক মাতাল মাতাল। স্তব্ধ ফিসফিস করে বলল,
–” এভাবে কি দেখছিলে?”

টিয়া অন্য দিকে ফিরে আস্তে করে বলল,
–” আপনাকে! স্তব্ধ?”

স্তব্ধ টিয়াকে আরেকটু শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে বলল,
–” হু?”

টিয়া এবার স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে বলল,
–” আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি?”

স্তব্ধ ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,
–” কত বেশি? ”

–” অনেক বেশি এতটা বেশী! যে চোখ বন্ধ করে আমি সারাজীবন শুধু আপনার সাথে কাটাতে পারবো!”

স্তব্ধ হঠাৎ গম্ভীর চোখে টিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা কথা গুলো বলতে বলতে চোখে অশ্রুবিষর্জন দিচ্ছে! কান্নার তীব্র কর্ষণে ঠোঁট ভেঙে আসছে! সেই কম্পনীত ঠোঁট জোড়ায় তাকিয়ে স্তব্ধের অনেক স্বার্থপর হতে ইচ্ছে করলো। প্রিয়োশীকে সারাজীবন আগলে রাখতে এটুকুতো করতেই পারে ও! ভেবেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–” আমার জন্য কী কী করতে পারবে বল?

টিয়া দ্রুত জবাব দিল,
–” সব করতে পারবো!”

স্তব্ধের দ্রুত প্রশ্ন,
–” আমাকে ভালোবেসে নিজ পরিবার ত্যাগ করতে পারবে সারাজীবনের জন্য? ”

টিয়া চকিতে তাকালো স্তব্ধের দিকে তাকালো! স্তব্ধ শীতল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে! স্তব্ধ এমন কিছু বলবে ভাবতে পারেনি ও। কিছু সময় স্তব্ধের চোখে তাকিয়ে থেকে হুট করে রুঢ় কন্ঠে বলল,
–” হ্যাঁ পারবো!”

স্তব্ধ কিছুই আর বলল না। তবে মুখভঙ্গিতে ব্যবহারে বুঝা গেলো সে হুট করেই রেগে গিয়েছে। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে নাক ফুলিয়ে, ভ্রু কুঁচকে, রেগে টিয়ার কাধে সর্বশক্তি দিয়ে একটা কামড় বসিয়ে দিলো৷ টিয়া চোখ ভর্তি পানি নিয়েও খিলখিল করে হাসছে। স্তব্ধ কিছু না বলে ওকে বুকে টেনে নিলো!
———–

ঝলমলে এক দুপুরে পিউ আস্ফির সাথে দেখা করতে এসেছে ক্যাফেতে কিন্তু অদ্ভুত আস্ফি ওর হাত টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। তারপর নিজে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল! গাড়ি ঠিক সেদিনের স্থানে থামলো। পিউ আস্ফির দিকে একটু তাকাচ্ছেনা। আস্ফি সেটা দেখে ও পাত্তা দিচ্ছেনা। ভনিতা না করে পিউয়ের না তাকিয়েই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–” পিউ আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি! ”

পিউ কেন যেন হেসে উঠলো আস্ফির কথা শুনে। যেখানে ওর কাঁদার কথা মন খারাপের বৃষ্টি হওয়ার কথা সেখানে পিউ উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বলল,
–” আমাকে কেন বলছিস সেটা? তোর প্রেম প্রত্র মেয়েটাকে দিয়ে হেল্প করতে হবে নাকি আমায়?”

আস্ফি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
–” তেমন কিছু করতে হবে না! সেসব আমি ম্যানেজ করে নিবো! তুই শুধু আজ টিয়া তোর সাথে দেখা করতে গেলে বলবি! তুই আমাকে ভালবাসিস না! না আমার সাথে কোনও প্রকার যোগাযোগ রাখতে চাস!”

পিউ একবার আস্ফির দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলল,
–” ঠিকাছে বলে দিবো! ”

এতসহজে পিউ আস্ফি কথা মেনে নেওয়ায়। আস্ফি বিস্মিত চোখে পিউ এর দিকে তাকালো! মেয়েটার মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। বাকি সব শীতল যেন কিছুই হয়নি! আস্ফির বুকটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে! তবুও এটুক কষ্ট পাগলিটার জন্য ও করতেই পারে! ওর ভাবনার মাঝেই পিউ বলে উঠলো,
–” তোর কথা শেষ? আমি কি চলে যেতে পারি?”

আস্ফি হুট করে পিউকে বাম হাত টেনে নিজের কাছে আনলো সর্বশক্তি দিয়ে জরিয়ে ধরলো! পিউ কোনও প্রকার রিএ্যক্ট করলো না! চুপ করে রইলো চোখ বন্ধ করে পুরোটা সময়। পিউ এই অনুভূতি টুকু নিজের মনে সারাজীবনের জন্য গেঁথে রাখতে চায়! ও জানে আস্ফি আজকের পর ওর ধরাবাধার বাহিরে হয়ে যাবে হয়তো আর কখনও দেখাও হবে না হয় তো! তাহলে কি হবে ঘৃণা করে। থাক না কিছু সময় এভাবে! পিউ সব মেনে নিতে শিখে গেছে এই কিছু দিনে! এই যেমন মা বাবা অতি আদরের কণ্যাও একদিন বাবা মার অতি আদদের থাকেন। সেখানে আস্ফির ভালোবাসা সারাজীবন থাকবে ভাবাটাও বোকামী। ওতো আস্ফির জন্য কিছুই করেনি। আস্ফি পুরোটা সময় ওর থেকে কষ্টই পেয়েছে! আস্ফি ওর থেকে ভালো কেউ ডিজার্ভ করে! সর্বপরি আস্ফি ভালো থাকুক তার জন্য পিউ সব করতে পারে। আস্ফিকে চিরজীবনের জন্য ভুলতেও পারে! কেননা আস্ফি এখন এটাই চায়!

এক সময় আস্ফি চাইতো ও ভালোবাসুক আস্ফিকে! আর এখন চায় ভুলে যাক ও! সময় আসলেই পরিবর্তনশীল! আজ হারে হারে টের পাচ্ছে পিউ!

—————-

২ বছর পর,

একের পর এক কলিং বেলর শব্দে টিয়া দ্রুত কোলে থাকা ঘুমন্ত ৪ মাসের বেবিটাকে লিভিং রুমে কাউচে শুইয়ে দিয়ে দরজা খুলতে দৌড় লাগালো প্রায়! দরজা খুলে কাউচে তাকিয়ে থেকেই বলল,
–” স্তব্ধ মাত্রই না গেলে? নিশ্চয়ই কিছু ফেলে রেখে গেছো? ”

উত্তর সারাশব্দ কিছুই না পেয়ে টিয়া দরজার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো! মুহূর্তে যেন শরীরের সকল শক্তি বিনষ্ঠ হয়ে গিয়েছে! রক্ত হীম হয়ে গিয়েছে! নড়বার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে! যদিও টিয়ার দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু শরীর সেটা পারছেনা। এদিকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি টিয়াকে পরখ করে দেখতে ব্যাস্ত! টিশার্ট আর জিন্সে বাঙালি নারীর ছোঁয়া না পাওয়া গেলেও। দু বছর আগের টিয়ার সাথে বেশ পার্থক্য আছে! আগের থেকে সৌন্দর্য যেন হাজার গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। চোখে মুখে উপচে পরা মায়ার সাগর, উচ্ছ্বাস, খুশি, প্রান ভরা স্নিগ্ধ! কই তার কাছে যখন টিয়া ছিলো। মুখে ভীতি, শংকা আতংক এসব ছাড়া কিছুই ছিলো না এই মিষ্টিমুখ জুড়ে! সাদা চোখ জোড়ায়! কান্নারাই ভীরে থাকতো! আজ এই চোখ শুধু স্তব্ধের জন্য ভালোবাসার ঢেউ আর কিছুই নেই!

ডেনিয়াল এগিয়ে খুলে রাখা দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই টিয়া নিজের আয়েত্তের বাহিরে থেকেই দু তিন পা পিছিয়ে যায়! ডেনিয়াল সেদিকে একবার তাকিয়ে অদ্ভুত হাসে! সেই হাসি টিয়ার কাছে আগের মতো ভয়ংকর মনে হলো না। বরং এতে কিছু ধাতস্থ হলো। ডেনিয়াল থেমে নেই ও হেটে গিয়ে কাউচে শুইয়ে রাখা বাঁচ্চাটার পাশে বসলো! ধবধবে ফর্সা বাচ্চাটা অবিকল স্তব্ধের মতো দেখতে প্রচন্ড মায়ায় ভরা চোখ দুটো বন্ধ! ডেনিয়াল ভ্রু কুঁচকে টিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
–” আমি ভেবেছিলাম বেবি টা সম্পূর্ণ তোমার মতো দেখতে হবে! বাট দেখতে একদম আমার শত্রুর মতো হয়েছে! ভেবি বেড! তবুও আমি ওকে একটু কোলে নিতে চাই! ক্যান আই?”

টিয়া ডেনিয়ালকে ওর সন্তানের কাছে এগুতে দেখে ভয়ে কেঁদে ফেলেছে ঠিক তখনি ডেনিয়ালের কথা ও থমকে গেলো! অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো সুদর্শন লোকটার মুখে! ডেনিয়াল টিয়াকে শক খেতে দেখে আর কিছু না বলে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো! টিয়ার জানটা ঢিপঢিপ করছে সাংঘাতিক দ্রুত! তবুও জানটা হাতে নিয়ে ও মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে! কিছু ক্ষণ কোলে তুলে ডেনিয়াল তাকিয়ে রইলো বেবিটার দিকে। টিয়া লক্ষ্য করলো ডেনিয়ালের চোখ চিকচিক করছে! ঈগলটা কাঁদছে? টিয়া হতবিহ্বল হয়ে গেলো যেন! ও কি বাস্তব দেখছে না স্বপ্ন? এটাকি সত্যি ডেনিয়াল?
টিয়াকে কয়েগুন অবাক করে দিয়ে ডেনিয়াল বলে উঠলো,
–” টু ম্যাচ কিউট! নাম কি ওর?”

টিয়া যেন বোবা হয়ে গেছে কিছু বলবে দূর মুখ খুলে শ্বাস নিতে পারছেনা! ঠিক তখনি ও স্তব্ধের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো,
–” আরিয়ান! ওর নাম আরিয়ান, ওর চাচ্চু রেখেছে! আরো কিছু জানতে চাও তুমি ডেনিয়াল?”

টিয়ার শরীরে মুহূর্তে যেন শক্তি সঞ্চয় হলো ও দৌড়ে গিয়ে স্তব্ধ এর বাহু জড়িয়ে ধরলো। স্তব্ধ বুঝলো টিয়া ভয়ে কাঁপছে! স্তব্ধ সাথে সাথে টিয়াকে জরিয়ে ধরলো। টিয়া ফুপিয়ে বলল,
–” স্তব্ধ? আরিয়ান!”

স্তব্ধ টিয়াকে আরেকটু শক্ত করে ধরে আশ্বাস দিলো কিছু হবেনা। টিয়া মানলোনা স্তব্ধের বুকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে! টিয়াকে স্তব্ধের বুকে কাঁদতে দেখে ডেনিয়াল বুঝলো! আর কিছু ক্ষণ এখানে থাকলে ও নিজের ভালো মাইন্ড ধরে রাখতে পারবেনা! এক্ষুণি একটি সুন্দর ছোট্ট পরিবার ওর হাতে ধ্বংস হয়ে যাবে৷ যা ও একদমি চায়না! তবে সত্যি বলতে নিজের প্রিয় অজান্তেই ভালোবেসে ফেলা মেয়েটাকে অন্য একজনের বুকে ও দেখতে পারছে না। বুকে আগুন জ্বলছে ধাউ ধাউ করে! যার উত্তাপ প্রচণ্ড তীক্ষ্ণ!

ডেনিয়াল বাচ্চাটা কোলে নিয়েই স্তব্ধ টিয়ার সামনে আসতে লাগলো। সত্যি বলতে জীবনে তৃতীয় বার স্তব্ধের বুকটা ভয়ে কাঁপছে আজ! অস্থিরতা, বুকে তীব্র এক হারিয়ে ফেলার ব্যাথায় ফেঁটে যাচ্ছে যেন বুক। তবুও স্তব্ধ শীতল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো ডেনিয়ালের মুখে! ডেনিয়াল এর মুখ আজ পরা যাচ্ছে না সেকি চায় কেন এসেছে এখানে! স্তব্ধ এর প্রচণ্ড ভয় পাওয়ার কারণ শুধু মাত্র ডেনিয়ালের কোলে ওর এবং টিয়ার জীবন অদের বাচ্চাটা!

স্তব্ধ টিয়াকে অবাক করে দিয়ে! ডেনিয়াল আরিয়ানকে স্তব্ধের কোলে তুলে দিলো। স্তব্ধ যেন জীবন ফিরে পেলো তাতে। খুব গোপনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো! ডেনিয়াল স্তব্ধের কোলে আরিয়ানাকে দিয়ে টিয়ার দিকে তাকাতেই। টিয়া স্তব্ধের পিছনে লুকানোর চেষ্টা করলো!
সেটা দেখে ডেনিয়াল এক মুহূর্ত দেড়ি না করে বাহিরে দিকে হাটা
দিলো! স্তব্ধ সেদিক তাকিয়ে রইলো শুধু! ডেনিয়াল ওকে দেখা মাত্র একটা শুট করেনি সেটাই অবাক করেছে ওকে। আর ওর এভাবে চলে যাওয়ায় জীবনে প্রথমবার সত্যিকার অর্থে বিস্মিত করেছে স্তব্ধকে। টিয়া নিজেও এরকম রিএ্যক্ট আশা করেনি ডেনিয়ালের থেকে! টিয়ার কি হলো ও জোরে ডেনিয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–” ধন্যবাদ তোমাকে ডেনিয়াল! আমাদের একা ছেড়ে দেওয়ার জন্য!”

ডেনিয়াল দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো পিছনে ফিরে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে বলল,
–” টেক কেয়ার অফ ইউর ফ্যামিলি! ”

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here