আলো_আঁধার part_14

আলো_আঁধার
part_14
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.

তবে শেষ হোক সকল অপেক্ষা, ভেঙে যাক দু’মনের দেয়াল। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে প্রতিধ্বনি তুলুক দূর আকাশের উজ্জীবিত চাঁদ। সাক্ষী হয়ে থাকুক হাজার হাজার নক্ষত্র। বয়ে যাক দু’জনের আনন্দের সুভাস চারদিকে৷

মুখে হাসির রেখা টেনে ছাদের দরজায় পা রাখতেই আচমকা একটানে আলোকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আঁধার। আলো অবাক নয়নে তাকায় আঁধারের দিকে। তাহলে কি আজ আঁধার বলবে আলোকে সেও ভালো ভালোবাসে।
আলোর চোখ আঁধারের দিকে আবার বিস্ময় নিয়ে তাকায় আঁধারের ঠোঁটের কোণায় রক্ত। রক্ত কিন্তু কেন? আলোর ভয় লাগছে আঁধারের ঠোঁটে রক্ত কেন আসবে সে তো এতক্ষণ ভালোই ছিলো। চোখ দুটো কাঁপছে আলোর, আঁধারের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশে থাকাতেই দেখে সানি নিচে পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। আলোর শরীর কেঁপে উঠলো সানিকে এমন ভাবে পড়ে থাকতে দেখে। আর কিছু বুঝার আগেই ফায়েজ রাইসা ও তার পরিবারের সকলে এসে ছাদে জড় হয়। কেউ ডেকেছে ওদের মনে হচ্ছে। সবার উপস্থিতিতে একটা শোরগোল পাকিয়ে গেছে

আঁধার সামনে এগিয়ে সকলের উদ্দেশ্য
‘ আমি আর আলো এখনি বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিতে চাই। রাইসা আর ফায়েজ কাল আসুক। আর আংকেল কি হয়েছে সবটা রাইসার থেকে জেনে নেবেন।

আঁধার আলোর হাত শক্ত করে ধরে নিচে নিয়ে আসে।
রুমে ঢুকে একে একে সব কাপড় ব্যাগে রাখছে আঁধার। আলো চুপ করে সাইডে দাঁড়িয়ে নিরবে কান্না করছে৷ আঁধার কিছুই বলছে না আলোকে। আঁধার কিছু না বলায় আরো ভয় লাগছে আলোর।

আঁধার নিজে নিজেই আলোর আর তার বের করা সব কিছু প্যাক করে নেয়। তারপর আলোর সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকে। আলোও মাথা নিচু করে আছে। আঁধার আর কোন কিছু না ভেবে৷ আলোকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

রাইসার আব্বু আঁধারকে ধরে
‘ বাবা দেখো যা হয়েছে তা তো আর বদলাতে পারবো না তোমরা কাল সকালে যাও। রাইসা আর ফায়েজও তোমাদের সাথেই যাবে। এতো রাতে যদি তোমরা ফিরে যাও আমি ও বাড়িতে সবার কাছে মুখ দেখাবো কিভাবে? আর বেয়াইন সাহেবকে মুখ দেখাবো কিভাবে?

আঁধার রাইসার আব্বুর হাত দুটো ধরে
‘ আংকেল আপনাকে চিন্তা করতে হবে না আমি সব সামলে নেবো। কিন্তু এখন যেতে হবে প্লিজ।

রাইসা খুব ভালো করেই জানে আঁধার কেমন মানুষ তাই ওর আব্বুকে আর বাধা দিতে মানা করে।

আলো এখনো বসে কান্না করছে। আঁধারের বিরক্তি লাগছে ভীষণ। এতো কান্না করার কি আছে? একটা মানুষ তো কান্না করতে করতেও থামে কিন্তু এই মেয়ের থামার কোন নাম নেই। কি প্রমান করতে চাচ্ছে সে কান্না করে ভেবে পাচ্ছে না আঁধার ।

আঁধার এইবার রাগে টগবগিয়ে
‘ তুমি কান্না থামাবে নাকি গাড়ি কোথাও ধাক্কা খাওয়াবো? না টেনশন করো না তোমার কিছু হবে না তোমায় বের করেই খাওয়াবো। আমি মরলেই তখন শান্তি পাবে স্টুপিড।

আলো আঁধারের মুখে এমন কথা শোনে কান্নার আওয়াজ আরো বাড়িয়ে দিলো।
আঁধারও রাগ করে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
এই বার দেখবে আলো কি করে! আলো আঁধারকে গতি কমাতে বলছে কিন্ত আঁধার কমাচ্ছে না।
আকস্মিক আঁধার গাড়ির হার্ড ব্রেক চেপে ধরে। আলো কিছু বুঝে উঠার আগে গাড়ি একজনকে পিছনে ফেলে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলোর ভয় লাগছে কিছু হয়নি তো উনার? যদিও গাড়ি লাগেনি তেমন ভাবে। আঁধার গাড়ির ব্রেক ধরে সাইড করে উনার পাশ কাটিয়ে নিয়ে এসেছে। আঁধার তার সিটবেলটা খুলে তারাহুরো করে গাড়ি থেকে নেমে অপরিচিত লোকটার কাছে যায় কিছু হয়েছে কিনা দেখার জন্য, আঁধারের পিছু পিছু আলোও গাড়ি থেকে নেমে অপরিচিত লোকের কাছে যায়। অপরিচিত লোকটি একজন মেয়ে

আলো উনাকে উদ্দেশ্য করে
‘ আপনি ঠিক আছেন?
মেয়েটা মাথা তুলতেই আলো অবাকের উচ্চতর পর্যায়ে চলে যায়, মাথা ভন ভন করতে শুরু করে

ততক্ষণে আঁধার মেয়েটাকে গিয়ে সামলে নেয়। বলতে গেলে জড়িয়ে ধরে

‘ তিন্নি!! তিন্নি তুমি এখানে কি করছো? কোথায় ছিলে তুমি? ঠিক আছো তুমি?

তিন্নি রাস্তায় পড়ে যাওয়াতে তার হাতের কনুই ছিলে যায় আর মাথায় একটু ব্যথা পায়।

‘ আমি ঠিক আছি তেমন কিছু হয়নি।

আলো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে, কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না।

আঁধার আলোর দিকে তাকিয়ে
‘ আলো তিন্নিকে ধরো গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে হাত আর কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আলো আর কিছু না ভেবে তিন্নির এক হাত তার কাধে রেখে তিন্নিকে ধরে। দুজনে মিলে তিন্নিকে গাড়িতে বসায়।
আলো তিন্নিকে রেখে সামনে আঁধারের পাশে বসতে গেলে আঁধার নরম সুরে

‘ আলো তুমি তিন্নির কাছেই বসো। ওকে ধরে রেখো।

আলো মুখটা মলিন করে কোন উত্তর না দিয়ে তিন্নির কাছে গিয়ে বসে৷

আলোর আকাশ কুসুম চিন্তা যেন ঘিরে ধরেছে আবার। এখন কি হবে? আঁধার তো তিন্নিকে আর কোথাও যেতে দেবে না তাহলে কি এখন আঁধার আলোকে ছেড়ে দেবে? আর কি থাকবে সে আলোর কাছে? আলোর মাথার যন্ত্রণাটা আবার শুরু হয়েছে। তবে তিন্নিকে দেখে আলোর ভালো লাগছে ভীষণ। সাথে ভয়ও হচ্ছে আঁধারকে হারানোর ভয়। আঁধার তাকিয়ে আছে গাড়ির লুকিং গ্লাসে।

তিন্নিকে নিয়ে আঁধারের বাড়ি আসতেই সবাই বড়সড় একটা ঝটকা খায়। তিন্নি তাও এতো রাতে! আঁধার আর আলোর সাথে কি করছে তিন্নি? সবাই ভাবছে । আর আঁধার আলো তো আজ রাইসাদের ওখানে থাকার কথা ছিলো তাহলে এখানে কি করছে?!

আঁধারের আব্বু চিন্তিত গলায়
‘ আধার তুই তিন্নিকে কোথায় পেলি? আর এতো রাতে তুই তো ওখানে থাকার কথা।

আঁধার তার বাবার দিকে তাকিয়ে
‘ আব্বু সব পরে বলছি আগে তিন্নিকে ব্যান্ডেজ করতে দাও। কনুই ছিলে গেছে আর কপালেও ব্যথা পেয়েছে দেখছো-ই তো। আমার গাড়ি ওর শরীরে লাগতো আজকে ভাগ্যিস তেমন কিছু হয়নি।

আঁধার ফাস্টএইড বক্স এনে তিন্নির কপালে আর কনুইতে মলম দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

আলোর মতো মমতা জাহিদও নিরব দর্শকের মতো শুধু দেখছে কিছু বলছে না। কিন্তু ফায়েজের মায়ের মুখ বন্ধ রইলো না। কেন চলে গেলো এমন হীরার টুকরো ছেলেকে রেখে ব্লা ব্লা অনেক কিছুই বললো।

আঁধারকে হারিয়ে ফেলার ভয় আবার ভীষণ ভাবে চেপে ধরেছে আলোকে। অবশ্য আঁধার কখনো তার ছিলোই না তবুও হারানো ভয় কেন লাগছে আলোর?

আনিশা আলোর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে
‘ কি করে হলো এসব? তিন্নিকে কোথায় পেলি তোরা?

আলো মাথা নুইয়ে
‘ তিন্নি আমাদের গাড়ির নিচে পড়তো আজ একটুর জন্য বেঁচে গেছি সবাই।

আনিশার উত্তরটা পছন্দ হয়নি। তাই আবার জিজ্ঞেস করলো
‘ কিন্তু তুই আর ভাইয়া এতো রাতে গাড়ির ভিতরে কি করছিলি? তোরা তো রাইসাদের বাসায় থাকার কথা এখন।

সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে মমতা জাহিদ উঠে দাঁড়িয়ে
‘ তিন্নিকে সকালে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবি।
যা জানার বা বুঝার সব পরে দেখা যাবে।

এদিকে আঁধারের মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তিন্নিকে তার সব প্রশ্নের উত্তরই দিতে হবে। কিন্তু তিন্নির এখন বিশ্রাম প্রয়োজন তাই কিছু না বলে ওকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায়।
.
.
.
পরদিন খুব ভোরে রাইসা আর ফায়েজ চলে আসে৷ বলতে গেলে ওদের রাতটা কোন ভাবে পাড় করেই রওনা দিয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্য। আঁধার খুব রেগে ছিলো তাই বাড়ির অবস্থা নিয়ে টেনশন করছিলো ফায়েজ। রাইসাও কম যায়না সমান তালে চিন্তা করতে করতে দুজনেই বাড়ি এসে উপস্থিত হয়৷ সানির ঘটনা নিয়ে আঁধার আলোকে কিছু বলেছে কিনা বা ভুল বুঝেছে কিনা রাইসা বুঝে উঠতে পারছে না।
রাইসা আনমনা হয়ে কিচেনে ঢুকে দেখে আলো রান্না করছে তাই রাইসাও সুযোগ পেয়ে আলোর কাছে গিয়ে
‘ আলো……….

চলবে….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প দিতে বিলম্ব হওয়ার জন্য দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here