আলো_আঁধার
part_15
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.
নীরবতাও আর নীরব থাকতে পারছে না তার শব্দ করতে ইচ্ছে করছে তাও আলোর নীরবতা ভাঙছে না। রাইসার ডাকে আলোর কোন পরিবর্তন আসেনি। কিছু মনোযোগ দিয়ে ভাবছে নয়তো ইচ্ছে করে জবাব দিচ্ছে না।
রাইসাও দমে যাওয়ার মানুষ নয় তাই আবার ডাক দেয় কিন্তু আবারো আলোর কোন প্রতুত্তর নেই। রাইসা আলোর কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখতেই একটু চমকে যায় আলো৷
রাইসা বুঝতে পেরে আলোকে তার দিকে ফিরিয়ে
‘ কিছু ভাবছিলে? আঁধার ভাইয়া কি কিছু বলেছে গতরাতে?
আলো তরকারির ঢাকনা সরাতে সরাতে বললো তিন্নিকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। তুমি এখন যাও তিন্নির জন্য তারাতাড়ি নাস্তা নিয়ে যেতে হবে ওর রুমে।
রাইসা প্রচন্ডরকম অবাক হয়ে
‘ তিন্নি!! তিন্নি কোথায় থেকে আসলো? গতকাল তো সানিকে নিয়ে সমস্যা হয়েছে।
আলো চুপ চাপ তরকারি নামিয়ে গ্যাস বন্ধ করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
রাইসা তার জায়গায়ই এখনো অবাক হয়ে দাঁড়িয়েই আছে। বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে, একটার পর একটা মসিবত কেন আসছে আলোর জীবনে!
আলো রুমের দিকে পা বাড়াতেই মমতা জাহিদ ডাক দেয়। আলো পিছনে ফিরতেই মমতা জাহিদ কাছে এসে দাঁড়িয়ে
‘ সব কিছু ঠিক আছে আলো?
আলো মুচকি হেসে
‘ হ্যা মামুনি সব ঠিক আছে।
মমতা জাহিদ ধীরস্থির ভাবে
‘ কিছু বলবি আমায়?
আলোর কান্না পাচ্ছে এমন প্রশ্নে অনেক কিছু বলার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু মমতা জাহিদকে শুধু জড়িয়ে ধরলো। মমতা জাহিদ আলোর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে
‘ তোকে কাছে রাখার জন্য তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম না তো? ভয় হচ্ছে এখন আমার আলো।
আলো মমতা জাহিদের কথা শুনে একটু নয় অনেকটা অবাক হয়। যিনি এক হাতে পুরো সংসার সামাল দিয়েছে ভয় নামক জিনিস যাকে কখনো ভয় দেখাতে পারনি তিনি আজ কেন ভয় পাচ্ছে?
আলো মমতা জাহিদকে ছেড়ে দুইহাত ধরে আস্বস্ত করতে
‘ সব ঠিক আছে মামুনি ভয় পাওয়ার কিছু নেই আর যদি হয়ও আমি সামলে নেবো কথা দিলাম।
মমতা জাহিদ আলোর দুহাতে চুমু দিয়ে
‘ আচ্ছা রুমে যা।
আলো সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর ভাবছে তার ভয়ের কথা কাউকে বলাই হলো না আদৌ কি হবে? আঁধার এখনো তিন্নিকে ভালোবাসে এই বন্ধন তার কাছে নাম মাত্র। আলো নিজের রুমে না গিয়ে আনমনে তিন্নির রুমে চলে যায়।
আলো নক করতেই তিন্নি ভিতরে যেতে বলে।তিন্নি বসে বসে ফোন টিপছে ফোনের ভেতরে কিছু দেখে হাসছে। আলো চুপচাপ পাশে ওর পাশে গিয়ে বসে। তিন্নি কিছুক্ষণ পর ফোন রেখে
‘ সরি একটা জিনিস দেখছিলাম।
আলো ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে
‘ এখন কেমন আছো?
তিন্নি ঠোঁট দুটো চিকন করে একটা হাসি দিয়ে
‘ হুম ফিল মাচ বেটার।
আলো ইতস্ততভাবে তিন্নিকে প্রশ্ন করে বসলো
‘ গতকাল রাস্তার মাঝে কি ভাবে আসলে? মানে ওখানে কি করছিলে? যদি গাড়ি লেগে যেতো কি হতো ভাবতে পারছো?
তিন্নি আলোর দিকে এবার সম্পুর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকালো
‘ তুমি কি ইনডিরেক্টলি আমায় দোষ দিচ্ছো? দেখো দোষ কিন্তু তোমার হাজবেন্ডের। আঁধার অনেক স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিলো আমি রাস্তা পাড় হয়ে যেতে পারবো ভাবছিলাম কিন্তু বিদ্যুৎ গতিতে গাড়ি চলে আসায় কি হয়েছে বুঝতে পারিনি।
আলোর কেমন যেন একটা খটকা লাগছে এতো রাতে তিন্নি রাস্তায় কি করছিলো আর ওদের গাড়িতেই কেন? তিন্নি ইচ্ছাকৃতভাবে আসেনি তো আবার?
আলোকে ভাবতে দেখে তিন্নি নিজেই বলছে
‘ আসলে আমার একটা বান্ধুবির জন্মদিন ছিলো। গাড়ি নিই নি তারপর আসার সময় ও ড্রপ করতে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি মানা করে দিয়ে একাই বাসায় যাচ্ছিলাম। আর তোমাদের গাড়ির নিচে যেতাম । বাই দ্যা ওয়ে তোমরা এতো গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলে কেন? মরার শখ নাকি?
আলো মুচকি হেসে
‘ আসলে আঁধার আমার সাথে রাগ করেই এতো গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলো।
তিন্নির নজর এবার নিচে চলে গেলো কিছু ভেবে আবার আলোকে প্রশ্ন করলো
‘ তুমি ভালো আছো আলো? আঁধার মেনে নিয়েছে সব? আঁধার…..
তিন্নিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আলো বলে উঠে
‘ কেন ওই দিন চলে গিয়েছিলে তিন্নি? আমি তো এমন চাইনি। আমার চোখে আমাকে ছোট করে দিয়ে চলে গেলে। আঁধার তোমাকে……
তিন্নি আলোকে থামিয়ে
‘ আঁধার তোমাকে ভালোবাসে আর সেটা সে বুঝতে পারবে। বলেছিলাম না? কখনো সুযোগ হলে অনেক গুন বেশি ফিরিয়ে দেবো। আমি আবার তোমাদের সাথে দেখা হোক চাইনি তাও দেখা হয়ে গেলো।
ওদের কথার মাঝে রাইসার আগমন ঘটে। রাইসাকে দেখে তিন্নি রাইসার দিকে তাকায়
আলো বুঝতে পেরে
‘ ফায়েজের সাথে রাইসার বিয়ে হয়েছে।
তারপর তিন্নি একটু হেসে রাইসার দিকে তাকিয়ে
‘ তোমার সাথে আমার দুইবার দেখা হয়েছিলো এখন নিয়ে তিনবার। প্রথমবার দেখার পর দ্বিতীয়বার যখন দেখা হয়েছিলো তখন জেনেছিলাম তুমি ফায়েজের ভালোবাসার মানুষ আর তৃতীয়বার দেখায় জানলাম তুমি তার স্ত্রী। দেখো তো কত গুলো মানুষ কষ্ট পেতো যা হতে যাচ্ছিলো তা যদি হতো৷
রাইসা মুচকি হেসে প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য
‘ এখন কেমন আছো?
‘ হুম ভালো। আলো আঁধার ভাইয়া তোমায় খু্ঁজছে, যেতে বললো৷ আর আমি তিন্নিকে নাস্তা দিয়ে যাচ্ছি।
তিন্নির মুখটা মলিন করে।
‘ না আমি সবার সাথে টেবিলে বসেই খাবো।
রুমের দরজা খুলতেই দেখে আঁধার চুল আচড়াচ্ছে আলো দৌঁড়ে গিয়ে আঁধারকে জড়িয়ে ধরে পিছন দিক থেকে। আলোর এমন আচরণে ভেবাচেকা খেয়ে যায় আঁধার। হঠাৎ আলোর কি হয়েছে এমন করছে কেন? আলো চোখ জোড়া বন্ধ করে দু’হাত দিয়ে আঁধারের বুকের শার্টে খামচি দিয়ে ধরে।
আঁধার কিছু বুঝতে না পেরে আলোর মুষ্টি করা হাতে ধরে
‘ কি হয়েছে আলো? এমন করছো কেন?
আলো চোখ মুখ খিচে
‘ ভয় লাগছে আমার আঁধার।
আঁধার এবার একটু রাগ করে।
‘ ভয়! কিসের ভয় এখন? এখন কি রাত?
আলোর কিছু একটা মনে আসতেই আঁধারকে ছেড়ে দেয়। আঁধার আলোর দিকে ঘুরে
‘ কিসের ভয় আলো? বলো।
আলো মাথা নিচু করে
‘ জানি না আমি কেন যেন আমার ভয় লাগছে।
আঁধার চুপ থেকে আয়নার দিকে ঘুরে শরীরে পারফিউম দিতে দিতে
‘ ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার কালো মোজা গুলো কোথায়?
আলো চুপ চাপ আঁধারের মোজা বের করে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। কি দরকার ছিলো আঁধারকে ভয়ের কথা বলার? সে কি কখনো বুঝেছে আলোর ব্যথা? তাহলে আজ বলে কি হবে?
নাস্তা করে তিন্নি সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য সবাই নরমাল দেখালেও আসলে কিছু নরমাল নেই। সবাই কেমন গুমোট হয়ে আছে।
আঁধারের পাশেই বসেছে তিন্নি আজ। আঁধারের কি বলা উচিত করা উচিত বুঝতে পারছে না৷ আঁধার এখন একজন বিবাহিত পুরুষ চাইলে সে যা ইচ্ছে বলতে পারবে না। তবুও মন যেন মানছে না। আজ এই নিস্তব্ধতা বাস করতো না দুজনের মাঝে যদি না তিন্নি সেদিন চলে যেতো। চলে গিয়ে কি সে খুব ভালো করেছে? সব কি ঠিক হয়ে যাবে? আঁধার কি সত্যিই ভালোবাসে আলোকে? কিন্তু সে তো তিন্নিকে ভালোবাসতো।
আঁধার তিন্নির দিকে তাকিয়ে
‘ চুপ হয়ে আছো যে?
তিন্নি অল্প হেসে
‘ তুমিও তো চুপ।
‘ কেন চলে গেলে সেদিন তিন্নি? এমন না করলেও পারতে তাহলে আজ সব কিছুই….
আর কিছু বললো না আঁধার কেন যেন থেমে গেলো কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না আর। গতরাতেই অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কিন্তু এখন কেন হচ্ছে না?
তিন্নি আঁধারকে চিন্তায় দেখে
‘ কেন কি হয়েছে সব কিছুই তুমি জানতে পারবে আঁধার। তুমি তোমাকে চিনতে পারোনি এখনো। চলে গিয়ে ভালোই করেছি একদিন তুমি নিজেই বলবে।
আঁধার সারা রাস্তায় আর কোন কথা বলেনি। কিছু বলতে ইচ্ছেও করছিলো না৷
.
.
.
মমতা জাহিদের কাছে একটা ফোন আসতেই মমতা জাহিদ ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে। আলো কাছেই ছিলো দৌড়ে মমতা জাহিদের কাছে গিয়ে
‘ মামুনি! মামুনি কি হয়েছে? কে কি বলেছে ফোনে? …….
চলবে………
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।