আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১০
ভরা চাদের মৃদু আলোয় চারদিকে রুপালী আভায় জরিয়ে গেছে! চাদ টাকে একটুকরো রুপার খন্ড মনে হচ্ছে!
পৃথবীতে চাদের জোছনার মত সৌন্দরয্য বোধহয় আর কোথাও নেই!
জোছনার সাথে সাথে শীতের হার কাপানো বাতাসটাও প্রবল ভাবে কাপনি ধরাচ্ছে টায়রার শরীরে! ভেজা চুল থেকে টপ টপ করে পানি পরে টিশার্টা ভিজে গেছে অনেকটা!
সাথে মুখটা আর গলা-ঘাড় বেয়ে-ও ফোটা পানি পরছে!
অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে টায়রা! শুনসান নিরবতা চারদিক!
আজ হঠাৎ করে কেনো জানি এই শেষ রাতে জোছনা বিলাস করতে মন চাইলো!
– এতো রাতে এখানে কি?
হঠাৎ পেছনে লাজুকের কন্ঠে ভারী আওয়াজ পেতেই লাফিয়ে উঠে পিছন মুড়ে তাকালো টায়রা! লাজুক হাতে কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে!
‘এই লোকটা যে কেনো এতো কফি খায়?’ ভাবতে লাগলো টায়রা!
চোখের পলক সরিয়ে নিয়ে টায়রা মিনমিনে গলায় জবাব দিলো,
– কিছু না, এমনি এসেছি!
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো লাজুক, তারপর আবার টায়রার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো,
– রাত 3:47 বাজে এখন! এতো রাতে শাওয়ার কেনো নিয়েছো?
– রার..রাতে দি-এর গায়ে হলুদের সময় রিমপি ওরা গায়ে হ..হলুদ মাখিয়ে দিয়ে ছিলো! আর পুরোটা সন্ধ্যাই হুড়হুড়ির ম..ম..ধ্যে কেটেছে!
আপনি তো জানেনই আমার এ..এলার্জির প্রবলেম আছে! এমনই তাই শাওয়ার নিয়েছি, নয়তো শশ..শরীর চুলকাতো!
কথা গুলো বলে একপলক লাজুকের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো সে!
লাজুকের স্থির দৃষ্টি এখন টায়রার মুখে, চুল থেকে গরিয়ে পরা ঠোটের উপর ফোটা ফোটা জমে থাকা পানি গুলোর দিকে!
টায়রার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আশেপাশে কিছু একটা খুজতে লাগলো লাজুক! তা দেখে টায়রা প্রশ্ন করলো,
– কি..কিছু কি খুজছেন?
– হুমম! ছাদে যে কাপড় গুলো শুকতে দেয়, সে গুলো কোথায় রাখে?
হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে,
– ঐ যে বড় রুমটাতে!
– আচ্ছা! [ হাতের কফির মগটা টায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে ] এটা খেয়ে নেও, শীতের এতো রাতে শাওয়ার নিয়েছো কোল্ড হতে পারে! আর সারাদিনের ক্লান্তিটাও চলে যাবে!
লাজুকের দিকে তাকিয়ে করুন মুখ করে টায়রা বললো,
– আমি এটা খাবোনা! আপনি অনেক তেতো কফি খান! ইয়াক! আমি খেতে পারবো না!
লাজুক চোখ রাঙিয়ে ধমক দিয়ে বললো,
– আমি খেতে বলেছি! খাবে কি না জিগ্গেস করিনি!
বাধ্য টায়রা, লাজুকের ভয়ে সেই কফিটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো!
আর সাথে সাথে চোখ নাক কুচকে করুন হাল করে নিলো! গাঁ গোলাচ্ছে তার, ‘এতো তেতো কফি কেমনে খায় লাজুক? এর জন্যই বোধহয় তার সব কথাই এমন তেতো তেতো!’ কথা গুলো আপন মনে ভাবতে লাগলো টায়রা!
টায়রাকে কফি খেতে দেখে লাজুক চলে গেলো সেই রুমটার দিকে, একটু পরে হাতে সাদা একটা টাওয়াল নিয়ে ফিরে এলো!
ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে টায়রা লাজুকের হাতের টাওয়ালটার দিক! এটা দিয়ে সে কি করবে বুঝছে না টায়রা!
পাশের চেয়ারটা টেনে এনে টায়রার সামনে রেখে, লাজুক বললো,
– এখানে বসো!
চুপচাপ তাই করলো টায়রা! লাজুক টাওয়ালটা নিয়ে টায়রার সামনে দাড়িয়ে তার চুল মুছে দিতে লাগলো!
হতভম্ব টায়রা চুপ করে আছে! এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার ছোট্ট হার্ট টা বেরিয়ে যাবে!
আলতো হাতের ছোয়ায় ধীরে ধীরে মুছে দিতে লাগলো লাজুক টায়রার লম্বা চুলো গুলো!
এই মুহূর্তে টায়রা সেই সুপার এ্যাটিটিউড ওয়ালা লোকটা কে খুজে পাচ্ছে না এই লাজুকের মাঝে! লাজুক ওর চুল মুছে দিচ্ছে ভাবা যায় এগুলো!
এতো সব কিছুর মাঝে কোনো এক নতুন অনুভূতি নাড়া দিচ্ছে টায়রার ছোট্ট মন আর শরীরে !
লাজুকের শরীর থেকে এক আমাইক মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছে সে!এই গন্ধ আগেও কয়েক বার পেয়েছে!তা খুবই অল্প-সল্প! তবে আজ প্রবল ভাবে পাচ্ছে, যা কোনো এক নেশার আবরনে আচ্ছাদিতো করছে ওকে!
লাজুকের এতো কাছের উপস্থিতিতে, ওর ছোট্ট রূদয়টা ধুকধুক করছে! হাত পা ঝিম ঝিম করছে কেমন!
চুল মোছা হতেই সরে দাড়ালো লাজুক টায়রার থেকে!
মাথা নিচু করে বসে টায়রা,হাতের মগটার দিকে তাকিয়ে!
– কি হলো এভাবে চুপ করে বসে কেনো? কফিটা খেতে বললাম তো!
– খেয়েছি, আর খেতে পারবো না!
টায়রার কথা শুনে চুপচাপ লাজুক ওর হাত থেকে কফিটা নিয়ে নিজে খেতে লাগলো!
বিস্মিত চোখে তাকিয়ে টায়রা! একবার লাজুক-কে দেখছে, আর একবার কফির মগটার দিকে! ওর আধ-খাওয়া কফিটা লাজুক খাচ্ছে!
লাজুকের চোখে চোখ পরতেই অন্য দিকে ফিরে গেলো সে! লাজুকের থেকে মন সরিয়ে চাদ দেখায় মন দিতে চেষ্টা করতে লাগলো!
এমন সময় লাজুকের আওয়াজ,
– এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে থাকার দরকার নেই! রুমে যাও!
লাজুকের কথায় ঘাড় নেড়ে ওখান থেকে চলে গেলো টায়রা!
কফিতে আরো এক চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো লাজুক!
_____________________
জমজমাটই সাজে সেজে উঠেছে পুরো বাড়ি, বাড়ির প্রতিটা সদস্য মেতে উঠেছে বিয়ের ব্যাস্ততায়! কেউ কাজে-কেউ বা সাজে!
টায়রা বাদে বাকি চারজন মানে রিমপি,রিমি,তিতলি,নিশু তারাও মেতে আছে ব্যাস্তোতায়! বর্ষার শশুর বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা!
বর্ষার সাথে আজ তারাও যাবে!
এসব কিছুই দেখে যাচ্ছে এক কোনে বসে টায়রা! মন খারাপ তার! কারন লাজুক সরাসরি বলে দিয়েছে, সে কোথাও যেতে পারবে না! আর লাজুকের কথার অমান্য হওয়ার সাধ্য কই ওর?
তাই বেচারি চুপসানো মুখ নিয়েই বসে আছে!
টায়রার মন খারাপ দেখে চার বোনই এসে ঘীরে বসলো তাকে!
– মন খারাপ করিস না তুই! আমরা ভাইকে বলে দিবো যাতে কাল তোকে নিয়ে চলে যায় আমাদের কাছে! ব্যাস আজ রাত টুকু কাল দিনটা অপেক্ষা কর!
রিমির কথায় মৃদু হাসলো টায়রা!
– আমি ঠিক আছি! চিন্তা করিস না তো!
পাশ থেকে নিশু বললো,
– ভাইকে কত করে বললাম, আমরা তো আছিই প্রবলেম হবে না! কিন্তু তারপরও রাজি হলো না!
“ভয়ে, তার পিচ্চি বউ কে আবার কে না কেউ পটিয়ে নিয়ে যায়” বিড়বিড় করে বললো কথাটা!
নিশুর লাস্ট কথাটা টায়রা না বুঝলেও বাকিদের বুঝতে সমস্যা হলো না! মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো বাকিরা! টায়রাকে অবাক চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিতলি বললো,
– এসব কথা বাদ দে, চল রেডি হতে হবে! আর লেট করা যাবে না!
– হু! চল!
বরযাত্রি-রা এসে গেছে অনেক আগে! এখন তাদের খাতির যত্নে ব্যাস্ত সবাই!
নাচ গানও শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে! টায়রা,তিতলি,রিমি,রিমপি,নিশু চারজনে মিলে বর্ষাকে নিয়ে এলো স্টেইজের ওখানে! তাকে সিংহাশনে বসিয়ে চারপাশ দিয়ে ঘীরে দাড়ালো পাচজন!
সবার পরনে এক ড্রেস! আর তাদের পাচ জনের ড্রেসের সাথে বর্ষার পরনের লেহেঙ্গারও মিল অনেক!
তাই সহজেই সবার নজর কারছে এই ছয় সুন্দরী! এই ছয় বোনেরই সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে বাধ্য যে কোনো মানুষ!
তবে এদের মাঝে টায়রার গায়ের রঙটা অনেকটা বেশিই ফর্সা! যেমনটা দুধে আলতা রঙ হয়!
তাই এতো গয়নার ভিতরে মুখের আদোলটা আরো ফুটিয়ে তুলেছে!
মোর্শেদা এগিয়ে এলো ওদের দিকে!
– বাহ্ ছয় জন হুর পরী একসাথে! মাশাল্লাহ্!
মোর্শেদার কথার পিঠে টায়রা বলে উঠলো,
– দিদুন ছয় পরী নয় বল সাত পরী! পরীরা সব সময় সাত জনই থাকে! তুমি তো হলে আমাদের মহারানী, হুসনে কি রানী ‘মালেকা তুজ জাহুরা’!
টায়রার কথায় মোর্শেদা দুষ্টুমি করে বললো,
– হুসনের কি দেখেছো পুতুল! যখন যুবোতী ছিলাম তোমার দাদা তো দেখেই ভিরমি খেয়ে পরেছিলো সাতদিন! বিয়ের পরতো পাচ বছর পর্যন্ত আমার পিছন ছোটাতে পারিনি!
মোর্শেদার কথায় হেসে উঠলো সবাই!
বর্ষা বললো,
– তাই তো তোমাকে ভিষন ভালোবাসতো দাদা! শুনেছি তোমাকে ছেড়ে দাদা নাকি কোনো দিন একা বাইরে বিজনেস টুরে যায়নি! তোমাকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে উঠতো!
– কেনোই বা বাসবে না! আমাদের সুইট দিদুন এখনও তো সুইট 16 মনে হয়! তখন তো আরো সুইট ছিলো!
রিমপির কথায় হিহি করে হাসতে লাগলো বাকিরা!
_________________
– সবাই এক সাথে কত সুন্দর ডান্স করছে দেখ! তুই আর টায়রাও একটু ডান্স করনা! আমার অনেক দিনের ইচ্ছা আমার বিয়েতে তুই ডান্স করবি!
বর্ষার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালো টায়রা!
হাহ! যে কি না ওকে সহ্যই করতে পারে না! কথায় কথায় ধমকায়, সে কি না ওর সাথে কাপল ডান্স করবে! ইম্পসেবল, কখনো সম্ভব না!
কথা গুলো ভাবতে লাগলো টায়রা! এর মধ্যেই লাজুকের কথা শুনে হাজার ভোল্টেজের শকড খেলো টায়রা!
– তুই আমার কাছে কিছু চাইলি আর আমি দেইনি! এমন টা কখনো হয়নি! আর আজও হবে না!
কথা গুলো টায়রার সামনে গিয়ে ওর দিকে হাত বারিয়ে দিলো!
হতভম্ব টায়রার এবারে চোখ খুলে বেরিয়ে আসার মত দশা!
লাজুক আর ওর সাথে ডান্স…..! লাইক রিয়েলি?
টায়রাকে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেই হাত টেনে নিয়ে গেলো ডান্স ফ্লোরে!
তারপর ডিজে এমন একটা সং প্লে করলো যা শুনে টায়রার এবার হার্ট ফেইল হওয়ার যোগার!
‘এত্তো ইনটেন্স আর রোমান্টিক সং-এ লাজুক টায়রার সাথে ডান্স করবে?’ ভাবতেই টায়রার আত্মা লাফাচ্ছে!
টায়রাকে নিয়ে লাজুক ডান্স শুরু করতেই লজ্জায় টায়রার নাই নাই অবস্থা!
এমন একটা রোমান্টিক সং-এর সাথে তাল মিলিয়ে লাজুক যে ভাবে মুভমেন্ট গুলো করছে, যে টায়রার দম বন্ধ হয়ে আসছে!
কেসে কাহু ইষ্ক মে তেরে কিত্না হু বেতাব মে,
আখোসে আখে মিলাকে চুরালু তেরে খোয়াব মে(2)
মেরে ছায়ে হে সাথ মে,
ইয়ার আজ জিস জাগা তুম হো…!
মে যো জী রাহাহু…..
ওয়াজা তুম হো..
ওয়াজা তুম হো….(2)
হে এ্যা নাশা, ইয়া হে জেহের,
ইস পেয়ার কো হাম কেয়্যা নাম দে! (2)
কাবসে আধুরি হে এক দাসতা,
আজা উসে আজ আনজাম দে!
তুম হে ভুলু কেসে মে…
মেরি পেহলি খাতা তুম হো…. ..
মে যো জী রাহাহু…..
ওয়াজা তুম হো..
ওয়াজা তুম হো….(2)
নাচের মাঝে লাজুকের হাতের স্পর্শ টায়রার পেট কোমড়, হাতে লাগতেই টায়রার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিলো!
এই ছোট শরীরে এক সাথে এতো শকড হজম করতে পারছে না সে!
নাচের ছলে হলেও বেশ কয়েক বার লাজুকের ঠোটের স্পর্শ পেয়েছে টায়রা তার ঘাড়ে!
তখন তো ওর মনে হয়ে ছিলো ও দুনিয়াতে নাই! আউট অফ দ্যা ওয়াল্ড হয়ে গেছে!
হুট করে যে লাজুকের বিহেইভিয়ার এতোটা চেঞ্জ হবে কল্পনাও করতে পারেনি টায়রা!
ডান্স শেষ হতেই আশেপাশে না তাকিয়ে তারাতারি চলে এলো ওখান থেকে টায়রা! বুক কাপছে ওর, সাথে শরীর-ও! মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে!
চারপাশে হাততালির রোল পরে গেলো! পাশে তাকিয়ে দেখলো বর্ষা সহ ওর বাকি কাজিন গুলো মুখ চেপে হাসছে!
টায়রা অসহায় মুখ করে দাড়িয়ে,
– হায় আল্লাহ কই তুমি?
মনে মনেই বিরবির করতে লাগলো টায়রা! মান-সম্মান সব ধোয়া হয়ে গেছে!
To be continue………