আসক্ত🔥পর্ব : ২১

0
5652

আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ২১

টায়রাকে দেখতেই ওর মা অবাক হয়ে গেলো! হুট করে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে এলো এভাবে!
টায়রা মা কে দেখতেই খুশিতে জরিয়ে ধরলো!
— কেমন আছো আম্মু?
— ভালো! তুই এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে কেনো এলি? [ আশেপাশে তাকিয়ে ]আর সাথে কে এসেছে?
মা কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে টায়রা বলল,
— কেউ না মা, আমি একাই এসছি! ড্রাইভার এর সাথে!
অবাক হলো টায়রার মা টায়রার কথা শুনে!
টায়রা তার মার চাহনি দেখে মুচকি হেসে বলল,
— ওহো আম্মু এমন করে কেন তাকিয়ে আছো? কে দিয়ে যাবে বল আমায়!সবার কাজ আছে তো নাকি? ড্রাইভারকে নিয়ে এসছি! কোনো প্রবলেম হয়নি!
[ মুখটা করুন করে ] আর এমনই তোমাদের খুব মিস করছিলাম তাই চলে এসছি!কোথায় মেয়ে এতদিন পর আসছে তার যত্ম নিবে তা না জাসুসি শুরু করে দিসো!
টায়রার কথা শুনে হেসে উঠে ওর মা ওকে জরিয়ে ধরলো!
— আম্মু আব্বু কোথায়?
— সে তো একটু বাইরে গেছে! চলে আসবে এখন! তুই বিস্রাম নে!
— হুহ!
ব্যাগটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো টায়রা!

পুরো দিনটা কেটে গেলো টায়রার বিষ্ণতায়! চুপ চাপ বসে লাজুকের চিন্তাতেই মগ্ন ছিলো! ওখান থেকে আসার পর থেকে কিছুই ভালো লাগছে না যেনো তার!
অন্ধকারে ছাদে উঠে বসে রইলো আকাশের দিকে তাকিয়ে!
চোখ থেকে গরিয়ে পরছে ফোটা ফোটা পানি! খুব দেখতে ইচ্ছে করছে লাজুক কে! বাড়ির বাকি সবাইকেও অনেক মিস করছে সে!
তিন বছর যাবত তাদের সাথেই তো থেকে আসছে!
পিছনে কারোর উপস্থিতি অনুভব করতেই চোখের পানি মুছে নিলো টায়রা! তারপর ধীরে ধীরে পিছন ফিরতেই দেখলো ওর মা দাড়িয়ে আছে!
— আরে আম্মু তুমি এখানে?
টায়রার দিকে এগিয়ে গিয়ে,
— একা একা কি করছিস এখানে?
মায়ের কথায় একটু হাসার চেষ্টা করলো টায়রা!
— এমনি ভালো লাগছিলো না!
টায়রার মা টায়রার দিকে চিন্তিত নজরে তাকিয়ে জিগ্গেস করলো,
— কি হয়েছে তোর? আসার পর থেকে কেমন চুপচাপ হয়ে আছিস! সব কিছু ঠিক আছে তো?
টায়রা ওর মাকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিকে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো!
— আম্মু তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো, কিছুই হয়নি আমার! আসলে সবাইকে মিস করছি! ওদের ছেরে তো থাকিনি কখনো!
টায়রার কথা শুনে ওর মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো! তার মন বলছে কিছু তো হয়েছে ওর! টায়রা তো এমন চুপচাপ থাকার মেয়ে না!
টায়রার মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো এর মধ্যেই ঘুমিয়ে পরেছে! মুচকি হাসলো টায়রার মা!
তার মেয়েটার একটা বিষেশ গুন আছে ছোট বেলা থেকে! নিজের মনের ভীতরে কি চলছে তা কাউকে বুঝতে দেয় না! হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলবে! ভেতরের কষ্টটা ভেতরেই চেপে রাখে!
টায়রার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলো ওর মা! তারপর আবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো!

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে টায়রা বেরিয়ে পরলো হাটতে! শীতের কুয়াশার মধ্যে হাটার মজাই আলাদা! গায়ের চাদরটা মুড়িয়ে নিয়ে হাটা ধরলো বাড়ির পাশের সেই রাস্তাটার দিকে! যেখানে লাজুকের সাথে প্রথম দেখা হয়ে ছিলো! বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো টায়রার!
এখন আর আগের মত অত নিরব নেই রাস্তাটা টুকটাক কিছু গাড়ির যাতায়াত আছে! তবে এখন খুব সকাল তাই কেউ নাই! একা একা সেখানেই হাটতে লাগলো! উদ্দেশ্য হলো দোলাদের বাড়ি যাওয়া!
দোলা টায়রার বন্ধু এখানে এসে এখনো দেখা করেনি তার সাথে! তাই ভাবছে এখনই দেখা করে নিবে!
টায়রাদের বাড়ির রাস্তা পেরিয়ে পাশের রাস্তায় ঢুকতেই হঠাৎ দেখলো তাদের বাড়ির দিকেই একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কার যাচ্ছে ! গাড়িটা দেখতেই থমকে গেলো টায়রা! তাদের গ্রামে সচরাচর এমন গাড়িতো আসে না! আর তার উপর যাচ্ছে তাদের বাড়ির দিকে! তা দেখতেই বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠলো টায়রা!
সে যা ভাবছে তা যদি হয় তাহলে তো কপালে সনি আছে! বড় সর ঢোক গিলে বুকে থুুথু দিলো!
আস্তে আস্তে পাশের জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো টায়রা!
বাড়ির কাছে যেতেই আড়াল থেকে উকি দিতেই দেখলো আড় কেউ না যাকে সে ভাবছিলো সেই! তার জমরাজ এসে হাজির!
চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে সেই লেভেলের রেগে আছে! ধরতে পারলে রক্ষা নেই!
এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না টায়রা! কি করা উচিৎ মাথায় আসছে না!
আবার একটু উকি দিতেই দেখলো লাজুক তাকে বাড়িতে না পেয়ে এদিকেই আসছে,তাকে খুজতে!
টায়রাকে আর পায় কে! ভো দৌড় লাগালো সে!
দৌড়তে দৌড়তে কই যাবে বুঝতে পারলো না! ওদিকে লাজুকও এদিকেই আসছে! ধরা পরলে শেষ! হঠাৎ পাশে একটা ঝাকরা বকুল গাছ দেখতেই মাথায় আইডিয়া এলো!
ছোটো বেলা তো বহুত গাছে উঠেছে, কিন্তু এখন উঠবে কি ভাবে! এসব ভাবতে ভাবতেই আল্লাহর নাম করে উঠে গেলো উপরে!
গাছে বকুল ফুল ভর্তী হয়ে আছে! নাড়া খেতেই ঝরঝর করে ফুল নিচে পরতে লাগলো!
টায়রা গুটিশুটি মেরে একদম পাতার আড়ালে বসে রইলো!
নিচে তাকাতেই দেখলো লাজুক এদিক ওদিকে চোখ বোলাতে বোলাতে হেটে সেখান থেকে!
বড় এক শ্বাস ফেলে গাছের ডালের সাথে গা এলিয়ে বসলো!
জীবন যেনো ফিরে পেয়েছে! নাকে ফুলের গন্ধ আসতেই হুস হলো! এখানের আর কতক্ষণ তাকতে পারবে! কিছুতো একটা ব্যাবস্থা করতে হবে!
যেই ভাবা সেই কাজ গাছ থেকে লাফিয়ে নেমে, পাশেরই খেতে নেমে হাটা ধরলো!
ধান কাটা হয়ে গেছে তাই খেত পরিস্কার! সোজা দৌড় লাগালো দোলাদের বাড়ির দিকে!

দোলাদের বাড়ির পেছন থেকে দৌড়ে সোজা ওদের ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পরলো!
দোলা তো ভুত দেখার মত চমকে আছে!
চেচিয়ে উঠে সে ঝাপিয়ে পরলো টায়রার উপরে!
— টায়রা তুই? কখন এলি?
দোলাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে দিতে,
— আরে সাকচুন্নি মেরে ফেলবি নাকি রে!ওঠ আমার উপর থেকে!
টায়রার থেকে সরে গিয়ে,
— উপসসসস! সরি সরি! এবার বলতো কখন এলি?
— কাল বিকেলে!
রাগি লুকে টায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
— সয়তান কাল আসছিস বাড়িতে আর আজ আসছিস আমার সাথে দেখা করতে?
টায়রা উঠে বসে পাশে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে নিলো,
— চুপ কর তুই! আগে আমাকে বাচা তার পর কথা বলিস!
— কেন কি হয়েছে?
— সেটা তোকে পরে বলছি! এখন আগে আমার বাড়ি যা! সেখানে গিয়ে মাকে আমার কথা জিগ্গেস করবি! এমন ভাব করবি যেনো আমি এসছি শুনে তুই আমার সাথে দেখা করতে গেছিস! আর ভুলেও আমার সাথে তোর দেখা হয়েছে বা আমি এখানে আছি তা বলবি না! জানে মেরে ফেলবো তোকে তাহলে!
এক শ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো টায়রা! দোলা হা করে তাকিয়ে ওর দিকে! তার মাথায় কিছু ঢুকছে না!
— ভাই আমি বুঝতে পারছি না!
— কিছু বুঝতে হবে না তোকে! আমি যা বলছি তাই কর! তারপর সব বলছি তোকে! হাতে সময় নেই জলদি যা!
দোলাকে ঠেলে পাঠিয়ে দিলো টায়রা ঘর থেকে! তারপর নিজে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পরলো!
বুকটা তার এখনো ধরাস ধরাস করছে!

বেশ কিছু সময় পর দোলা ফিরতেই টায়রা হুরমুর করে উঠলো!
— কি রে বলেছিস, আমি যা বলতে বলেছি?
— হুমম! তোর মা তো আমাদের বাড়িতে আসতে নিচ্ছিলো তোকে খুজতে! কিন্তু আমার সাথে দেখা হতে আর আসেনি!
একটা বড় সস্থির শ্বাস ফেললো টায়রা! পাশে দোলার দিকে তাকাতেই দেখলো সে অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে!
— এবার বলতো কাহিনী কি?
টায়রা সব খুলে বললো দোলাকে! দোলা তো শুনে হা করে তাকিয়ে টায়রার দিকে!
টায়রার কথা শেষ হতে দোলা ওর মাথার উপর একটা চাটি মারলো!
— বলদের মাওই জি! তুই এমন একটা বলদামি কেমনে করলি বলতো? শুধু শুধু ওখান থেকে চলে এলি! আরে লাজুক ভাই তো তোকে নিয়ে ভিষন পজেটিভ তাই এমন করেছে! আর তুই কি করলি?
চুপ করে রইলো টায়রা! পাশ থেকে দোলা আবার বলল,
— আচ্ছা,তোর মার সাথে সেই লেভেলের কিউট হ্যান্ডসাম হট ছেলেকে দেখলাম, ওটা কে রে? আমি তো ক্রাশ পুরাই!
টায়রা মুখ বাকিয়ে দোলার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
— নজর দিবি না সাকচুন্নি, তোর জিজু হয়!
দোলা হা করে তাকিয়ে রইলো টায়রার দিকে কিছুক্ষণ ! তারপর হঠাৎ করেই চেচিয়ে উঠলো,
— ইয়া আল্লাহ! মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ! পোলাতো তা না জেনো পুরাই আইটেম!
তুই এমন একজন কে ছেড়ে কেমনে এলি বলতো?
চিন্তিত হয়ে,
— ও সব বাদ দে! এখন বল কি করবো? আমাকে ধরতে পারলে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে ভাই!যেমন দেখতে তেমনি ভয়ংকর রাগি! জমরাজ চেনো? ঠিক তেমন! [ কাদো কন্ঠে ] আজ তো আমি শেষ!
দোলা চিন্তিতো নজরে তাকিয়ে রইলো টায়রার দিকে!

পুরোটা দিন টায়রা দোলাদের বাড়িতে কাটিয়ে দিলো! এখন প্রাই সন্ধ্যা হয়ে আসছে! কি করবে ভেবে পাচ্ছে না টায়রা! এখন বাড়ি যাওয়াটা প্রয়োজন তার!
ভয়ে ভয়ে টায়রা বেরিয়ে পরলো বাড়ির উদ্দেশ্যে! বাড়ির পেছন দিক থেকে উকি দিতেই দেখলো লাজুকের গাড়িটা উঠোনে রাখা! তার মানে সে এখনও আছে!
কিন্তু টায়রা ঘরে ঢুকবে কি ভাবে?
আশে পাশে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলো কি করবে!
সন্ধ্যা পেরিয়ে চারদিক অন্ধকারও হয়ে এসছে! পাশেই ছাদের পাশে লেগে থাকা পেয়ারা গাছটা নজরে এলো টায়রার! গাছটা বেশ বড়, আর ঝাকরা! এটাতে উঠে সহজেই ওদের ছাদে ওঠা যায়!
ছোটবেলা তো কত উঠেছে এভাবে! ওড়নাটা কোমড়ে বেধে নিয়ে আস্তে আস্তে গাছটায় উঠতে লাগলো! ডাল গুলো ঘন হওয়ায় সহজেই উঠে গেলো ছাদে! রেলিং পেরিয়ে ছাদে উঠে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে চিলেকোঠার দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো!

To be continue…
shuchona zannat…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here