ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-০২

0
3144

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

এতোটা বছর যার ভালোবাসা মনে লালন করেছিল আজ তাকে আরেকটা মডেলের সাথে খুব প্যাশনেটলি লিপ কিস করতে দেখে বুকটা ছেত করে উঠলো ঐশীর। শো তে এসেছিল ও। ভেবেছিল গানের তালে তালে এই জুভান মির্জা সম্পর্কে আরো জানতে পারবে। কিন্তু এতো বেশি যে জেনে যাবে সেটা ঐশী কল্পনাও করিনি। জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা ছিল এটা। হুট করে সেই চুম্বনরত মডেল টা ঐশীকে লক্ষ্য করে। সাথেসাথে এক ছিটকে সরে আসে জুভানের থেকে। হয়তো নিজের ক্যারিয়ারের ভয় পাচ্ছে। কখন কি লিক হয়ে যায় বলা তো যায়না। ঐশী ব্যপারটা বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে যায়।
নিজের কাজে বাঁধা পড়ায় জুভান খুব বিরক্ত হয়। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক শব্দ বের করে বলে ,

” হোয়াটস রং ? ”

মেয়েটা আঙুল দিয়ে ঐশীর দিকে ইশারা করে। ঐশী এতে বিব্রতবোধ করে। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করতে গেলে জুভান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে এবার মেয়েটার কাছে চলে আসে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলে,

” শী ইজ জাস্ট অ্যা কন্টেস্টেন্ট। লেট মি ডো মাই ওয়ার্ক। ডোন্ট বোদার মি। ”

বলেই জুভান আবার মেয়েটার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। যেনো ঐশীর উপস্থিতি এই স্থানে খুব নগণ্য। ঐশী পুরো ব্যাপারটাই খুব কষ্ট পায়। কেন পায় সে নিজেও জানে না । নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নিয়ে সেই জায়গা ছেড়ে মেকআপ রুমে চলে এলো। টেবিল থেকে সাইড ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল মেকআপ রুম থেকে। চুলোয় যাক এই শো। করবে না ও এই শো তে পার্টিসিপেট। রাগে দুঃখে কান্না আসছে ওর। কিন্তু কেনো আসছে জানেনা। ঐশী জানে সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে এটা খুব স্বাভাবিক। ও কোথাকার এক সাধারণ মেয়ে। ওর দ্বারা জুভান মির্জার মতো এত বড় সেলিব্রেটি কে নিয়ে এসব চিন্তা মানায় না। একদমই না। কিন্তু মনের উপর তো কারো হাত নেয়। মন তো এক লাগামহীন পাখি । যখন তখন নিষিদ্ধ কারো জন্যে নিজের সূখ ডানা ঝাপটায়।

তবে ঐশীর মনে এক সন্দেহ এসেছে। ও তো এতদিন জানতো জুভান মির্জার মধ্যে মেয়ের কোনো নেশা নেই। সম্পূর্ণ পিউর একটা ছেলে। সবার থেকে আলাদা। তাহলে আজ এটা কি ছিল ? তাহলে মিডিয়াতে এই মির্জা সম্পর্কে যা বলা হয় সব মিথ্যা ? সব ? লাল হুড তোলা রিকশায় বসে এসব ভেবে অনবরত চোখের জল হাত দিয়ে মুছে যাচ্ছে ঐশী। রিক্সাওয়ালা লোকটা বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে ওর দিকে। হয়তো ভাবছে প্রত্যেকদিন একটা না একটা মেয়ে এই রিক্সায় বসে কেঁদে কেটে জোয়ার ভাসায়। আজকালকার ছেলেপুলের যে কি আবেগ। ভাবা যায় !!

_____________________

ঐশী বাড়িতে এসে দরজায় কলিং বেল বাজায়। তার মা কাঞ্চনা আক্তার রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে দরজা খুলে দেন। কিন্তু ঐশীকে এরকম বিধ্বস্ত হতে দেখে তিনি একটু ভরকে যান। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ না করে কাঠকাঠ গলায় বললেন,

” কি হয়েছে তোর ? এরকম পাগলের মত বাসায় আসলি কেনো ? শো শেষ ? মাত্রই তো গেলি। ”

ঐশী এতগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে এসে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। সাইড ব্যাগটা বিছানার ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিছানার কোন গেশে বসে পড়লো। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নার ফোয়ারা বইয়ে দিল ও। ও খুব ভালো করে বুঝতে পারছে এই মির্জা সাহেব একজন সেলিব্রেটি। তাকে মন প্রাণ দিয়ে চাইতে তো কোনো দোষ নেই। আজ জুভান কে এভাবে দেখে ঐশী সহ্য করতে পারেনি। একদমই সহ্য করতে পারে না সে জুভানকে অন্য করো সাথে।

কিছুসময় পর ঐশির ফোন বাজছে। ঐশী চোখ মুখ মুছে ফোন রিসিভ করে কানে লাগালো ওপাশ থেকে জান্নাত তরিগরী করে বলছে,

” এই কুত্তা কই তুই ? পুরো স্পট জুড়ে তোকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কই গিয়ে মরলি ? ”

ঐশী থেমে থেমে বললো,

” বাসায় চলে এসেছি আমি। ”

” মানে ? বাসায়? কেনো ? বারবার তোর কথা এনাওন্স করা হচ্ছে। আর তুই এখন বাসায় ? ”

” আমি এই শো করবো না। আর প্লিজ কারণ জিজ্ঞেস করবি না। ”

” মানে ? তুই ঠিক আছিস ? করবি না মানে ? হটাৎ কি হলো তোর ? ”

” আমি বলছি করবো না মানে করবো না। এত প্রশ্নের তো কিছু দেখছি না আমি। ”

জান্নাত আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঐশী ফোন কেটে দিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল। কিছুই ভালো লাগছে না তার। সব কিছু দুর্বিষহ লাগছে। সব কিছু তছনছ করে দিতে মন চাইছে ওর। সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

______________________

” স্যার। আজকে কি কোনো মেয়ে পাঠাবো ? ”

অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাতের কথা শুনে ভ্রু কুচকালো জুভান। ল্যাপটপের থেকে মুখ্ তুলে দেয়ালে রাখা নিজের বৃহৎ ফটোফ্রেমের দিকে তাকালো। গম্ভির গলায় বললো,

” হুম। পরশু আমার জন্যে প্লেনের টিকেট কেটে রেখো। ঢাকার বাড়িটায় যাবো। ”

শাহাদাত তৎক্ষণাৎ মোবাইল ডাটা অন করে অন্য ফোন চেক করে নিল। নাহ। পায়নি সে। শাহাদাত ফোনটা টেবিলে রেখে দিয়ে বলে,

” স্যার , আগামি সাত দিন কোনো প্লেনের টিকেট নেই। ঈদের জন্যে সব বুক হয়ে গেছে। ”

জুভান মুখ কুচকে ফেললো। একটাও টিকেট নেই। কেমন সিস্টেম এটা। সে বিরক্ত হয়ে বললো,

” ইটস আর্জেন্ট। ”

শাহাদাত মাথা চুলকে বললো,

” স্যার। আই অ্যাম সরি। একটাও টিকেট খালি নেই। তবে আপনি বাসে যেতে পারেন। আজকাল ভালো বাস পাওয়া যায়। কোয়ালিটিও খুব ভালো। ”

জুভান কোনো উপায় না পেয়ে বলে,

” ঠিক আছে। তবে খেয়াল রাখবে ভালো বাস কিন্তু। ”

” জ্বী স্যার। অবশ্যই। ”

জুভান অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে ফোন কেটে দিলো। এই লোকটি আসলেই এক্সট্রা কথা বলে। তবে সব কাজের ব্যাপারে সিরিয়াস। তাই তো এখনো জুভানের সাথে টিকে আছে। জুভান আবার ল্যাপটপে মন দিল। কয়েকদিন পর একটা বড় গানের প্রজেক্ট আছে। তাই এখন মন সৌর কাজ করতে হবে।

শাহাদাত নিজের কম্পিউটার দিয়ে ” লন্ডন এক্সপ্রেস ” বাসের একটা টিকেট কেটে ফেললো। আবার সেই বাসের ম্যানেজারের সাথেও কথা বলে নিল । যাতে তার স্যারের কোনো অসুবিধে না হয়। নাহলে দেখা যাবে সবকিছু বেঠিক পেয়ে স্যার মহাশয় তারই ঘাড় মটকে দিলো। অসম্ভব কিছু নয়।

#চলবে..

{ আমার আব্বু অসুস্থ। তাই লেখার সময় পাচ্ছিনা। এইটুকুই লিখতে পেরেছি। আশা করছি করি সবাই মানিয়ে নিবেন। আর এই গল্পের রেসপন্স একটু কম। তাই আশা করছি শুরু থেকে যারা ছিলেন শেষ পর্যন্ত সবাইকে পাশে পাবো। হ্যাপী রিডিং }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here