#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
বেলকনিতে দাড়িয়ে জিম করছে জুভান। হাতের বাহুগুলো ফুলে উঠছে জিম করার তালে তালে। বেশকিছু সময় পর জুভান হাপিয়ে উঠে। পুষ আপ করা বাদ দিয়ে বোতলে থেকে পানি খেতে খেতে ডিভানে এসে বসে। ফর্সা মুখ ঘামে লালরঙা হয়ে গিয়েছে। জুভান রেস্ট নিতে নিতে চোখ বুজে গা এলিয়ে দিল ডিভানে। কিন্তূ বন্ধ চোখে ভেসে উঠলো সেই মেয়ের ছবি। মেয়েটা তাকে কারো সাথে কিস করতে দেখে নিয়েছে। মেয়েটাকে দেখতে সহজ সরলই লেগেছে। মনে হয়না সেই কিসের ব্যাপারটা খুব একটা গুরুত্ব দিয়েছে। জুভান আরো কিছুসময় রেস্ট নিয়ে লাগেজ গুছাতে শুরু করলো। আজ আবার ঢাকার বাড়িতে যেতে হবে।
__________________
” বাবা, তুমি এসব কি বলছো ? আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো ? ঢাকার কিছুই আমি চিনি না। কোনো আত্মীয় নেই। কোথাও থাকবো আমি ? ”
আশরাফুল হাবিব মেয়ের কথা শুনে কিছুটা কষ্ট পেলেন। আসলেই মেয়েকে এভাবে খোলা ময়দানে ছেড়ে দিতে তার একদমই মণ চাইছে না। কিন্তু মেয়ের নিরাপত্তার জন্যে এইটুকু আত্মত্যাগ তো করতেই হবে। আশরাফুল হাবিব তুলনামূলক জোরালো গলায় বললেন,
” দেখো ঐশী, আমি যা বলছি ভেবে চিন্তে বলছি। তাই তুমি আমার কথায় দ্বিতীয় কোনো কথা বলবে না। ”
ঐশী র চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়। কি বলছেন বাবা? এভাবে একা একা ঢাকায় যাওয়া ? ও তো নিতান্তই এক মেয়ে ? ঢাকার পরিবেশের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিবে ? ঐশী মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার করুন গলায় বললো,
” মা , দেখো না। বাবা কি বলে। আমি ঢাকা যাবো কেনো হুট করে। কিছু বলো তুমি। ”
কাঞ্চনা আক্তার মুখ ঘুরিয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন। আবারো মেয়ের দিকে ফিরে বললেন,
” দেখ ঐশী। বাবা যা বলেছেন ভেবেই বলছেন। বাবা নিশ্চই তোমার মন্দ চাইবেন না। তাই যা বলছেন অমত করবে না তাতে। ”
ঐশী আবারও কথা বলতে চাইলে আশরাফুল হাবিব কঠিন গলায় বললেন,
“মা ,আমার কসম দিয়ে বলছি। তুমি যাবে ঢাকাতে। ”
ঐশী অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। এ কোন বাবাকে দেখছে সে ? যে বাবা একটা মুহূর্তের জন্যে তাকে নিজের থেকে আলাদা করেনি। আজ সেই বাবাই তাকে একা একা শহর থেকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঐশী চোখ মুছে বললো,
” ঠিক আছে যাবো আমি। তাও তোমরা খুশি থাকো। ”
বলেই ঐশী চেয়ার থেকে উঠে হনহন করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে । অভিমানের পাহাড় জমেছে তার ছোট্ট মনে। নিজের বাবা মায়ের এই ব্যাপার তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু এরকম কেনো হচ্ছে ?
___________________
” লন্ডন এক্সপ্রেস ” বাস স্টেশনের সামনে দাড়িয়ে আছে ঐশী। আশরাফুল হাবিব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নানা রকম আশ্বাস দিচ্ছেন। পারলে মেয়েকে নিজের বুকের ভিতর নিয়ে যান। তাও যদি এসব অমানুষের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে যেত ! ঐশী মন ভার করে সামনে তাকিয়ে আছে। এখন পর্যন্ত একটাও কথা বলেনি সে। বলবেও না। কেনো বলবে ? কোনো বাবা কি এমন করে নিজের মেয়ের সাথে ? আশরাফুল হাবিব মেয়ের মন বুঝতে পারলেন। পকেট থেকে নিজের ওয়ালেট বের করে ডেবিট কার্ড মেয়ের দিকে এগিয়ে বললেন
” মামনি? ”
ঐশী মুখ ভার করে ফিরে তাকালো নিজের বাবার দিকে। আশরাফুল নিজের কার্ডটা ঐশীর দিকে এগিয়ে বললেন
” এই কার্ড আমার অনেক আগের। তোমার জন্যে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছিলাম। এটা সেই টাকার কার্ড। কিন্তু মনে রেখো অকারণে এই টাকা খরচ করবে না। আজ থেকে তোমার অনেক কিছু সামলাতে হবে। তোমার জীবনের অনেক দেখা – অদেখা বিষয়ের মোকাবেলা করতে হবে। নিজে সৎ উপায়ে টাকা রোজগার করবে। কিন্তু যখন আর্থিকভাবে খুব বেশি ভেঙে পড়বে তখনই এই টাকা খরচ করো। ”
ঐশী কিছুটা অবাক হয়ে কার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। এসব কথার মানে কি ? ঐশী হাজারখানেক দ্বিধা নিয়ে কার্ডটা হাতে নিল। বাবার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো। যা হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। কিন্তু এইটুকু আন্দাজ করতে পারছে , কিছু একটা মন্দ হচ্ছে। বাস এসে পড়েছে। ঐশী ভারী মন নিয়ে বাসের দিকে তাকালো। আশরাফুল হাবিব এবার মেয়ের গলায় একটা লকেট পরিয়ে দিলেন। ঐশী অবাক হয়ে গলায় হাত দিল। আশরাফুল লকেট পরিয়ে দিয়ে মেয়ের দিকে ফিরলেন। বললেন,
” এই লকেটে কিছু আছে। যেদিন তুমি তোমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলবে সেদিন তুমি এই লকেট খুলবে। সেদিনই তুমি তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে। কিন্তু খরবদার তার আগে কিন্তু এই লকেট খুলবে না। ”
ঐশীর মনে হয় আজ শুধু অবাক হওয়ার দিন। একটার পর একটা চমক পেয়েই যাচ্ছে ও। কিন্তু মুখ স্বাভাবিক রেখে বললো,
” ঠিক আছে। ”
বাস ছেড়ে দিবে আর কিছুসময়ের মধ্যে। আশরাফুল হাবিব মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললেন
” বাবার খুব মনে পড়বে তার রাজকন্যার কথা। ”
ঐশীও অভ্যাসবশত বাবার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
” আমারও খুব মনে পড়বে তোমাদের কথা। ”
আশরাফুল হাবিব লক্ষ করলেন তিনি অনেক ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছেন। তাই সব বেঠিক হওয়ার আগেই ঐশীকে বাসে তুলে দিলেন। যতসময় বাস দেখা যায় ততক্ষণ তাকিয়ে রইলে ন একে অপরের দিকে। ঐশীর মত তার বাবারও চোখ ছলছল করছে। মন ভারী থেকে ভারী হচ্ছে। মনে হচ্ছে দিল ছিঁড়ে কেউ নিয়ে যাচ্ছে। মেয়ের অনিশ্চিত জীবনের কথা চিন্তা করে আশরাফুলের বুক ফেটে আসছে। এমনই ত হয় বাবারা। নিজের মৃত্যুর কথা পরোয়া না করে সারাটাজীবন সন্তানের কথা ভেবেই পার হয়ে যায়। কি অদ্ভুত না বাবারা ? তাইতো হুমায়ূন আহমেদ একটা কথা বলেছিলেন,
” পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে। কিন্তু একটাও খারাপ বাবা নেই। ”
_________________________
বাস চলমান। বিজ্ঞা নের আপেক্ষিক সূত্র অনুসারে গাড়ির পাশের গাছ, বাড়ি গুলো উল্টোদিকে গতিশীল। ঐশী নিজের ব্যাগ নিয়ে নিজের সিটের দিকে এগিয়ে গেলো। সিট পেয়েও গেলো ও। ওর সিট পড়েছে একটা ছেলের পাশে। ঐশী খুব একটা লক্ষ্য করলো না ছেলেটাকে। ব্যাগটা উপরের তাকে রেখে দিয়ে বসে পড়লো সিটে। বোতল থেকে পানি খেয়ে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। রাত হয়ে গেছে। ঐশীর আবার ট্রাভেল ঘুম পায় না। পাশের ছেলেটা কানে ইয়ারপড, মুখে মাস্ক ,আর মাথায় ক্যাপ দিয়ে সি টে গা এলিয়ে বসে আছে। ঐশী একটু অবাক হলো। এই ছেলের কি গরম লাগে না ? হুট করে ঐশীর নাকে কিছু পুড়ে যাওয়ার গন্ধ এলো। বাসেও ইতিমধ্যে হইচই শুরু হয়ে গেছে। কিছু কি পুড়ে গেল ? ঐশী ঘাবড়ে গেল।
#চলবে