#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
অ্যাড্রেস বলো তোমার। ড্রাইভার চাচা পৌঁছে দিবেন। ”
ঐশী কি বলবে এখন ? কোনো উত্তর যে নাই ওর কাছে। ঐশী কাচুমাচু গলায় বলল,
” আ.আমার ঢাকায় কোনো ঠিকানা নেই। ”
” হোয়াট ? ”
জুভান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো। ঐশী দুনো চোখ বেটে নিয়ে দুঃখ পেলো। বুক চিরে এক তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। বাতাসও সেই নিঃশ্বাসে মিশে গিয়ে উষ্ণ হলো। ঐশী বলল,
” আমার কোনো ঠিকানা নেই। যেকোনো একটা বাসা খুঁজতে হবে এই শহরে। তারপর সেখানেই বাস। যতদিন না বাবা ফিরে আসতে বলে। ”
জুভান ভ্রুকুটি করে তাকালো ঐশীর দিকে। পাগল এই মেয়ে? কিসব বলছে ? জুভান বললো,
” এখন তো মাত্র ভোর সকাল। এখন একা রাস্তায় বের হওয়া মুশকিল। আপাতত আমার বাসায় চলো। পরে না হয় দুপুর হলে বাসা খুঁজতে বের হয়ে যাবে। ”
ঐশী ভাবলো। ওর ভয় এখনো কাটেনি। জুভানের চরিত্রের ব্যাপারে এখনো ওর ঢের সন্দেহ। ঐশী মিনমিনিয়ে বললো,
” আসলে আমি একা ..আপনি.. ”
জুভান ঐশীকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো,
” ওকে ফাইন। গাড়ি থেকে বের হও। বের হও বলছি। শালা তোমাদের মত মেয়েদের হেল্প করাটাই ভুল। একটা কথার একশোটা মিনিং বের করো। দরকার নেই হেল্পের। বের হও গাড়ি থেকে। ”
ঐশী চোখ সূক্ষ্ম করে তাকালো জুভানের দিকে। কি করবে ভেবে না পেয়ে সেই অবাঞ্ছিত কাজকেই সায় দিল। গাড়ি থেকে বের হয়ে চুপচাপ জুভানের বিশাল বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। জুভান হতবাক হলো। একদফা বিস্ময় নিয়ে তাকালো সেদিকে। সোজা কাজকে এভাবে বাঁকিয়ে করাটাই কি মেয়েদের কাজ ? কই ? আরো ত মেয়ে দেখেছে। ওরা তো এমন নয়। বরং জুভানের কাছে , আশেপাশে পড়ে থাকার জন্যে মরিয়া। জুভান মাথা নিচু করে গুটিকয়েক লম্বা নিঃশ্বাস নিল। মাথা শীতল করার চেষ্টা করলো। সফল হতেই ড্রাইভারকে লাগেজ আনার কথা বলে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো।
হল রুমে সাইড ব্যাগ আঁকড়ে ধরে দাড়িয়ে আছে ঐশী। মনটা আকুপাকু করছে। ঠিক করলো তো ? ছেলেটা সুবিধার না। আবার অবিশ্বাস করার মতোও না। উফফ। মাথা ধরে যাচ্ছে।
” ছয়টা রুম আছে। তাই তুমি উপরের ডান পাশের একদম কর্নারের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ”
জুভানের কথা শুনে ঐশী মাথা নাড়ল। হটাৎ কিছু মনে পড়ায় ঐশী বলে উঠলো,
” আপনার রুম কোনটা ? ”
জুভান ক্যাপ খুলতে খুলতে বললো,
” বাম পাশের একেবারে কর্নারে। তাই অযথা চিন্তা না করে রুমে যাও। খামোকা ঘরে দুর্গন্ধ ছড়িও না। ”
ঐশী শুনে ভ্রু কুচকে ফেললো। মাথা ঘুরিয়ে জুভানের দিকে তাকালো। থমথমে গলায় বললো,
” দুর্গন্ধ বলতে ? ”
জুভান এগিয়ে এসে সোফায় আরামসে গা এলিয়ে দিল। পা দুটো মাটিতে ছড়িয়ে দিয়ে বললো,
” সারারাত জার্নি করে তোমার শরীরের গন্ধ ধরেছে। আর সেই গন্ধে সম্পূর্ণ ঘর মৌ মৌ করছে। কেনো ? নাকে আসছে না তোমার ? ”
ঐশীর তেজ লাগলো। অপমান ! অপমান ! ঐশী দাঁত কামড়ে ধরলো। আকাশসম রাগ নিয়ে দাঁত চেপে বললো,
” আমার শরীরের দুর্গন্ধ ? আপনি কি তাহলে ? আপনার শরীরের সুগন্ধে তো আর বেঁচে থাকা যাচ্ছে না। ”
জুভান কৃত্রিম অবাক হয়ে বললো,
” আমার চুল থেকে মাথা অব্দি পারফিউম দেওয়া। তোমার মত গন্ধ নেই আমার শরীরে। এখন কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে যাও। ”
ঐশী আর কথা বাড়ালো না। এই লোকের সাথে কখনোই পেরে উঠবে না সে। তাই অযথা চেষ্টা না করে পা বাড়লো সিড়ির দিকে। হটাৎ জুভান ডেকে উঠলো,
” হেই … ”
ঐশী সিঁড়ির হাতল ধরে পিছন ফিরে তাকালো। জুভান এক আঙ্গুল উচিয়ে বললো,
” শুধু আজ সকালটা থাকতে দিয়েছি। দুপুর হলেই বিদায় হবে। মনে থাকে যেন। ”
ঐশী নিজের প্রবল আত্মসম্মানের জোরে বললো,
” দুপুর লাগবে না। আমি দুপুর হওয়ার আগেই চলে যাবো। ”
জুভান প্রত্যুত্তর না করে সোফায় গা এলিয়ে চোখ বুজে নিল। ঐশী গটগট পা ফেলে জুভানের দেখানো রুমে চলে গেল।
______________________
আকাশ রঙের জামা গায়ে ঐশী বসে আছে বিছানায়। ভিজে চুল , ঈষৎ লাল নাক এবং কাপা ঠোঁট ওর। ফোন হাতে নিয়ে অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে ওর বাবাকে। মায়ের ফোনেও দিয়েছে। কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। ঐশীর অভিমান হলো। এই প্রথম নিজের পরিবারের উপর জোরদার অভিমান হলো ঐশীর। অভিমানের দহনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে ফোনটা বিছানার দূরে ছুড়ে ফেলে দিল। মৃদু কাঁপছে ওর শরীর। ও কোন কোন পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে এই একটা দিন, কেউ খোঁজ নেয়নি। একবারও না। এই তাদের মায়া , আদর ? একটা জোয়ান মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তারপর একবারও ফোন দিয়ে খোঁজও নেয়নি। কেমন পরিবার ! ঐশীর কান্না পাচ্ছে। দুনিয়ার সবকিছু তুচ্ছ করে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। মন চাইছে ছুটে চলে যেতে নিজের পরিবারের কাছে। কিন্তু বাবার কসম ! সেটা কি করে ও অগ্রাহ্য করবে।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ এলো। ঐশী চোখ মুখ মুছে নিয়ে দরজা খুলে দিল। একজন সার্ভেন্ট দাড়িয়ে মাথা নিচু করে সাধারণ ভাবে বললো,
” ম্যাম , স্যার নাস্তা খাওয়ার জন্যে ডেকেছেন আপনাকে। কাইন্ডলি নিচে আসবেন ? ”
ঐশী মাথা নাড়ল। বিছানার উপর রাখা বন্ধ ফোনের দিকে বিদ্ধস্ত চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ারে জুভান বসে আছে । হাতে আই ফোনের লেটেস্ট ভার্সন। ফোনের স্ক্রিনে উপর আঙুল বিরামহীন চলছে। ঐশী সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে চুপচাপ একটা চেয়ারে এসে বসলো। সার্ভেন্ট ওদের দুজনকে নাস্তা এগিয়ে দিল। ঐশী আনমনে পরোটা ছিঁড়ছে আর এমনেই মুখে পুড়ে নিচ্ছে। ধ্যান – ধারণা সব ওর পরিবারের কাছে পড়ে আছে। জুভান খেতে খেতে ঐশীর দিকে একবার লক্ষ করল। ঐশী ঝাল ফ্রাই পরোটায় না লাগিয়েই এমনেই খাচ্ছে। জুভান একবার দেখে আবার নাস্তায় মনোযোগ দিল। কারণ তার এসবে কিছু যায় আসে না। হটাত সার্ভেন্ট ঐশীকে ডাক দিল,
” ম্যাম , ম্যাম … ”
ঐশী ধ্যান ভেঙে হুড়মুড়িয়ে তাকালো সার্ভেন্টের দিকে। সার্ভেন্ট নমনীয় গলায় বলল
” ম্যাম , নাস্তা ভালো লাগেনি ? ”
ঐশী মাথা নাড়ল। বললো,
” না। ভালো হয়েছে। ”
” তাহলে আপনি আপনার প্লেটের ঝাল ফ্রাই নিচ্ছেন না কেনো ? এমনি পরোটা খেলে ত গ্যাস্টিক হবে। ”
ঐশী মুখ ভার করে মাথা নেড়ে ঝাল ফ্রাই দিয়ে পরোটা খেতে লাগলো।
” আবারো দেশের একজন স্বনামধন্য পুলিশ অফিসার আশরাফুল হাবিব সপরিবারে নিহত হয়েছেন। ”
নাস্তা খাওয়ার মধ্যে হঠাৎ এমন অবিশ্বাস্য খবর শুনে ঐশী থমকে গেলো। খাবার খাওয়ার মাঝপথে হাত আটকে গেলো। শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলো। জলদি বাসি হাত নিয়ে টিভির সামনে এসে দাড়ালো। পাগলের মত রিমোট হাতে নিয়ে সাউন্ড একেবারে হাই করে দিলো। রিপোর্টার বলছে,
” আশরাফুল হাবিব একজন সৎ পুলিশ অফিসার ছিলেন। দেশে বিদেশে তার কাজ প্রশংসাযোগ্য। এই বিশিষ্ট পুলিশ কাল রাতে নিজ গৃহে আগুনে পুড়ে সপরিবারে নিহত হয়েছেন। জানা গেছে…”
ঐশী কি ভুল শুনছে ? আর শুনার ক্ষমতা হলো না ঐশীর। সেখানেই মাটিতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো। চোখ বুজতে বুজতে একটাই কামনা ছিল তার,
” এই নিষ্ঠুর খবরটা মিথ্যা হোক। তার রাজা বাবা আবারও তাকে প্রিন্সেস ডাকুক। শুধু একবার মা তাকে বকে দিক। ”
#চলবে..
এটা আমার নতুন গ্রুপ। গল্প কখন দিবো , আলোচনা , সমালোচনা সব করতে পারবেন এই গ্রুপে। আর অবশ্যই গ্রুপ টা আপনাদের হাসি আনন্দে মাতিয়ে রাখবেন। ভালোবাসা সবাইকে ,🥰🥰
https://facebook.com/groups/771372856867336/