#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ঐশীর কথা শুনে হুট করেই ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে গেলো। বেশ কিছুসময় নীরব থেকে থমথমে গলায় বললো,
–” কেনো খুন করেছো তন্ময় ভাইকে? ”
” তন্ময় ভাই! ” ঐশী শব্দটা শুনে ভরকে গেলো কিছুটা। কিন্তু বাইরে যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার ভান করে বললো,
— ” এত কিছু যেহেতু জানতে পেরে গেছো। তাহলে খুন করার কারণটাও খুঁজে বের করো। ”
— ” তাও জানি। ”
ঐশী ঘেমে উঠলো। এই ছেলেটা কে! ওর সম্বন্ধে এত কিছু কি করে জানে? ঐশী টেবিলে হাত ভাজ করে বসলো। ভ্রুয়ে ভাজ ফেলে বললো,
— ” তা কি জানো তুমি? ”
— ” তুমি একজন পুলিশ অফিসারের মেয়ে। যাকে তন্ময় ভাই আর তার সঙ্গীরা মেরে ফেলেছে সপরিবারে। অ্যাম আই রাইট? ”
ঐশী কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। কণ্ঠনালি আটকে যেতে লাগলো। মুখের লালা দিয়ে গলা ভিজিয়ে বললো,
— ” তুমি কি করে জানলে? ”
অনল হাসলো। ধূসর রঙের শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলে পিছন দিকে ঠেলে দিলো। সানগ্লাস খুলে টেবিলে রাখলো। অতঃপর ঐশীর দিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বললো,
— ” তুমি নিজে বলেছো এসব। ”
— ” মানে? ”
–” তন্ময় ভাইকে খুন করার সময় তুমি নিজ মুখে বলেছো এসব। ”
ঐশী বারবার যেনো চমকে চমকে উঠতে লাগলো।এই ছেলেটা বহুত শেয়ানা। এত কিছু জেনে গেছে। অদ্ভুত! ঐশী বললো,
–” কি চাও তুমি? ”
অনল ঐশীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে এলো। ঐশী চমকে স্থির হয়ে বসে রইলো। অনল মৃদ হেসে বললো,
–” তোমার মৃত্যু-খেলার সাথী হতে চাই। দুজন মিলে খুন করবো ওদের। রাজি?
ঐশী ত্যাছরভাবে বললো,
–” আমি তোমায় বিশ্বাস করি না। আর এতে তোমার লাভ-টাই বা কি? ”
অনল আবার চেয়ারে হেলান দিলো। শক্ত মনের অধিকারী ছেলের চোখের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা টসটসে জল। ঐশী হতবাক চোখে চেয়ে রইলো ওর দিকে। অনল নিজের চোখ মুছে আবার সোজা হয়ে বসলো। গম্ভীর গলায় বললো,
–“লাভ? লাভ কি লোকসান ,জানিনা। তবে একজন বড় ভাই হিসেবে ওদের মারা আমার কর্তব্য। ”
ঐশী প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো ওর দিকে। অনল বলতে লাগলো,
–” আমার একটা ছোট বোন ছিলো। নাম পুতুল। নামের মত ও দেখতেই পুতুলের মতন ছিলো। বাবা নেই আমার। মা ছিলেন শুধু। পুতুল গ্রামে পড়াশুনা করতো। আর আমি ঢাকায় পড়তাম আর টিউশনি করে বাড়িতে টাকা পাঠাতাম। তন্ময় আর তার সঙ্গপাঙ্গ গ্রামে গিয়েছিলো কি কাজে। আর সেখানেই অভিশাপ লেগে গেলো।একদিন আমার ফুলের মতন বোনের উপর নজর পড়ল তন্ময় ভাইয়ের। তারপর প্রতিদিন ওর পিছু নেওয়া। ওকে বিরক্ত করা।আমি এসবের কিছুই জানতাম না। শহরে ছিলাম। পুতুল আমায় লজ্জার কারনে কিছুই বলতো না। কিন্তু একদিন সকালে শুনি ( একটু থেমে) পুতুল রেপ হয়েছে। আমার মাথা চক্কর দিতে লাগলো এসব শুনে। সেদিন ধর্মঘট ছিলো। গ্রামে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। সেদিন সারাদিন ঘুরে একটাও গাড়ি পাইনি। পরেরদিন খুব কষ্ট গাড়ি জোগাড় করে বাড়িতে যাই। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। বোন আমার সুইসাইড করেছে। আর মা এসব দেখে হার্ট অ্যাটাক করেছেন। বিশ্বাস করো এসব দেখে আমার মাথা ঘুরছিলো। কি করবো, কোথাও যাবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হাতে ছিল একটা সুইসাইড নোট। পুতুলের লেখা। সেখান থেকেই সব তথ্য জানতে পারি।”
ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অনল নামের ছেলেটার দিকে। প্রতিহিংসার আগুনে দাউদাউ করে পুড়ছে এই ছেলেটা। অনল একটু থামলো। গ্লাস থেকে পানি খেলো একঢোক। তারপর চোখ মুছে আবার বলতে লাগলো,
— ” তারপরও তন্ময়দের দলে যোগ দেই নিজের পরিচয় গোপন করে। কিন্তু কখনোই ওই নরপিশাচকে মারতে পারিনি। কিন্তু তুমি পেরেছো। যে মেয়ের নেশা ওর জীবনের ফুর্তি ছিলো, সেই নেশায় ওর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমার এই সিদ্ধান্ত। তোমার সাথে কাজ করবো আমি। তোমার দুঃসময়ের বন্ধু হয়ে। ”
অনল ডান হাত বাড়িয়ে দেয় ঐশীর দিকে। মিহি আওয়াজে বলে,
— ” ফ্রেন্ডস? ”
ঐশী মুচকি হেসে অনলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। দুজন হ্যান্ডশেক করে। দুজনের চোখেই প্রতিশোধের আগুন।
____________________
সিএনজি এসে থামলো ঐশীর ভাড়া বাড়ির সামনে। ঐশী টাকা মিটিয়ে নেমে দাড়ালো। বাড়ির গেট খুলতে খুলতে চারপাশে তাকাল। আশেপাশের মানুষজন কেমন করে যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ঐশী এতে একটু অবাক হলো। কিন্তু পাত্তা দিলো না। গেট খুলে সোজা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। দুই তলায় যেতেই নিজের ঘরের বাইরে তালা ঝুলানো পেলো। ঐশী হতবাক হলো। ভ্রু কুচকে তাকালো তালার দিকে। সে তো লক করে গিয়েছিল। তালা দেয়নি। তাহলে এই তালা কোথা থেকে আসলো। ঐশী তালাটা নেড়ে ” ধ্যাত” বললো। ব্যাগ আকড়ে ধরে এক তলায় বাসার মালিকের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজায় কলিং বেল বাজাতেই মালিক বউ এসে দরজা খুলে দিলেন। ঐশীকে দেখেই তার মুখ কালো হয়ে গেলো। নাক মুখ কুঁচকে বললেন,
— ” কি ব্যাপার, মেয়ে। এখানে কি চাই? ”
ঐশী সোজাসাপ্টা বললো,
— ” আমার ঘর তালা দিয়েছেন কেনো? চাবি দিন। ”
মহিলা কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে ঝগড়া করার মনোভাব নিলো। কড়া গলায় বললো,
— ” দিবো না। বাইরে রং তামাশা করে বেড়াবে। আর রাত হলে আমার পবিত্র বাড়িতে এসে ঘুমাবে। এসব হবে না আমার বাড়িতে। যাও। নিজের পোটলা নিয়ে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও। ”
ঐশী অবাকের চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলো। “রং তামাশা” মানে? ঐশী অবাক হয়ে বললো,
— ” আমি রং তামাশা করে বেড়াই কে বলেছে আপনাকে? ”
— ” কে বলবে আবার। আমার চোখ নাই। আমি নিজ চক্ষে পত্রিকায় দেখেছি। ”
ঐশী আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,
— ” দেখান দেখি পত্রিকা? আমিও দেখি কি এমন রং তামাশা করি আমি। দেখান। ”
মহিলা মুখ তেতো করে এগিয়ে গেলো ভিতরে। একটু পর একটা পত্রিকা নিয়ে আবারও সামনে দাড়ালো। ঐশীর দিকে পত্রিকা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— ” নিজ চোখে দেখো নিজের কীর্তি-কলাপ। ছি ছি ছি। আমার বাড়িতে কেউ এসব করে বেড়ায়। তওবা তওবা। ”
ঐশী বিরক্ত চোখে মহিলাটার দিকে তাকালো। ছু মেরে উনার হাত থেকে পত্রিকা নিয়ে চোখ বুলালো। ঐশী থমকে গেলো। বিশ্বাস হচ্ছে না তার। চোখ বড়বড় করে তাকালো খবর-টার দিকে। সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগছে। চোখ মুছে আবারও তাকালো ছবিটার দিকে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঐশী আর জুভান একে অপরের খুব কাছাকছি আছে। জুভান ঐশীর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। ছবির নিচে আর্টিকেল লেখা,
” এই অজ্ঞাত মেয়ে আর সুপারস্টার জুভান একে অপরকে ডেট করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন জুভান সেই অজ্ঞাত মেয়েকে বাঁচাতে মাতাল ছেলেগুলোকে মেরে রক্তাক্ত করেন। তিনি নিজ মুখে বলেছেন এই অজ্ঞাত মেয়েকে তিনি ভালোবাসেন। জানা যায় তাদের মধ্যে গোপন সম্পর্ক আছে। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন পৃষ্ঠা ২ , কলাম ৩ ”
ঐশীর শক্তি সব হারিয়ে যাচ্ছে। পরের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বাকি খবর পড়বে সেই শক্তি তার নেই। মহিলা ঐশীর হাত থেকে পত্রিকা ছিনিয়ে নিয়ে বললেন,
— ” হয়েছে। আর ন্যাকা সাজতে হবে না। আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও তুমি। এখনি। এসব রং তামাশা আমার ঘরে চলবে না। তওবা তওবা। ”
কথাটা বলে মহিলা ঐশীর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন।
ঐশী মাথা ভোভো করতে থাকে। এসব কি লেখা হয়েছে তার নামে? সে আর জুভান? ছি ছি। ঐশী ব্যাগ হাতে নিয়ে জুভানের বসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
______________________
জুভান মাত্রই ঘুম থেকে উঠলো। এখন দুপুর দু’টো বাজে। জুভান একটা হাই তুলে টি টেবিল থেকে কফির কাপ হাতে নিলো। কাপে চুমুক দিবে তার আগেই শাহাদাত হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। জুভান কাপ হাতে রেখেই শাহাদাতের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বললো,
— ” কি ব্যাপারজ শাহাদাত চাচা। ”
শাহাদাত জুভানের দিকে পত্রিকা এগিয়ে দিয়ে বললো,
— ” স্যার, আজকের পত্রিকা পড়েছেন? ”
— ” আরে না।পড়তে ইচ্ছে করছে না। আর আজকাল পত্রিকায় সত্য খবরের থেকে ভুয়া নিউজ ছাপা হয় বেশি। তাই পড়ার ইচ্ছে নেই। ”
শাহাদাত জোর করে জুভানের দিকে পত্রিকা এগিয়ে দিলো। জুভান কিছুটা অবাক হলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও পত্রিকা হাতে নিলো সে।
#চলবে..
শব্দসংখ্যা – ১০০০+
বাকি অর্ধেক ধামাকা আগামী পর্বে দেওয়া হবে।এই পর্বে দিতে পারতাম। তাহলে আজ দেওয়া সম্ভব হতো না। তবে কাল দেওয়া লাগতো পর্ব। তাই আজকে এইটুকুই উপলব্ধি করুন।
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/198034022241166/?app=fbl