#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
শাহাদাত জোর করে জুভানের দিকে পত্রিকা এগিয়ে দিলো। জুভান কিছুটা অবাক হলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও পত্রিকা হাতে নিলো সে। শাহাদাতের দিকে একনজর তাকিয়ে পত্রিকায় চোখ দিলো। সঙ্গেসঙ্গে সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
— ” হোয়াট দা ফা*। এসব কি ? আমি আর ঐশী?লাইক সিরিয়াসলি? ”
জুভান চমকে উঠলো। ওর চোখে মুখ রাগের আভাশ। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি ঝরছে যেনো। জুভান শাহাদাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” কোন নিউজ চ্যানেল এটা? ”
অবাকের চরম মাত্রায় পৌঁছে জুভানের হিতাহিত জ্ঞান যেনো লুপ পেয়েছে। চোখ একটু পেপারের উপরের দিকে নিলেই সে নিউজ চ্যানেলের খোঁজ পেয়ে যাবে। তাও বোকার মতন শাহাদাতকে জিজ্ঞেস করলো। শাহাদাত মাথা নিচু করে ভয়ভয় গলায় বললো,
— ” দৈনিক সমকাল। ”
— ” ড্যাম। ওদের স্টুপিড হেডকে আমার সামনে হাজির করো। এক ঘণ্টার ভিতরে। ”
— ” জ্বি স্যার। ”
জুভান মাথার চুলগুলো দুহাতে খামচে ধরলো। হঠাৎ করে ওর কিছু একটা মনে পড়লো। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
— ” শিট। ঐশী? ওহ নো। ”
জুভান কফির কাপ আবার জায়গায় রেখে দিয়ে বিছানা ছাড়লো। কাবার্ড থেকে টিশার্ট গায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ঘর থেকে।
জুভান যতদ্রুত পারে গাড়ি চালিয়ে ঐশীর বাসার উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। পারলে ও উড়ে চলে যায় ঐশীর দিকে। না জানি ঐশী এখন কতটা সাফার করছে। জুভান একহাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, আরেকহাত দিয়ে ঐশীর ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,
— ” ড্যাম। পিক আপ দা ফোন। পিক আপ দা ফোন স্টুপিড। ”
কিন্তু বারবার ফোন ” নট রিসিবল ” আসছে। জুভান রাগে ফোন পাশের সিটে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। ঠোঁটের উপরে ঘাম-টুকু মুছে নিয়ে ঝাপসা চোখে সামনে তাকালো। মনে মনে একটাই চাওয়া ” তার মেঘবালিকা যেনো কিছুতেই ভেঙে না পড়ে। যায় হয়ে যাক না কেনো।”
________________________
জুভানের গাড়ি এসে থামে ঐশীর বাসার সামনে। জুভান গাড়ি পার্ক না করেই ঝটপট নেমে দাড়ায় গাড়ি থেকে। চাবি হাতে নিয়ে দৌড় দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। হন্তদন্ত হয়ে দুই তলায় যেতেই ঐশীর বাসা তালা দেওয়া দেখে। জুভান তালা দেখে যারপরনাই অবাক হয়। একমুহুর্ত কালবিলম্ব না করে সিঁড়ি বেয়ে এক তলায় গিয়ে কলিং বেল বাজায়। মালিক বউ এসে দরজা খুলে জুভানকে দেখে অবাক হয়ে মুখে হাত চেপে ধরে। চোখ দুটো রসগোল্লা করে ড্যাবড্যাব করে জুভানকে আপদতমস্তক দেখেই যাচ্ছে। জুভান এসব পাত্তা না দিয়ে হাপানো গলায় বলে,
— ” ঐশী? ঐশী কই? ওর ঘরে তালা দেওয়া কেনো? ”
মালিক বউ ঐশীর কথা শুনে মুখ খিচে ফেলে। কিন্তু মুখে একদলা হাসি নিয়ে বলে,
— “জুভান! জুভান ! গ্রেট সিঙ্গার! আমার বাড়িতে। আসুন না। ভিতরে আসুন। আমি আপনার খুব বড় পাঙ্খা ওহ না ফ্যান, ফ্যান। আপনি আমার ঘরে এসেছেন। আমার কত বড় সৌভাগ্য! ভিতরে আসুন না। ”
জুভান মহিলার আদিক্ষেতা দেখে খুব বেশি বিরক্ত হলো। আঙুল উচিয়ে শাসিয়ে বললো,
— ” আমি এখানে খোশ-গল্প করতে আসিনি। ঐশী কোথাও বলুন। আর না বললেও আপনার মুখ থেকে কি করে কথা বের করতে হয় আমি খুব ভালো করে জানি। ( চিৎকার করে) বলুন ঐশী কই? ”
মহিলা থতমত খেয়ে গেলো। জুভানের এই রূপ দেখে কেপে উঠলো। আমতা আমতা করে বললো,
— ” আমি.. ঐশী… ও তো..”
— “জাস্ট শাট আপ। কথা না ঘুরিয়ে সোজাসুজি বলুন ঐশী কই?”
— ” আমি ঐশীকে বের করে দিয়েছি বাড়ি থেকে। ”
চোখ মুখ খিচে একদমে বলে দিলো মালিক বউ। জুভান চোখ কপালে তুলে বললো,
— ” মানে? আপনি ওকে বের করে দিয়েছেন? আর ইউ ম্যাড? ”
মহিলা মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো। জুভানের রাগে মাথার রগ ফুলে উঠলো। কিন্তু এখানে সময় নষ্ট করা উচিত হবে না। তাই জুভান মহিলার দিকে আঙুল উচিয়ে বললো,
— ” আমি আপনাকে পরে দেখে নিবো। মাইন্ড ইট। ”
জুভান বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। গাড়িতে উঠে গতি না দেখেই চালাতে লাগলো। এক আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকিয়ে ভাবতে লাগলো,
— ” এখন কোথাও খুঁজবে ওকে? ড্যাম ইট। ”
জুভান গাড়ি চালাতে চালাতে চারপাশে তাকাতে লাগলো। একটু দূরে গাড়ি চালিয়ে আসতেই জুভান একদিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। রাস্তার একপাশে অনেক গোল করে ভিড় দেখা যাচ্ছে। জুভানের সন্দেহ লাগলো। গাড়ি এক সাইডে পার্ক করে সেদিকে এগিয়ে গেলো।
ভীড় সামনে দাড়াতেই সবাই জুভানের দিকে ঝুঁকে গেলো। একে একে সবাই জুভানকে আজকের খবর নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে লাগলো। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে মাথা উচু করে দূরে তাকালো। রাস্তায় ফুটপাথে ঐশীকে দেখেই তার বুক ছেত করে উঠলো। ঐশী মাথা নিচু করে হাঁটু চেপে বসে আছে ফুটপাথের ময়লায়। জুভান সবাইকে জোরপূর্বক ঠেলে ঐশীর পাশে এসে দাড়ালো। ঝাপসা চোখে আলতো গলায় ডাক দিলো,
— ” ঐশী? ”
ঐশী জুভানের কণ্ঠস্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো। জুভান হতভম্ব হয়ে গেলো। ঐশীর মুখের অবস্থা করুন। চাপা কান্না করলেও চোখে মুখে জলে একাকার অবস্থা। জুভান অনুভূতিহীন ঐশীর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। ঐশীর গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বললো,
— ” আমি আছি তোমার পাশে। আছি আমি। ”
জুভানের আশ্বাস শুনে ঐশীর এতক্ষণের জমে রাখা কান্না উপচে পড়লো মুখের উপর। ঐশী ফুপিয়ে বললো,
— ” ওরা,, ওরা আমায়… ”
— ” কিছু হবে না। আমি আছি তোমার পাশে। কিছু হবে না তোমার। কিছু হতে দেবো না আমি।”
ঐশী ঝাপসা চোখে অপলকে তাকিয়ে রইলো জুভানের চোখের পানে। ইতোমধ্যে ওদেরকে ঘিরে ধরলো মিডিয়ার লোকজন। জুভানকে ঘিরে ধরে একে একে প্রশ্ন ছুড়লো ওর দিকে। জুভান সেসব প্রশ্নের একটাও উত্তর দিলো না। থমথমে মুখে উঠে দাড়ালো। ঐশীর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
— ” দাড়াও। ”
ঐশী অবাক চোখে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান আবারও বললো,
— ” আমি দাড়াতে বলেছি।”
ঐশী চারপাশে তাকালো। এমন বিরূপ পরিবেশে ও কখনোই পড়ে নি। তাই সবকিছু সামলে উঠতে পারেনি ও। ঐশী জুভানের বাড়ানো হাতের দিকে একঝলক তাকিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো। জুভান ঐশীর হাত শক্ত করে আকড়ে ধরলো। ঐশী উঠে দাড়ালো। জুভান ঐশীর হাত ধরে ভিড় ঠেলে গাড়িতে চড়ে বসলো। জুভান ড্রাইভিং সিটে বসে ঐশীর দিকে ঝুঁকে এলো। ঐশী একটু অস্বস্তিতে পরে মাথাটা কিছুটা পিছিয়ে নিল। জুভান থমথমে মুখে ঐশীর সিটবেলট লাগিয়ে আবারও নিজের জায়গায় বসে পড়লো।
_______________________
গাড়ি গিয়ে থামলো কাজি অফিসের সামনে। ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো জুভানের দিকে। জুভান চুপচাপ ঐশীকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। ইতিমধ্যে জুভানের গাড়ি অনুসরণ করে মিডিয়ার লোকজনও সেখানে এসে দাড়ালো। জুভান ঐশীর ডান হাত আকড়ে ধরে ভিতরে ঢুকলো। মাওলানার সামনে দাড়িয়ে বললো,
— ” দাদা, নিকাহ নামা রেডি করুন। ”
ইতিমধ্যে জুভানের পক্ষ থেকে চারজন সাক্ষীও এসে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে দুজন ঐশীর পক্ষে সাক্ষী দিবে। নিকাহ নামা রেডি হলে জুভান বাম হাতে কলম ধরে সাইন করে দেয়। তারপর কলমটা ঐশীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
— ” নাও। সাইন করো। ”
ঐশী এখনো বিস্ময় ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সে ফ্যালফ্যাল চোখে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। জুভান জোর করে ঐশীর হাতে কলম ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— ” সাইন করো বলছি। ”
জুভানের কড়া কথা শুনে ঐশী ঘোর থেকে বেড়িয়ে এলো। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে বললো,
— ” আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। কক্ষণো না।”
কথাটা শুনে জুভান সহ সেখানে উপস্থিত বাকি সবাই অবাক চোখে ঐশীর দিকে তাকালো। ঐশী পুনরায় চোখ মুছে বললো,
— ” আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না। ”
জুভান তীক্ষ্ম চোখে ঐশীর দিকে তাকালো। বুকে দু হাত গুটিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।ববললো,
— “তাহ, কারণটা জানতে পারি? ”
#চলবে
শব্দসংখ্যা – ১০০০+
পরশু রাত থেকেই সাইনোসাইটিসে ভুগছি। জানিনা এই রোগ কখন আমার পিছু ছাড়বে। গত ছয় বছর ধরে এই রোগে ভুগছি। গল্প লেখার বিন্দুমাত্র শক্তি ছিলো না। মাথা নিচু করলেও মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু গল্প এমন জয়গায় এসে থেমেছে যে অনেকেই অপেক্ষা করছেন।তাই খুব কষ্ট করে ছোট করে এক পর্ব দিলাম। হ্যাপি রিডিং
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/198781948833040/?app=fbl