ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-৩৮

0
1989

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

দুজনের অধর আলাদা হলো। ঐশী জুভানের কাধের টিশার্ট খামচে তার ঘাড়ে মাথা হেলালো। এতক্ষণে ফুরিয়ে আসা নিঃশ্বাস একে একে নিজের ভিতর পুড়ে নিতে লাগলো। জুভান মৃদ হেসে ঐশীর পিঠ জড়িয়ে ধরে ঐশীকে নিজের সাথে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে নিলো।
কেটে গেলো অনেকক্ষণ। বৃষ্টি কমে এসেছে। এখন শুধু ঝিরঝির বৃষ্টির একটা দুটো ফোঁটা ওদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। পশ্চিম আকাশে মেঘ সরে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা কপোত কপোতীর মত আকাশেরও কান্না থেমে গেছে। বুকের ভিতর জমে থাকা বহুদিনের তৃষ্ণা মিটে সেথায় প্রজাপতি ডানা মেলেছে।
জুভান ঐশীর চুলে ঠোঁট বসালো আলতো করে। ঐশীকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিহি সুরে বললো,

— ” ঠান্ডা লাগবে। রুমে চলো। ”

ঐশী জুভানের কথা কি শুনলো? জুভানকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো। জুভান হাসলো ঐশীর এমন ব্যবহারে। কিছু একটা ভেবে হুট করে ঐশীকে কোলে তুলে নিলো। আকস্মিক এই আচরনে ঐশী হতবাক হলো। নিজেকে সামলাতে জুভানের কলার খামচে ধরে তাড়াহুড়ো করে বললো,

— ” আরে, কি করছেন? পড়ে যাবো ত। ”

জুভান থেমে গেলো। ঐশীর নাকের সাথে আচমকা নাক ছোঁয়ালো। ঐশী অবাক হলো সাথে লজ্জাও পেলো। মাথা নত করে ফেললো ও। এই জুভানটা না যা করে! জুভান হাঁটা ধরলো সামনে। পথের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” তোমার বর প্রতিদিন জিম করে, মিসেস মির্জা। তার জন্যে তোমার মত চল্লিশ কেজি বহন করা এক চুটকির সমান। ”

ঐশী গাল ফুলিয়ে তাকালো জুভানের দিকে।

ঐশীর রুমে এনে বিছানায় বসালো। ঐশী থরথর করে কাপছে ঠান্ডায়। একসময় ভিজে শরীর নিয়ে বিছানায় পা উঠিয়ে বসলো। জুভানের কড়া নির্দেশ বিছানা ছেড়ে দাড়ানো যাবে না। জুভান ঐশীর কাবার্ড থেকে একটা সাদা টাওয়েল বের করে ঐশীর পাশে এসে বসলো। তারপর ঐশীকে চমকে দিয়ে ধীরে ধীরে ঐশীর চুল মুছতে লাগলো টাওয়েল দিয়ে। ঐশী আয়নায় জুভানের প্রতিচ্ছবি দেখতে মগ্ন। এই মানুষটা এখন থেকে ওর! বিশ্বাস হচ্ছে না। এই মানুষটার যাবতীয় আদর- ভালোবাসা সব পাওয়ার একমাত্র অধিকার শুধু ওর! ঐশীর চোখ উজ্জ্বল হলো। বুকের ভিতরটার ঘন কালো মেঘকে ছিন্নভিন্ন করে সেখানে জন্ম নিলো অজস্র সুখ। শুধু সুখ আর সুখ।

জুভান ঐশীর চুল মুছে টাওয়েল টা বারান্দায় মেলে দিয়ে রুমে এলো। নিজের ভিজে চুল একহাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

— ” এখন একটা হট শাওয়ার নাও । বেশি পানি মাথায় দিবে না। জাস্ট বৃষ্টির পানি শরীর ছাড়াতে যতটুকু পানি লাগে ততটুকুই দিবে। তাড়াতাড়ি যাও। ”

ঐশী বাধ্য মেয়ের মতন কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। জুভান তাড়াহুড়ো করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। ভিজে শরীর নিয়ে এতক্ষণ কার্পেটের উপর দাঁড়িয়ে ছিলো। কার্পেট-টাও ভিজে যাচ্ছে। এখন ওর-ও শাওয়ার নিতেও হবে।

_______________________

টেবিলে খাবার রেডি হচ্ছে। ঐশী বসার ঘরের সোফায় বসে টিভি দেখছে। জুভান এক সোফায় বসে গিটারে কি যেনো করছে। একবার গিটারে সুর তুলছে, আরেকবার গিটারের তার ঠিক করছে। মাঝেমধ্যে গুনগুন করে গান গাইছে।

ঐশীর টিভির সামনে বসার একমাত্র কারণ আজকের তাজা খবর। সাজ্জাদ হোসেন খুন হওয়ার ইতিমধ্যে নয় ঘণ্টা হয়ে গেছে। এতক্ষণে নিশ্চই এই ব্যাপার নিয়ে মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেছে। ঐশী রিমোট হাতে নিয়ে নিউজ চ্যানেল দিলো।

” বিখ্যাত বিজনেসম্যান সাজ্জাদ হোসেন খুন তার বহুদিনের বিশ্বস্ত প্রেমিকার কাছে। জানা গেছে সাজ্জাদ হোসেনের প্রেমিকা জেনি রায়জাদার সাথে বহুদিন ধরে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। একে অপরের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মেছে, জন্মেছে ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ থেকে আজকের এই খুন। জেনি এক পরিত্যাক্ত বিশ তলা বিল্ডিং থেকে সাজ্জাদ হোসেনকে নিচে ফেলে দেন। যার ফলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় বিশিষ্ঠ বিজনেসম্যান সাজ্জাদ হোসেনের। সাজ্জাদ হোসেনকে খুন করার পর জেনি নিজে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে তৈরি এক বিষ নিজের শরীরে প্রবেশ করিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই ব্যাপারে জেনি নিজে তার সুইসাইড নোটে জানিয়েছেন। বিস্তারিত জানবেন বিরতির পর। ”

ঐশীর চোখ মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করে উঠে। সে যা ভেবেছে তাই হয়েছে এতগুলো দিন। আজও তার ব্যতিক্রম নয়।

— ” কি সারাদিন বোরিং পারসনদের মত নিউজ দেখো। দেখি রিমোটটা দাও তো। ”

জুভান গিটার রেখে ঐশীর পাশে ধাম করে বসে পড়লো। ঐশী হুড়মুড়িয়ে জুভানের দিকে তাকালো। জুভানের দিকে রিমোট এগিয়ে দিয়ে বললো,

— ” দেশের খবর রাখা ভালো। তাই দেখছিলাম। আর কিছু না। ”

জুভান কপাল কুঁচকে ঐশীর দিকে ঝুঁকে এলো। ঐশী ভয় পেয়ে মাথা পিছনে এলিয়ে দিলো। জুভান দু আঙ্গুল দিয়ে ঐশীর কপালের ভাজ সোজা করে দিলো। ঐশী হতবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকালে জুভান সন্দেহ কণ্ঠে বলে,

— ” শুধু দেশের খবর রাখার জন্যে নিউজ দেখো, নাকি দেশে থাকা কিছু লোকের জন্যে। ”

ঐশী আমতা আমতা করে সোজা হয়ে বসলো। জুভানের থেকে নজর লোকানোর চেষ্টা করে বললো,

— “মানে? সেরকম কিছু না। আপনি ভুল ভাবছেন। ”

জুভান নিজেও সোজা হয়ে বসলো। টিভির রিমোট হাতে নিয়ে চ্যানেল বদলাতে বদলাতে বললো,

— ” আমি ভুল ভাবছি না বরং তুমি নজর লুকাচ্ছ। ”

ঐশী আরো সাজানো কতক মিথ্যে বলবে তার আগেই জুভান বললো,

— ” চলো গান শুনি। আমি মোবাইলের ইউটিউব টিভির সাথে কানেক্ট করে দিয়েছি। সো ইটস মিউজিক টাইম। ওকে? ”

জুভানের কথা এড়িয়ে যাওয়ার কারণ ঐশী ধরতে পারলো না। সে নিজেও তাই কথা না বাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।

জুভান গান ছাড়লো। একটার পর একটা গান বাজছে। ওরা বসে বসে শুনছে। কিন্তু দুজনের মন অন্য চিন্তা করছে। একজনের মনে মিথ্যে বলার অপরাধবোধ।আর জুভানের মনে চিন্তা ঐশী সব স্বীকার করছে না কেনো? সে কি পর ঐশীর?

— ” মেয়েটা অনেক হট না? ”

ঐশী ধ্যান ভেঙে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান ভ্রু নাচিয়ে বললো,

— ” আমি বলেছি টিভিতে দেখানো মেয়েটা হট। আমি না। ”

ঐশী রাগ দেখিয়ে তাড়াহুড়ো করে টিভির দিকে তাকালো।

গান বাজছে, “” জান্নাত সাজায়ী মেনে তেরে লিয়ে। ”

মেয়েটা এত ছোটছোট জামা পরেছে যে ঐশীর নিজেরই লজ্জা লেগে গেছে। ঐশী গাল লাল করে জুভানের দিকে তাকালো। তার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,

— ” টিভির রিমোট দিন। দিন বলছি। ”

জুভান একহাত দিয়ে টিভির রিমোট উচুঁ করে বললো,

— ” পারলে নিয়ে দেখাও। আমি এই গান সম্পূর্ণ দেখবো। একবার না বারবার দেখবো। ”

ঐশী রাগ দেখিয়ে উকিঝুকি দিয়ে জুভানের থেকে রিমোট নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু বারবার জুভানের লম্বা দেহের সাথে ব্যর্থ হলো।

বসার ঘর সম্পূর্ণ জুড়ে দুজন দৌড়াদৌড়ি করছে। ঐশী কোনক্রমেই রিমোট হাতাতে পারছে না। জুভানের মুখে জয়ের হাসি।

ঐশী একসময় হামলে পড়লো জুভানের উপর। জুভান টাল সামলাতে না পেরে ঐশীকে সাথে নিয়ে মাটিতে পরে গেলো। সাথেসাথে ঐশীর ঠোঁট স্পর্শ করল জুভানের গাল। জুভান চমকে উঠলো। হতবাক হলো ঐশীও। ঐশী সঙ্গেসঙ্গে উঠে বসলো। মাথা নিচু করে জুভানের পাশে বসে আছে ঐশী। একটু পর জুভানও উঠে বসলো। কিছুসময় নীরব থেকে জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” বাই দ্যা ওয়ে,কিসটা খুব মিষ্টি ছিলো। ”

#চলবে

এখনো মেহমান বাসায়। গল্প কাল দেওয়ার কথা থাকলেও আজ একটা ছোট পর্ব দিলাম। রাগ নেই তো?

শব্দসংখ্যা- ১০০০+

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/205528544825047/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here