ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-৪১

0
2312

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

পুলিশ স্টেশনে বসে আছে জুভান আর অনল। তবে মামলা করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। ইন্সপেক্টর জেনারেল বিহান সিকদারের জন্যে অপেক্ষা করছে তারা। বিহান জুভানের খুব ভালো বন্ধু। জুভান খবর দেওয়ার প্রায় বিশ মিনিটের মধ্যে পুলিশ স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। জুভান আর অনল বিহানকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। বিহান তাড়াহুড়ো করে বললো,

— ” ভাবীর কি হয়েছে? ফোনে ভালো করে বুঝিনি। এখন বলতো কাহিনী কি? ”

জুভান মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। তারপর তাড়া দেখিয়ে বললো,

— ” এখন এসব বলার সময় নেই। আমি সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে এসেছি। জলদি চল। ”

বিহান আর দেরি করলো না। জুভান যে অস্থির হয়ে আছে তা সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। বিহান ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে কন্ট্রোল রুমের দিকে পা বাড়ালো। পিছন পিছন জুভান আর অনল এগিয়ে গেলো।

— ” গাড়ীর নাম্বার জানিস? ”

জুভান মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর দিলো। বিহান এতে একটু চিন্তায় পড়ে গেল জুভান বলে উঠে,

— ” আমার বাড়ির সামনের দিকটা দেখ। গাড়ি ওখান থেকেই বেরিয়েছে। ”

বিহান ফুটেজ বদলালো। জুভানের বাড়ির সামনে কোনো সরকারি সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। সেখানে ফুটেজ থাকার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু বাড়ির সামনে দু মাইল দূরে মেইন রোড আছে। সেখানে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করা। বিহান সেই ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলো।

বিকেল চারটা নাগাদ শা শা করে দুটো গাড়ি জুভানের বাড়ির রাস্তা দিয়ে গিয়েছিল। আবার সেই গাড়ি সেই রাস্তা দিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ একই রাস্তা দিয়ে ফিরে এসেছে। জুভান গাড়ি দেখেই বললো,

— ” গাড়িটা জুম কর। কুইক। ”

বিহান জুম করলো। গাড়ীর সামনের গ্লাস দিয়ে ড্রাইভার আর একটা লোক দেখলো। জুভান আবারও বললো,

— ” আরো একটু জুম করতো। ”

বিহান জুম করলে জুভান কিছু একটা দেখে জুভানের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে তাড়াহুড়ো করে বললো,

— ” লুক। গাড়ীর পিছন সিটে ঐশীর ওড়না! এই ওড়না আমি আজকে ওকে পড়তে দেখেছিলাম।”

বিহান আর অনল ভালো করে জুম করে ফুটেজ-টা দেখলো। ঐশীর দেখা পেয়ে জুভানের চোখ ভিজে এলো। এখন ঐশীর খবর পাওয়া আরো সহজ হবে। আল্লাহ! রক্ষা করো আমার মেঘবালিকাকে।

বিহান গাড়ির নাম্বার নোট করলো। গাড়ি সব ফুটেজ লক্ষ করে দেখা গেলো গাড়ি ঢাকা থেকে বেরিয়ে গেছে। সিলেটের রাস্তা দিয়ে গাড়ী এগিয়ে গেছে। জুভান আর অপেক্ষা করলো। রাগে বেরিয়ে যেতে নিলে বিহান আটকে নেয়। জুভান চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালে বিহান বলে,

— “মাথা ঠাণ্ডা কর জুভান। আমি জানি তুই এখন একে জানে মেরে ফেলবি। ”

জুভান দাত চেপে বললো,

— ” ত কি করবো একে? পূজা? ”

— ” কিন্তু দেখ, তুই একে মারবি কিন্তু এতে ফলাফল কি আসবে? তোর জেল। তাইতো? কিন্তু যার জন্যে তুই একে মারবি সে তোর জেলে যাওয়ার খবর মানতে পারবে তো? ভেবে দেখ।”

জুভানের তীক্ষ্ম চোখ শীতল হয়ে এলো। চোখ বুজে নিলে ঐশীর কান্নামাখা মুখ ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো। জুভান জলদি চোখ খুলে নিলো। বললো,

— ” কি করবো এখন? ”

— ” ওকে এমনভাবে মারবি যেনো সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে। আর আমি জানি তুই অলরেডী ভেবে নিয়েছিস ওকে কিভাবে মারা যায়। অ্যাম আই রাইট? ”

বিহানের কথা শুনে জুভানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। ওর সাথে হেসে উঠলো আর দুই মুখ। এবার?

_______________________
ঐশীর অবস্থা নাজেহাল। থাপ্পড়ের কারণে ঠোঁটের বেশিরভাগ অংশ ফেঁটে রক্ত ঝরছে। নাকের নীচে রক্ত জমে শুকিয়ে গেছে। জিহ্বা খানিক কেটে গেছে দাত লেগে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো, উষ্ককুষ্ক। হাত পায়ে দড়ি বেধে রাখার কারণে চিকন দাগ পড়ে গেছে। ঘাড়ের ব্যাথায় আর টিকে থাকা যাচ্ছে না। ঐশী এতটাই ক্লান্ত যে চেয়ারে বসা অবস্থায় মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে বসে আছে। মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে আসছে। এতটা যন্ত্রনা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ঐশীর দম আটকে আসছে। মরণ ঘণ্টা কি বেজে গেলো?

একটু পর দরজা খোলার আওয়াজ এলো ঐশীর কানে। কিন্তু চোখ খোলার শক্তি তার মধ্যে নেই। একটা মেয়ে হাতে এক প্লেট ভাত নিয়ে ঐশীর সামনে এসে বসলো। মেয়েটা নিজে ভাত মেখে ঐশীর মুখের সামনে ধরে বললো,

— ” নে। খা। হা কর। ”

ঐশী হা করলো না। মেয়েটা এবার জোর করে ঐশীর গাল ধরে ভাত ওর মুখে পুড়ে দিলো। সঙ্গেসঙ্গে ঠোঁটের কাটা জায়গায় ঐশীর জ্বলে উঠলো। ঐশী জ্বলায় গুঙিয়ে উঠলো। কিন্তু তার থেকেও বেশি জ্বললো মুখের ভিতরে। ভাত সম্পূর্ণটা লাল মরিচ দিয়ে মাখানো। ঐশীর মুখের ভিতর অনেকখানি কেটে গেছে। কাঁটা জায়গায় লাল মরিচ লাগতেই ঐশী ছটফট করে উঠলো। ” পানি পানি ” বলে গুঙিয়ে উঠলো ও। মেয়েটা ঐশীর ছটফটানি দেখে পৌশাচিক হাসি হাসলো। জোর করে আরো ঠেসে ঠেসে মুখের ভিতর খাবার প্রবেশ করালো। আর ঐশী এতে গলা কাটা মুরগীর মতন ছটফট করলো শুধু।
__________________
প্লেন এসে থামলো সিলেট এয়ারপোর্টে। জুভান আর অনল প্লেন থেকে নেমে দাড়ালো। দুজনের মুখেই মাস্ক। এবার তাদের প্রথম কাজ মহেন্দ্রলালকে খুজে বের করা। ওদের গাড়ির নম্বর থেকে মহেন্দ্রলালের সব খবর নিয়েছে জুভান।

— ” সবার আগে কোথায় যাবি? ”

জুভান মাথার ক্যাপটা খুলে চুলগুলোকে মুক্ত করে দিলো। রোদের আলোয় বেটে আসা চোখ দিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,

— ” প্রথমে মহেন্দ্রলালের বাড়িতে যাবো। লুকিয়ে নজর রাখবো ওদের লোকের উপর। হয়তো ওখান থেকে ঐশীর কোনো খবর পেয়ে যাবো। ”

অনল মাথা হেলালো। যার অর্থ সে বুঝেছে।
_______________
মৌলভীবাজারে বিশাল বাড়ি। বাড়ীর চারপাশে শ লোকজন পাহারা দিচ্ছে। বাড়ির পাশের বিল্ডিং এর ছাদ থেকে জুভান দূরবীন দিয়ে বাড়িটায় নজর রাখছে।

হঠাৎ এক বয়স্ক লোক বাড়ীর মেইন ফটিক থেকে বের হলো। সবাই লোককে দেখে সালাম দিলো। লোকটা দম্ভভরে গাড়ির সামনে দাঁড়ালে একজন লোক গাড়ির দরজা খুলে দেয়। জুভান এসব দেখে খানিক অবাক হয়। কে এই লোক? এতো মহেন্দ্রলাল নয়। তবে? জুভান আর দেরি করে না। জলদি ছাদ থেকে নেমে গাড়িতে উঠে বসে। পিছু নেয় সেই লিকের গাড়ীর।

জুভান একহাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। আরেকহাত দিয়ে বিহানের নাম্বারে ডায়াল করলো। ফোন রিসিভ হতেই বললো,

— ” শোন, তোকে একটা গাড়ির নাম্বার দিচ্ছি। গাড়িটার নাম্বার থেকে তার মালিক আর মালিকের ফোন নম্বরের খোজ নে। আর সেই ফোন নাম্বারের কল রেকর্ড শোন। কোনো সন্দেহ কিছু পেলে আমাকে জানা। কুইক। ”

বিহান হা না বলার আগেই জুভান ফোন কেটে লোকের গাড়ি ফলো করে। এতদূর কোথায় যাচ্ছে এই লোক?
________________________
একটা বাংলো বাড়িতে এসে গাড়ি থামে। জুভান সেই বাংলো বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিজের গাড়ি থামায় যাতে লোকটার সন্দেহ না হয়। এখন অপেক্ষা বিহানের কলের। তারপর যা করার করা যাবে।

জুভানের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এলো। জুভান জলদি মেসেজ ওপেন করলো। একটা ভয়েস রেকর্ড। জুভান রেকর্ডটা অন করলে শোনা যায়,

— ” হ্যালো, মহি। ”
— ” বলো। ”
— ” এই মাইয়া তো কথা কইতেছে না। এহন কি করবা? ”
— ” তুমি তো ওর মারতে দাও না। শালিরে মাইরা ফেলি। তারপর আমরাই খুইজা বের করুন ওর সাথীর নাম। ”
— ” আবার একই কথা। শোন তুই একবার শান্তি নিকেতনে আয়। মাইয়াটার আচ্ছা ধোলাই কর। কথা এমনেই বারইবো। ”
— ” আচ্ছা আইতাছি। ”

কল রেকর্ড বন্ধ হয়ে যায়। জুভান অবাক হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বাংলোর নরম প্লেটের দিকে তাকায়। বড়বড় করে লেখা – ” শান্তি নিকেতন “। জুভানের চোখের পাতা কেপে উঠে। তারমানে ঐশী এই বাংলোতে আছে। জুভানের বুক ধকপক ধকপক করে উঠে।

একটু পর অনলের মোটর বাইক এসে জুভানের সামনে থামে। জুভান অনলকে শর্টকার্ট-এ কি করতে হবে বুঝিয়ে দেয়। অনল সব ভেবে মাথা নাড়ায়।

#চলবে
গল্প কিন্তু শেষের দিকে। আর হয়তো তিন থেকে চারটা পর্ব আছে। এই গল্প কিন্তু আমার লেখা সবচেয়ে বড় গল্প।

শব্দসংখ্যা- ১০০০+
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/208718891172679/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here