#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪২( বোনাস পার্ট)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
অনল চোখে রোদচশমা লাগিয়ে শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলে দিল। চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে এগিয়ে গেলো বাংলোর গেটের দিকে।
— ” এক্সকিউজ মি? ”
বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক লোককে উদ্দেশ্য করে বললো অনল। লোকটা অনলকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। অনলকে আগাগোড়া নিরীক্ষণ করে মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— ” কি চাই? ”
অনল মোবাইলে একটা লোকেশন বের করে লোককে দেখিয়ে বললো,
— ” আই অ্যাম এ ইন্ডিয়ান। আই ক্যান্ট ফাইন্ড দিস লোকেশন। ক্যান ইউ প্লিজ টেল মি দা ওয়ে অফ দিস প্লেস?”
কালো রঙের লোক ফ্যালফ্যাল করে তাকালো অনলের দিকে। তারপর মুখে থাকা পানের পিক পাশে ফেলে দিয়ে বললো,
— ” কি কইতাছো কিছুই বুঝবার পারছি না। বাংলায় কও। ”
অনল অসহায় হওয়ার ভান করলো। মহাফ্যাসাদে পড়েছে মুখের অভিব্যাক্তি যেনো এরূপ। কালো লোক বন্দুক একপাশে রেখে পাশে দাড়িয়ে থাকা এক স্মার্ট গার্ডকে ডাক দিলো। গার্ড অনলের দিকে এগিয়ে এলে জুভান সেই ফাঁকে চুপিসারি গেটের ভিতর ঢুকে যায়। কালো লোকটা সেই গার্ডকে বললো,
— ” দেখ তো বেটা কি চায়? ”
গার্ড অনলের দিকে তাকালে অনল পুনরায় একই কথা রিপিট করে। গার্ড অনলকে বুঝিয়ে দেয় লোকেশন। অনল খুব খুশি হওয়ার ভান করে গার্ডকে জড়িয়ে ধরে। জুভান ভিতর থেকে বুড়ো আঙ্গুল উচু করে ” হয়ে গেছে” বললে অনল গার্ডকে ছেড়ে দিয়ে বাইকে চড়ে বসে।
জুভান গুটিগুটি পায়ে ভিতরে প্রবেশ করে। এই জায়গার সব মানুষ বন্ধুকে ধারণকারি। তাই তাদের সাথে পাল্লা দেওয়া খুব কঠিন কাজ। জুভানের হাতেও লাইসেন্সকৃত বন্দুক আছে। কিন্তু জুভানের হাতের অস্ত্রও কম না। কিন্তু অযথা নিজের শক্তি খরচ করা জুভানের পছন্দ না। তাই জুভান খুব সন্তর্পনে পা ফেলছে। এখন খোঁজ নেওয়া দরকার ঐশী কই?
— ” মেয়েটা খাইছে? ”
মধ্যবয়স্ক সেই লোক হাঁটতে হাঁটতে বললো। সম্পর্কে সে মহেন্দ্রলালের বাবা রামলাল। রামলালকে আসতে দেখে জুভান এক গাছের আড়ালে হারিয়ে যায়। রামলাল গেটের দিকে এগিয়ে গেলে জুভান হুট করে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রামলালকে একহাত দিয়ে চেপে ধরে। রামলাল ভয় পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। চোখ বড়বড় করে তাকায় জুভানের দিকে। সবাই জুভানকে রামলালের সাথে দেখে তাড়াহুড়ো করে ওর দিকে বন্দুক তাক করলে জুভান ওর বন্দুক রামলালের কপালে তাক করে বলে,
— ” একটা গুলি কোনো বন্দুক থেকে বের হবে, তো এই মানুষটা এখানেই মারা পড়বে। ”
সবাই কিছু বলার আগেই রামলাল কাপা গলায় বললো,
— ” এই সবাই বন্দুক নামাও। নামাও কইতাছি। ”
রামলালের কথায় সবাই বন্দুক নামিয়ে ফেলে। জুভান এবার বলে,
— ” সবাই একজায়গায় জড়ো হও। কুইক। ”
রামলাল ইশারা করলে সবাই একজায়গায় এসে জড়ো হয়। রামলাল ভয়ে রীতিমত কাপছে। নিজে মানুষ খুন করলেও সবসময় ছেলে মহেন্দ্রলালের ইশারায় করেছে। ছেলে থাকায় কখনো জানের পরোয়া করেনি। কিন্তু আজ ছেলে নাই। কিন্তু ফোন করা যাবে তো? রামলাল ফোনের ইশারা করার আগেই জুভান বলে উঠে,
— ” সবার ইলেকট্রিক ডিভাইস আমার সামনে মাটিতে রাখো। মোবাইল, ঘড়ি, ল্যাপটপ, ব্লুটুথ সব। কারো কাছে যদি কোনও ইলেকট্রিক ডিভাইস দেখি তবে এই লোক আর জ্যান্ত থাকবে না। রাখো বলছি। ”
রামলাল এবার কান্না করে দেওয়ার উপক্রম।এই ছেলে অনেক ডেঞ্জারাস। এখন কি উপায়? এবার তো সাক্ষাৎ নরকে গিয়ে পড়বে।
— ” কি হলো রাখ? নাকি এরে মেরে ফেলবো। ”
জুভান চিৎকার করে বললো। হাত দিয়ে গুলি চালানোর ভান করলে রামলাল চিৎকার দিয়ে বলে,
— “আরে। রাখ। রাখ। যা আছে সব এরে রাইখা দে। ”
সবাই একে একে সব ইলেকট্রিক ডিভাইস মাটিতে রাখে। জুভান এবার রামলালকে জিজ্ঞেস করে,
— ” ঐশী কই? ”
রামলাল আমতা আমতা করলে জুভান গুলি করে দেওয়ার কথা বললে রামলাল সজোরে বলে উঠে,
— ” ওই ঘরের ভিত্রে। ”
আঙ্গুল দিয়ে একটা কালো রঙের ঘর দেখায় রামলাল। জুভান এবার নিজের কানে লাগানো ব্লুটুথ দিয়ে অনলকে বাড়ীর ভিতরে আসতে বলে।
একটু পর অনল খুব রয়ে সয়ে হাসিমুখে ভিতরে প্রবেশ করে। দুনো হাত জিন্সের পকেটে গুজে রাখা, বুক ফুলিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। এমন ভাব যেন সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। অনল জুভানের পাশে এসে দাঁড়ালে জুভান রামলালকে খুব সাবধানে অনলের হাতে তুলে দেয়। এবার অনল রামলালের মাথায় গুলি ঠেকিয়ে দেয়। জুভান সবার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে বলে,
— ” কেউ কোনো চালাকি করবে তো আজ এই লোককে এখানেই মেরে গেড়ে দিবো। মাইন্ড ইট। ”
রামলালের চোখে নিদারুণ অসহায়ত্ব। মনে মনে অনবরত ছেলের নাম জপ করছে সে। ছেলে একবার আসুক , তাকে একবার বাঁচাক। ঈশ্বরের নামে শপথ করছে আর জীবনেও কাউরে খুন করবে না। ছেলের কথাতেও না।
জুভান আরেকটা বন্দুক ধরে চারপাশে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো সেই ঘরের দিকে। বুকের ভিতরটা তার ধুকধুক করছে।মনে হচ্ছে কত জনম পররে ঐশীর মুখ দেখবে।
জুভান ঠাস করে দরজা খুলে ফেলে। সঙ্গেসঙ্গে সে থমকে যায়। ঐশীর এমন করুন অবস্থা দেখে তার বুকে মোচড় দেয়। স্থির দাড়িয়ে থেকে কাপা কণ্ঠে ডাক দেয় সে,
— ” ঐ-ঐশী”
হঠাৎ চিরচেনা কারো গলার কাছে আওয়াজ শুনে ঐশীর চোখ উজ্জ্বল হয়ে যায়। সঙ্গেসঙ্গে খুব কষ্ট করে ঘাড় উচুঁ করে সামনে তাকায়। ঐশী থমকে যায়। সে কি ঠিক দেখছে। ঐশীর বুকে এতদিন ধরে জমে থাকা জল হুহু করে চোখ উপচে বেরিয়ে আসে। জুভান এসেছে! তাকে এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে জুভান এসেছে। ঐশীর বিশ্বাস হচ্ছে না। ঐশী ঠোঁট ফাটা। কথা বলতেই জ্বলে উঠে। তাও ঐশী খুব কষ্ট করে বললো,
— ” জু-জু-জুভান। ”
জুভান ঐশীর অবস্থা দেখে সম্বিত ফিরে পায়। তাড়াহুড়ো করে না ঐশীর পাশে এসে বসে সে। পাগলের মতন ঐশীর সমস্ত শরীর হাতড়াতে থাকে। একই অবস্থা হয়েছে তার মেঘবালিকার। জুভানের এসব সহ্য হচ্ছে না আর। বন্ধ করুন কেউ এই দুঃস্বপ্ন। জুভান জলদি ঐশীর সমস্ত বাঁধন খুলে দেয়। হাতে দাগ, পায়ে দাগ ,মুখে থাপ্পড় দেওয়ার অজস্র চিন্হ। জুভানের এসব দেখে কান্না এসে যাচ্ছে। কিন্তু সে দুর্বল হবে না। ঐশী আরো কথা বলবে তার আগেই জুভান ঐশীর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দেয়। হুট করে ঐশীকে পাজকোলা করে কোলে তুলে নেয়। ঐশী জুভানের গলা জড়িয়ে ধরতে চায় কিন্তু শক্তিতে কুলায় না। ঐশী হাত নিচে নামিয়ে দেয়।
জুভান ঐশীকে কোলে করে বাইরে আসে। অনলকে দেখে ঐশীর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। জুভান কি সব জেনে গেছে? অনল ওর সাথে কেনো? কিন্তু এসব ভাবার আগেই ঐশী অত্যাধিক শারীরিক এবং মানসিক চাপে জুভানের কোলেই জ্ঞান হারায়। জুভান দেখে কিন্তু কিছু বলে না।
জুভান ঐশীকে নিয়ে পিছন সিটে বসে। ঐশী জুভানের বুকে লেপ্টে অজ্ঞান হয়ে আছে। অনল জুভানের ইশারায় রামলালের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে। জুভান ঐশীকে নিয়ে পিছনে বসে। রামলালকে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসিরে দিয়ে বন্দুকটা জুভানের হাতে দিয়ে দেয়। এবার জুভান পিছন সিট থেকে রামলালের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বসে থাকে।
গাড়ি চলছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। গাড়ি যখন সিলেট পেরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসে তখন অনল রামলালকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার মাঝখানে রেখে দেয়। রামলাল অবাক চোখে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। জুভান জানালা থেকে আঙ্গুল উচিয়ে বললো,
— ” খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে। বলে দিস তাকে। ”
গাড়ি চলে যায়। জুভান এবার ঐশীর দিকে তাকায়। ঐশীর মুখের এই অবস্থা দেখে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। জুভান নিজেকে সামলাতে না পেরে দুহাত দিয়ে ঐশীর গাল ধরে ওর সম্পূর্ণ মুখে পাগলের মতন চুমু দিতে থাকে। যেনো এতদিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে সে। কিছুসময় পর তার বুকের ভিতরটা শান্ত হলে ঐশীকে আবারও বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে সে। এতক্ষণে মনের মধ্যে থাকা তুফানটা বন্ধ হলো। তার মেঘবালিকা এখন তার বুকের মাঝেই, তার কাছেই। একদম কাছে।
#চলবে
রিচেক দেওয়ার ধৈর্য ছিল না। বোনাস পার্ট দিলাম। এবার গঠনমুলক কমেন্ট করেন। আমি খুশি হবো।
শব্দসংখ্য- ১০০০+
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/209290101115558/?app=fbl