ইট পাটকেল পর্ব-২ ৩

0
6426

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২+৩

বারান্দার সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসে মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রেখেছে আশমিন। নূরের কোন কথাই তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে নি। সেসব নিয়ে মাথা ও ঘামাচ্ছে না সে।তার বর্তমান মাথা ব্যথার নাম লারা।এই মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক দিনেই মাথা খেয়ে দিল।কয়েকটা বিশ্রী গালি দিয়ে মাথা সোজা করে বসলো সে।সামনেই কাচুমাচু করে সানভি দাঁড়িয়ে। কি বুঝে যে এই ছেলেটা কে নিজের পি.এ. করেছে আজো মাথায় আসে না।

–কি বলবে বলো।

আশমিনের গম্ভীর গলা শুনে শুকনো ঢোক গিললো সানভি। ভয়ে ভয়ে বললো,

— ম্যাম কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না স্যার।

তরাক করে বন্ধ চোখ খুলে ফেললো আশমিন।রক্তিম চোখে তাকাতেই কাপা কাপি শুরু হয়ে গেলো সানভির।আশমিন নিজের ফোনে দৃষ্টি রেখে গম্ভীর গলায় বললো,

— নূর রুমেই আছে সান।অযথা আমার সময় নষ্ট না করে বাকি দিকটা সামলাও।

— আমি লারা ম্যামের কথা বলছি স্যার।

সানভির তারাহুরো জবাব।
বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেলো আশমিনের।তবে চেহারায় তার রেশ মাত্র নেই।শান্ত ভঙ্গিতে শুভ্র পাঞ্জাবির পকেট থেকে রি*ভালবার বের করে শান্ত গলায় বললো,

— ওই মেয়েকে আরেকবার ম্যাম বললে এই রি*ভালবারের একটা গু*লি তোমার নামে দান করে দিবো। বুঝে শুনে কথা বলবে এর পর থেকে। ঠিক আছে?

তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সানভি।যে লোক কোল্ড ড্রিংক খেতে খেতে ঠান্ডা মাথায় খু*ন করতে পারে তার দ্বারা সব কিছুই সম্ভব। প্রানের নিশ্চয়তা থাকলে এই চাকরি সে কবেই ছেড়ে দিতো।এসবে এমন ভাবে জরিয়ে গেছে যে চারিদিকে শত্রুর অভাব নেই। আশমিনের ছায়া মাথা থেকে উঠতেই সে দুনিয়া থেকে উঠে যাবে।

— লারা কে আমি সরিয়েছি।তাই চিন্তা বাদ দাও।

— ঠ ঠিক আছে স্যার।তবে অভয় দিলে আরেকটা কথা বলতাম।

আশমিন শান্ত চোখে তাকালো সানভির দিকে।সাথে সাথেই সানভি গড়গড় করে সব বলতে শুরু করলো,

— আপনি লারা কে যে গোডাউনে রেখেছিলেন সেখানে সে নেই স্যার।আমাদের গার্ডদের চোখ ফাকি দিয়ে কেউ তাকে নিয়ে গেছে।আশেপাশের সব জায়গায় খোঁজ চলছে কিন্তু কোন আশানুরূপ খবর এখনো পাই নি।

আশমিন চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো, কাজ টা তুমি ঠিক করলে না নূর।আমার কাজে বাম হাত ঢোকানো আমি পছন্দ করিনা। আমার অপছন্দের কাজ গুলোই তুমি সবচেয়ে বেশি করো।ফলাফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকো।চোখ বন্ধ রেখেই সানভি কে বললো,

— এই মুহুর্তে শুধু আমার মায়ের কাছে এই খবর টা পৌঁছে দাও যে,বউ পালিয়েছে।আর অন্দরমহল খালি করে দাও।শুধু আমার কাছের মানুষ গুলো ছাড়া আর কেউ যেন না থাকে।

— ওকে স্যার।

হন্তদন্ত পায়ে বেড়িয়ে গেলো সানভি।রাত তিনটায় আড়ামের ঘুম বাদ দিয়ে এসব করতে হচ্ছে। কালার ফুল প্রজাপতির মতো সুন্দরী মেয়েরা এদিক সেদিক উড়ে বেরাচ্ছে।অথচ তার সেদিকে নজর দেয়ার ও সময় নেই।এই জীবন রেখে কি হবে।এর চেয়ে সন্যাসী হয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ঢেড় ভালো।।

ভোর রাতে মিসেস কামিনী চৌধুরীর বিলাপে ঘুম ভাঙলো সবার।আশমিন একমনে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূরের রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছে সে। ফোনের স্ক্রিনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে সে।নূর ঘুমাচ্ছে। ঠিক দু মিনিটের মাথায় আলসে ভঙ্গিতে উঠে বসলো নূর।চুল গুলো মেসি বান করে আড়মোড়া ভেঙে ফিচলে হাসলো। হেলেদুলে এসে আশমিনের সেট করা ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে দুই ঠোঁট উচু করে চুক চুক শব্দ করে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। আশমিন হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করছে। এই মেয়েটা এতো বিধ্বংসী হলো কবে থেকে! নূর নিজের হাসি থামিয়ে চেহারা দুঃখী দুঃখী করে ফেললো। আফসোসের স্বরে বললো,

— আহারে!মন্ত্রী সাহেবের বউ পালিয়েছে বুঝি?এখন কি হবে?প্রেস, মিডিয়া তো মন্ত্রী সাহেব কে বদনাম করে দিবে।আপনি চিন্তা করবেন না মন্ত্রী সাহেব, আমি কোন ভাবেই আপনাকে বদনাম হতে দিবো না।আমি ওয়াদা করেছিলাম তো!আপনার বিপদে আপনার পাশে থাকবো।লুক,আম হেয়ার।

নূর রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার দশ মিনিটের মাথায় সমস্ত শোরগোল থেমে গেলো। পুরো দমে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলো।

বিশাল বাগানের মধ্যে বরের গোসলের প্রস্তুতি চলছে। এক সাইডে নূরের ব্যান্ড একের পর এক গান পারফর্ম করে যাচ্ছে। আজকে নূর এখনো স্টেযে উঠে নি।সে আশমিনের আসার অপেক্ষায় আছে। তার পারফরম্যান্স শুরু হবে আশমিন আসার পর পর।

কয়েক মুহুর্ত পরে আশমিন উপস্থিত হলো বাগানে।শুভ্র পাঞ্জাবিতে রাজকুমারের মতো লাগছে তাকে।হলদেটে গায়ের সাথে পাঞ্জাবি টা অসাধারণ ভাবে মানিয়ে গিয়েছে।তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নূরের দিকেই স্থির। নূর মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়লো। আশমিন বাকা হেসে গোসলের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দাড়াতেই মহিলারা তাকে আবারও হলুদ মাখিয়ে দিলো।স্টেজে তখন শুভ বিবাহ গান বাজছে।আমজাদ চৌধুরী হাক ডেকে নূর কে বললো,

— এদিকে আয় তো তেহজিব মা।আশমিন কে হলুদ লাগিয়ে দে।

নূর শয়তানি হেসে হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে এলো। নূর কে আসতে দেখে মহিলারা একপাশ হয়ে দাড়িয়ে গেলো। আশমিন শান্ত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে। নূর আশমিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো,

“আমার জায়গায় বসিয়েছো অন্য কাউকে যেমন
তোমার জায়গা ও দিয়ে দিবো অন্য কাউকে তেমন।

আশমিনের গালে হলুদ লাগিয়ে দিতেই আশমিন নূরের হাত চেপে ধরলো। হেচকা টানে নূর কে ঘুড়িয়ে নিলো।সাথে সাথে আশমিনের বুকের সাথে নূরের পিঠ লেগে গেল। আশমিন হালকা নিচু হয়ে গুন গুন করে গাইলো,

” tera muskurana,
nazar yu jhukana,
mere liye he bass, mere liye hai.

নূরের গালে নিজের গাল ঘষে দিলো।নূর বাকা হেসে সামনে বসে থাকা কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকালো।সে কটমট করে তাদের দিকেই তাকিয়ে।লারা কে এখনো পাওয়া যায় নি।নূর তাদের আশ্বাস দিয়েছে,সে সময় মতো লারা কে বধু বেসে উপস্থিত করবে।কামিনী চৌধুরী জানেন নূর নিজের কথা রাখবে।তবুও নিশ্চন্ত হতে পারছেন না।আশমিনের মতিগতি তার ঠিক লাগছে না। ভালোয় ভালোয় বিয়ে টা মিটে গেলেই হলো।

আশমিন নিজের রুমে দাঁড়িয়ে। বর বেশে তাকে কোন দেশের রাজা লাগছে। কিছু একটা ভেবে শয়তানি হেসে বিরবির করলো,

–তোমার জীবনে কালবৈশাখী ঝড় তুলে দিবো তেহজিব, ঠিক যেমন আজ আমার হৃদয়ে ঝড় উঠেছে। ঝড়ের তান্ডবে যেমন শুকনো ডাল ভেঙে পড়ে ঠিক তোমাকেও সেভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো। তবে তোমার মতো আমি একা ছাড়বো না তোমাকে। খুব যত্নে কুড়িয়ে নিবো বাহুডোরে।আজ যেমন তুমি আমাকে শূণ্যতার মহাকাশে ছুঁড়ে ফেলেছো।ঠিক আমিও তোমাকে আমার হৃদয়ের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলবো।দেখা হবে শীঘ্রই,,,

আশমিনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।বর বেশে বসে আছে সে।পাশেই তার বাবা মলিন মুখে বসে।প্রেস মিডিয়া চারিদিকে গিজগিজ করছে। সামিয়ানার ওপাশে লারা বধু বেশে উপস্থিত। নূর সামনেই দাঁড়িয়ে। মুখে তার ক্রুর হাসি।আশমিন হঠাৎ করেই খুব হাসি হাসি মুখ করে তাকালো নূরের দিকে। হচকচিয়ে গেলো নূর। এর মধ্যেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে।লারা কে কবুল বলতে বললে লারা ভীতু চোখে আশমিনের দিকে তাকালো।আশমিন হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কবুল বলতে বললো। লারা কাপা কাপা গলায় কবুল বলে দিলো।আমজাদ চৌধুরী মুখ কাল করে ফেললো। হঠাৎ করেই আশমিন চিৎকার করে উঠল।

— কি হয়েছে আব্বু?বুকে ব্যথা করছে? চিন্তা করো না।আমি এখনি তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।

আশমিনের চিৎকার শুনে আমজাদ চৌধুরীর হাত এমনিতেই বুকে চলে গিয়েছিল। সে এখন হতভম্ব চোখে আশমিনের দিকে তাকিয়ে। আশমিন ফিসফিস করে বললো,

— যদি চাও এই মেয়েকে বিয়ে করে সত্যি সত্যি তোমাকে হার্ট অ্যাটাক না দেই তাহলে আমার সাথে এই মুহুর্তে হসপিটালে চলো।

আমজাদ চৌধুরীর এবার সত্যিই বুকের ব্যথা শুরু হয়ে গেলো।

চলবে,,,
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩

আমজাদ চৌধুরী কে যখন হসপিটালে নেয়ার তোড়জোড় চলছে ঠিক সেই মূহুর্তে তাদের সামনে হাজির হলো নূর। আশমিন চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সানভি আমতা আমতা করে বললো,

— সরে দাড়ান ম্যাম।স্যার কে এখনি হসপিটালাইজ করতে হবে। নাহলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

নূর বাকা হেসে আমজাদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে দাড়ালো। কামিনী চৌধুরী তাকে ধরে বিলাপ করে যাচ্ছে। লারা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে পাশেই দাড়িয়ে। নূর আশমিনের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— সবাই শান্ত হন।কেউ অস্থির হবেন না প্লিজ। আংকেলের গ্যাস্টিকের ব্যথা হয়েছে।ছেলের বিয়ে বলে কথা, হেভি খাবার খাওয়ায় এই অবস্থা। নাথিং এলস।আশমিনের সামনে গ্যাস্টিকের মেডিসিন এগিয়ে দিয়ে বললো,

— নিন,এটা আংকেল কে খাইয়ে দিন।দশ মিনিটে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি বরং ভালো ছেলের মতো বিয়ে টা করে নিন।সুন্দরী সুশীল বউ অপেক্ষা করছে তো।বিয়ে টা আপনাকে করতেই হবে মন্ত্রী সাহেব। নাহলে আমার শূন্যতা অনুভব করবেন কিভাবে।আমাকে ফিরে পাওয়ার বিন্দু মাত্র আশার স্বস্তি আমি আপনার ভিতর অবশিষ্ট রাখবো না। নূর তার কথার খেলাপ করে না।

শেষের কথা গুলো ফিসফিস করে বললো নূর।আশমিন তার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে। ভিতরে রাগে ফেটে পরলেও ভাইরে সে একদম শান্ত।নূরের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো সে।নূরের দিকে ঝুকে ফিসফিস করে বললো,

— আমি একজন মন্ত্রী নূর।তোমার মতো হাজার হাজার কুটিল বুদ্ধি পিছনে ফেলে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।তুমি এতদূর করতে পেরেছো কারণ আমি চেয়েছি।উড়ে বেড়াও,যতো খুশি উড়ে বেড়াও।কিন্তু এটা ভুলে যেও না তোমার নাটাই এই আশমিন জায়িনের হাতে।উড়বে,গোত্তা খাবে সমস্যা নেই।কিন্তু যখন সুতা টান দিবো তখন আমার কাছেই আসতে হবে। তখন কি হবে নূর! তোমার মন্ত্রী সাহেব কিন্তু খুব নিষ্ঠুর। তার নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে পারবে তো! ভেবে চিন্তে কদম ফেলো নূর।তোমার পায়ে শিকল লাগাতে আমি মোটেও সময় নিবো না। (দাতে দাত চেপে)

— একি মন্ত্রী সাহেব! নাটাই থেকে সুতো ছিড়ে কবেই উড়ে গেছে আর আপনি তো দেখছি খবর ও রাখেন না।এতো বেখেয়ালি হলে চলে!(বাকা হেসে)

— দেখা যাক।

নূরের থেকে দূরে সরে চারিদিকে চোখ বুলালো আশমিন।সবাই আমজাদ সাহেব কে ঘিরে ধরে আছে। সেদিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে উঠলো সে,

— সবাই এভাবে ভীড় করে আছেন কেন।সরে দাড়ান। গাড়ি বের করো সানভি।আর মিস.তেহজিব নূর,আপনি নিশ্চয়ই ডাক্তার নন।আপনার দূরদর্শী খমতার বলে আব্বুর বুকের ব্যথা গ্যাস্টিক মনে হতেই পারে।তাই বলে ছেলে হিসেবে তো আমি তা ধরে বসে থাকতে পারি না।কারোর খামখেয়ালি ধারণা নিয়ে তো আর বাবা কে হারাতে পারি না।আপনার কাছে হয়তো বাবার মূল্য তুচ্ছ্য।তবে আমার কাছে সব কিছুর চেয়ে বাবার মূল্য বেশি।আশা করি বোঝাতে পেরেছি।

সানভি গাড়ি নিয়ে আসতেই আমজাদ সাহেব কে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো আশমিন। নূর কে ইচ্ছে করেই এতো তিক্ত কথা শুনিয়েছে সে।নিজের করা ভুল গুলো সেও নাহয় একটু উপলব্ধি করুক।গর্ত থেকে যখন টেনে বের করে এনেছে তখন ঘাড়ের বাকা রগ গুলোও ঠিক সোজা করে দিবে। কামিনী চৌধুরী সাথে আসতে চাইলে সাথে সাথে মানা করে দিলো আশমিন। এমনিতেই মেজাজ পুরো খিচে আছে।মায়ের ফেচফেচ কান্না এখন টোটাল সহ্য করতে পারবে না সে।এর মধ্যেই বিভিন্ন চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ চলছে,
“ছেলের বিয়েতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলেন মন্ত্রী আশমিন জায়িনের বাবা আমজাদ চৌধুরী”

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। পিছনে গার্ড আর মিডিয়ার প্রায় পঞ্চাশ টার মতো গাড়ি তাদের ফলো করছে।আমজাদ চৌধুরী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে।আশমিনের তাতে কোন হেলদোল নেই।সে একমনে ফোন ঘেটে যাচ্ছে। আমজাদ চৌধুরী এবার মেজাজ হারালেন। কর্কশ গলায় বললেন,

— এদিকে তাকাও বেয়াদব ছেলে। বিয়ে যখন করবেই না তাহলে এতো নাটক করার কি দরকার ছিল।কেমন ছেলে তুমি?বিয়ে বন্ধ করার জন্য বাবা কে হার্ট এট্যাকের রুগি বানিয়ে দাও!দিন দিন অসভ্য হচ্ছো।

সানভি শুকনো ঢোক গিলে পিছু ফিরে আমজাদ চৌধুরী আর আশমিনের দিকে তাকালো। তা দেখে আমজাদ চৌধুরী ফুসে উঠলো,

— এভাবে তাকাচ্ছো কেন? ছেলে হয় আমার।চাইলে দু চার ঘা লাগিয়ে ও দিতে পারি।আর তোমাকে বলছি বেয়ারা ছেলে,আমি কিছুতেই হসপিটাল যাবো না।ফিনাইলের গন্ধ আমার একদম সহ্য হয় না।

— ঠিক আছে।তোমাকে নানা বাড়ি রেখে আসছি।সানভি,গাড়ি ঘোরাও।

আশমিনের শান্ত গলা। সানভি অসহায় চোখে তাকালো আমজাদ চৌধুরীর দিকে।আমজাদ চৌধুরী মুখ কালো করে বসে আছে। ছেলের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কটমট করে সানভিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললো। আমজাদ চৌধুরীর চুপসে যাওয়া মুখ দেখে সানভির প্রচন্ড দুঃখ হলো। এরকম একটা নিষ্ঠুর ছেলের পিতা হওয়া তার মোটেও উচিত হয় নি।

আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে নূর কে দেখে যাচ্ছে। যে বর্তমানে রুমের এক কোনায় বিধ্বস্ত হয়ে বসে আছে। বিরবির করে কিছু বলছেও হয়তো।কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আশমিন বোঝার চেষ্টা ও করলো না।সে শুধু একমনে নূর কে দেখে গেল।

চোখ বন্ধ করে রুমের এককোনায় চুপ করে বসে আছে নূর।বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা চেপে ধরেছে তাকে।কিন্তু সে কাদছে না।সে জানে, আশমিনের বাজপাখির মতো নজর এখন তার উপরেই।তাই তার সামনে কোন ভাবেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবেনা সে। চার বছর আগের আশমিনের একটা কথাই তার কানে বার বার বেজে যাচ্ছে,

— যে মেয়ে নিজের বাবার ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না সে আমার ভালোবাসার মূল্য দিবে কিভাবে।বাবার মৃত্যু থেকে যার ক্যারিয়ার বড় সে মেয়েকে আমি আমার জীবনে চাই না। দেখা গেলো আমাকে মৃত্যু মুখে রেখে সে নিজের স্বপ্ন পুরন করতে চলে গেলো। এই নূর কে আমি ভালোবাসি নি।তাই এই নূরের জায়গা আমার জীবনে নেই। গো টু হেল উইথ ইয়োর ফা*কিং ড্রিম।

চোখ খুলে ফেললো নূর।বাবা নেই ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসলো তার।এই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই।সে একা।মহাকাশের এক বিন্দুর মতো সে একদম একা।আশমিন পুরনো ঘা তাজা করে দিয়েছে তার।তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো নূর।যে তাকে তখন বোঝে নি সে আজ আর কি বুঝবে?ভালোবাসি বললেই হয় না। বিশ্বাস করতে হয়,ভরসা করতে হয়।শুধু ভালোবাসা কখনোই টিকে থাকে না। আশমিন সেদিন তার বিধ্বস্ততা দেখে নি।তার ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাওয়া ভঙ্গ হৃদয় দেখে নি।সে শুধু তার ভুল দেখেছে।তাকে এতো বড় পৃথিবীতে সম্পুর্ন একা ছেড়ে দিয়েছে।সদ্য বাবা হারানো মেয়েটা কে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা দিয়েছে।আশমিন কে আর যাই হোক ক্ষমা করা যায় না।এবার আশমিন বুঝবে ভাঙ্গনের যন্ত্রণা কাকে বলে। আমি তোমাকে বোঝাবো নিঃসঙ্গতা কাকে বলে। ক্ষমতার খুব বড়াই না তোমার? দেখি কতো ক্ষমতা তোমার। কামিনী চৌধুরী এবার বুঝবে তেহজিব কি জিনিস।মায়ের কুৎসিত চেহারা সহ্য করতে পারবে তো আশমিন জায়িন। উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো নূর।

রুমের মধ্যে পায়চারি করে যাচ্ছে কামিনী চৌধুরী। নূর কে এখানে সে একদম সহ্য করতে পারছে না।ভাইয়ের মেয়ে হলে কি হবে।আস্তো বজ্জাত একটা। এতো বছরের সাজানো প্ল্যান কোন ভাবেই নষ্ট হতে দিবে না সে।আশমিনের মতিগতি ভালো ঠেকছে না।সে জানে,আমজাদ চৌধুরীর কিছু হয় নি।বিয়ে বন্ধ করতেই আশমিন এই নাটক করেছে।ছেলে কে হাড়ে হাড়ে চেনে সে।অনেক কষ্টে দুজনের মধ্যে দূরত্ব এনেছে। এখন কিছুতেই তাদের কাছাকাছি রাখা যাবে না। এই মেয়েকে যেভাবেই হোক বিদায় করতে হবে।

লাক্সারি কেবিনে শুয়ে আছে আমজাদ চৌধুরি।পাশেই সানভি দাঁড়িয়ে। আশমিন সোফায় বসে নূর কে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। নূরের হাসি বিষাদ কোনটাই চোখের আড়াল হয়নি তার।দুটোর মানেই সে বোঝে। সঠিক সময় আসলে নূর কেও বুঝিয়ে দিবে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here