#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪+৫
বিশাল ড্রয়িং রুমে গম্ভীর হয়ে বসে আছে আশমিন।পরিবারের সবাই এখানে উপস্থিত। কামিনী চৌধুরী থমথমে মুখে আমজাদ চৌধুরীর পাশে বসে। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। সবার দিকে চোখ বুলিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো নূর।আশমিন শান্ত চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। আশমিনের পুরো পরিবার অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে আশমিন কি বলতে চায় তা জানার জন্য। লারা আর তার পরিবার একপাশে বসে।আশমিন চারিদিকে চোখ বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— বিয়েটা ক্যান্সেল করছি আমি।লারা কে বিয়ে করবো না আমি।কারোর কোন প্রশ্ন থাকলে একজন একজন করে জিজ্ঞেস করতে পারেন।আগামী দশ মিনিট সময় আছে আপনাদের কাছে।দশ মিনিট পর আমি এখান থেকে চলে যাবো। ইমপোর্ট্যান্ট মিটিং আছে আমার।
আশমিনের এমন খাপছাড়া ভাব দেখে ফুসে উঠলো কামিনী চৌধুরী। বাজখাঁই গলায় বলল,
— এটা কেমন মশকরা আশমিন? বিয়ে করবে না মানে?এতো ঘটা করে অনুষ্ঠান করে লোকজন জানিয়ে এখন বলছো বিয়ে করবে না।মশকরা হচ্ছে এখানে!প্রেস,মিডিয়া সবাই জানে তুমি লারা কে বিয়ে করছো। সোসাইটি তে কতটা অপমান হতে হবে ধারণা আছে তোমার? বিয়ে আজকেই হবে এবং এক্ষুনি। কাজি ডাকো সানভি।
চিৎকার করে কথাগুলো বলে হাপিয়ে উঠলো কামিনী চৌধুরী। আশমিন ভাবলেশহীন ভাবে ফোন স্ক্রোল করে যাচ্ছে। সানভি অসহায় চোখে আশমিনের দিকে তাকালো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে, ব্যস্ত গলায় বলল,
— আর কারোর কিছু বলার আছে?সময় শেষ হচ্ছে। আর প্লিজ, কেউ মিসেস চৌধুরীর মতো এতো লম্ভা স্পিচ দিবেন না। সময় সল্পতা বুঝতেই তো পারছেন।
সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। লারা ভীতু চোখে আশমিনের দিকে তাকালো। নূরের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে একমনে নুডুলস খেয়ে যাচ্ছে।
কামিনী চৌধুরী ক্রোধে ফেটে পরলেন। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নূর কে টেনে দাড় করিয়ে হিসহিস করে বললেন,
— সব তোর জন্য হয়েছে।আবার কেন এসেছিস এখানে?আমার ভাই কে খেয়ে শান্তি হয় নি?এখন আমার সংসারে আগুন লাগাতে এসেছিস।বেহায়া মেয়ে।লজ্জা নেই তোর?এভাবে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙে দিতে বিবেকে লাগছে না?এই মুহুর্তে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাবি।তোর অপয়া চেহারা আর দেখতে চাই না এ বাড়িতে।
আশমিন চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে কামিনী চৌধুরীর দিকে।কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না সে।লারার বাবা মা মুচকি মুচকি হাসছেন নূরের এই অবস্থা দেখে।নূর নুডলসের বাটি টা সানভির হাতে দিয়ে শাসানোর ভঙ্গিতে বললো,
— খবরদার এখান থেকে খাবে না।শুধু ধরে দাড়াও।
কামিনী চৌধুরীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো নূর।নূরের নখ দেবে কিছুটা জায়গা তৎক্ষনাৎ কেটে গেলো। কামিনী চৌধুরী হালকা আর্তনাদ করতেই নূর নিজের ঠোঁটে আঙুল চেপে ‘হুস’ বলতেই থেমে গেলো সে। নূর তার হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে চিৎকার করে ডাকলো,
— গার্ডস,,,
সাথে সাথে বিশজন পালোয়ান সাইজের লোক এসে দাঁড়িয়ে গেলো নূরের চারিদিকে। নূর হুংকার দিয়ে বললো,
— আবর্জনা পরিস্কার করো।রাইট নাও।আমার সামনে আমি কোন আবর্জনা দেখতে চাই না।
গার্ড গুলো সাথে সাথে সোফা সহ লারা আর তার পরিবারকে বাইরে ছুড়ে ফেললো। একজন মেয়ে গার্ড এসে কামিনী চৌধুরী কে ধরে নূর থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। আমজাদ চৌধুরী আশমিনের পাশে বসে তার ফোনের দিকে ঝুকে আছেন।আশমিন বাইক রেসিং গেম খেলছে সে সেটা মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। বাকি কোন কিছুতে তাদের খুব একটা আগ্রহ নেই।
সানভি ভয়ে কাপছে।আশমিনের এমন হেয়ালি ব্যবহার দেখে নূরের রাগ তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। হাতের থেকে ফোন টা নিয়ে সাথে সাথেই সমস্ত শক্তি দিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারলো। সানভি আর্তনাদ করে বললো,
— কি করলেন ম্যাম।এতে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ছিল।
— আই ডোন্ট কেয়ার।(দাতে দাত চেপে)
কামিনী চৌধুরী পারছে না নূর কে কাচা চিবিয়ে খেতে।আমজাদ চৌধুরীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো,
— বসে বসে তামাশা দেখছো? আমাদের গার্ডদের ডাকো।এই মেয়েকে এখানেই মেরে পুতে দিবো আমি।আমাকে পাওয়ার দেখানো হচ্ছে।এই কামিনী চৌধুরী কে!আশমিন, চুপ করে বসে আছো কেন?পুলিশ কে কল করো।একে এক্ষুনি জেলে ভরবো আমি।
আশমিন হালকা বিরক্তির চোখে তাকালো নূরের দিকে।যে এই মুহুর্তে চোখ দিয়েই তাকে ভষ্ম করতে ব্যস্ত।
আশমিন ইশারা করতেই গার্ড গুলো কামিনী চৌধুরী কে ছেড়ে বাইরে চলে গেলো।
— মিসেস চৌধুরী কে নিয়ে ভিতরে যাও।
মেয়ে গার্ড টা আশমিনের কথা অনুযায়ী কামিনী চৌধুরী কে জোর করে ভিতরে নিয়ে গেলো। আশমিন আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— তুমি কি ছেলে আর ছেলে বউয়ের রোমান্স দেখতে চাচ্ছো?
আমজাদ চৌধুরী চোখে রাঙিয়ে তাকালো আশমিনের দিকে। মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,
— বাবা হই তোমার।অসভ্যের মতো কথা বলছো কেন?আমি তোমার মতো মেনার্সলেস নই।
আমজাদ চৌধুরী হনহন করে চলে গেলো ভিতরে। আপাতত বউ কে ঠান্ডা করতে হবে। সানভি এখনো নুডুলসের বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে। যাবে নাকি থাকবে সেই দ্বিধায় ভুগছে।
আশমিন সানভি কে কিছু একটা টেক্সট করতেই সানভি নুডলসের বাটি রেখে গন্তব্যের দিকে চলে গেলো।
আশমিন কয়েক কদম এগিয়ে নূরের সামনা সামনি দাড়ালো। সারা শরীরে চোখ বুলিয়ে ঠোঁট উচু করে শীষ বাজাতেই নূর বাকা হাসলো। মনে মনে কপাল কুচকালেও উপরে স্বাভাবিক থাকলো আশমিন।
— লুকিং সো হট বেইব।
— ইউ অলসো লুকিং লাইক আ লুজার।(বাকা হেসে)
— রিয়ালি???(ঘার কাত করে)
— ইয়াহ।
— দেন মিট মি ইন মাই আরমস।আই প্রমিস ইউ,ইউ ওইল নট সে দিস এগেইন।
— অশ্লীল।
আশমিন নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেললো। নূর কে নিজের সাথে চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,
— নেতারা অশ্লীল ই হয়।তোমার সাথে আমার সম্পর্ক এর চেয়েও গভীর। ভুলে গেলে নাকি নূর?
— সরে দাড়ান।কতো বার বলবো এভাবে কাছে আসবেন না (আশমিন কে সরানোর চেষ্টা করে)। আর কোন সম্পর্কের কথা বলছেন আপনি? সব সম্পর্ক আপনি নিজেই শেষ করেছেন। যেহেতু বিয়ে আর হচ্ছে না তাই আমি কালকেই ব্যাক করছি কানাডা।লিভ মি।
— তোমাকে গর্ত থেকে বের করতেই এতো আয়োজন তেহজিব নূর।পালানোর কথা ভাবলে কি করে।মুক্তির স্বাদ আর এ জীবনে তোমার পাওয়া হবে না। তোমাকে এখানেই থাকতে হবে।আমার বন্দিনী হয়ে।
আশমিনের চোখ গুলো রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। নূর সেদিকে তাকিয়ে ক্রুর হাসলো। দাতে দাত চেপে ফিসফিস করে বললো,
— আমার সাথে লাগতে আসবেন না মন্ত্রী সাহেব। পৃথিবীতেই জাহান্নাম ভ্রমণ করিয়ে আনবো।চিনেন তো আমাকে নাকি?
আশমিন হাতের বাধন আরেকটু শক্ত করলো। নূর কে নিজের সাথে আরেকটু নিবিড় ভাবে মিশিয়ে নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। মন্থর গলায় নূরের মতো ফিসফিসিয়ে বললো,
— আপাতত জান্নাত ভ্রমণ করতে চাইছি।ইউ ওয়ান্না গো উইথ মি?
নূর কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার ঠোঁট আকড়ে ধরলো আশমিন।দুই মিনিটের মতো নিজের রাজত্ব চালিয়ে নূর কে ছেড়ে দিলো সে।নূর ক্ষেপা বাঘিনীর মতো আশমিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আশমিন ভাবলেশহীন ভাবে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙতেই নূর আশমিনের পাঞ্জাবীর ঠিক দুই ইঞ্চি উপরে গলায় নিজের দাত বসিয়ে দিল।আশমিন বাধা দিল না।এমনকি নড়লো ও না।নিজের কাজ শেষ করে নূর সরে আসলো। আয়েশ করে সোফায় বসে আশমিনের গলার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে বললো,
— আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না মন্ত্রী সাহেব। তাহলে এভাবে বার বার র*ক্তাক্ত হবেন।বাই দ্যা ওয়ে,গুড লাক ফর ইউর মিটিং।
আশমিন টিস্যু দিয়ে গলার হালকা র*ক্ত টুকু মুছে ফেললো। নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
— এমন র*ক্তাক্ত আমি বারবার হতে চাই।
সানভি এসে আশমিনের হাতে কিছু ডকুমেন্টস দিতেই আশমিন সাথে সাথে সেগুলোতে আগু*ন লাগিয়ে দিলো। নূর হতভম্ব হয়ে গেলো আশমিনের এমন কাজে। আশমিন নিরীহ চোখ নূরের দিকে তাকালো।
— মাই ফোন ইকুয়াল টু ইয়ুর পাসপোর্ট। হিসাব বরাবর তো?
চলবে,,,
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৫
অন্ধকার ছাদের এক কোনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে নূর। বিষন্নতার মরণবান বার বার আঘাত করছে তার বুকের ভিতর। মনে পরছে ছয় বছর আগের কথা।
বাড়ির সবছেয়ে শান্তশিষ্ট মেয়ে নূর।রাফসান শিকদারের একমাত্র আদরের মেয়ে।নূরের পাচ বছর বয়সে তার মা মারা যায়। তখন থেকে নূরের বাবা নূর কে আদর ভালবাসা দিয়ে বড় করেছে।মেয়ের অবহেলা হবে ভেবে নিজে দ্বিতীয় বিয়ের কথা কখনো চিন্তা করে নি। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা টা ও ছিল অমলিন। কামিনী চৌধুরী অবশ্য অনেকবার চেষ্টা করেছে ভাই কে বিয়ে করাতে। কিন্তু রাফসান শিকদার কখনো তার কথা পাত্তা দেয়নি।তার একটাই কথা, আমি বিয়ে করে নতুন সংসার করবো আর আমার নূর একা হয়ে যাবে তা আমি কখনো মানতে পারবো না। এই সংসার তারার ছিল আর তারার ই থাকবে।বিয়ে নিয়ে এটাই যেন এবাড়িতে তোমার শেষ কথা হয়।নূরের সামনে কখনো এব্যাপারে কোনো কথা বলবে না কামিনী।
তখন থেকেই নূরের উপর ক্ষোভ তৈরি হয় কামিনী চৌধুরীর।নূরের মা মিসেস তারা মারা যাওয়ার পর কামিনী চৌধুরী কানাডা থেকে তার পরিবার নিয়ে ভাইয়ের কাছে চলে আসে। আমজাদ চৌধুরী আলাদা বাড়ি করতে চাইলে বাদ সাধেন রাফসান শিকদার।তার এতো বড় বাড়ি থাকতে বোন বাইরে থাকবে তা সে কোন ভাবেই মানতে পারেন নি।তাই আমজাদ চৌধুরীর বাধ্য হয়েই নূর মঞ্জিলে থেকে যান।আশমিন তার বাবা মায়ের সাথে বাংলাদেশ আসে নি।সে কানাডায় হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো।ওখান থেকেই গ্রেজুয়েশন শেষ করে আসবে জানায় সে। নূর যখন দশম শ্রেণির ছাত্রী তখন আশমিন প্রথম বাংলাদেশে আসে। সবাই তাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে গেলেও নূর যায়নি। আশমিনের তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ও ছিল না।কামিনী চৌধুরী নূরকে আশমিনের থেকে দূরে থাকতে বলেছে। তাই নূর আশমিনের থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব রেখে চলতো।ব্যবসা আর রাজনীতিতে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকায় নূর কে খুব একটা সময় দিতে পারতো না রাফসান শিকদার।বাবার সাথে দূরত্ব তখন থেকেই।রাফসান শিকদার নিজের বোনের কাছে নূরের দায়িত্ব তুলে দিয়ে অনেকটা চিন্তা মুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তা সে ঘুনাক্ষরে ও টের পায়নি। কামিনী চৌধুরী নূর কে সারাক্ষণ লাঞ্চনা গঞ্জনা করতেই থাকতো। সারাক্ষণ চুপচাপ থাকা আরো বেশি চুপ হয়ে গেলো। বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো অভিমান।আশমিন দেশে আসার পরে রাফসান শিকদারের সাথেই বেশির ভাগ সময় কাটাতো।রাজনীতির উপর ছিল তার অপার আগ্রহ। রাফসান শিকদারও হাসিমুখে হাতে কলমে আশমিন কে সবকিছু শিখাচ্ছিলেন।
আশমিন বাংলাদেশে আসার দুই মাসের মধ্যে নূর একদিন ও তার সামনে আসে নি।প্রথম প্রথম অবাক লাগলেও আশমিন অতটা পাত্তা দেয়নি।
আশমিন বাংলাদেশে আসার ঠিক দুই মাস আট দিনের দিন রাতে অনাকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎ হয় নূরের সাথে।
সেদিন পার্টি ক্লাব থেকে আসতে অনেকটা রাত হয়ে যায় আশমিনের।বাসায় কেউ জেগে নেই ভেবে সে কলিং বেল না চেপে নিজের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভিতরে ঢোকে।ক্লান্ত পায়ে দুইতালায় উঠতেই কারো মোহনীয় গলা শুনে পা থমকে গেলো আশমিনের।কান খারা করে শুনতেই বুঝতে পারলো কন্ঠটা ছাদ থেকে আসছে।আশমিন এগিয়ে গেলো ছাদের দিকে। নূর ছাদের চিকন রেলিঙের উপর বসে একমনে গাইছিল,
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে
ফিরবো না কোন দিন এই পৃথিবীতে
কোন কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
জানি একদিন ভুলে যাবে সবাই
আমায়, আমার স্মৃতি মুছে যাবে ধরায়
ও, জানি একদিন এক মুহুর্ত
আরো মনে পড়বেনা আমার কথা
ফিরবনা কোনো দিন এই পৃথিবীতে
কোন কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাব সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
ছাদে আসতেই আশমিমের হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিল।কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে শান্ত করার চেষ্টা করলো নিজেকে। মনে হচ্ছে কোন বিষাদ নগরের রাজকুমারী ছাদের রেলিঙে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আশমিনের মনে হলো এটা একটা বার্বিডল।কুকরানো কোমর পর্যন্ত চুল গুলো বাতাসের তালে তালে সেই পুতুলের মুখের উপর উড়ে আসছে বারবার। তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার।নূরের চোখ গুলো ঠিক বার্বি ডলের মতো। হালকা পাতলা গড়নের মেয়েটিকে আশমিনের কাছে একটা আদুরে বাচ্চা মনে হলো।
জানি একদিন দূর থেকে
দেখব সবার এই ভুলে যাওয়া
ও, জানি একদিন চোখ থেকে
পড়বে শুধু অশ্রুরি ধারা
ফিরবো না কোন দিন এই পৃথিবীতে
কোন কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে
ফিরবো না কোনো দিন এই পৃথিবীতে
কোনো কিছুর বিনিময় এই পৃথিবীতে
একদিন চলে যাবো
জানি একদিন আমি চলে যাবো সবই ছেড়ে
যত বুক ভরা দুঃখ কষ্ট নিয়ে, হো
নূরের কন্ঠে এমন বিষাদ শুনে কপাল কুচকে গেলো আশমিনের । মেয়েটা কে তা নিয়ে সে যথেষ্ট সন্দিহান। হঠাৎ করেই নিজের ঘোর থেকে বেড়িয়ে এলো আশমিন। দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো নূরের দিকে।নূর তখনো আশমিনের উপস্থিতি টের পায়নি। আশমিন এক ঝটকায় নূর কে নামিয়ে আনলো রেলিং থেকে। তাল।সামলাতে না পেরে নূর ধাক্কা খেল আশমিনের শক্ত বুকে।
— কে তুমি? এতো রাতে এখানে কি করছো?
আশমিনের কঠোর কণ্ঠস্বর মোটেও বিচলিত করলো না নূর কে। আশমিন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শান্ত গলায় জবাব দিলো,
— আমি নূর মঞ্জিলের নূর।
শক্ত দৃষ্টি নরম হলো আশমিনের।অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে।
নূর পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিয়েও দাঁড়িয়ে পরলো।পিছনে না তাকিয়েই শান্ত অথচ শক্ত গলায় বলল,
— এর পর থেকে এভাবে আমার কাছে আসবেন না মি. আশমিন জায়িন।আর ছোয়ার ভুল তো একেবারেই নয়।আই হেইট আনএক্সপেক্টেড টাচ।
আশমিন হা করে তাকিয়ে রইলো নূরের যাওয়ার দিকে।কি বলে গেলো মেয়েটা।আনএক্সপেক্টেড টাচ!
এতো তেজ?বাকা হাসলো আশমিন।নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাসি বিস্তর হলো তার।
পরের ঘটনা গুলো খুব দ্রুত ঘটে গেলো নূর আর আশমিনের জীবনে। আশমিন নূর কে মনে মনে ভালবাসলেও কখনো তা প্রকাশ করে নি। তবে রাফসান শিকদার ঠিকই বুঝতে পারলেন ভাগিনার মনের কথা।আশমিন তার মেয়ের অমর্যাদা কখনো করবে না এটা তার দৃঢ় বিশ্বাস। আশমিন কে জিজ্ঞেস করতেই আশমিন অকপটে স্বীকারও করে নিল।রাফসান শিকদার ভাবলো তার এই ঝুকিপূর্ণ জীবনে মেয়েকে আশমিনের মতো কারোর কাছে মেয়েকে দিয়ে যেতে পারলে মরে ও শান্তি পাবেন।ততদিনে নূরের এস এস সি দেয়া হয়ে গেছে। তবে আঠারো বছর হওয়ার আগে বিয়ে দেওয়া টা সম্মতি দিলেন না সে।কামিনী বেগম ভাইয়ের দেয়া প্রস্তাব সাথে সাথেই লুফে নিলেন। ছেলে একবার মন্ত্রী হয়ে গেলে ভাইয়ের এই অঢেল সসম্পত্তির মালিক তার ছেলেই হবে।নূর কে সরানো চুটকির ব্যপার। ছেলের মনের খবর সম্পর্কে না জেনেই ভয়ংকর পরিকল্পনা করে ফেললেন কামিনী চৌধুরী। আপাতত সিদ্ধান্ত হলো মাওলানা দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে রাখবে।নূরের আঠারো বছর হলে রেজিস্ট্রি করে ফেলবে।সবাই সায় দিলেও আশমিনের কপালে ছিল চিন্তার ভাজ।বিয়েটা নূর কিভাবে নিবে য়া নিয়েও সে যথেষ্ট চিন্তায় আছে।নূরের সেফটির জন্য বিয়ের কথাটা পাচকান হতে দেয়া যাবে না। তার দুর্বলতা ভেবে সবাই নূর কে টার্গেট করে ফেলবে।
চলবে,,