ইস্ক পর্ব-১

0
3387

#ইস্ক
#সাদিয়া


“বিয়ের ২ দিন পর ছেলে বিদেশ চলে গেছে আর সেই বউ কে আপনি লক্ষ্মী বলছেন?”

“আপনার ছেলের বউ পছন্দ হয়নি বলে ২ বছর হতে চলে ছেলে দেশে আসে না। আর সেই বউ কে নিয়ে এত প্রশংসা আপনি কি করে যে করতে পারেন তা কে জানে।”

পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠলেন “সত্যিই মিসেস রেহেলা বেগম আপনার দ্বারাই শুধু এটা সম্ভব। আমি হলে তো বউ কে আনতামই না।”

মিসেস রেহেলা বেগম কি বলবেন কে জানে? কিছু বলতেও পারছেন না। হঠাৎ খেয়াল করলেন তিতিল উপরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার পানি। হয়তো সব কথাই শুনেছে সে। এসব কথায় রেহেলা বেগম কষ্ট পেলেও নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বললেন “আপনাদের ডেকেছি কি এসব কথা শুনানোর জন্যে? এসব আমাদের পারিবারিক বিষয় আমরা দেখে নিব। এসব নিয়ে আপনাদের আলোচনা না করলেও চলবে।”

উত্তরে আরেকজন বললেন “এসব আপনাদের বিষয় তা তো আমরা জানিই। নিহাত আপনি ওই মেয়ের এত প্রশংসা করছিলেন তাই বললাম।”

“মা তোমাকে কে বলেছে অপাত্রে দান করার জন্যে?”
কথা অনুসরণ করে তাকাতেই দেখতে পেল ইনা এসেছে। সে এগিয়ে গিয়ে রেহেলা বেগম কে বললেন “কেউ মর্ম না বুঝলে তাকে কেন বুঝাতে যাবে তুমি?”

মহিলাদের মাঝ থেকে একজন বলে উঠলেন “মিসেস রেহেলা বেগম আপনার মেয়ে কিন্তু আমাদের ইনস্লাট করছে।”

“ইনস্লাটের কি দেখলেন এখানে আন্টি? কিন্তু আপনার মেয়ে কে আপনি দেখে শুনে রাখেন তো? আপনি কি তার ব্যাপারে উদাসীন নন? সে যে কত ছেলের সাথে ফ্লট করছে। প্রেমের অভিনয় করছে, লাইট ক্লাবে যাচ্ছে তা কি খেয়াল করেন না আপনি?”

মহিলা কে কোনো জবাব দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে ইনা আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আন্টি আপনার ছেলের বিষয়ে কি আমরা কিছু জানি না? আপনি তো নিজের পছন্দে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু কি লাভ হলো? আপনার ছেলে তো বউ কে প্রতিদিন মারধর করে। অনেক রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকে। শুনেছি সে নাকি অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত। সে হিসেবে আমার ভাই খুব ভালোই আছে তাই নয় কি?”

ইনা আবার বলতে লাগল,
“আর শিলা আন্টি শুনেছি আপনার মেয়ে কয়েক দিন আগে এক ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। তারপর কয়েকমাস পর ফিরেও এসেছে। সত্যি আন্টি এসব আপনার দ্বারাই হবে। কই আমরা তো ওসব নিয়ে কথা বলি না।”

সবাই উঠে গেল। রেহেলা বেগম মেয়ে কে বললেন,
“ইনা এবার থাম। এসব কি বলছিস?”

ভদ্র মহিলাদের থেকে একজন বলে উঠলেন “মিসেস রেহেলা আপনি আমাদের ডেকে এই অপমান করার মানেই হয় না।”

“এটা অপমানের কি আছে আন্টি? যা সত্যি তাই বললাম।”

“আমরা আর কোনোদিন আপনার বাড়ি আসব না রেহেলা বেগম।”
সবাই হনহন করে চলে যেতে লাগলেন। রেহলা বেগম নিজের মেয়ে কে বললেন “এসব বলার কি দরকার ছিল ইনা?”

“দরকার ছিল আম্মু এসব মানুষের মুখের উপর কথা বলতে হয়।”

“আমার যা কপালে ছিল। মেয়ে টা বোধহয় এখন কাঁদছে।”

“তিতিল কি এসব শুনেছে?”

“হুম।”

“কতবার করে বলেছি কিছু কিছু মানুষের কথার জবাব তাদের মতো করেই দেওয়া টা জরুরি। কিন্তু এভাবে আর কত? মেয়েটার জীবন তো এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না।”

“তুই আর কি করবি?”

“যা দরকার তাই করব। তুমি দেখো গিয়ে ওকে।”

রেহেলা বেগম দ্রুত পায়ে উপরে গেলেন।

তিতিল তখন বিছানায় উবু হয়ে কান্না করছে। সত্যিই তো সে একটা অলক্ষ্মী অপয়া মেয়ে। বিয়ের পর স্বামীর মুখটাও দেখতে পেল না। আর এখনো তিনি দেশে আসবেন না। তাহলে কেন এই বাড়ি পড়ে আছে সে নিজেও জানে না। মায়ের বোনের অভাবটার জন্যেই এখানে আছে। নাহলে যার স্বামী থেকেও নেই তার আবার শ্বশুর বাড়ি কিসের? তার স্বামীই তাকে মেনে নেয় নি। নিজেকে খুব ছোট নজরে দেখতে লাগল তিতিল। কেন জীবনের তাল বেসামাল হয়ে গেল? গ্রামের মেয়ে বলে তার স্বামী তাকে ফেলে চলে গেছে। কিন্তু কোন দিক থেকে সে কম? রূপে গুণে হাজারে একটা। তিতিল মনে করে তার ভাগ্যই এটা। দরজায় শব্দ পেতেই সে চোখের পানি মুছে নিল। রেহেলা বেগম তার পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন
“মন খারাপ করে কাঁদছিস?”

“….

“ওমন মানুষের কথায় কান দিতে নেই। আর ইনা তাদের কথা শুনিয়েও দিয়েছে।”

“আম্মা আমি বাড়ি যাবো।”
হঠাৎ তিতিলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে খানিক অবাক হলেন রেহেলা বেগম।

“হঠাৎ বাড়ি যাবি কেন?”

“আব্বা কে দেখতে মন চাইছে।”

“….

“আপনি না করবেন না আম্মা।”

“তুই কি মন খারাপ নিয়ে এমন কথা বলছিস?”

“মন খারাপ করে বলব কেন আম্মা? আমি কিছুদিন থেকেই চলে আসব।”

“….

“আপনি দয়া করে না করবেন না। আমার মন টানছে অনেক বাড়ি যেতে। গ্রামের আবহাওয়ায় হয়তো মন টাও ভালো হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা ইনা কে বলে দেখি।”

“….

—-
অফিসের ফাইল নিয়ে ইনা বসে আছে থম মেরে। ইয়াদ কে কল করবে কি না তাই ভাবছে। তার জন্যে একটা মেয়েকে সারাজীবন কষ্ট পেতে হোক তা ঠিক হবে না। তিতিলেরও একটা ভবিষ্যৎ আছে। মনে মনে যা করার প্রয়োজন তাই ভেবে নিয়েছে সে। হঠাৎ ফোনে কল আসতেই ইনা ভয়কে গেল। তাকিয়ে দেখতে পেল ইয়াদ কল করেছে। অনেকটা অবাক হয়েছে সে। ৩ মাস হতে চলে সে কল দিচ্ছে না। এখন কল দিল কেন তাই ভাবছে ইনা। ভাবনা রেখে কল রিসিভ করল। স্কিনে ইয়াদের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা ভেসে উঠল।

“আপু কেমন আছো?”

“ভালো তুই?”

“রাগ করছো বুঝি এতদিন কল দিতে পারি নি বলে?”

ইনা মুখে মেকি হাসি দিয়ে মাথায় না সূচক জানাল।

“জানি তুমি রাগ করছো।”

“ইয়াদ তোর সাথে আমার একটা কথা আছে।”

“কি কথা আপু?”

“তুই দেশে আয়। একটা জরুরি কাজ আছে।”

“কি কাজ?”

“তোর জন্যে আরেকটা জীবন নষ্ট হোক তা আমরা কেউ চাই না।”

“আরেকটা জীবন মানে?”

“তিতিলের।”

ইয়াদ বুঝতে পেরেছে যাকে বিয়ে করেছিল তার কথা বলছে। কারণ ইনা, হিমা আর তার মার মুখে প্রায় এই নাম টা শুনেছে সে।

“কিরে কথা বলছিস না কেন?”

“আপু আমি কিছুদিনের মাঝেই দেশে আসব আর সেটা জানাতেই আমি তোমাকে কল করেছিলাম।”

ইনা তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল টা কেটে দিল। আর ইয়াদ বোকার মতো বসে রইল ল্যাপটপের সামনে। “স্ট্রেঞ্জ” বলে ইয়াদ উঠে দাঁড়াল। কাপে গরম পানি ঢেলে তাতে দুই চামচ কফি আর আধা চামচ চিনি মিশিয়ে কাপ হাতে নিয়ে কাঁচের দেওয়ালের সামনে গেল। সে বুঝতে পারছে না ইনা এত টা সিরিয়াস আর রাগি হয়ে কথা বলল কেন? আর কেনই দেশে যেতে বলছে।

—-
ইনা গিয়ে দেখতে পেল তিতিল মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ইনা রুমে গিয়েই বলল “মা ভাই কে দেশে আসতে বলেছি।”

চমকে উঠল তিতিল। শুয়া থেকে উঠে বসল সে। রেহেলা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
“কেন আসতে বললি?”
ইনা তিতিলের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। মায়ের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,
“তিতিল আর ভাইয়ের ডিভোর্সের জন্যে।”

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here