#ইস্ক
#সাদিয়া
১০
বিশাল চিন্তায় গুটিয়ে গেছে তিতিল। ফরিদা আন্টি তো রাতে বাসায় চলে যায় এখন কাকে দিয়ে পাঠবে এগুলি? চিন্তিত মুখে গরম স্যুপ আর লাচ্চি নিয়ে টেবিলে বসে আছে তিতিল। কেন যেন ইয়াদের বড্ড হাসি পাচ্ছে। উপরে এক কোণায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছিল সে। বাঁকা হেসে সে নিজের রুমে চলে গেল।
“কি হলো তিতিল আপু? এখনো বসে আছো যে?”
তিতিল পিছন ফিরে তাকিয়ে হিমা কে দেখতে পেল। সাথে মুখে হাসিও ফুটে উঠেছে তার।
“তুমি এখানে?”
“খিদে পেয়েছে। ফ্রিজে না সন্দেশ আর লাড্ডু আছে? ওগুলিই নিতে এলাম।”
“এসেছো যখন ভালো হয়েছে। নাও এইগুলি নিজের ভাইয়ের রুমে দিয়ে আসো।”
“….
“কি হলো নাও?”
“আল্লাহ মা যদি জানতে পারে তাহলে শেষ। আর এমনিতেও আমি ডাটা অন করে চলে এসেছি। বন্ধুরা হয়তো গ্রুপে কথা বলছে। আমি যাই আপু।”
হিমা তাড়াতাড়ি প্যাকেট নিয়ে দৌড়ে চলে গেল। না পেরে তাকে যেতে হবে ভেবে নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে রওনা হলো।
“আসব?”
“….
উত্তর না পেয়ে তিতিল চুপচাপ রুমে এলো। ইয়াদ তখন ল্যাপটপে মুখ গুঁজে আছে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখতে পেল তিতিল মাথা নিচু করে খাবার গুলি রেখে চলে যেতে লাগল। তখন সে ডাক দিল,
“যাচ্ছো কোথায়?”
থমকে দাঁড়াল তিতিল। ঠোঁট উল্টে দিয়ে আবার পা বাড়াতেই শুনা গেল,
“তিতিল আমি তোমায় বলছি।”
তিতিল আগের মতোই উল্টোপিঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল “আপনার আরো কিছু লাগবে?”
ইয়াদ জবাব দিল না। চুপচাপ হেটে তিতিলের সামনে গেল। দেখতে পেল বরাবরের মতো ওড়নার ফাঁক দিয়ে চুল বেড়িয়ে এসেছে মেয়ে। ইয়াদ তখনের মতো আবার মুখের উপর ফু দিতেই শিউড়ে উঠল সে। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“আপনি এমন করবেন না।”
“তবে তোমার চুল গুলি কে বলো আমায় বিরক্ত না করতে।”
অবাক হলো তিতিল। ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করল,
“আমার চুল আপনায় কখন বিরক্ত করল?”
“সবসময় করে।”
“মানে?”
“মানে চোখ মুখ ঢেকে রাখে তোমার।”
“তাতে আপনার কি?”
“আমার অসুবিধা হয় যে।”
“অসুবিধা?”
“এত সব জানার দরকার নেই। ওখানে গিয়ে বসো।”
“কেন বসব?”
“মেয়ে এত কথা বলো না। যাও চুপচাপ।”
তিতিল চুপচাপ ফুচকি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। হতবাক হয়েছে ইয়াদ। সে ভেবেছিল তিতিল তার কথামতো বসবে তা না করে..
“আচ্ছা বদমাইশ মেয়ে তো। তোমাকে পরে দেখছি মেয়ে।”
ইয়াদ তৃপ্তি নিয়ে স্যুপ খেলো। লাচ্চি টায় এক চুমুক দিয়ে রেখে বের হলো সে।
তিতিলের রুমে গিয়ে দেখে লাইট অফ। দরজায় ধাক্কা দিতে বুঝল লাগানো।
“দরজা টা ভালোয় ভালো খুলো তিতিল।”
“…..
“তিতিল তুমি কি কানে কম শুনতে পাও? যখনি কথা বলি শুনতে পাও না।”
ঠোঁট টিপে হাসল তিতিল। শুয়ে চুপচাপ আছে যেন অপর মানুষটা বুঝতে পারে সে ঘুমিয়ে গেছে।
ইয়াদ জোরসে ধাক্কা দিল বার কয়েক।
“কি ভেবেছো আমি কি জানি না তুমি ইচ্ছা করে এমন করছো? দরজা খুলো। না হলে দরজা ভেঙ্গে ফেলবো সত্যি।”
“….
“ও তুমি এভাবে শুনবে না তাই তো? মাকে কি ডাক দিব?”
রাগ হলো তিতিলের। ব্ল্যাকমেইল করছে তাকে। নিজে পারছে না বলে অন্য জনের ভয় দেখাচ্ছে। দাঁত কিটে তিতিল লাইট অন করে দরজা খুলল। মাথায় ওড়না টা টেনে এক পাশে গিয়ে দাঁড়াল কঠিন মুখে।
ইয়াদ ভ্রু উঁচু করে রুমের ভেতরে গেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে তিতিলের বিছানায় গিয়ে আয়েশে বসল। তিতিল একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে আনল। মুখে হাসির ভাব তুলে ইয়াদ বলল,
“ঘুমের অভিনয় করছিলে বুঝি?”
“….
“আচ্ছা তিতিল তুমি কি কোনো ভাবে ভয় পাচ্ছো আমায়?”
“আপনাকে ভয় পেতে বয়েই গেছে আমার।”
“ও রেয়লি?”
“….
“তো কাল একটু ধরতেই তো থরথর করে কাঁপছিলে। সেটা কি ছিল ডেয়ার?”
তিতিল বেশ ইতস্তত বোধ করছে। লজ্জাকর এক অবস্থায় পৌঁছে গেছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে।”
“কি হলো তিতিল বেবি? মুখে তালা লেগে গেছে?”
“আ আপনি এখন যান।”
“না যাবো না ভাবছি।”
তিতিল ভ্রুকুঞ্চন করে তাকাল তার পানে। ইয়াদ হেসে জবাব দিল।
“তুমি তো আমার রুমে যাবে না। তাই আমি না হয় তোমার রুমে থাকলাম। এতে আর কি হবে।”
“দে দেখুন।”
“হ্যাঁ বলো কি দেখব?”
তিতিলের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেঁপে হাত কচলাচ্ছে। ইয়াদ মুচকি হাসল। বলল,
“পুরো টমেটো না স্ট্রবেরি হয়ে গেছো।”
তিতিলের রাগ আরো বাড়তে থাকে। গাল গুলি কেমন ফুটে উঠেছে।
“হ্যাঁ আরেকটু রাগো। কাম অন তিতিল। ইশশ গাল গুলি কে এইভাবে ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে।”
দুই হাত তুলে ইয়াদ বিছানা থেকে তার দিকে এগিয়ে যেতেই তিতিল খানিক সরে গেল। শক্ত গলায় বলল,
“একদম আমার কাছে এসে আমাকে ছুঁয়ার চেষ্টা করবেন না। ভালো হবে না এতে।”
“তো হবে কি?”
“….
“কি হলো তিতিল? তোমায় ছুলে কি হবে? কারেন্ট লেগে যাবে নাকি?”
“….
“এই পিচ্চি শরীরে যে কারেন্ট। ধরলে আমিই শকড হয়ে যাই।”
“দেখুন,
“হ্যাঁ দেখছি তো তোমায়। বলো।”
ইয়াদের এই হেলাফেলা ভাব তিতিলের সহ্য হচ্ছে না। সে বলল,
“আপনার সাথে আমার কিছুদিন পর ডিভোর্স হয়ে যাবে। তাই আমাকে আপনি ছুঁয়ার চেষ্টা করবেন না।”
কিছুক্ষণ পাড় হয়ে গেল। কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে তিতিল মাথা তুলে তাকাল। ইয়াদ তার দিকেই তাকিয়ে আছে চোখ গুলি ছোটছোট করে। ঠোঁটের একটা পাশ প্রসারিত হয়ে আছে তার। তিতিল ওই চোখের চাউনিতে স্থির থাকতে পারছিল না। চোখ নামিয়ে নিল সে। ইয়াদ তিতিল কে দেখে হুট করেই তার কোমর পেঁচিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। তিতিল বিস্ময় চোখে তাকাল ইয়াদের চোখের দিকে। ছাড়ানোর অল্প চেষ্টাও করছে সে। কিন্তু এতে ইয়াদ তাকে আরেক ধাপ কাছে নিয়ে এলো টেনে। তিতিলের শরীর হিম হতে শুরু করেছে। ইয়াদ তার কোমর শক্ত করে চেঁপে ধরে চোখের মাঝখানের হাল্কা কালো মনির দিকে তাকিয়ে সাপের মতো শিশ ভাজিয়ে বলল “সুহহহ।”
তিতিল নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে। শরীরে এক বিন্দু শক্তিই পাচ্ছে না সে।
“ডিভোর্স এখনো হয়নি তিতিল। হলে তারপর।”
তিতিল তখনো এলোমেলো চোখে তাকিয়ে আছে ইয়াদের চোখে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল তারপস সে স্লান হেসে তিতিলের কানের কাছে মুখ নিল। ফিসফিসে আওয়াজে বলল,
“ভয় পেয়েছো বলে আজ ছেড়ে দিলাম। নয়তো কোলে করে আমার ঘরে নিয়ে যেতাম। তবে সময় হলে ঠিক করবে এটা ইয়াদ।”
ইয়াদ চুপচাপ চলে গেল। তিতিল এতক্ষণে যেন দম নিল। নিশ্বাস টা আটকে এসেছিল ওই ফিসফিসে কথায়। বুকটা এখনো ভার লাগছে। শরীর টা এখনো মৃদু কেঁপে চলছে। এ কি শিহরণের ঢেউ তুলানো মনোমুগ্ধকর আবেগ ভরানো অনুভূতি!
চলবে♥
(একটা কথা বলি রাগ করবেন না। আমার কাছে প্লিজ বোনাস পার্ট বা এক্সট্রা পার্ট চাইবেন না। কমেন্ট বক্সে তো প্রতিদিন শুনি ইনবক্সেও বলতে থাকেন। এমন টা করবেন না পাঠক আমি যথেষ্ট চেষ্টা করি দেওয়ার। লেখালেখি ছাড়াও আমার ব্যক্তিগত একটা জীবন আছে। আশা করি পাঠক বুঝবে🖤)