#ইস্ক
#সাদিয়া
১৫
রেস্টুরেন্ট থেকে সবাই এক গাড়িতে বাসায় ফিরল। ঘড়িতে তখন ১০ বেজে ৪২ মিনিট। সবাই নিজের রুমে চলে গেল। ইয়াদ গাড়ি পার্কিং করে এসে দেখল তিতিল ঘরে নেই। নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে সে ঘর থেকে বের হলো।
ভেতরটা আজ স্বস্তি লাগছে। বহুদিন পর প্রশান্তির হাওয়ায় দুল খাচ্ছে হৃদয়। ওখানে থাকা সময় টা যেন কেটেছে তার তিতিল কেই দেখে।
ইয়াদ তিতিলের রুমে গিয়ে দেখে তিতিল তখন কানের দুল খুলছিল। গায়ে ওড়না ছিল না বলে ইয়াদ কে দেখে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে গায়ে ওড়না জড়ালো। ইয়াদ ধীর পায়ে এগিয়ে গেল তিতিলের দিকে। শান্ত গলায় বলল,
“ও রুমে যাও।”
“….
“অন্য কিছুতে জোর না করলেও এটা নিয়ে জোর করতে বাধ্য।”
“….
“তিতিল আমি তোমাকে কিছু বলছি।”
আমতাআমতা করে তিতিল বলল,
“ওখানে থাকার কি আছে? আপনি..”
“আই হোপ তুমি ইয়াদের কোলে উঠতে চাইছো।”
“না।”
“সেটাই তো দেখতে পাচ্ছি।”
“মানে?”
“মানে স্পষ্ট।”
“যাবো।”
“তো যাও।”
“ড্রেসটা চেঞ্জ করে নেই আপনি যান।”
“ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করো।”
“না আপনি ঘর থেকে যান।”
“আমি চলে গেলে দরজা বন্ধ করবে। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করবে। তারপর লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে ঘুমের ভান ধরবে?”
“….
“বেরিয়ে যাচ্ছি তবে আশা করব তিতিল এমনটা করবে না।”
ইয়াদ বের হয়ে যেতেই তিতিল দরজা বন্ধ করল। তারপর ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।
একটুপর এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। ইয়াদের কথা মনে পড়তেই ঠোঁট টিপে হাসল।
দরজা খুলে বের হতেই তিতিল দেখতে পায় ইয়াদ কে। তখন পর্যন্ত ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল লোকটা। ঠোঁট উল্টে কিছু না বলে নিচে গেল সে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল টা নিয়ে উপরে গেল। ইয়াদ তখনো তার ঘরের সামনেই ছিল। তিতিল ধীর পায়ে একটু একটু করে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল। কি করে লজ্জাশরম খেয়ে ইয়াদের ঘরে সে স্বেচ্ছায় যাবে? দরজার কাছে আসতেই নিজের জায়গা বহাল রেখে ইয়াদ তার হাত ধরল।। চোখ মুখে লোকটার গাম্ভীর্য ভাব। ইয়াদ চুপচাপ তিতিল কে টেনে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। গায়ের কোট টা খুলে বিছানার উপর ছুড়ে দিল। তিতিল তখনো মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে দিল। ইয়াদ দুই পা তার দিকে এগিয়ে যেতেই তিতিল এক পা পিছিয়ে গেল। ইয়াদ থেমে গেল না এগিয়ে গিয়ে। তিতিলের বাহু চেঁপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো এবার। তিতিল কি করবে বুঝতে পারছে না। একদম জমে যাচ্ছে সে। ইয়াদ তিতিলের গালের দুই পাশে কোমল করে হাত রেখে তার মুখ টা খানিক উপরে তুলল। ভ্রু উঁচু করে তিতিল তাকাল ইয়াদের দিক। ইয়াদ কিছুক্ষণ তিতিলের মুখের পানে তাকিয়ে রইল। ভেতরে ঝড়ো হওয়া বইছে তার। প্রবল আকাঙ্ক্ষা তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। উন্মাদের মতো চেয়ে আছে তিতিলের দিকে। তিতিলের চোখ মুখে লোকটার গরম নিশ্বাসের আঁচ এসে পড়াতে আরো জমে যাচ্ছে সে। নিজের কাছে নিজেকে বরফ পিন্ড লাগছে। কাঁপা ঠোঁট গুলি নিয়ে ইয়াদ বলল,
“আমাকে ক্ষমা করে দিও এত টা কষ্ট দেওয়ায়। সব কিছু সমসময় মনে রাখতে নেই। ভুল করেছি স্বীকার করছি। মাফও চেয়ে নিচ্ছি যার কাছে ভুল করেছি। যার স্পর্শে কেঁপে উঠো তাকে না হয় মাফ করে দিও।”
ইয়াদ মন্থরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তিতিলের দিকে। তিতিলের দিকে ঝুঁকে গেছে পুরো। ঠোঁট ছুঁই ছুঁই অবস্থা। তিতিল চোখ বন্ধ করে খিচে রয়েছে। ইয়াদ খানিক হাসল। তার ঠোঁট গুলি পরম আদরে তিতিলের কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“ঘুমিয়ে যাও। অবশ্যই স্বপ্নে ইয়াদ কে চাই।”
ইয়াদ আর কথা বাড়াল না। ব্যালকুনিতে চলে গেল। তিতিল তখনো বরফ পিন্ডের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথরের মতো জমে গেছে নাকি অনুভূতির সাগরে ভাসছে তা বুঝে উঠার সক্ষমতা নেই। তিতিল নিস্তেজ হাতে কপাল ছুঁয়ে দিল। প্রথম ঠোঁটের পরশের কথা মনে হতেই আবারো কেঁপে উঠল সে। শরীরের প্রতিটি লোম কাটা দিয়ে উঠেছে তার। ভেতরটাও কাঁপছে কেমন রুরু করে। ঘন ঘন নিশ্বাস নিল তিতিল। প্রথম অন্যরকম অনুভূতির দেখা। পরশ অনুভব করা। তিতিল নির্বাক হতভম্ব।
একটু পর ব্যালকুনি থেকে নিকোটিনের উদ্ভট গন্ধ নাকে এসে লাগল তিতিলের। দম বন্ধ করে দিচ্ছে সেটা। যেন গলা টিপে ধরেছে। বেশিরভাগ মেয়ের নিকোটিনে এলার্জি থাকে। তিতিলের শ্বাসকষ্ট হয় এতে। বিছানা থেকে উঠে ব্যালকুনিতে উঁকি দিতে রাগে এক হয়ে আসে মুখ। সাদা ইং করা শার্টে লোকটা ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটে সুখটান দিতে ব্যস্ত। লোকটা কে একদম অন্যরকম লাগছিল দেখতে। সিগারেটের ধোঁয়া ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে লাগল অন্ধকার আকাশে।
হঠাৎ কাশির শব্দে ইয়াদ থতমত খেয়ে তাকাল পাশ ফিরে। তিতিল কে কাঁশতে দেখে হাত দিয়ে ধোঁয়া উড়াল। সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে মুখের ভেতরে রাখা ধোঁয়া ছেড়ে দিল।
রাগে লাল হয়ে তিতিল কড়া গলায় বলল,
“আমি আমার রুমে চলে যাবো।”
“আর ইউ ওকে তিতিল?”
ধোঁয়া হাত দিয়ে সরিয়ে এগিয়ে গেল ইয়াদ।
“একদম ছুঁবেন না আমায়” বলে তিতিল দুই পা পিছিয়ে গিয়ে কাশতে লাগল। ইয়াদ দ্রুত পায়ে টেবিল থেকে পানি নিয়ে মুখের সামনে ধরতেই তিতিল বসার জায়গা খুঁজল। তিতিল না চাইতেও ইয়াদ তার বাহু ধরে বিছানায় নিয়ে বসাল। তিতিল ডগডগ করে গ্লাসের পানিটা শেষ করে দম নিল। গলাটা এখনো খুশখুশ করছে তার।
“ঠিক আছো তিতিল?”
কপাল কুঁচকে বাহু থেকে হাত সরিয়ে নিল ইয়াদের।
“এলার্জি আছে তোমার? আমি জানতাম না বিশ্বাস করো। তা হলে খেতাম না।”
“ইচ্ছা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন তাই না?”
“মানে?”
“সবাই বিষ দিয়ে মারতে চায় আর আপনি সিগারেট দিয়ে করছিলেন।”
“হোয়াট?”
“দূরে সরে যান তো। গন্ধে আমার দম আটকে আসছে।”
ইয়াদ কথা মতো একটু দূরে গিয়ে বসল। বা হাতে বা কান ধরে বলল,
“সরি। আর কোনো দিন তোমার সামনে সিগারেট খাবো না। এতটা হাইপার হইও না প্লিজ।”
ইয়াদ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল। তিতিল টেবিলে গ্লাস রাখল। ইয়াদের কান ধরা মুখটা মনে হতেই ঠোঁট টিপে হাসি এলো তার।
—-
আযানের আওয়াজ কানে আসতেই সজাগ হলো তিতিল। কিন্তু আলসেমি তে উঠতে মন চাইছে না। এই সময়টা ঘুমের এত আরাম হয় তা বলে বুঝানো যাবে না। শয়তান হাত বুলিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলে কিনা!
চেষ্টায় তিতিল উঠে গেল। নামাজ পড়ে মোনাজাত ধরল সে। এই টাইমে ইয়াদের তেমন ঘুম না ভাঙ্গলেও এতটা কাছে কান্নার গুনগুনানো শব্দে চোখ ঢলে তাকাল। পাশ ফিরে দেখতে পেল তিতিল মোনাজাতে কান্না করছে। ইয়াদের শরীরে ঝাটকা বয়ে গেল। চোখ ঢলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ওদিকে। তিতিল উঠতেই আবার চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। বিছানা ঘুছিয়ে তিতিল চুপচাপ বের হয়ে গেল। ইয়াদের দিনের শুরুটা আজ অন্য ভাবেই হলো। না জানি আজ আর কি কি হতে পারে।
চলবে♥
(আশা করব গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।🧡💛)