#ইস্ক
#সাদিয়া
২৪
টিপটিপানো বৃষ্টি সন্ধ্যার পরিবেশটা কে আরো মাতাল করে তুলছে ইয়াদের জন্যে। সামনে প্রেয়সী বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে। শরীর ভিজে এঁটে আছে কাপড়। স্বীয় স্ত্রী কে এমন রূপে দেখেও নিজেকে সংযত রাখা কোনো স্বামীর কর্ম হয়। এটা ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার মতো। ইয়াদের চোখ তিতিলের দিকে। লাল জামার ভেতরের ক্রীম কালার বিকিনি একদম ফুটে উঠছে যা ইয়াদের মন কে আরো দ্বিগুণ হারে উথাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বুকে। ইয়াদ চোখ সরিয়ে নিল। শরীরের শিরা হীম হয়ে আসছে। ভেতরের পুরুষত্ব বারবার তাকে কিছু ইঙ্গিত করছে। ইয়াদ নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠছে না। ভেতরের এই দাবানলের চাঁপে সে ভয়ংকর কিছু একটা করে ফেলতে পারে এই মুহূর্তে। নিশ্বাস তার আটকে আসছে। ছেলেটা বেশ করে বুঝতে পারছে এখানে আর এক সেকেন্ড থাকলে সে যে কিছু করে ফেলতে পারে। যেটা সে চাইছে না। ইয়াদ মনস্থির করল চলে যাবে। উত্তপ্ত এক লম্বা শ্বাস ফেলে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই মেয়েটা তার হাত ধরে কাঁপা গলায় বলল “চলে যাচ্ছেন কেন? আর একটু থাকুন।” তিতিলের স্পর্শে শিউরে উঠে ইয়াদ চোখ বুজে ফেলল। তিতিল তখনো তার হাত ছাড়েনি। তপ্ত স্পর্শ পেয়ে ইয়াদ আর মুহূর্ত নষ্ট না করে উল্টো দিকে ফিরেই তিতিল কে ঝাপটে ধরে বুকের ভেতর। আকস্মিক কান্ডে তিতিল হকচকিয়ে যায় চোখ বড় করে। তিতিল বুঝতে পারছে লোকটা তাকে আরেক ধাপ নিজের সাথে চেঁপে ধরেছে। লোকটা যে কাঁপছে তা টের পেতে সময় লাগেনি তার। লোকটার উষ্ণ বুক পেয়ে তিতিল পরম শান্তিতে চোখ বুজে ফেলে। ওই উষ্ণ বুকের ধুকবুক করা শব্দ তিতিল কে মাতিয়ে তুলছিল এক অন্যরকম পরিবেশে। সেই বুক সাগরে যে বেসামাল ভাবে ঢেউ আছড়ে পড়ছে তা তিতিলের অজানা নয়। আলতো হাতে তিতিল নিজেও যেন ইয়াদের শার্ট আঁকড়ে ধরেছে।
অনেকটা সময় তিতিল কে বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখে ইয়াদ তার হাতের বাঁধন ঢিলে করে আনল। তিতিল সেই উষ্ণতার রেশ লেশমাত্র কেটে নিজের হাত নামিয়ে নিল লোকটার বুঝার আগে। চোখ খুলে তিতিল নিচের দিকে নুয়ে রয়েছে রক্তজবার মতো। ইয়াদ নিজের কোমল হাতে আলতো করে তিতিলের গালের উপর রাখল। তিতিল ত্রাস গতিতে তাকাল লোকটার চোখের দিকে। সে লোকটার চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করল। অপলক সে দুই চোখের ভাষা বুঝার অযথা চেষ্টা করতে লাগল। ইয়াদ আস্তে করে নিজের মুখ এগিয়ে দিল। তিতিলের নিশ্বাসের ঘনত্ব তখন বাড়তে থাকে। ওই উষ্ণ নিশ্বাস টুকই ইয়াদ কে মাতিয়ে তুলার জন্যে যথেষ্ট ছিল। ইয়াদ একটুএকটু করে তার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তিতিলের ভেতরও তখন ঢেউ উদিত হয়। ভেতরে কিছু একটা প্রবল ভাবে ছুটাছুটি করছে তার। চোখের পাতা দুটো বন্ধ করে সে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে। ভেতরে আজ তার ঝড় উঠেছে। ইয়াদ নামক ভালোবাসার ঝড়!
নিজের মুখের উপর লোকটার গরম নিশ্বাস চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে তিতিল। লোকটার গা থেকে মাতাল করা একটা সৌরভ ভেসে আসছে। তিতিল নাক টেনে সেই মাতাল করা ঘ্রাণে তাল মিলিয়ে মাতলামো করছে। ইয়াদ তার সাথে কি করতে চাইছে সে বেশ বুঝতে পারছে। কিন্তু আজ যে সে লোকটাকে বাঁধা দিতে চায় না। যে চায় লোকটা একেবারে তার সাথে মিশে যাক। তার প্রতিটা নিশ্বাসে স্পর্শে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাক। সে নিজেও চায় ইয়াদের অস্তিত্ব। তার স্পর্শ। তাই আজ বাঁধা নয়। সে মানুষ টা কে বাঁধা দিতে চায় না। যা মন চায় করুক না হয়। সে নিজেও লোকটার ওই গরম নিশ্বাসে মাতাল হতে চায় আরো বেশি করে।
কিন্তু তার সব ধারনায় মানুষটা ভুল প্রমাণ করে কপালে প্রথম উষ্ণ ভিজে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। ওই ঠোঁটের স্পর্শ বেশ সময় ছিল। তারপর ধরে আসা আবেগ মিশানো করুণ কন্ঠে বলল “আমার ভালোবাসা পবিত্র। তুমিও আমার পবিত্র সম্পদ। কিন্তু কোনো মোহে পড়ে আমি এই পবিত্র ভালোবাসা কে অপবিত্র নামক শব্দের সাথে মিলিয়ে দিতে পারি না। আমি চাই আমার প্রতিটা কোমল স্পর্শ তুমি মন থেকে উপলব্ধি করো। আমার নিশ্বাস গুলি তুমি ভালোবেসে মেখে নাও নিজের শরীরে। উদ্বিগ্ন হয়ে নিজ থেকে মিশে যেতে চাইবে তুমি। মনের সায়, ভালোবাসা, তৃপ্তি,পরম সুখ সব থাকবে যেখানে। অপেক্ষা করব। আমি সেই দিনের জন্যে অপেক্ষা করব তিতিল। সেই দিন তোমাকে সমস্ত সুখ এনে দিব। নিজের খুব গভীরে টেনে নিব তোমায় তিতিল।”
ইয়াদ নিজের কথা শেষ করে তিতিলের গাল ছেড়ে দিল। জায়গা ত্যাগ করতে চাইলে তিতিল আবার তার হাত ধরে নিজের দিকে ফিরাল। মেয়েটার চোখে আজ রাগ স্পষ্ট। ইয়াদ বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার এই রাগের কি কারণ? কপাল কুঁচকে সে তিতিলের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মেয়েটার হাত পা সাদা হওয়ার পথে। ইয়াদ নিচু গলায় বলল,
“তিতিল এবার উঠে পড়ো জ্বর আসবে।”
ইয়াদের কথা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তিতিল এমন এক কান্ড করে বসল যা ইয়াদ কল্পনাও করতে পারে নি। এখনো সবটা তার কাছে স্বপ্ন কিংবা ভ্রম লাগছে। এটা সম্ভব হতে পারে ইয়াদ বিশ্বাস করতে পারছে না। স্তব্ধ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। তিতিল পা উঁচু করে করে নিজের দুই হাত ঘাড়ের পিছনে দিয়ে টেনে এনে ইয়াদের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। ইয়াদ বিশ্বাস করতে পারছে না মেয়েটা এখনো তার ঠোঁট দখল করে আছে। সবটা কেমন তার কাছে ধোঁয়াশা। অনেকটা সময় অতিক্রম হওয়ার পর তিতিল তাকে ছেড়ে দিল। বেশ কড়া গলায় বলল “এরপর থেকে যদি আর কোনো দিন তিতিল কে এড়িয়ে যাবেন তাহলে বুঝবেন পরে। এতদিন কিছু বলি নি কিন্তু এখন থেকে আর চুপ থাকব না। আপনার যা যখন ইচ্ছা হবে তাই হবে এমনটা নয়।” বেশ রাগেই কথা গুলি বলে তিতিল ভিজে কাপড় নিয়ে চলে গেল ভেতরে। ইয়াদ তখনো ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। আকস্মিক ঘটনা সত্যি কিনা ভাবতেই ঠোঁট জ্বলে উঠল। ইয়াদ আনমনে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করতেই আতকে উঠল। অনুভব করল ঠোঁট ফুলে গেছে। তারমানে আচমকা হওয়া ঝড়টা তবে সত্য। কিভেবে যেন ইয়াদ ঠোঁট স্পর্শ করে স্মিত হাসল।
—-
কাপড় চেঞ্জ করে ইয়াদ আর তিতিলের সামনে যায় না। জানেও না মেয়েটা ঘরে একা কি করছে। এখন তার যেতে ইচ্ছা লাগছে না। সে চিন্তায় মগ্ন। বারান্দায় বসে অন্ধকার রাত দেখছে। হঠাৎ ভেতর থেকে বিকট শব্দ আসতেই চমকে গেল ছেলেটা। ভেতর আত্মা কেঁপে উঠল যেন অজানা ভয়ে। ভ্রু কুঁচকে দরজায় তাকিয়ে না থেকে তড়িৎ গতিতে ভেতরে প্রবেশ করল। স্তব্ধ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল সে। তিতিল কে কেমন রক্ত ছাড়া মানুষ লাগছে। তাছাড়া ইষৎ কাঁপছেও মেয়েটা। ইয়াদ উন্মাদের মতো গিয়ে ঝাপটে ধরল তিতিল কে। তিতিল কিছুক্ষণ শান্ত টি থেকে পরক্ষণেই হাতাহাতি শুরু করল। এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ইয়াদ কে সরিয়ে নিয়ে বলল “একদম ছুবিনা আমায়। যা সর।” তিতিলের এহেন কথায় বোকা বনে গেল ইয়াদ। হা করে তাকিয়ে রয়েছে তিতিলের দিকে। আপনি থেকে সোজা তুই’এ চলে গেল মেয়েটা? বিষয়টা কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ছেলেটার। সে নিবার্ক। তিতিল আবার লেগে আসা গলায় বলল “তুই যা আমায় কত কষ্ট দিছোস তুই জানোস? তোর তোর সাথে আমার আড়ি। কথা বলব না কোনো। কাছে আসলে না একদম দা দিয়ে দিব এক কোপ।”
ইয়াদ বুঝতে পারছে না তিতিলের ব্যবহার এমন পরিবর্তনের কারণ। শুকনো ঢোক গিলে সে শুধালো,
“তিতিল কি হয়েছে তোমার?”
“তোর কি?”
“তিতিল তুই তাকারি করছো কেন?”
“যাবি নাকি দা আনব।”
“তিতিল এদিকে এসো। শান্ত হোও।”
“আপদ যা তো।” বেশ বিরক্ত নিয়ে বলল তিতিল।
ইয়াদ বুঝল ওকে কথায় কাজ হবে না কৌশলে তিতিল কে নিজের কাছে আনতেই আতকে উঠল সে। আগে তাড়াহুড়ায় খেয়াল হয় নি তিতিলের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে একেবারে। কি মহা বিপদ জ্বরে ঘোরে তিতিলের এমন পাগলামি সামলাবে কি করে!
চলবে♥
(ইডিট ছাড়া পর্ব তাই ভুল হলে সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। নিয়মিত গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ তাই সাধ্যমত রেসপন্স দিবেন)