ইস্ক পর্ব-২৭

0
1449

#ইস্ক
#সাদিয়া

২৭
সূর্যটা হেলে পড়েছে একটু পর বিদায় জানাবে। এমন বেলায় ইয়াদ আর তিতিল বাসায় ফিরল। ড্রয়িংরুম যেতেই দেখতে পেল রাহেলা বেগম আর হিমা বসে টিভি দেখছে। ইয়াদ আর তিতিল কে আসতে দেখে তারা অবাক হলো। রাহেলা বেগম বললেন “কিরে চলে আসবি জানালি না তো।”

“তোমার বউ মা সুযোগটাই দিল না।”

“মানে? কি বলছেন? আমি আবার কি করলাম?” পাশ থেকে কর্কশ গলায় বলে উঠল তিতিল।

“তো কে করেছে আমি? বলেছিলাম দুই দিন থাকতে তোমার বউ রাগ দেখিয়ে হাটা শুরু করেছে। যেন এখান থেকে ওখানে। পায়ে হেটেই চলে আসবে।”

“আমি আপনাকে আসতে বলেছিলাম। আমি যেভাবেই আসতাম আপনি এলেন কেন সাথে?”

“বাচ্চা মানুষ কে তো আর একা ছাড়া যায় না।”

“কি বলতে চাইছেন টা কি আপনি?” রাগ নিয়ে গলার আওয়াজ উপরে তুলে বলল তিতিল।

“ঠিকই তো বললাম। তাছাড়া..”

ইয়াদ কে থামিয়ে রেহেলা বেগম বললেন “কি ঝগড়া শুরু করেছিস তোরা আসতে না আসতেই?”

“আম্মু ঝগড়ুটে মেয়ে এনেছো বউ করে।”

“আমি ঝগড়ুটে আপনি ভালো। থাকবোই না আমি আপনার সাথে।”

“হয়েছে কি কিসের এত ঝগড়া?” বলতে বলতে ইনা এগিয়ে এলো রুম থেকে।

“কি হয়েছে কি তোমরা কখন এলো তিতিল।”

“এই মাত্র আপু।”

ইনা ইয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখল ছেলেটা তিতিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। কিছু একটা আন্দাজ করে ইনা বলল “যাক আমার প্ল্যান তাহলে কাজে দিয়েছে ভাই।”
ইনার কথা কেউ বুঝল না। সবার কপালে কৌতূহলের ভাঁজ।

“কিসের প্ল্যান আপু?” বলল ইয়াদ।

“তোদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি শেষ করার প্ল্যান।”

“বুঝলাম না কি বলতে চাইছো আপু?”

“আমি যদি নিয়াম কে না বলতাম তিতিল কে বিয়ে করার কথা তাহলে তো তোরা হাত গুটিয়ে বসেই থাকতি। ছোটখাটো একটা পরীক্ষা তো হয়েই গেল। কার প্রতি কার কত টান আছে।”

“তার মানে তুমি ইচ্ছা করে..”

“তোর কি মনে হয় ভাই? তিতিলের মতো একটা লক্ষ্মী মেয়ের জীবন নষ্ট করে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে দিব? ভাবতে পারলি কি করে রে?”

ইয়াদ কিছু বলল না। তার বুঝা উচিৎ ছিল যে মানুষ গুলি দুই বছর তার জন্যে কষ্ট পাওয়া মেয়েটা কে আগলে রেখেছে তারা কি করে এমন টা করবে। ইনাকে চিনতে বোধ হয় ইয়াদের বেশ ভুলই হয়ে গেছে। মুখ ফিরিয়ে আছে সে।

“ও তোমরা সবাই আমার সাথে এমন করতে পারলে?”

“না তিতিল তুমি ভুল বলছো। সবাই না আমি’ই। মা আর হিমা কিছু জানত না। আমি’ই জানাই নি। নয়তো কখনো তোমাদের কষ্ট দেখে বলে দিত। কি বলো মা?”

রেহেলা বেগম হা করে তাকিয়ে আছেন মেয়ের দিকে। যেন সবটাই উনার মাথার উপর দিয়ে গেছে উনার। পাশ থেকে হিমা বলে উঠল “আমাকে বললেও কিন্তু আমি ওদের জানাতাম না আপু।”

“হয়েছে এত পাকতে হবে না তোমায়।”

“আমি থাকবোই না এ বাড়ি। নিয়াম কে বলল সত্যি সত্যিই আমায় বিয়ে করে নিতে।” বলে রাগ দেখিয়ে তিতিল হনহন করে নিজের রুমের দিকে ছুটল।

—-
তিতিল নিয়ামের নাম্বারে কল দিল। সে ঠিক করেছে নিয়াম কে নিজেই বিয়ের কথা বলবে। কল দিয়ে “হ্যালো” বলতেই কোথা থেকে ইয়াদ এসে ফোন টেনে নিয়ে গেল। হাতের চাপ লেগে ফোন টা অফ হয়ে গিয়েছে তার। ভাগ্যিস লোকটা জানে না তার লক টা। তিতিল মুখ ফিরিয়ে নিল। ইয়াদ আয়েশ করে বিছানায় গা হেলিয়ে দিয়ে বলল,
“নিয়াম কে কল দিচ্ছিলে বুঝি?”

“তাতে আপনার কি? যে সুযোগ নেয় তাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই আমার।”

“বিয়ে করবে নিয়াম কে?”

“হ্যাঁ করব। একশোবার করব।”

“কি করে করবে?”

“দুইটা মানুষ যেমন করে বিয়ে করে তেমন করে।”

“ও আই সি।”

“আমার ফোন আমাকে দিন।”

“আচ্ছা আমার সাথে ডিভোর্স না হওয়া সর্তেও তুমি বিয়ে করবে কি করে অন্যজন কে?”

এবার তিতিল চুপ হয়ে যায়। ইয়াদ আবার বলল
“এসব ভুলভাল চিন্তা বাদে রাত হয়েছে ঘুমাতে আসো।”

“ডিভোর্স হয়নি তো কি হয়েছে দিবেন ডিভোর্স। আর এক সাথে থাকার কোনো মানেই দেখি না।”

“তিতিল বিড়ালের মতো মিওমিও না করে শুতে আসো।”

“কি বললেন আপনি আমায়?”

“তুমি কি আমার কথা শুনবে নাকি তোমাকে জোর করে আমাকে এনে শুয়াতে হবে?”

“…

তিতিল রাগ দেখিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে ইয়াদ উঠে একটানেই তিতিল কে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তিতিলের উপর সম্পূর্ণ ভর ঢেলে দিয়ে কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিল। তিতিল কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“আদিখ্যেতা হচ্ছে? আমার গায়ে হাতির শক্তি ঢেলে ভাব দেখাচ্ছেন?”

তিতিলের কথায় মুচকি হাসল ছেলেটা। ইয়াদের ওই ভুবনজয়ী হাসি দেখে তিতিল একদম চুপ হয়ে গেল। তিতিল কে চুপ থাকতে দেখে তার ললাটে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেয় গভীর ভাবে। ছেলেটার উষ্ণ পরশ পেয়ে তিতিল শিউড়ে উঠল। আধোআধো স্বরে ইয়াদ আবার সেই কথা বলল “আমার ভুল হয়ে গেছে তিতিল মাফ করে দাও। শেষ একটা সুযোগ দাও মন ভরে একজীবন তোমাকে ভালোবাসার। নিজের ইচ্ছায় আর কখনো কষ্ট দিব না তোমায় ইনশাল্লাহ। একবার ভুল গুলি কে দূরে সরিয়ে কাছে টেনে নাও ভালোবেসে।” বলতে বলতে ইয়াদ তার আদর মাখা হাত ঘুরাচ্ছে তিতিলের উপর। ওমন শরীর হীম হওয়া পরশ উপেক্ষাও করতে পারছে না। নিশ্বাসটাও ঘন হয়ে আসছে। ভেতরে ধুকবুক শব্দটা যেন আরো সজোরে শব্দ তুলছে। ইয়াদ তিতিলের গালে গলায় নাক ঘষতে শুরু করেছে। চোখে তার অদ্ভুত নেশা। মেয়েটাও যেন তার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। ধীরগলায় বলল “ছা ছাড়ুন।” ইয়াদ কে সরানোর বৃথা চেষ্টা করল মেয়েটা। নিজেকেও পারছে না নেশাক্ত ছেলেটার থেকে দূরে রাখতে। পারছে না ওই উষ্ণ ভালোবাসার আদুরে স্পর্শ কে উপেক্ষা করতে। ইয়াদ আবার সেই নেশাময় গলায় বলল “তোমাকে চাই তিতিল। নিজের ভালবাসা কে চাই তোমার কাছে।” ইয়াদ ছোটছোট চুমু দিচ্ছে তিতিলের গলায়। গভীর স্পর্শ এঁকে দিচ্ছে তিতিলের উপর। মেয়েটার উষ্ণ নিশ্বাস ক্রমাগত বারি খাচ্ছে ইয়াদের গলায়। তিতিলের কানের লতিতে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেই মেয়েটা উন্মাদের মতো ইয়াদের পিঠ খামছে নিল। মুচকি হেসে ইয়াদ তিতিল কে পূর্ণ ভালোবাসার ছুঁয়া দিল।

—-
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইয়াদ দেখতে পেল মেয়েটা গুটিশুটি হয়ে তার বুকে শুয়ে আছে। আলতো হেসে বিড়বিড় করল “আমার পাগলি তিতিল পাখি।” তারপর কপালে কোমল স্পর্শ দিয়ে আরো শক্ত করে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে নিয়ে চোখ বুঝল। তিতিল চোখ মেলে খানিক ঠোঁট প্রসারিত করল।

“তিতিল এক কাপ কফি।”

একটু পর তিতিল হাতে এক কাপ কফি নিয়ে মুখের গঠন শক্ত করে এলো। হাতে ব্রেন্ডের ওয়াচ লাগাতে লাগতে তিতিলের দিকে চেয়ে বলল
“মুখে এক রাশ মেঘ যে? বৃষ্টি কিন্তু আমার একদম পছন্দ নয়।”

“….

“কথা বলবে না বুঝি?”

“আপনার কফি নিন আমার কাজ আছে।”

ইয়াদ কিছু না বলে কফি হাতে নিয়ে আবার বিছানায় চলে গেল। একবার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বিছানায় থাকা একটা ফাইল হাতে তুল নিল। মনে হয় চেক করছে। তিতিল চলে যেতে গিয়েও দাঁড়াল। ইয়াদ ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল
“আমার তিতিল পাখি কি আমায় কিছু বলবে?”

তিতিল হুট করেই মুখ ফসকে বের করে দিয়েছে “আমাকে আপনি ডিভোর্স দিবেন না?”

তার এমন কথায় ইয়াদ চমকালো বলে মনে হয় না। সে বরাবরের মতো মুচকি হেসে তিতিলের গালে হাত দিয়ে বলল “এ নিয়ে আমরা বিকেলে কথা বলবো। প্রমিস। এখন আসতে হবে। তুমি খেয়ে নিও আর সাবধানে থেকো।” তাড়াহুড়ো করে কথাটা বলে ইয়াদ তার কপালে ছোট চুমু দিয়ে চলে গেল হনহন করে।

“খেয়ে যাবেন না” বলতে গিয়েও গলা দিয়ে আসল না তার। যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। লোকটা এতটা শান্ত ব্যবহার করল কেন? সত্যিই কি ডিভোর্স দিয়ে দিবে? নাকি অন্য কিছু? কি সব ভেবে তিতিলের মন টা কেমন মুচড়ে উঠল।

বিকেলে ইয়াদ অফিস থেকে এসে দেখে তিতিল ফোনে কারো সাথে কিছু বলছে। তিতিল যে নিয়ামের সাথে কথা বলছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই তার। মুখে গাম্ভীর্য ভাব এনে ইয়াদ পিছন থেকে তিতিলের বাহু ধরে ঘুরিয়ে পাশের দেওয়ালে চেঁপে ধরল।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here