#ইস্ক
#সাদিয়া
৭
সূর্যের আলো পরিস্ফুট হতেই পাখিরা মৃদু ডাকতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তিতিলের। সারারাতে ঘুম তেমন হয় নি। ঘুমের ঘোরে ছটফটানি ছিল তার। ফজরের নামাজ পড়ে তিতিল দুই পাতা কোরআন তিলাওয়াত করল। সেই মধুর মিষ্ট সুরে পরিবেশ যেন খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।
ফুরফুরে মন নিয়ে তিতিল কিচেনের দিকে গেল। এক কাপ চা বানিয়ে উপরে গেল। রেহেলা বেগম তখনো কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। “আম্মা আপনার চা” বলে তিতিল এগিয়ে গেল ভেতরে। তিনি আয়াত শেষ করে কোরআন বন্ধ করলেন। ততক্ষণে তিতিল বিস্কুটের বোয়াম টা উনার দিকে এগিয়ে দিলো। তিতিল যাওয়ার আগে তিনি বললেন,
“তিতিল মা রান্না করার আগে কিছু খেয়ে নিবি।”
রেহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে তিতিল চলে গেল।
রান্নার ফাঁকেফাঁকে তিতিল শুধুমাত্র এক কাপ দুধ চা খেলো। লাল চা টা একদম তার ভালো লাগে না মনে হয় গরম পানি। খেলে হয় দুধ চা না হয় মাঝেমধ্যে ইনার সাথে এক কাপ কফি।
ব্রেকফাস্ট করিয়ে তিতিল দুপুরের রান্না বসাল। আজ অনেক রান্না তাড়াতাড়ি করতে হবে। তাড়াহুড়া করে রান্না করা দেখে ফরিদা জিজ্ঞেস করলেন,
“তিতিল মা আপনে এমনে তাড়াহুড়া করতাছেন কেরে”
“এমনি আন্টি। শুনুন উনি যদি নিচে নামে উনাকে আপনি ব্রেকফাস্ট টা দিবেন আর দুধ টা তাড়াতাড়ি গরম করে নিবেন। রান্না আমার প্রায় শেষ।”
“আপনেই তো দিতে পারেন তিতিল মা।”
“আমার একটু উপরে কাজ আছে তো তাই।”
ফরিদা কিছু না বলে চলে গেলেন। তিতিল বারবার ঘড়ি দেখছে। চুলার আঁচ বাড়তি তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার জন্যে। যেই না দেখল ইয়াদ আসছে ওমনি তিতিল ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে নিল। চুলার আঁচ কমিয়ে ফরিদা আন্টি কে বলল রান্না হলে চুলা বন্ধ করে দিতে। ইয়াদ ফোন টিপতে টিপতে নিচে আসছিল তাই ততটা খেয়াল করে নি। পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময়ও খেয়াল করেনি। তার কয়েক সেকেন্ড পর কপাল কুঁচকে সে পিছনে তাকাল। দেখতে পেল পিচ কালারের একটা থ্রীপিজ পরনে মেয়ের। ঘোমটা মাথায় সুরসুর করে চলে গেল। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সে। এই মেয়ে কি তার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে? কিন্তু কেন? এবার খানিক রাগ হলো ইয়াদের। অবহেলা বা এড়িয়ে চলাটা মুটেও সহ্য করে না সে।
তিতিল ঘরে এসে যেন হাফ ছেড়ে দম নিল। মামপট থেকে ডগডগ করে তিন ঢোক পানি খেয়ে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। পানি খাওয়ার সময় এই এক অভ্যাস তার তিন ঢোক ছাড়া পানি খেতে পারে না। প্রাণের নবীর সুন্নত কিনা!
—-
দুপুরে খাওয়া সময় সবাই বসে আছে। ইনা ফোন রেখে তার মাকে বলল,
“মা আর কতক্ষণ বসে থাকব? অফিসে দেরি হবে তো। ফরিদা আন্টি খাবার দাও।”
“দাঁড়া ইনা। ইয়াদ।”
খাবার টেবিলে বসে ইয়াদ ফোন টিপছিল। মায়ের ডাকে মাথা তুলে বলল,
“জ্বি মা।”
তিনি ইনার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। বললেন,
“তিতিলের রুমে যা। গিয়ে ওকে ডেকে আন।”
ইয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। তাকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইনা মাথা ঘুরিয়ে হাসল। রেহেলা বেগম বললেন,
“কি হলো যা।”
ইয়াদ কিছুক্ষণের জন্যে চুপ থেকে বলল,
“আমি কেন যাবো মা?”
“তোকে বলছি তাই।”
“হিমা কে বলো যেতে।”
“নারে ভাইয়া তুমি যাও। আমার পা গুলি আজ ব্যথা করছে হাটতে হাটতে।”
“তুই আবার কখনো হাটলি?”
“এতকিছু জানি না তোমাকে মা যেতে বলছে যাও।”
ইয়াদ আর কিছু বলল না। নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল। আজ তো মেয়ে কে সে দেখবেই। না ফিরলে জোর করে হলেও দেখবে। এই দম বন্ধকর অস্থিরতা নিয়ে তো থাকা যায় না। ইয়াদের ভেতর টা কেমন যেন করছে। থেমে থেমেই হৃদয়টা কম্পন দিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে এখনি বুঝি ওটা ফাটবে এটম বোমের মতো। ঢোক গিলে সে এগিয়ে গেল।
দরজা ভেতর থেকে খোলা ছিল। শুধু চাঁপ দিয়ে লাগানো। ইয়াদ ফুস করে নিশ্বাস মাটিতে ছেড়ে দিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল। কিন্তু ঘর পুরো ফাঁকা। ইয়াদ মৃদু পায়ে আরো এগিয়ে গেল। পা বাড়িয়ে দিয়েও থমকে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে ধক করে আওয়াজ হলো। ধুকধুক ধুকধুক এখনো শব্দ হচ্ছে। শরীরে শিরায় শিরায় প্রবল গতিতে কারেন্টের মতো কিছু একটা দৌড়ে যাচ্ছে। ইয়াদের হাত থেকে ফোন টা ধপ করে পড়ে গেলো।
শব্দ হতেই তিতিল পিছন ফিরে তাকায়। তোয়ালে দিয়ে ভিজে চুল মুছছিল ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে। পিছন ফিরে ইয়াদ কে দেখে থমকে গেল একদম। ইয়াদের নিশ্বাস এবার আটকে এলো। অপলক চোখে সেই মেয়েকে সে দেখছে। মোহনীয় তরুণী এবার তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে গাঢ় পেয়াজি কালার একটা জামা। লালরং এর পায়জামা। হাতে তোয়ালে আর ভিজে লম্বা চুল গুলি কাঁধের এক পাশে এসে থমকে আছে। চিকনচাকন গঠনের শরীরে জামা একদম এঁটে রয়েছে গায়ে ওড়না বলতে নেই। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয়ে গিয়েছে ইয়াদের। সদ্য কারেন্টে শক খেলে যেমন হয় এখন তার ওমন লাগছে। বহু চেষ্টায় ঢোক গিলল ইয়াদ। হৃদয়ের ধ্বনি প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে মুখরিত করে তুলছে পরিবেশ।
তিতিল তো একদম জমে গেছে বরফে। শ্বাস আটকে আটকে আসছে। ঘনঘন চোখের পাতা ফেলার পর যখন বিষয়টা বুঝল তখন সে নিজের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে বিছানা থেকে ওড়না নিয়ে মাথায় জড়িয়ে নিল। একদম যেন গুটিয়ে গেছে মেয়েটা। আড়চোখে আবার তাকাল ইয়াদের দিকে। ইয়াদ বাস্তবে আছে না অন্য কোনো জগতে আছে তা বুঝার ক্ষমতা আপাদত তার নেই। অত্যন্ত প্রবল এক ঘোরে আছে সে।
তিতিল গুটগুট পায়ে যেতে যেতে অনেকটা দূরে চলে গেছে। নিচ থেকে ইনা আপুর গলা শুনে ইয়াদের ঘোর কাটল। তিতিলের দিকে তাকিয়ে নিচ থেকে সে ফোন হাতে তুলে নিল। তিতিল তখনো পিছন ফিরে আছে।
ইয়াদ কি বলে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াদ চলে গেছে ভেবে তিতিল পিছন ফিরল। ঘোমটার ভেতর থেকে কপালের দুই পাশের ছোট চুল গুলি মুখে এসে পড়ছে মেয়ের। কড়া এক শিহরণ বয়ে গেল ইয়াদের মাঝে। কাঁপন ধরেছে হৃদয়ে। তিতিল আবার ফিরে গেল।
ইয়াদ “তিতিল” বলতেই সর্বাঙ্গে কেঁপে উঠল মেয়ে টা। চোখ বন্ধ করে নিয়েছে সাথেসাথে। বুকটা ধকধক করছে। তিতিল বুকে হাত চেঁপে ধরে ঢোক গিলল। জবাব দেওয়ার শক্তি তার নেই।
“মা ডাকছে নিচে যাওয়ার জন্যে। এখুনি যেতে বলল।”
ইয়াদ চলে গেল। যাওয়ার আগে আবার পিছন ফিরে তাকিয়ে মোহনীয় মায়াবি তিতিল কে দেখল।
তিতিল যখন দেখল ইয়াদ চলে গেছে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। দূরে থাকতে চেয়েও কেন পারছে না। বারবার কেন তার সামনে চলে আসছে লোকটা?
মায়ের কথা ফেলতে পারবে না বলে তিতিল মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে নিচে গেল। চুপচাপ খাবার দিচ্ছিল সবাই কে। তিতিল বারবার লোকটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায়ে আছে। কথায় আছে না “কায়া দেখলে মায়া বাড়ে।” তিতিলের হয়েছে সেই দশা।
ইয়াদ কি খাবে? আড়চোখে সে তিতিল কে দেখা নিয়ে ব্যস্ত। অদ্ভুত একটা মায়া আছে মেয়ের মুখে। যার ফলে তাকে বারবার টানছে ওর দিকে। ইয়াদ প্লেটে হাত নাড়াচাড়া করছে। চোখ দুটি তিতিলের উপর নিবদ্ধ।
রেহেলা বেগম খাবার খাচ্ছেন আর ছেলের দিকে তাকাচ্ছেন। ইনা আর হিমাও বিষয়টা খেয়াল করছে। হিমা তো ঠোঁট টিপে হাসছে। ইনাকে খুশি নয় চিন্তিত দেখাচ্ছে। রেহেলা বেগমও খুশি মনে মুচকি হেসে যাচ্ছেন ছেলের কান্ড দেখে। রেহেলা গলা কাশলেন। ইয়াদ মাথা নুয়িয়ে আনল।
“তিতিল।”
“বলুন আম্মা।”
রেহেলা বেগম চুপ করে রইলেন। ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আজ থেকে তুমি আগের রুমে ইয়াদের সাথেই থাকবে।”
এই কথা শুনে বিস্ময় হতবাকের সর্বোচ্চ আসমানে পৌঁছেছে সে। হাত থেকে তরকারির বাটিটা ধপ করে নিচে পড়ে ঝনঝন আওয়াজে চারপাশ নিশ্চল করে দিল।
চলবে♥
(কাল ব্যস্ত থাকব হয়তো। গল্প দিতে পারব না। দুঃখিত! কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না)