ইস্ক পর্ব-৮

0
1810

#ইস্ক
#সাদিয়া


মায়ের কথায় ইয়াদও যে বেশ অবাক হয়েছে তা দেখেই তাকে বুঝা যাচ্ছে। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে সে।
তিতিলের মাথায় কেউ যেন আকাশ টা ফেলে দিয়েছে। রেহেলা বেগম কি চাচ্ছেন সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। উনি কি তার কষ্ট টা একটি বারও বুঝার চেষ্টা করছেন না? কান্না আসছে তিতিলের। জোর করে কথা ফুটাল সে।
“আম্মা আমি..”

“তোর কিছু বলার আছে তিতিল?”

“আ আমি ও ঘরে থাকতে পারব না।”

“কেন পারবি না? এতদিন কি তুই ও ঘরে ছিলি না?”

“ছিলাম কিন্তু..”

“কিন্তুর কি আছে এখানে?”

তিতিল কিছুক্ষণ চুপ ছিল। সাহস নিয়ে বলেই ফেলল,
“এতদিন তো ও ঘরে আমি একা ছিলাম। কিন্তু এখন আপনার ছেলে..”
থেমে গেল সে। আর কথা আসছে না মুখ দিয়ে। তিতিল আড়চোখে তাকাল ইয়াদের দিকে। সঙ্গেসঙ্গে নামিয়ে নিল চোখ। ইয়াদ এতটা সময় তিতিলের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল। এতদিন তার ঘরেই ছিল ও? কিন্তু এখন থাকতে না চাওয়ার কারণ সে? ভেবেই কপাল আরো কুঁচকে এলো ইয়াদের।

“এত কিছু আমি শুনতে চাই না। যা বললাম তাই যেন হয়” বলে রেহেলা বেগম চলে গেলেন। সবাই তখনো হা করে চুপ ছিল। তিতিলের চোখ দিয়ে এবার পানি দেখাই দিল। ইয়াদ নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ওই লাল লাল চোখের দিকে। তিতিল একবার তার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে উপরে চলে গেল। পরিবেশ টা মুহূর্তেই যেন উল্টো রূপ ধারণ করেছে।

ইনা ইয়াদ হিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি উঠছি। খাবার টা শেষ করে নে” বলে সে চলে গেল অফিসে। ইয়াদের ভেতরটা বারবার টনটন করছে। ভাত রেখে সে উঠে গেল। হিমা হা করে বসে আছে।

ইয়াদ তিতিলের রুমের সামনে গেল। দেখে দরজা বন্ধ। সে একবার আওয়াজ করল দরজায়। তিতিল তখন শুয়ে চাঁপা কান্নায় ব্যস্ত।

“তিতিল দরজাটা খুলো।”

“….

“তিতিল আমি দরজা টা খুলতে বললাম তোমায়।”

“আপনি এখন এখান থেকে যান। আমাকে আমার মতো একটু একা থাকতে দিন।”

ইয়াদ কিছু বলতে যেয়েও বলল না। দরজায় পাঞ্চ করে চলে গেল। ওমন বিকট শব্দে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে তিতিলও থমকে যায়। মনে মনে কত চিন্তা করে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছে। বিপদে ধৈর্যের কথা তো কুরআনে কত বলা আছে। কিন্তু সে নিজেকে এই মুহূর্তে শান্ত করতে পারছে না। তবুও মন টা কে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তিতিল। ইশশ সেদিনের মতো যদি একটু মন খুলে কাঁদা যেত!

ইয়াদের ভীষণ পরিমান রাগ হলো। নিজেকে সামলাতে পারছে না। ওইটুক একটা মেয়ে কি না তাকে ইগনোর করে? আরে কত মেয়ে কে একবার হাই বললেই সুরসুর করে চলে আসবে আর সে কিনা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে? নিহাত সে এমন ধরনের ছেলে না। দাঁত গুলি লেগে লেগে আসছিল ইয়াদের। অনেক ঘামছে সে। শরীর তো পুরো জ্বলছে।

—-
পড়ন্ত গোধূলি চলে তখন। তিতিল ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তটায় ছাদে দাঁড়ালে তার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে মনে। আকাশের দিকে এক মনে চেয়ে আছে তিতিল। অনেকে হয়তো জানেই না বিশ্ব নবী (সঃ) আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। ইয়াদ বাইক নিয়ে ভেতরে ঢুকেছে সবেমাত্র। রাগে বাইক নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল সে আর এখন এলো। উপরে তাকাতেই তিতিল কে আনমনে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে নিল। হর্ন বাজাতেই চমকে উঠল তিতিল। নিচে তাকিয়ে দেখতে পেল ইয়াদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের ভাবই যেন পাল্টে গেছে লোকটার। কপালে ভাঁজ পড়ল তার। ইয়াদ চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ভেতরে গেল। তিতিল বুঝল না কিছু।

সন্ধ্যে হয়ে এলো তিতিল তখনো ওখানে ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে তখন খানিক লালাব রং ধারণ করেছে। কি অদ্ভুত লাগছে তখন আসমান টা যেন লাল রং নিজের মতো করো আঁচড় কেটে গেছে। হঠাৎ কারো গলা শুনে হকচকিয়ে তিতিল পিছন ফিরল। ইয়াদ কে দেখে চমকে গেছে পুরো।
মুখের ভাব কঠিন করে ইয়াদ বলল,
“আমাকে এক কাপ কফি দিয়ে আসবে রুমে।”

কি ভেবে তিতিলও বলে উঠল,
“ফরিদা আন্টি তো..”

তার কথা শেষ হওয়ার আগে ইয়াদ পিছন ফিরল রাগি মুডে। চলে যেতে নিয়েও থেমে তিতিলের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিটে বলল,
“আমি ফরিদা আন্টির হাতে কফি খাই না। যা বললাম করো।”
আর দাঁড়াল না ইয়াদ ওখানে।

নির্বোধের মতো দাঁড়িয়ে রইল তিতিল। ইয়াদের ব্যবহারের আগামাথা পেল না সে। ‘লোকটা কি আমার উপর জোর খাটিয়ে গেল নাকি?’ ভেবে সে নিচে নামল চটজলদি।

কফি বানিয়ে তিতিল ফরিদা আন্টি কে দিয়ে ইয়াদের রুমে পাঠাল সেটা।

“ইয়াদ আব্বা আপনের কফিডা।”
ইয়াদ ল্যাপটপে ব্যস্ত ছিল। গলা শুনে সামনে মাথা তুলে তাকিয়ে ফরিদা আন্টিকে দেখে কপাল কুঁচকে এসেছে তার। জিজ্ঞেস করল,
“তুমি বানিয়েছো কফি?”

“না আব্বা তিতিল মা বানাইছে।”

ইয়াদ আর কিছু বলল না। রাগে হাত মুঠো করে আনল। দাঁতে দাঁত চেঁপে ধরেছে নিজের। চোখ বন্ধ করে নিয়ন্ত্রণ করার অভিপ্রায়ে বলল,
“রেখে যাও।”

ফরিদা আন্টি কফি রেখে চলে গেল। ইয়াদের মাথাটা ধরেছে। কফির দিকে তাকালেই রাগ হয় তবুও ব্যথায় কফি হাতে তুলে নিল। চুমুক দিতেই প্রশান্তি পেল। দারুণ হয়েছে কফির স্বাদ। সব কিছু পারফেক্ট। ইয়াদ ব্যালকুনিতে চলে গেল আঁধার হয়ে এসেছে সব কিছু। মন্থর হাওয়া বইছে সাথে ওমন স্বাদের কফিতে ইয়াদের বেশ ভালো লাগছে পরিবেশ টা। মস্তিষ্কের ভেতর পর্যন্ত যেন হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

রাতের খাবারের সময় তিতিল সবার সাথেই খেলো। রেহেলা বেগম উঠার আগে দুপুরের বলা কথাটা আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন। তিতিল বা ইয়াদ কিছু বলেনি। ইয়াদ চোখ তুলে তিতিল কে একপলক দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। তিতিল বড্ড অস্বস্তি বোধ করছে। বিব্রতকর এক অবস্থা!

ইনা খাবার থেকে উঠার আগে তিতিলের দিকে তাকিয়ে বলল “মায়ের কথাটা মনে রেখো তিতিল।”
স্মিত হেসে ইনাও চলে গেল। ইয়াদ কিছু বলল না একবার তিতিলের দিকে তাকিয়ে চলে গেল। তিতিল সব গুছিয়ে ফ্রিজ থেকে পানির বোতল হাতে নিয়ে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল।

নিজেদের ছোটখাটো একটা কোম্পানি আছে। ইয়াদের বাবার মৃত্যুর পর ইনা আর সে মিলেই চেষ্টা করেছে বড় করাতে। কিন্তু হুট করেই সব সম্ভব হয় না আঙ্গুল ফুলেও কলাগাছ হয় না। বিয়ের পর তো ইয়াদ রেগে বিদেশই চলে গেছে। কিন্তু ওখানে গিয়ে অনেক বড় একটা কোম্পানি তে জব পায় সে। এখনো সেটায় যুক্ত আছে। যা কাজ করার অনলাইনে করে দেয়। আর তাদের কোম্পানি টা এখন ইনা নিজে একাই সামলায়।

ইয়াদ ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিল। কখন ১২ টার উপরে হয়ে গেল সে বুঝতে পারেনি। ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘরে তাকিয়েও যখন তিতিল কে দেখতে পেল না তখন খানিক রাগ হলো তার। তবে কি আসবে না সে? ইয়াদ ল্যাপটপ কোল থেকে রেখে এগিয়ে গেল। দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিল। তিতিল যে রুমে থাকে সে রুম থেকে আলো আসছে। মনোক্ষোভ নিয়ে সে এগিয়ে গেল। নিঃশব্দে দরজায় স্পর্শ করতেই বুঝতে পারল ভেতর থেকে লাগানো।
‘তার মানে মেয়ে টা মার কথা অমান্য করে এই রুমেই থাকতে চাইছে। আমাকে ইগনোর করার সাহস আসে কোথা থেকে এটাই দেখব আজ। আসার পর থেকেই দেখে আসছি এড়িয়ে যাও।’

ইয়াদ রাগে দরজা ধাক্কা দিল। আচমকা এত শব্দ পেয়ে ভয়কে গেল তিতিল।
“কে?”

“দরজা খুলো।”

“….

“দরজা খুলো।”

“আ আপনি..”

“তোমাকে দরজা খুলতে বলছি না?”

না দেখলেও তিতিল কণ্ঠস্বরে স্পষ্ট ওপাশের লোকটার আক্রোশের মাত্রা অনুধাবন করতে পারল। কি হবে ভেবেই তিতিলের কলিজা শুকিয়ে এলো।

ইয়াদ এবার খুব রেগে গেছে। অনেক জোরে দরজা ধাক্কা দিয়ে উচ্চ গলায় বলল,
“তিতিল দরজা খুলো।”

তিতিল কাঁপা শরীরে এগিয়ে দিয়ে দরজা খুলে দিল। রাগের মাত্রা বাড়তি ছিল বলে দরজা খুলতেই ইয়াদ….

চলবে♥
(গঠনমূলক মন্তব্য করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here