#উত্তরণ
পর্ব_১৮
আজ সবার মনেই খুশির আমেজ۔۔ সমরেশ খুশি কারণ সে একপ্রকার নিশ্চিত এই উজান তার হারিয়ে যাওয়া রাজা, শুধু প্রমানের অপেক্ষা۔۔ গায়েত্রী দেবী খুশি কারণ তিনি সমরেশ কে খুশি দেখে খুশি. তাছাড়া উজান কে বার বার তাঁর নিজের হারিয়ে যাওয়া নাতিই মনে হচ্ছে. উনিও চুপ করে আছেন প্রমানের অভাবে. অবশ্য সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করতে পারতেন কিন্তু উনি সেটা পরবর্তী সাক্ষাতের জন্য তুলে রেখেছেন, আজ বরং সবাই যে ভাবে আনন্দ করছে সেভাবেই করুক. উজান খুশি কারন সে আজ অনেক গুলো বছর পর নিজের ফ্যামিলির সাথে সময় কাটাতে পারছে তার অন্যতম প্রিয় মানুষটার জন্মদিনে. আর হিয়া খুশি কারণ তার পছন্দের মানুষ গুলো আজ খুশি, কে জানে এটাই হয়তো ওর এদের সাথে “The last supper”….
অনেকদিন পর উজান অনন্ত কাকুর হাতের রান্না খেলো, মনটা ভোরে যাচ্ছে ওর. এমনিতে ও স্পাইসি খাবার খায়না, কিন্তু আজ উজান সম্পূর্ণ ভাবে খাওয়াতে মনোনিবেশ করে.
গায়েত্রী দেবী : হ্যাঁ রে হিয়া তার কি খবর?
এই “তার কি খবর ” এর মধ্যে কিছু একটা ছিল যেটা উজানকে খাওয়া থেকে বিরত করে. উজান গায়েত্রী দেবীর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে ব্যাপারটা.
হিয়া: কার কথা বলছো?
গায়েত্রী দেবী : আরে۔۔۔۔۔۔সেই যে۔۔۔۔۔۔۔কি যেন নাম۔۔۔۔۔সমুর প্রমোশনের পার্টিতে۔۔۔۔۔ তোকে চোখে হারাচ্ছিল۔۔۔۔ (ঠাম্মির গলায় কৌতুকের সুর)
হিয়া: ওহ۔۔۔(আবার খেতে শুরু করে)
গায়েত্রী দেবী : বল না নাম টা۔۔۔۔۔۔সমু তু্ই বল তো۔۔
সমরেশ হেসে: সেরকম তো খুঁজলে অনেকে আছে۔۔۔۔۔ তুমি কার কথা বলছো?
হিয়া: ঠাম্মি উদ্দীপ্তর কথা বলছেন স্যার.
সমরেশ: ওহ۔۔۔ তা হঠাৎ উদ্দীপ্তর কথা মনে পড়লো যে?
গায়েত্রী দেবী : আজ টিভি তে একটা ছেলেকে দেখলাম, উদ্দীপ্তর মতোই দেখতে তাই۔۔۔ তাছাড়া উদ্দীপ্ত কিন্তু হিয়াকে শুধু পছন্দ করে না, ভালোও বাসে বলে মনে হয়۔۔ ওই যে বললাম চোখে হারায়۔۔
হিয়া গায়েত্রী দেবীর কথায় হাসে. গায়েত্রী দেবী এই বিষয়টা নিয়ে হিয়ার লেগপুল করে চলে. সমরেশ ও মাঝে মাঝে তাল ঠোঁকে তার মায়ের সাথে۔۔
হঠাৎ করেই উজানের কাছে পরিবেশটা বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়. রান্নাগুলোর স্বাদ যেন আগের মতো আর পাচ্ছেনা. চিবুক দৃঢ় হয়ে ওঠে নিজের অজান্তেই. একটু আগের সব ভালো লাগাটুকু যেন হঠাৎই বদলে যেতে থাকে.
উজান: স্যার এবার আমাকে উঠতে হবে.
সমরেশ অবাক : একি۔۔۔۔খাওয়ার মাঝেই উঠে পড়বে? শেষ করে যাও.
গায়েত্রী দেবী : তোর শরীর খারাপ করছে নাকি রে۔۔ এই যাহ, তু্ই বলে ফেললাম..
উজান: ঠিক আছে ঠাম্মি কোনো ব্যাপার না۔۔
গায়েত্রী দেবী নিজের বিস্ময় দক্ষতার সাথে চাপা দিয়ে বলেন: ব্যাপার না বললেই হবে? খাবার ফেলে ওঠা আমি একদম পছন্দ করিনা জানিসনা?
উজান কিছু বলে না, তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করতে ব্যস্ত হয়ে পরে. হিয়া উজানের এই হঠাৎ পরিবর্তনের কারন বুঝে উঠতে পারেনা. অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সে উজানের দিকে.
উজান এবার হিয়া কে লক্ষ্য করে ঝাঁঝিয়ে ওঠে: আমার দিকে হাঁ করে কি দেখছেন? যদি আমার সাথে যেতে হয় তাহলে ফালতু কথা না বলে চটপট খাওয়া শেষ করুন.
হিয়া কিছু না বলে খেতে শুরু করে. সে উজানের মেজাজের এই হঠাৎ হঠাৎ পরিবর্তনে এখন অভ্যস্ত. খাওয়া শেষ হলে উজান সমরেশ কে বিদায় জানিয়ে গায়েত্রী দেবীকে বিদায় জানাতে যায়.
গায়েত্রী দেবী: এই বুড়িকে মাঝে মাঝে এসে দেখে যাস বাবা.
উজান: আমি আসবো۔۔۔۔তুমি নিজের খেয়াল রেখো.
গায়েত্রী দেবী মাথা নাড়েন. হিয়া ওনাকে জড়িয়ে ধরে তারপর দুজনকে প্রণাম করে উজানের সাথে বেরিয়ে পরে.
ওরা এতটাই ব্যাস্ততার মধ্যে বেরিয়ে যায় যে পেছনে ফেলে আসা দুটো মানুষের মুখের প্রচ্ছন্ন হাসিটুকু লক্ষ্য করেনা.
ওরা বেরিয়ে যেতেই গায়েত্রী দেবী সমরেশের হাতটা চেপে ধরে বলে: সমু তু্ই শুনলি?
সমরেশ জল ভরা চোখে মাথা নাড়িয়ে বলে: হ্যাঁ মা۔۔۔ আমার মন জানত ও আমার রাজা. কিন্তু বাকি খোঁজ খবরগুলো পাওয়ার আগে ওকে এই নিয়ে ঘাঁটানো যাবেনা (মনে মনে: বাসবী কেমন আছে জানতে হবে)
গায়েত্রী দেবী: প্রথমে কিরকম ব্যবহার করছিলো দেখেছিস? মেপে মেপে কথা বলছিলো যাতে ধরা না পড়ে যায়. তারপর হঠাৎ বিরক্ত হওয়ায় আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছে۔۔۔۔ ঠাম্মি, তুমি, খেয়াল রেখো۔۔۔
দুজনেই হেসে ওঠে۔۔
গায়েত্রী দেবী : আর একটু থাকলে পারতো, কিসের যে এতো তাড়া۔۔۔
সমরেশ একটু চিন্তা করে : যতদূর মনে হচ্ছে এর জন্য বোধহয় তুমিই দায়ী মা.
গায়েত্রী দেবীর চোখে অনেকগুলো প্রশ্ন চিহ্ন ভেসে ওঠে সমরেশের কথা শুনে.
সমরেশ: ভাবো ভাবো۔۔۔ (বলে ওখান থেকে মুচকি হেসে চলে যায়)
গায়েত্রী দেবী ভাবতে থাকেন: আমি আবার কি করলাম রে বাবা?
ওদিকে সমরেশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হিয়া কে একা পেয়ে উজানের রাগ অন্য মাত্রা নেয়. কিছুটা এগিয়ে সজোরে ব্রেক কষে. উজান গাড়ি থেকে নেমে পরে গাড়ির বনেটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রাগে ফুলতে থাকে.
উজানের ব্যবহারে হিয়া আজ বারং বার অবাক হচ্ছে. হিয়াও গাড়ি থেকে নেমে পড়ে উজানের পাশে এসে দাঁড়ায়.
হিয়া: স্যার۔۔۔
উজান রেগে: ইডিয়ট
হিয়া অবাক হয়ে: এবার কি করলাম?
হিয়ার দিকে তেড়ে যেতে গিয়েও উজান থমকে যায় হিয়ার প্রশ্নের কাছে. ভেতরে ভেতরে অগ্নুৎপাত ঘটছে ঠিকই কিন্তু কারণ অজানা. তারপর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে স্টার্ট দেয়. হিয়া প্রায় দৌড়ে গাড়িতে ওঠে. উজানের দিকে চোখ পড়তে দেখে ওর দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আছে. উজানের দৃষ্টি অনুসরণ করে ওর ভুল টা বুঝতে পারে. তাড়াতাড়ি সিটবেল্ট টা আটকে নেয়. জাগুয়ার ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলে….
দেখা যাক হিয়ার প্রশ্নের কাছে কেনই বা উজান থমকে যায়–আর উজানের চোখে হিয়া কি এমন দেখলো–যার কারণে নিজের ভুলটা—বুঝতে পারলো!!!!