#উত্তরণ
পর্ব_২১
সুষমা দরজা খুলে হিয়ার সাথে উজানকে দেখে বেশ অবাক হয়. আজ পর্যন্ত সুষমা শুধুমাত্র সোনাল ছাড়া আর কাউকেই দেখেনি হিয়ার ফ্ল্যাটে, তাই হঠাৎ উজানের আবির্ভাব তাকে খুবই অবাক করে.
হিয়া উজান ভেতরে আসে. হিয়া সুষমাকে সবটা বুঝিয়ে বলার পর সুষমা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে. খুব রাগ হয় ওর হিয়ার উপর.
সুষমা: এতো কিছু হলো আর আমাকে একবারও জানবার কথা ভাবলে না হিয়া দিদি?
হিয়া সুষমার পাশে বসে: তুমি ভয় পেয়ে যেতে তাই বলিনি সুষমা দি
সুষমা: আর তোমার যদি কিছু হয়ে যেত, তাহলে? কি করতাম আমি? কোথায় যেতাম তোমাকে খুঁজতে?
হিয়া: তুমি শান্ত হও. দেখো, আমি তো ঠিক আছি۔
সুষমা: সে তো ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জীর জন্য. তুমি এক্ষুনি পুলিশে খবর দাও.
হিয়া: পুলিশ সব জানে কিন্তু তারা কিচ্ছু করতে পারবেনা.
সুষমা: তাহলে? এ۔এক কাজ করি হিয়া দিদি۔۔۔ চলো, আমরা আমার গ্রামে চলে যাই কিছুদিনের জন্য. তোমার কষ্ট হবে ওখানে, কিন্তু সে হোক, সব মিটলে তখন আবার ফিরবো. হ্যাঁ, এটাই ঠিক হবে۔۔ তুমি এক্ষুনি ছুটির এপ্লিকেশন দাও অফিসে. আমি তোমাকে নিয়ে আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনা. কালই চলে যাবো আমরা (এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে যায়)
উজান এতক্ষন চুপ ছিল, এবার বলে: হিয়ার কিছু হবেনা. আপনি একটু শান্ত হন প্লিজ.
সুষমা: শান্ত হবো? আপনি এটা বলছেন? এতো কিছু ঘটে গেলো۔۔۔۔
উজান: যদি আপনারা আমার কথা শুনে চলেন তাহলে কিছু হবেনা.
সুষমা: যদি আপনি হিয়া দিদি কে বাঁচাতে পারেন তাহলে আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো. দিদিও তাই করবে,আমি কথা দিচ্ছি. তবে আপনাকেও কথা দিতে হবে যে আপনি দিদির কিচ্ছুটি হতে দেবেন না.
উজান মাথা নেড়ে জানায় ও হিয়ার কিচ্ছু হতে দেবেনা.
উজান সুষমাকে সব বুঝিয়ে দেয় কি করতে হবে. তারপর হিয়া নিজের প্রয়োজনের জিনিসপত্র আর ওর লাগেজ নিয়ে উজানের সাথে বেরিয়ে আসে. সুষমা কে বলেনি হিয়া যে ও উজানের ফ্ল্যাটে আজকে থাকবে, সুষমা যদি ওদের ভুল বোঝে. বলেছে অফিসের স্টাফ রুমে থাকবে আজকের রাতটা. কাল ভোরে বেরোতে হবে তাই ও কোনো রিস্ক নিতে চায়না. ফেরার পর সব কিছু সুষমাকে বুঝিয়ে বলবে.
উজানের ফ্ল্যাটে এসে হিয়া ওর পূর্ববর্তী রুমেই ওঠে. ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে উজান কিচেনে. হিয়াও এসে দাঁড়ায় সেখানে. উজান দেখে হিয়ার মুখ এখনো শুকনো.
উজান: আপনি রাত্রে কি খাবেন? অবশ্য দুপুরের খাবার গুলো রয়ে গেছে চাইলে খেতে পারেন, অন্য কিছুও খেতে পারেন. আমাকে বলে দিলে আমি সেই মতো ব্যবস্থা করব.
হিয়া: আমার কিছু ইচ্ছে করছেনা. আসলে দুপুরে এতো বেশি খেয়ে ফেলেছি۔۔۔
উজান: কি খাবেন সেটা বলুন
হিয়া: এক গ্লাস জুস
উজান: আপনাকে নিয়ে আর পারিনা. যান রুমে যান. ঠিক সময়ে ডেকে নেবো (উজান ব্যস্ত হয়ে পরে কিচেনে)
হিয়া: স্যার?
উজান ফিরে তাকায় হিয়ার দিকে, চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি.
হিয়া: কিছুনা۔۔۔থাক (বলে চলে যায় নিজের রুমে)
উজান হিয়ার যাবার পথে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আবার নিজের কাজে মন দেয়.
হিয়া ভাবতে থাকে ওর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে, কিন্তু কোনো কুল কিনারা পায়না. এমন সময় দরজায় নক হয়, হিয়া গিয়ে দরজা খোলে. উজান দাঁড়িয়ে, হাতে খাবারের ট্রে. হিয়া সরে এলে উজান ভেতরে এসে সেন্টার টেবিলে ট্রে টা রাখে.
হিয়া: স্যার এগুলো কি?
উজান: ভেজ স্যান্ডউইচ, চিকেন স্যালাড আর আপনার জুস.
হিয়া: এতো খাবার কে খাবে?
উজান: আমরা দুজনে
হিয়া: আমার খেতে ইচ্ছে করছে না.
উজান: আপনাকে কে বললো যে আমি সব সময় আপনার ইচ্ছের সম্মান রাখবো?
হিয়া: অদ্ভুত লোক তো মশাই আপনি. খাবো আমি আর ইচ্ছে আপনার?
উজান: খান নাহলে জোর করে খাইয়ে দেব۔۔۔۔۔۔সিদ্ধান্ত আপনার
হিয়া গজগজ করতে থাকে: মহা বাজে লোক আপনি, খালি আমার উপর জোর খাটান. দাঁড়ান একবার কাকিমার সাথে কথা হোক, সব বলবো.
উজান: কি বলবেন?
হিয়া: বলবো আপনি শুধু বদরাগী, বদমেজাজী আর খিটখিটেই নন, আপনি বদ্ধ উন্মাদ.
অন্য সময় হলে এসব শুনে উজান হিয়ার উপর রেগে যেত কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুতেই রাগ হয়না ওর. উজান হিয়ার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসে. হিয়া উজানের কাছে আসায় আবার বিকেলের কথা মনে পরে যায়. উজানের চোখে চোখ রাখতে পারেনা, নিজে থেকেই ওর চোখ দুটো নেমে যায়.
উজান: কি বললেন আর একবার বলবেন?
হিয়া: ক۔কোই কি۔কিছু না۔۔
উজান: কিছু তো বললেন. আমি۔۔۔۔কি?
হিয়া: আমার ম۔মনে নেই (বলেই হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উজানের থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়)
হিয়ার ব্যবহারে হাসির ঝিলিক খেলে যায় উজানের ঠোঁটে. সেটা আড়াল করে বলে۔۔
উজান: ওকে, তাহলে কি করবেন বলে ঠিক করলেন? নিজে খাবেন না আমি۔۔۔۔?
হিয়া আর কিছু না বলে চুপচাপ এসে একটা স্যান্ডউইচ তুলে নেয়. উজান স্মিত হাসে.
খাওয়া শেষ হলে উজান ট্রে টা তুলে নিয়ে কিচেনে রাখতে যায়, একটু বাদে আবার ফিরে আসে.
উজান: নিন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন. তিনটে নাগাদ বেড়োবো, লেট হবেন না.
উজান চলে যায়. হিয়া শুয়ে পড়ে, যদিও ওর ঘুম আসতে চায়না. মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করে ইউ টিউবে রবীন্দ্র সংগীত চালায়. রেজওয়ানা চৌধুরীর সুরের মূর্ছনা হিয়ার মনেও দোলা দেয়. আজ সারাদিন উজানের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাসতে থাকে চোখে. কখন চোখ লেগে যায় জানতেও পারেনা. আজ অনেকদিন পর হিয়া স্লিপিং পিলের সাহায্য ছাড়াই ঘুমোলো.
ওদিকে রেজওয়ানা চৌধুরীর গান ঘরের দেওয়াল ভেদ করে ভাসতে থাকে. উজানের ঘরের দরজা খোলা থাকায় কিছুটা হালকা ভাবে উজানের কানেও পৌঁছোয়. উজান বিরক্ত হয় এই ভেবে যে হিয়া এখনো জেগে. বিরক্ত হয়েই হিয়ার রুমে আসে উজান. কাছে এসে দেখে হিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে. উজান মোবাইল টা বন্ধ করেনা এক সময় নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে ভেবে. চাদরটা টেনে দেয় হিয়ার গায়ে, তারপর হিয়ার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়.
উজানও অ্যালার্ম সেট করে শুয়ে পড়ে. ওর মনও গানের সুরের সাথে দুলতে থাকে. একসময় উজানও ঘুমিয়ে পড়ে….
দেখা যাক উজানের এই অলিখিত অধিকার বোধই—কি নতুন সম্পর্কের প্রথম অঙ্গীকার–!!