উত্তরণ পর্ব-৩

0
1135

#উত্তরণ
পর্ব_৩

মি:দত্ত উজানকে আরো অনেক অফিসার, ক্যাপ্টেন, ফার্স্ট অফিসার, এয়ার হোস্টেস, ক্রু মেম্বার্সদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন. লম্বায় ছ’ফুট এর একটু বেশি, শ্বেতশুভ্র, জিম করা সুদর্শন উজানকে ঘিরে অনেকের চোখেই তখন বিরাট কৌতূহল. সব থেকে যেটা বেশি আকর্ষণীয় তা হলো ওর চিবুকের দৃঢ়তা আর ভীষণ শান্ত দুটো চোখ.

উজান তখন বেশ কয়েকজন পাইলট দের সাথে ড্রিংক শেয়ার করছিলো, যেখানে উচ্চপদস্থ নিম্নপদস্থ অনেকেই উপস্থিত ছিল. তার পানের মাত্রা বরাবরই কম, সে জানে তাকে সবসময় নিজের আয়ত্তে থাকতে হবে. সবরকম পরিস্থিতির জন্য সে সদাসর্বদাই তৈরী.

হঠাৎ ক্যাপ্টেন রজত এয়ার হোস্টেসদের একটা গ্রুপকে দেখিয়ে বিশ্রী ইঙ্গিত করে. উপস্থিত প্রায় সকলেই হেসে ওঠে. হঠাৎই ক্যাপ্টেন রজতের দৃষ্টি যায় উজানের দিকে, দেখে উজান একদৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে আছে. ক্যাপ্টেন রজতের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে. ততক্ষনে আরো বেশ কয়েক জোড়া চোখও অনুসরণ করে ক্যাপ্টেন রজতকে, তারাও ঘাবড়ে যায়. মুহূর্তে ওদের হাসি থেমে পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়. উজান কিছু না বলে বেরিয়ে আসে ওখান থেকে, ক্যাপ্টেন রজতও হাঁফ ছেড়ে বাঁচে۔۔

ক্যাপ্টেন রজত: (মনে মনে:ক্যাপ্টেন উজান মোটেই সুবিধার লোক না. ওর থেকে দূরে থাকাই ভালো. ওই ঠান্ডা দৃষ্টি কোনো সাধারণ মানুষের হতেই পারেনা, পাক্কা খুনির চোখ).

ওখানে উপস্থিত আরো অনেকের মনের মধ্যেও তখন একই ধারণা আনাগোনা করছিল۔

উজানকে একা একটা টেবিলে বসে থাকতে দেখে একজন মহিলা এগিয়ে আসেন. উজান তাকে দেখেই সম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ায়.

উজান: মিসেস পুততুন্ড?

মিসেস পুততুন্ড আপ্লুত: উজান তুমি? বুঝলাম এবার তোমার স্যার আমাকে কি সারপ্রাইজ দেবেন বলেছিলেন. কবে এলে তুমি? তোমার মা কেমন আছেন?

দুজনের কথোপকথন চলতে থাকে. মিসেস পুততুন্ড উজানকে অপত্য স্নেহে দেখেন. ওনাদের একমাত্র ছেলেকে এক্সিডেন্টে হারিয়ে মিসেস পুততুন্ড তখন মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত, সেই সময় উজান হায়দ্রাবাদে জয়েন করে. উজান কে দেখে মিসেস পুততুন্ড কোথাও যেন নিজের হারানো ছেলেকে আবার ফিরে পান.

উজান কথা বলতে বলতে সামনে তাকাতেই হিয়া কে দেখতে পায়. হিয়া আর একজন মহিলা পাইলট এর সাথে কথা বলছিলো. সে হিয়ার কাঁধে হাত রেখে হিয়াকে কিছু বোঝাচ্ছিলো. হিয়া মাথা নাড়িয়ে শুনছিলো কিন্তু তার চোখের উদাসীনতা উজানের দক্ষ চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনা۔

চোখ নাক গায়ের রং এর বিচারে হিয়া তথাকথিত সুন্দরীদের দলে পড়ে না۔ মেয়ে হিসেবে একটু বেশিই লম্বা প্রায় 5’9″, জিম করা পাতলা শরীর, গায়ের রং টাও ঠিক ফর্সা বলা চলেনা, বরং একটু ডাস্কি কমপ্লেক্সেনের, কিন্তু যেটা বিপুল পরিমানে আছে তা হলো ব্যক্তিত্ব. সব কিছু মিলিয়ে হিয়ার মধ্যে এমন কিছু আছে যার জন্য হিয়াকে অগ্রাহ্য করা একপ্রকার অসম্ভব, বিশেষত যখন ও ইউনিফর্মে থাকে. তবে সব ধরণের পোশাকেই হিয়া অনন্যা.

যদিও হিয়ার মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে কিন্তু কোথাও যেন একটা প্রচ্ছন্ন গাম্ভীর্য আছে যেটাকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায়না.

মিসেস পুততুন্ডের সাথে কথা বলতে বলতে বারবার উজানের চোখ হিয়াকেই অনুসরণ করছিলো, কারণটা উজানের কাছেও অধরা.

উজানের সাথে কথা বলতে বলতেই মিসেস পুততুন্ড উজানের পেছনে কাওকে দেখে হাত নাড়েন. উজান ওনাকে অনুসরণ করতে গিয়ে পেছনে ঘোরে তারপরেই ওর মনে হয় পায়ের তোলার মাটিটা যেন হঠাৎই সরে গেল. ভারসাম্য ঠিক রাখতে সামনে থাকা চেয়ার টা আঁকড়ে ধরে ও. ততক্ষনে উজানের ভারসাম্যহীন হওয়ার কারন ওর সামনে এসে উপস্থিত হয়.

মিসেস পুততুন্ড: ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী? ভীষণ খুশি হয়েছি আপনাকে দেখে. আলাপ করিয়ে দি, ইনি ক্যাপ্টেন সমরেশ চ্যাটার্জী এটিসি-কলকাতা হেড, আর ইনি ক্যাপ্টেন উজান চ্যাটার্জী, আজই এখানে জয়েন করলেন.

উজান : (কোনোরকমে নিজের অনুভূতি গুলো চাপা দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে) Good evening Sir..It’s pleasure to meet you…

সমরেশ: (ততক্ষনে কথা বলার শক্তি হারিয়েছে. উজানের বাড়ানো হাতটা শক্ত করে ধরে বলে): Good evening my little boy..

“Little boy” কথাটা শুনে আবারো উজান শক্ত করে চেয়ার টা ধরে. অনেক স্মৃতি একসাথে ভিড় করে আসে ওর চোখের সামনে. সমরেশ তো এই বলেই ডাকতো ওকে. উজানের কাজে আবেগ অনুভূতির ঠাঁই নেই. সে অত্যন্ত দক্ষ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে, কিন্তু আজ বার বার শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সে বিফল হচ্ছে. চোখের জল যেন কোনো না কোনো প্রকারে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে. মিসেস পুততুন্ড ততক্ষনে ওদের একা ছেড়ে দিয়ে অন্য অতিথিদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন.

সমরেশ: তোমাকে আগে থেকে চিনি, তাই না?

উজান: (মুখে হাসি টেনে) মনে হয়না স্যার. এর আগে আপনার মতো মানুষের সাথে আমার কোনো রকম যোগাযোগ হলে আমার মনে থাকতো.

সমরেশ: (নিজেকে সামলে) আসলে তোমাকে দেখে আমার ছেলের কথা মনে পরে গেলো. ওরও নাম উজান. তার ওপর আমাদের সারনেম টাও এক, তাই۔۔۔۔۔۔۔

উজান: (একটু হেসে) ও۔۔۔তা কোথায় আপনার ছেলে?

সমরেশ: জানিনা

উজান: ঠিক বুঝলাম না স্যার

সমরেশ: আমার উজান হারিয়ে গেছে (গলাটা কেঁপে যায়)

উজানের খুব ইচ্ছে করে সমরেশকে সেই ছোট্টবেলার মতো জড়িয়ে ধরতে, বলতে যে সে আবার ফিরে এসেছে. কিন্তু সে নিজেকে আটকে নেয়. এখনো সঠিক সময় আসেনি. এরই মাঝে আর একজন অতিথি আসেন সমরেশের কাছে. উজান “excuse me” বলে বেরিয়ে আসে. সমরেশ সেই ব্যক্তির সাথে কথা বলতে থাকে কিন্তু চোখ ঘুরে ফিরে শুধু উজানকেই খোঁজে۔۔۔

দেখা যাক একই কর্মক্ষেত্রে কোনদিকে মোড় নেয় সমরেশ আর উজানের জীবন….!!

NB:#উত্তরণ FF টা পুরো ভিন্নধর্মী গল্প।বলতে পারেন ছকভাঙ্গা গল্প।আশা করি খারাপ লাগবে না…আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here