#উত্তরণ
পর্ব_৪২
উজানের চোখ বন্ধ, সে চেয়ারে হেলান দিয়ে নিশ্চল হয়ে বসে. যারা ওর কাজের সাথে পরিচিত তারা জানে এখন উজান ধ্যানস্থ. ওর মস্তিস্ক জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজতে ব্যস্ত. এই ধ্যান সহজে ভঙ্গ হবার নয় যতক্ষণ না সে কোনো সমাধানের হদিস পাচ্ছে. মুরুগেশ তখনো কম্পিউটারের মধ্যে ডুবে আছে এই আশায় যদি কিছু ক্লু পাওয়া যায়۔۔۔۔
উজানের ধূসর কোষগুলো অনবরত পারমুটেশন-কম্বিনেশন করে চলেছে. একটা হালকা আভাস পাচ্ছে কিন্তু তার নাগাল পাচ্ছেনা কিছুতেই. উজানও নাছোড়বান্দা۔۔
চোখ খোলে উজান. সবাই একটু আশান্বিত হয় কিন্তু উজানের ঘোলাটে দৃষ্টি দেখে সব আশা অচিরেই জলাঞ্জলি দেয়. সামনের টেবিলে রাখা পেন আর পেপারটা নিয়ে আঁকিবুকি কাটতে থাকে, যেন আঁকিবুঁকির জালে ধরতে চায় সমাধানের সূত্রগুলো. টুকরো টুকরো ইঙ্গিতগুলো মস্তিষ্কের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ভেসে বেড়াচ্ছে আর যেই উজান ধরতে যায় মুহূর্তে ডুব দেয় গভীর অতলে. উজান হতাশ হয়ে গেলে আবার মাথা তুলে জানান দেয় তাদের অস্তিত্ব, হাতছানি দিয়ে ডাকে উজানকে. চোর পুলিশের খেলা চলতে থাকে যেন. কেউ কেউ ইতিমধ্যে উঁকি দিয়ে দেখেছে উজান কি করছে, কিন্তু সাদা কাগজে পেনের আঁচড় ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি۔۔
সকাল যে হয়েছে সেটা ঘড়ির সময় বলে. হিয়া গতকাল সকলের জন্য কফি স্যান্ডউইচ আনার পর থেকে, সব কিছুর মধ্যে কখন যে পুরো রাত কেটে গেছে সেটা কারোর খেয়াল নেই. খেয়াল হয় যখন একজন কফি আর চা নিয়ে আসে. আরোহী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সেই লোকটির দিকে তাকালে সে জানায় “হিয়া ম্যাডাম” পাঠিয়েছে. সে উজান বাদে সবাইকে চা, কফি দিয়ে চলে যায়. উজানকে ঘাঁটানোর সাহস পায়না কেউই۔۔
ছোট্ট টি-ব্রেক এ মুরুগেশ আর আরোহী চা এর কাপে চুমুক দিতে দিতে গল্প করতে থাকে۔۔
আরোহী: ভাগ্গিস মিস মিত্র ছিলেন۔۔
মুরুগেশ: ঠিক বলেছো. বেশ একটা মা মা ভাব আছে ওনার মধ্যে, তাই না? আমি তো ভেবেই নিয়েছি এরপর যে মিশনেই যাই না কেন ওনাকে সাথে নিয়েই যাবো (হেসে ওঠে)
আরোহী ইশারায় উজানকে দেখিয়ে মুরুগেশকে আস্তে কথা বলতে বলে۔۔
আরোহী: সত্যি অফিসার. Thanks to Hardik Sir…হিয়া ম্যাডাম আর আমাদের মধ্যেকার সেতুটা উনিই তো রচনা করলেন. নাহলে দুর দুর পর্যন্ত ওই ঋষির ধ্যানভঙ্গ করার মতো কেউ জুটতো কিনা সন্দেহ আছে۔۔
মুরুগেশ: একদম۔۔۔ এক্কেবারে দুর্বাসা۔۔۔আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছো? স্যার কিরকম অন্য মানুষ হয়ে যান হিয়া ম্যাডামের সাথে থাকলে? খুব ভালো থাকেন, খুশি থাকেন۔۔
উজানের আঁকিবুকি যত চলতে থাকে তত ওর ধূসর কোষ ধীরে ধীরে আবছা চিন্তা ভাবনাগুলো থেকে একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ তৈরী করতে থাকে. একটা সময় পর ধূসর কোষের লড়াই আর কাগজের আঁকিবুকি দুই ই শেষ হয়. উজানের মস্তিষ্কে ওর পরবতী কর্মক্রমের একটা নকশা ফুটে ওঠে. বাস্তবের অফিস ঘরে ফিরে আসে উজান. মুরুগেশকে ডাকতে গিয়ে হঠাৎই ওর চোখ যায় সামনে রাখা সাদা কাগজে, দেখে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে নিজের অজান্তেই কখন হিয়ার স্কেচ এঁকে ফেলেছে ও۔۔۔
উজানের ডাকে মুরুগেশ আর আরোহীর বাক্যালাপে বিচ্ছেদ ঘটে. ইলেকট্রনিক্স উইজার্ড আবার স্বমহিমায় নিজের কার্য ভার সামলাতে উদ্যোগী হন. সকলকে উদ্দেশ্য করে উজান বলতে থাকে۔۔۔
উজান:
1. Ahmedabad : Kanchanjungha
2. Pune : Amarkantak
3. Jaipur : Mount Abu
4. Lucknow : Kailash
5. Indore : Monark
6. Agra : Everest
7. Hyderabad : Manas Sarovar
8. Madurai : Annapurna
আপাত দৃষ্টিতে পাশাপাশি দুই জায়গার মধ্যে কোনো মিল নেই. কিন্তু একটা জায়গায় থাকতে পারে আর আমার বিশ্বাস মিলটা সেখানেই. (মুরুগেশ কে উদ্দেশ্য করে) চেক করো তো আহমেদাবাদে কাঞ্চনজঙ্ঘা নামে কোনো হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস জাতীয় কিছু আছে কিনা?
মুরুগেশের আঙ্গুল ঝড়ের গতিবেগে উজানের নির্দেশ মানে. কয়েক সেকেন্ড পর۔۔۔
মুরুগেশ: Yes Sir. It’s a low budget hotel..
উজানের চোখ উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করে ওঠে۔۔۔
উজান: Good. Verify the others as well…
মুরুগেশ খুঁজে চলে এবং সর্বসাকুল্যে 3 মিনিটের মধ্যেই তার কাজ শেষ হয়. ফলাফল যথারীতি উজানের চিন্তাধারাকেই সমর্থন করে۔۔
মুরুগেশ: স্যার সব গুলোই ওই নির্দিষ্ট জায়গার লো বাজেট হোটেল… কিন্তু۔۔
উজান: কিন্তু?
মুরুগেশ: স্যার, মাদুরাই আর লখনৌতে দুটো করে একই নামের হোটেল আছে۔۔۔
উজান: সব হোটেল গুলোর লোকেশন খুঁজে দেখো, কিছু তো একটা মিল থাকবেই۔۔
মিনিট খানেক পর মুরুগেশ: সব গুলোই বড্ডো ভিড়ভার এলাকায় অবস্থিত۔۔
উজান: মাদুরাই আর লখনৌতে দুটো হোটেলই একইধরনের লোকেশনে?
মুরুগেশ আর একবার চেক করে নিয়ে বলে: না স্যার, মাদুরাইতে একটা হোটেল শহরের বাইরে আর একটা টাউনহলে۔۔ এই টাউনহল এরিয়াটা ক্রাউডি আর মীনাক্ষী টেম্পলের কাছে . লখনৌতে একটা হোটেল তো বন্ধ প্রায় তিন বছর, আর একটা হোটেল হাজরাতগঞ্জে. হাজরাতগঞ্জও ইনফ্যাক্ট খুবই ক্রাউডি এরিয়া স্যার۔۔
উজান: তার মানে ওই হোটেল গুলোই ওদের অপারেশন বেস, ক্লিয়ার. Bravo…so we have cracked the code completely…. Congratulations team…
সবাই একে পরের সাথে করমর্দন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করে۔۔۔
উজান: এবার আমাদের নেক্সট কোর্স অফ অ্যাকশন ঠিক করতে হবে. পুরো টিম টোটাল আটটা ভাগে ভাগ হয়ে যাবে মুরুগেশ ছাড়া. ওকে আমাদের যে কোনো সময় দরকার পড়বে. আর আমাদের সাহায্য করার জন্য ওকে বেসেই থাকতে হবে. আমি টীম সেগ্রিগেটে করে পাঠিয়ে দেব. সবাই এবার একটু রেস্ট নিয়ে নাও, সামনে অনেক কাজ۔۔۔
দেখা যাক উজান & টিম কিভাবে নিজেদের মিশনে সফল হয়–!!
(আপনারা তো উজানকে হেল্প করলেন না হু😐😐–এখন দেখি তাড়াতাড়ি পড়ে চটপট কমেন্ট করে ফেলুন তো দেখি😊😊।আর মহান কপিবাজ ব্যাক্তিবর্গ গণ আপনারাও চটপট কপি করার মতো মহৎ কাজটি করে ফেলুন🥴🥴)