উনত্রিশ_ফেব্রুয়ারি #পর্বঃ- ০২ (দুই)

0
394

#উনত্রিশ_ফেব্রুয়ারি
#পর্বঃ- ০২ (দুই)

বাড়ির মালিক আসলাম ফরাজি। বাড়িটা ছয়তলা। নিজের দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি তিনতলায় থাকেন।
সাজু ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে তিনি বললেন ,
– চট্টগ্রাম থেকে সাইমুন আমাকে কল করেছিল। বলেছিল যে, ওর বাসায় নাকি ঝামেলা হচ্ছে। আমি তখন আমার স্ত্রীকে নিয়ে এখানে এসে সবকিছু দেখতে পাই।

প্রসঙ্গ পাল্টে সাজু বললো ,
– আমরা আসার সময় গেইটে কোনো দারোয়ান দেখতে পাইনি। তবে গেইটের কাছে দারোয়ানের থাকার ব্যবস্থা দেখেছি। দারোয়ান কোথায়?
– আমিও তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। সাইমুন আমার কাছে কল করার আগে নাকি দারোয়ানের কাছে কল দিয়েছিল। তার কাছেই বাসার গন্ডগোলের কথা শুনে পরে আমাকে কল দিয়েছে।
– তাহলে দারোয়ান কোথায় আঙ্কেল?

মা-বাবার সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিল বাড়িওয়ালার বড় মেয়ে রাবেয়া। সে বললো ,
– বাবা তো বললেন দারোয়ান আঙ্কেলকে আমরাও খুঁজে বেড়াচ্ছি। তিনি হঠাৎ কোথায় গেলেন সেটা নিয়ে আমরাই চিন্তাগ্রস্ত।
– আপনার নাম?

– ওর নাম রাবেয়া , আমার বড় মেয়ে।
পাশ থেকে মেয়ের হয়ে উত্তর দিল আসলাম ফরাজি।
– আমরা একটু পাশের ফ্ল্যাটে যারা থাকেন তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। অস্বাভাবিক কিছু শুনতে পেয়েছে কি-না।
– ঠিক আছে, চলুন তাহলে।

————-
সাজু উত্তরায় এসেছিল বিকেল পাঁচটার দিকে। উত্তরা থানায় কর্মরত এসআই লিয়াকত আলী সাজুর বন্ধু। বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্যই সাজু উত্তরা থানায় এসেছিল রাত দশটার একটু আগে। বহুদিন পরে দেখা , কথা বলতে বলতে সময় পার হচ্ছিল। হঠাৎই থানায় একটা ফোন আসে৷
জানা যায় ছয় নাম্বার সেক্টরের একদম শেষ দিকের রেললাইনের কাছাকাছি একটা বাড়িতে দুটো মেয়ে খুন হয়েছে। ওসি সাহেব তৎক্ষনাৎ এসআই লিয়াকত আলীকে সেখানে যেতে বলেন। লিয়াকত নিজেই সাজুকে বলে ,
– তুই আসার সঙ্গে সঙ্গে খুনের ঘটনা। চল আমার সঙ্গে , তুই থাকলে আমার ভালোই হবে।

ঠান্ডা কফিতে শেষ একটা চুমুক দিয়ে সাজু উঠে দাঁড়ায়। তারপর বেরিয়ে পরে পুলিশের সঙ্গে। ফেব্রুয়ারী মাসের উনত্রিশ তারিখ। শহর থেকে শীত বিদায় নিয়েছে আগেই। তবুও সাজুর গায়ে একটা সাদা চাদর৷ চোখ লাল , খুকখুক করে কাশছে৷
.
.

নুড়ি যে রুমে খুন হয়েছে সেখান থেকে লিয়াকত আলী বের হয়ে এসে সাজুকে বললো ,
– দুজনকেই গলায় ছুরি ঢুকিয়ে খুনা করা হয়েছে। সম্ভবত খুন করার সময় মুখ চেপে ধরেছিল।

সাজু বললো ,
– ছোট মেয়েটাকে মুখ চেপে ধরে তারপর খুন করা হয়েছে। তবে বাথরুমের সামনে ফ্লোরে যাকে পাওয়া গেছে তার ঘাড়টা ভাঙ্গা। সম্ভবত বাথরুম থেকে বের হতেই খুনি ঘাড় মটকে দিয়েছে।
– শক্তির প্রয়োজন হয়েছে৷ পেশাদার কোনো খুনি অথবা অভিজ্ঞ কারো কাজ হতে পারে। কিন্তু যে করেছে সে অবশ্যই পুরুষ।
নিজের যুক্তিতে বললো এসআই লিয়াকত।

সাজু বললো ,
– দারোয়ানকে পেলে কাজটা সহজ হতো। কিন্তু তাকেই তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি কাজটা দারোয়ান করেছে?

– না না , উনি গরীব মানুষ। এরকম অপরাধ করার সাহস তার হবে না।
কথার মাঝখানে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন বাড়িওয়ালার স্ত্রী।

লিয়াকত আলী বললো ,
– তাহলে সে পালালো কেন? তিনি বাড়ির দারোয়ান আর সেই বাড়িতে দুটো খুন হয়েছে। তারপর যদি সে এখান থেকে পালিয়ে যায় তাহলে সব সন্দেহ তো তাকেই করা হবে তাই না?

মহিলা আর কোনো উত্তর করলো না। রাবেয়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে রইল। দুই বোনের লাশ রুম থেকে বের করা হচ্ছে। সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে।
– সাবধানে নিয়ে যাও। লিফট দিয়ে নামার দরকার নেই , সিঁড়ি দিয়ে নেমো।
আদেশ করলো লিয়াকত আলী। অলরেডি থানা থেকে দু’বার তাকে কল করা হয়েছে।

সাজু সোফার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। লিয়াকত সাজুকে বললো ,
– ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞেস করে আসি।

সাজু কিছু বলার আগেই লিয়াকতের নাম্বারে কল আসে। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে লিয়াকত বলে ,
– সাইমুন সাহেব কল করেছে। আমি তাকে কল করেছিলাম তখন রিসিভ করেনি। তুই ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বল আমি ওনার সাথে কথা শেষ করে আসছি।

মোবাইল রিসিভ করে সে সাইডে চলে গেল। রাবেয়া বললো,
– আপনি চলুন , আমরা তাদের ডেকে দিচ্ছি। যদি কোনো তল্লাশি করতে চান সেটাও করতে পারেন।
– আচ্ছা চলুন তাহলে।

সিড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাজু খানিকটা কি যেন ভাবলো। তারপর বললো ,
– আগে একটু ছাঁদে চলুন। ছাদটা দেখে আসি তারপর এদের সঙ্গে কথা বলবো।

ছাঁদের দরজা খোলা। সচারাচর এমন বাসাবাড়িতে ছাঁদের দরজা খোলা থাকার কথা নয়। সাজু খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো ,
– দরজা কি সবসময় খোলা থাকে?
– আসলে চিলেকোঠার ঘরে দুজন ভাড়া থাকেন। তাদের কাছে ছাঁদের চাবি আছে। তারাই ছাঁদের দরজা খুলে বা বন্ধ করে।

সবাই মিলে ছাঁদে গিয়ে দাঁড়াল। সাজু ছাঁদের চারিপাশে ভালো করে দেখতে লাগলো। আসলাম ফরাজি চিলেকোঠার দু’জনকে ডেকে বাইরে আনলেন। রাবেয়ার কথা শুনে সাজু ভেবেছিল সেখানে ব্যাচেলর কেউ হবে। কিন্তু বাইরে আসার পরে দেখা গেল এরা স্বামী স্ত্রী।

ছাঁদের দরজা খোলা কেন সেই প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন,
– দারোয়ান ছাঁদে এসেছিল। সে নাকি কাকে সিড়ি দিয়ে উপরে আসতে দেখেছে৷ ছাঁদে এসে আমাকে ডেকে তুললো। দুজন মিলে চারিদিকে খুঁজলাম কিন্তু কোথাও কেউ ছিল না।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল।
সাজু বললো ,
– দারোয়ান ছাঁদে এসেছিল? সে কি আপনাদের কিছু বলে নাই? কতক্ষণ ছিল আপনাদের সাথে?
– এই ধরেন দশ মিনিটের মতো। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। সে কিছু বললো না। চারিদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগলো।
– পাঁচতলায় যে দুটো খুন হয়েছে সেটা বলেনি?
– খুন হয়েছে? কোই না তো।

সাজু তখন বললো ,
– আপনাদের কিছু বললো না। এদিকে দারোয়ান কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে তিনি ছাঁদ থেকে কোথায় গেল?

তখনই তড়িঘড়ি করে হাঁপাতে হাঁপাতে ছাঁদে এলো এসআই লিয়াকত আলী। সে বেশ উত্তেজিত হয়ে বললো ,
– সাজু , সাইমুন সাহেবের সাথে কথা বললাম। তিনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছেন। খুনি কে সেটাও জানতে পেরেছি। চল তাড়াতাড়ি।

সাজু বেশ অবাক হয়ে বললো ,
– কে খুন করেছে?
– খুন করেছে সাইমুন সাহেবের অফিসের বস। খুনিও একটা মেয়ে , দারোয়ান লাশ দেখার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে সে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছিল।
– মেয়ে? সেটা কীভাবে সম্ভব?

সাইমুনের সঙ্গে কথা বলে লিয়াকত যা যা জেনেছে সবটাই সাজুকে খুলে বললো। সাজু বললো ,
– ব্যাপারটা তো জটিল হয়ে গেল। দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলার পরে যদি দারোয়ান ফ্ল্যাটে এসে লাশ দেখতে পায়। আর খুন গুলো যদি সেই তৃপ্তি মেয়েটা করে তাহলে দারোয়ান ছাঁদে এসেছিল কেন? কাকে দেখেছে সে? আর সে গেল কোথায়?

– “স্যার আমি আমাদের জানালা দিয়ে দেখেছি দারোয়ান কাকা লোহার সিড়ি দিয়ে উপরে উঠেছে।”
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো চিলেকোঠার স্ত্রী।

– মানে উপরের পানির ট্যাংকের ওখানে?
– হ্যাঁ। আমাদের সকালে অফিসে যেতে হয় , তাই তাড়াতাড়ি ঘুমাই। দারোয়ান কাকা ছাদে এসে কথা বলার পরে আমরা রুমে যাই। জানালা খোলা ছিল তাই সেটা বন্ধ করতে গিয়ে দেখি কাকা লোহার সিড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছে।

– লিয়াকত চল তো! উপরে উঠে দেখে আসি।

সাজু সামনে আর লিয়াকত আলী তার পিছনে পিছনে লোহার সিড়ি দিয়ে উঠে গেল। সিড়ি দিয়ে উঠে ডানদিকে সরু স্থানে গিয়ে সাজু থমকে গেল। পেছনে দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রইল এসআই লিয়াকত।
দারোয়ানের নিথর দেহটা পড়ে আছে। বিড়বিড় করে সাজু বললো ,
– একেও ঘাড় মটকে খুন করা হয়েছে লিয়াকত।
– এতো উপরে লোকটা মরতে এলো কেন?
– মারতে এসে মরে গেছে।
– তাই তো দেখছি।
– তোকে এই মামলা নিয়ে অনেক ভুগতে হবে। তুই তো ভেবেছিলি খুন করেছে সাইমুন সাহেবের অফিসের বস। কিন্তু দেখ , খুনি তো অন্য কেউ।
– তাহলে খুন গুলো করলো কে?

নিচ থেকে নতুন মেয়ে কণ্ঠ শোনা গেল।
– অফিসার , ওখানে কাজ শেষ হলে নিচে আসুন। আমি তৃপ্তি , সাইমুনের অফিসের বস। সাইমুন নাকি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে?
.
.
.
চলবে…

কেমন হলো কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। রিচ অনেক কমেছে অনিয়মিত থাকার জন্য। প্রায় দুই বছর পরে লেখা শুরু করেছি। আশানুরূপ ভালো না-ও হতে পারে। মতামত জানাবেন।
পরবর্তী পর্ব সবার আগে পড়তে পেইজটি ফলো দিয়ে রাখুন। সুস্থ থাকুন।

মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here