#উনত্রিশ_ফেব্রুয়ারি
#পর্বঃ ০৮ (শেষ পর্ব)
সাজু ভাই চুপচাপ তাকিয়ে রইল। অন্তরা তৎক্ষনাৎ কিছু একটা বলার জন্য নিজের মগজের সর্বোচ্চ ব্যবহার করছেন। হয়তো ভাবতে পারেনি সাজু ভাই এরকম কোনো প্রশ্ন নিয়ে হাজির হবে।
– কি হলো , সাজুর কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন?
পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো লিয়াকত।
– আমি ওনাদের নাটকের খুব ভক্ত ছিলাম। তাই শুটিং দেখার জন্য গেছিলাম।
কাপা কণ্ঠে বললো অন্তরা।
সাজু বললো ,
– কোনকিছু করার আগে সেই বিষয় সবদিক থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। এতো কাঁচা কাজ যারা করে তাদের দ্বারা খুন করা মানায় না।
সাজুর কথা শুনে যারা যারা কাছাকাছি ছিল তারা সবাই চমকে গেল। অন্তরা বললো ,
– কি বলছেন এসব? কে খুন করেছে?
সাজু সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লিয়াকতের দিকে তাকিয়ে বললো৷
– হাসপাতাল অসুস্থ মানুষের আনাগোনা। এখানে দাঁড়িয়ে ডাক্তার আর রোগীদের কষ্ট দেয়া ঠিক না। এদের সবাইকে থানায় নিয়ে চল৷
সাজু এগিয়ে যায় আসলাম ফরাজির কাছে। রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ,
– আপনাকে রাতে টেক্সট করেছিলাম। আপনি তো কোনো রেসপন্স করলেন না।
– ভেবেছিলাম রেস্টুরেন্টে গিয়ে কথা বলবো। তাছাড়া সকালে উঠে আঙ্কেলের অসুস্থতার কথা শুনে আমরা এখানে ছুটে এসেছি।
– ডাক্তার ওবায়দুল মাসুদ আপনার আঙ্কেল?
– আমার স্ত্রীর বন্ধু। এরা একসঙ্গে পড়াশোনা করতো তাই জানাশোনা আছে।
– আপনারা একটু থানায় চলুন।
রাবেয়ার মা আপত্তি জানিয়ে বললো ,
– আমরা রোগী দেখতে এসেছি। আপনাদের সঙ্গে থানায় যাবার জন্য আসিনি।
আসলাম ফরাজির দিকে তাকিয়ে সাজু বললো ,
– চলুন৷ সব কথা সেখানেই হবে।
ভিডিও দেখার পরে অন্তরা যতটা অবাক হইছিল। তারচেয়ে বেশি অবাক হলো যখন দেখলো তার বয়ফ্রেন্ড কবির থানায় বসে আছে।
অন্তরার দিকে তাকিয়ে কবির এতটাই করুন চেহারা করলো যেটা দেখে অন্তরা বিড়বিড় করে বললো “ সব শেষ ”!
ওসি সাহেব , এসআই লিয়াকত আলী ও সাজুর সামনে মুখোমুখি বসে আছে অন্তরা ও কবির। খানিকটা কাছেই বসে আছে আসলাম ফরাজি ও তার স্ত্রী কন্যা।
সাজু বললো ,
– কবির সাহেব অলরেডি সবকিছুই স্বীকার করে ফেলেছে। মিথ্যা স্ক্রিপ্ট না সাজিয়ে যদি আপনিও সবকিছু স্বীকার করেন তাহলে সময় নষ্ট হবে না।
অন্তরা চুপ করে রইল। ওসি সাহেব বরিশালের মানুষ। কথার মধ্যে দু একটা বরিশালের শব্দ চলে আসে। সে বললো ,
– মেয়ে মানুষের তো এতো লোভ থাকা ভালো না।
অন্তরা মাথা নিচু করে বসে আছে। কবিরকে এরা কীভাবে নিয়ে এলো সেটাই বুঝতে পারছে না। সে বারবার কবিরের দিকে তাকাচ্ছে। সাজু বুঝতে পেরে বললো ,
– আপনার বয়ফ্রেন্ডই পিৎজা ডেলিভারি করতে আপনার মামার বাসায় গেছিলো তাই না? অবশ্য এমন গোপন কাজে বিশ্বস্ত সঙ্গী ছাড়া সফল হওয়া যায় না।
রাতে ফেসবুকে ভিডিওটা দেখার পরে সাজু খুঁজে খুঁজে অন্তরার ফেইসবুক আইডি বের করে। প্রথমে ডাক্তার ওবায়দুল মাসুদ , তারপর সেখান থেকে অন্তরা।
যেহেতু অন্তরা নিজেই তার রিলেশনশিপের কথা গতকাল রাতে শেয়ার করেছিল। তাই সাজু ধরেই নিছিল আইডি থেকে বয়ফ্রেন্ডের সন্ধান পাওয়া যাবে। এবং পেয়েও গেল সেটা। বেশ কিছু পোস্টে তাদের একে অন্যের প্রোফাইল ট্যাগ করা।
ভিডিওতে অন্তরার সঙ্গে আরেকটা ছেলেকে দেখার পর থেকেই সাজু ভাই কৌতূহলি হয়েছিল। যদিও সেখানে অনেক মানুষ ছিল কিন্তু একটা ছেলেকে তার কাছে একটু অন্যরকম লাগছিল। তারপর যখন অন্তরার আইডি পাওয়া গেল তখন সবকিছু আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।
ভিডিওর ছেলেটাই অন্তরার বয়ফ্রেন্ড সেটা সম্পুর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় সাজু ভাই। আর সেজন্যই সাজু ভাই লিয়াকতকে ছবি পাঠিয়ে বলেছিল ছেলেটা সম্ভবত হাসপাতালের আশেপাশে আসবে৷ তাকে পেলেই যেন গ্রেফতার করে থানায় নেয়া হয়।
কাজটা করার জন্য লিয়াকত নিজেই অন্ধকার থাকতেই হাসপাতালের সামনে চলে আসে সাধারণ মানুষের পোশাক পরে। প্রায় ঘন্টা খানিক দুর থেকে অন্তরার প্রতি নজরদারি করার পরে ছেলেটাকে দেখতে পায়। অন্তরার সঙ্গে কানাকানি ফিসফিস সব শেষ করে ছেলেটা যখন বের হয় তখন বাইরে বসেই তাকে আটক করে। সাজু বলেছিল অন্তরা যেন বুঝতে না পারে।
এরপর থানায় রেখে লিয়াকত বাসায় চলে যায়। দ্বিতীয়বার সাজুর কল পেয়ে আবার হাসপাতালে আসে।
– খুনের সম্পুর্ণ পরিকল্পনা কার ছিল?
প্রশ্ন করলো সাজু ভাই।
– অন্তরার।
থমথমে হয়ে জবাব দিল কবির। ছেলেটাকে খুব ভীতু মনে হচ্ছে। এরকম একটা ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তিনটা খুন করলো কীভাবে সাজু ভেবে পায় না।
– আপনার নীরবতার বরফ গলে গেলে সবকিছু খুলে বলুন৷
অন্তরা তাকালো। সাজু চোখে চোখ রেখে বললো ,
– হুট করে কাউকে সন্দেহ করা যায় না অন্তরা। তাছাড়া আপনার অভিনয় দক্ষতা অনেক কাঁচা। মার্শাল আর্টে আপনি পরিপক্ব হতে পারেন কিন্তু অভিনয়ে খুব কাঁচা। আপনার প্রতি আমার প্রথম সন্দেহ আপনার মামার বাসাতেই হয়েছিল। আপনি দরজা খুলে প্রথমেই যখন আমাকে চিনতে পারলেন তখনকার অভিনয়টাই আপনার প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি করে।
অন্তরা তাকিয়ে রইল।
– সাজু বললো , আপনি বললেন আমি নাকি লেখক হিসেবে বেশ সেলিব্রিটি। আমার লেখার খুব ভক্ত আপনি। আমার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে সবকিছু বলেছেন ঠিক আছে। কিন্তু আরেকটু সময় নিলে বুঝতে পারতেন আমি গল্প লেখি না। ওগুলো অন্য কেউ লেখে। তাই আমাকে লেখক হিসেবে চেনার কোনো উপায় নেই।
দ্বিতীয় সন্দেহ , নুড়ি ও দারোয়ান দুজনকে আগে ঘাড় মটকে তারপর খুন করা হয়েছে। আপনার মামার বাসায় দেয়ালে দুটো ছবি ঝুলানো আছে। সেখানে আপনাকে দেখা যাচ্ছিল মার্শাল আর্টের ড্রেস পরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
সুতরাং তাৎক্ষণিকভাবে আমার মাথার মধ্যে নুড়ি ও দারোয়ানের ঘাড় মটকানোর কথা সবার আগে চলে আসে। আপনার আর তৃতীয় আরেকটা ভুল হচ্ছে সিম নাম্বার ব্যবহার করা। যে সিম দিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আমাকে কল করেছিলেন , একই সিম দিয়ে কবির সাহেবের সাথে পরে যোগাযোগ করা ঠিক হয়নি।
সাজু আবার বললো ,
– আপনি কীভাবে সেই বাসায় গিয়ে তাদের খুন করলেন সেটুকু জানতে চাই। শুটিং হাউজের উপর থেকে ছাদে গেছেন ততটুকু কবির সাহেবের মাধ্যমে আমরা জানি। বাকিটা বলেন।
সাইমুন ও নুড়ির মা-বাবা সবাই থানায় এসেছে।
ওসি সাহেব ও সাজু সবাই বারবার প্রশ্ন করে যাচ্ছে অন্তরার কাছে। সবার তাড়া খেয়ে অবশেষে মুখ খোলে অন্তরা।
– মামা যখন অজ্ঞাত মানুষের সঙ্গে নুড়ির ক্যান্সার নিয়ে বিভিন্ন চুক্তি করছিল তখন আমি সবকিছু শুনে ফেলেছিলাম। মামা সবসময় ছাদে গিয়ে কথা বলতো। সপ্তাহ খানিক আগে একদিন হঠাৎ জানতে পারি নুড়িকে খুন করার কন্ট্রাক্ট দিতে চায়। কিন্তু মামা প্রস্তাবে রাজি হয় না। সে বলে , এমনিতেই আমি অনেক পাপ করছি। মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে মেয়েটাকে অসুস্থ করে রাখছি। কিন্তু খুনখারাবির মধ্যে আমি নাই। টাকা দ্বিগুণ দিলেও করতে পারবো না। আমি ডাক্তার, খুনি না।
তখন টাকার বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকে যায়। ছোটবেলা থেকে টাকাপয়সার অভাবে জীবন আমার। যেহেতু আমি মার্শাল আর্টে দক্ষ তাই রাতারাতি অনেক টাকা ইনকামের একটা নেশা আমার মধ্যে ঢুকে যায়। মামার মোবাইল থেকে আমি নাম্বারটা নিয়ে সেখানে কলব্যাক করি।
– নাম্বার দেখে অবাক হননি? নাম্বারটা তো পরিচিত হবার কথা।
– হ্যাঁ হয়েছিলাম। কিন্তু আমি আমার নিজের পরিচয় গোপন রেখেছিলাম।
– যার সঙ্গে আপনার টাকাপয়সার চুক্তি হয়েছিল তিনি তো এখন থানায় উপস্থিত আছে তাই না?
– হ্যাঁ আছে।
সাজু একবার পিছনে তাকালো। আসলাম ফরাজি ঘামছে , টেনশনে মাথা এলিয়ে দিয়েছেন।
অন্তরা বললো৷
– আমি নাম্বার দিলে সেখানে কথা বলে চুক্তি ঠিক করে কবির। আমরা তাকে বলি যে ডাক্তার সাহেব আমাদের নাম্বার দিয়েছে। কিন্তু তবুও তিনি রাজি হচ্ছিল না। তারপর আমরা বলি তাদের পরিকল্পনা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে। তখন তিনি রাজি হন। তারপর উনত্রিশ ফেব্রুয়ারি রাতে আমরা দুজন সব প্ল্যান করি।
প্রথমে শুটিং হাউজ থেকে দুই ফ্লোর উপরে ছাদে চলে যাই। ছাদে একটা রশির সঙ্গে গেইটের চাবি ছিল। সেটা দিয়ে তালা খুলে ফেলি৷ তারপর আস্তে আস্তে নিচে গিয়ে নামি। কিন্তু পুরোপুরি নামার আগেই বুঝতে পারি কে যেন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল দিচ্ছে। একটু পর মেয়েটা ভিতরে চলে গেল। তখন দরজার সামনে গিয়ে মাস্টার চাবি দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করি কিন্তু তার আগেই বুঝতে পারি দরজার লক খোলা। তাই দেরি না করে ভিতরে চলে যাই। সাইডের একটা রুমে গিয়ে বিছানায় মোবাইল বাজতে দেখে সেই মোবাইল হাতে নিয়ে আমি লুকিয়ে যাই। একটু পরে নুড়ির বোনটা রুমে এসে মোবাইল খোঁজে৷ আমি তখনও দাড়িয়ে আছি মুর্তি হয়ে। একটু পরে সেই বাহিরের মেয়েটা চলে গেল। আমি আর দেরি না করে ছোট মেয়েটা আবার রুমে আসতেই দরজা পিছন থেকে বের হয়ে তার মুখ চেপে ধরে গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেই। মেয়েটা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গেল।
এরপর নুড়ির রুমে গিয়ে অপেক্ষা করি। নুড়ি তখন বাথরুমে ছিল। সে বাথরুম থেকে বের হতেই আমি তার ঘাড়টা ভেঙ্গে দেই। তারপর তাকেও ছুরি দিয়ে মারি। শর্ত ছিল খুন করার পরে ডাক্তারের যত রিপোর্ট সেগুলো নিয়ে যেতে হবে। তাই রিপোর্ট খুঁজে বের করতে করতে হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পাই। হালকা ভাবে দেখি বাড়ির দারোয়ান পাশের ছোট মেয়েটার রুমে ঢুকেছে। আমি দেরি না করে তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাই। কিন্তু চতুর দারোয়ান আমাকে দেখে ফেলে। তাই পিছনে পিছনে ছাদে চলে আসে।
প্রথমে লুকানোর চেষ্টা করছি। পরে বাধ্য হয়ে লোহার সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাই। কিন্তু বদমাশ দারোয়ান সেখানেও চলে যায়। তাই তাকেও বাধ্য হয়ে খুন করতে হয়।
তারপর দ্রুত লোহার সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে ছাদের সাইড দিয়ে পাশের চার তলায় চলে আসি। কবির সেখানে অপেক্ষা করছিল। দুজন দ্রুত বের হতে যাই কিন্তু চারিদিকের ক্যামেরা…..
অন্তরা চুপ হয়ে গেল। পিছনে আসলাম ফরাজি ও তার মেয়ে রাবেয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু রাবেয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে মহিলা অস্বস্তিতে রয়েছেন। সাজু রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ,
– আপনার মা’কে একটু সামনে নিয়ে আসুন।
তারা সামনে আসে। তখন লিয়াকত বলে ,
– আন্টি আপনি কি বুঝতে পারছেন আমরা কেন আপনাকে সামনে আসতে বলেছি?
রাবেয়ার মা অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে বিশ্বাস করতে পারছেন না এই মেয়েটাকেই তিনি কাজটা দিয়েছেন। একপ্রকার বাধ্য হয়ে সেটা করতে হয়েছে কারণ মেয়েটা জেনে গেছিল তারা নুড়ির ক্যান্সার নিয়ে নাটক সাজিয়েছে। তাই সেই মুহূর্তে কিছু করার ছিল না। রাবেয়ার মা আস্তে আস্তে যতকিছু বললো তা হচ্ছে ,
তৃপ্তিদের কোম্পানির কাজটা নিয়ে সাজুর কাছে যতটুকু তথ্য আছে তা হচ্ছে , প্রজেক্টটা ইউরোপের কোনো একটা দেশের। কোম্পানির প্রথম শর্ত ছিল তারা কিছু কাজ করাবে যেগুলোর ফর্মুলা শুধু একজনই জানতে পারবে। সেই একজন সবার কাছ থেকে কাজগুলো আদায় করবে৷
কাজটা প্রথমে রাবেয়ার মা যেই অফিসের জেনারেল ম্যানেজার সেখানে দেয়া হইছিল। কিন্তু তাদের কিছু ত্রুটির কারণে বিদেশি কোম্পানিটা এই কাজ কেড়ে নিয়ে তৃপ্তিদের দিয়ে দেয়।আর তখন থেকেই সব ঝামেলার শুরু।
ডাক্তারের আগে তাই সাইমুনের সঙ্গে সবকিছু নিয়ে কথা বলতে চায়। কিন্তু সাইমুন রাজি হয়নি বলে নতুন পরিকল্পনা করে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার রাবেয়ার মা, মিথ্যা ক্যান্সারের নাটক সাজিয়ে দেয় যেন সাইমুন তার স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অথবা চিকিৎসার জন্য কোথাও নিয়ে যায় তাহলে তো কাজটা করতে পারবে না।
কিন্তু যখন দেখলো সাইমুন তবুও কাজের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তখন আরো ক্ষেপে যায়। আর শেষ মুহূর্তে এসে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার চেষ্টা করে যেন পৃথিবী থেকে সরানো যায়। কিন্তু ডাক্তার রাজি নাহলে বেশি চিন্তায় পরে যায় তারা। আর তখনই কল আসে একটা ছেলের।
সে জানায় সবকিছু , কথার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়।
সরাসরি সাইমুনকে কিছু করেনি কারণ তাহলে অফিসের চক্রান্ত সবাই সন্দেহ করবে৷ তাই নুড়ির মাধ্যমে মানসিক আঘাত করছে।
আসলাম ফরাজি নিজের স্ত্রীর প্রতি তাকিয়ে ছি ছি করলেন। রাবেয়া যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তার মা সবকিছু চক্রান্ত করেছে।
অন্তরাকে সাজু বললো ,
– আপনার মামাকে কেন খুন করার চিন্তা হলো।
– মামা সবকিছু বুঝতে পেরেছিল।
– সেজন্য বয়ফ্রেন্ডকে ডেলিভারিম্যান সাজিয়ে নিয়ে আসেন তাই না?
– উনত্রিশ ফেব্রুয়ারি খুন করার পরে আমরা সবাই সেখান থেকে তদন্ত শেষে যখন বাসায় আসি তখনও আপনার বয়ফ্রেন্ড আমাকে মেসেজ করেছিল। আমি তখনই জানতে পারি নুড়ির ক্যান্সার ছিল না। নিজের মামাকে বারবার ধরিয়ে দেবার বেশ চেষ্টা করেছেন।
অন্তরার মাথা নিচু হয়ে গেল। সাজু অস্বস্তিতে উঠে গেল সেখান থেকে। দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে আবার বমি করলো। শরীর যেন আর সঙ্গ দিচ্ছে না।
বাথরুম থেকে বের হয়ে সাজু ভাই ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো।
– স্যার মোটামুটি সবকিছু রেডি। বাদীরা সবাই আছে, আপনার যেভাবে সুবিধা সেভাবে মামলা সাজিয়ে দিন। এমনভাবে দিবেন যেন মানুষের
————–
ব্যস্ত রাস্তার একপাশে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাজু ভাই ও লিয়াকত আলী।
লিয়াকত বললো ,
– তোর শরীর ভালো না। ডাক্তার দেখিয়ে নিস।
– এই শরীর আর ভালো হবে না। আমার মায়েরও এরকম রোগ ছিল। তারপর একসময় তো মা মারা গেল। হয়তো আমিও চলে যাবো কোনো এক শ্রাবণের দিনে।
– সবাই চলে যাবে , কিন্তু বাঁচার জন্য লড়াই করে যেতে হবে। যতদিন বেঁচে থাকা যায়।
– চেষ্টা তো করছি।
– একটা বিয়ে কর সাজু , ছোট্ট একটা সংসার হোক তোর। জীবন এভাবে শহরে শহরে ঘুরে ঘুরে কাটানোর দরকার কি।
– ধুর পাগল। বললাম তো শরীরের বিশ্বাস নেই। বিয়ে করে সংসার করলাম, একটা বাচ্চা হলো আর তখন যদি আমি মরে যাই? তখন আরেকটা সাজু তৈরি হবে আমার মতো তাই না?
লিয়াকত কিছু বললো না। সাজু চা শেষ করে বিদায় নেবার জন্য হাত বাড়ালো। আপাতত তার আর কাজ নেই। বাইক নিয়ে রওনা দিল কিন্তু পথিমধ্যে সাজুর আবার বমি পেল। বাইক দার করিয়ে রাস্তার পাশে বমি করলো। এবার বমির সঙ্গে রক্ত বের হয়ে আসছিল। এক রিকসাওয়ালা রিকশা দাঁড় করিয়ে সাজুকে এসে ধরলো। সাজু সেই লোকটার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
সমাপ্ত।
দুই বছর ধরে লেখালেখি করি না। মূলত ব্যস্ততার জন্যই সাহস করতে পারি না। অনেকেই জানেন আমি পেশাগত জীবনে নাটকের স্ক্রিপ্ট রাইটার। সুতরাং প্রতিদিন আমার মস্তিষ্কের অনেকটা সময় ব্যয় হয় স্ক্রিপ্ট লেখায়। সেজন্য যতটুকু সময় পাই সেই সময়ে মস্তিষ্ক বিশ্রামে রাখার চেষ্টা করি।
লেখালেখি সম্ভবত ভুলে যাচ্ছি।
সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।
যেন নিজেকে আরেকটু ধরে রাখতে পারি।
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)