#উপন্যাস_প্রপর্ণ(২৪)
#কুরআতুল_আয়েন
বুরাগ কখন থেকে লিভিং রুমে বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।লিটনের জন্য অপেক্ষারত বুরাগের মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে।আজকে বুরাগ কিছুতেই ছাড়বে না লিটনকে।সে কিছুতেই তার ফুপির অস্থিরতা দেখতে পারছে না।স্নিগ্ধার সাথেও কথা বলতে পারতো বুরাগ কিন্তু বলবে না তার কারণ একটাই সে স্নিগ্ধার সামনে গেলেই পুরোনো ঘা গুলো মনে হয় নতুনত্ব খুঁজে পাবে।যা কিছুতেই বুরাগ চায় না।অবশেষে,বুরাগ আসল মানুষটির দেখা পেয়েছে।লিটন আসতেই বুরাগ লিটনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।লিটন বুরাগকে দেখে মুখে বিশ্রী একটা হাসি টেনে বললো,
–“আরে বুরাগ যে!হঠাৎ কি মনে করো এসেছো আমার কাছে।আবারও কি আগের মতো বলবে,ফুপা প্লিজ স্নিগ্ধার থেকে দূরে সরে যাও।আমি কিছুতেই স্নিগ্ধাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।এইটা যদি বলো,তাহলে ভাববো তুমি বোকা।তোমার বউ বেলী তো মারাত্মক।তাকে ছোঁয়ার জন্য কতো চেষ্টা করছি।”
বুরাগ শুধু শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে লিটনের দিকে।কিন্তু,ভিতরে ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার।লিটনকে তার আজকে শেষ করে দিতে মন চাইছে।তবুও,বুরাগ মুচকি হেসে বললো,
–“কিরে!আজকে কেমন কাটিয়েছিস স্নিগ্ধার সাথে আবাসিক হোটলে?”
লিটন কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।চোখ দুটোকে বুরাগের উপর স্থির রেখে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
–“বুঝলে বুরাগ আগের মতো আর মজা পাচ্ছি না।স্নিগ্ধাকে এখন আর ভালো লাগে না।তবে,তোমার বউ বেলীকে দিয়ে মজা হতো।তুমি তো জব্বর একটা খুশিতে আছো।সেইরকম একটা বউ পেয়েছো।”
বুরাগ তেড়ে এসে লিটনের গালে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।বুরাগের থাপ্পড়ের তেজে লিটন পিছিয়ে গেলোও তার মুখে হাসি বিদ্যমান।বুরাগের ইচ্ছা করছে লিটনকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে।লিটনের গলা চেপে ধরে বুরাগ দাঁতে দাঁত পিষে বলতে লাগলো,
–“তোকে শেষ করে দিলেও আমার শান্তি হবে না।তুই সবাইকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিতে চাস।প্রথমে স্নিগ্ধাকে নিয়েছিস।আর এখন,বেলীর উপর নজর দিচ্ছিস।স্নিগ্ধাকে ছাড়লেও বেলীকে ছাড়তে পারবো না।ভাবছিস তো!বাচ্চার জন্য বেলীকে ছাড়বো না তাহলে ভুল ভাবছিস।বেলীকে আমি ভালোবাসি।সত্যিই বেলীকে ছাড়া থাকা সম্ভব না।আর,তুই কি না সেদিকে নজর দিচ্ছিস।এবার যদি কিছু করিস তাহলে তোকে আমি ছেড়ে দিবো না।”
–“বুরাগ ছেড়ে দে ওকে।মরে যাবে তো।আমার সন্তানদের বাবা হারা করিস না।”
বুরাগ থেমে যায়।সাথে লিটনের মুখের হাসিও থেমে যায়।দু’জনেই পিছনে তাকিয়ে পারভীনকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।কিন্তু,একটু পরেই লিটন নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।লিটন নিজেকে স্বাভাবিক করলেও বুরাগ কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না।ফুপি পারভীনের চেহারা টা দেখে বুরাগ আঁতকে উঠলো।তার মনে শুধু একটাই ভাবনা,ফুপি সব শুনে ফেললো না তো।
পারভীন আস্তে করে নিচে নেমে এলেন।উনি লিটনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।বিছানায় এপাশ ওপাশ করেও পারভীনের চোখে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না।বারংবার শুধু উনার চোখে লিটন আর স্নিগ্ধার হাসি উজ্জ্বল চেহারা টা ভেসে উঠছিলো।তাই,তো উনি হাঁটতে হাঁটতে করিডোরের দিকে চলে আসেন।নিচে বুরাগ আর লিটনকে একসাথে দেখে সেদিকেই এগিয়ে গেলেন।কিন্তু দু’জনের কথা গুলো শুনে পারভীনের শরীর টা নিস্তেজ হওয়ার উপক্রম।তাও,নিজেকে স্বাভাবিক রেখে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
বুরাগ পারভীনের দিকে এগিয়ে আসতেই পারভীন বুরাগকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বললেন,
–“আমার কাছে আসতে হবে না তোর বুরাগ।আমি ঠিক আছি।দেখ তোর সামনে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছি।যদি ঠিক না থাকতাম তাহলে কি এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম?”
আস্তে পা’য়ে লিটনের দিকে এগিয়ে গেলেন।লিটন পারভীনকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে কিছুটা ভঁড়কে গেলো।পা পিছিয়ে নিতেই,পারভীন আস্বস্ত করে বললেন,
–“উহুহু!পিছিয়ে যাচ্ছো কেন?আমি কিছু করবো না তো তোমাকে।ভয় পেয়ো না।শুধু কয়েকটা কথা বলবো,নিজের সন্তানের কথা ভাবলে না?আমার কথা না হয় বাদ এই দিলাম।তাদের কথা অত্যন্ত ভাবতে পারতে।ওরা তো তোমার এই অংশ।ওদের ভুল শুধু এতোটুকুই ওরা আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে।তাও তো ওরা তোমারই রক্ত।আর একটা কথা,বেলীর দিকে চোখ দিও না।আমার ভাইপো বেলীকে খুব ভালোবাসে।স্নিগ্ধাকে তার কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়েও বুরাগ নিজেকে ঠিক রেখেছে।কিন্তু,এবার বেলীকে ওর থেকে কেঁড়ে নিয়ে গেলে ও একদম ভেঙে পড়বে।তোমার কাছে আমার এতোটুকুই অনুরোধ রইলো।”
বুরাগ করুণ চোখে তাকালো পারভীনের দিকে।ফুপির ভিতরের কষ্ট টা সে ঠিকই বুঝতে পারছে।কতোটা কষ্ট,ঝড় সহ্য করলে একটা মানুষ এইরকম কথাবার্তা বলতে পারে।পারভীন বুরাগের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–“তুই সব জেনেও আমাকে একটিবার বলিস নি বুরাগ।আমি জানি,তুই আমাকে কষ্ট দিতে চাস নি।তুই তো তোর ফুপির কষ্ট সহ্য করতে পারিস না।দেখ,এখনো আমি কষ্ট পাচ্ছি না।হয়তো ভাগ্যে এটাই লিখা ছিলো।তবে,আমি তোমাদের কারোর উপর রেগে নেই।”
কথাগুলো বলেই পারভীন গুটিগুটি পা’য়ে গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন।তা দেখে বুরাগ পারভীনকে পিছন থেকে থামিয়ে দিয়ে অপরাধীর গলায় বললেন,
–“ফুপি!কোথায় যাচ্ছো তুমি।এইটা তো গেস্ট রুম।চলো আমি তোমাকে তোমার রুমে দিয়ে আসি।”
পারভীন আড়ালে চোখে পানিটুকু মুছে নিলেন।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
–“আমি এখন থেকে একা থাকবো বুরাগ।কারণ,বাকি দিনগুলো আমাকে একাই থাকতে হবে।তবে কোনো চিন্তা করিস না হয়তোবা কাল থেকে আমি অন্ধকারে থাকলেও সুখে থাকবো।”
বুরাগ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।আজকে তার বুক ফেটে কান্না আসছে।কিছুতেই ফুপির কষ্ট টা দেখতে পারছে না।বুরাগ ঝাপসা চোখে পারভীনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
অন্যদিকে লিটন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘আজকে একটু শান্তিতে ঘুম দিবো।এখন সবার আড়ালে না সবার সামনে দিয়েই স্নিগ্ধার কাছে যেতে পারবো।’
লিটন হেলেদুলে উপরে চলে যায়।তার আজকে কেন জানি খুব ভালো লাগছে।
বুরাগ এলোমেলো পা’য়ে রুমে ঢুকে পড়লো।বিছানার এককোণায় বসে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
বেলী সবেমাত্র ঘুমিয়ে ছিলো।বুরাগের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় তার চোখ দুটি লেগে যায়।কিন্তু কান্নার আওয়াজ পেয়ে বেলী ভয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।বুরাগকে কান্না করতে দেখে বেলী চমকে উঠলো।বেলী ভেবে পাচ্ছে না,এতো শক্ত মনের মানুষ টা হুট করেই কেন মেয়েদের মতো কান্না করছে।বেলী দ্রুত এগিয়ে গেলো বুরাগের দিকে।বুরাগের গালে হাত দিয়ে বললো,
–“কি হয়েছে আপনি কান্না করছেন কেন এইভাবে?”
বুরাগ কান্নারত অবস্থায় বেলীর দিকে তাকালো।বেলীর চোখে অস্থিরতা দেখে বুরাগ আচমকাই বেলীকে জড়িয়ে ধরলো।বেলীর বুকের উপর নিজের মাথাটা চেপে ধরে বিরবির করে বলতে লাগলো,
–“আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি বেলী।আমার নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে।আজকে আমার জন্য সবকিছু উলোটপালোট হয়ে গিয়েছে।”
বেলী কিছু বলতে গিয়েও বললো না।চুপ করে বুরাগের মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।বুরাগ এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।বেলী বুরাগকে বিছানায় নিয়ে গেলো।বুরাগকে শুইয়ে দিয়ে বুরাগের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে,কি এমন হলো উনার।কিই বা উলোটপালোট হয়ে গেলো।
বুরাগ বেলীকে জাপটে ধরে শুয়ে আছে।মাথায় হাত বুলানোর ফলে বুরাগ একটু পরেই ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু,বেলীর চোখে ঘুম নেই।তার শুধু ভয় হচ্ছে।খারাপ কিছু হবে না তো কারোর সাথে!!
নিস্তব্ধ রাত টা পাড়ি দিতে পারভীনের অনেক কষ্ট হচ্ছে।বিছানার চাদর টা খামচি মেরে ধরে নিচে এলোমেলো ভাবে বসে আছেন।এই ফোলা পেট নিয়ে তাঁর বসতে তেমন কষ্ট হয় নি।বলতে গেলে তিনি কষ্ট টা অনুভব করতেই পারেন নি।মনে যে এর থেকে আরো বেশি আঘাত পেয়ে বসেছে।পারভীন ডুকরে কেঁদে উঠলেন।বুরাগ আর লিটনের সামনে কান্না না করলেও এখন তাঁর খুব কান্না পাচ্ছে।নিজেই হাত দিয়ে নিজের চুল গুলি পাগলের মতো খামচে ধরেন।সবকিছুই পারভীনের কাছে বিষাদ লাগছে।পারভীন ভেবেছিলেন তাঁকে দেখতে হয়তো লিটন আসবে।লিটন তাঁর হাত দুটো ধরে বলবে,আমাকে ক্ষমা করে দাও পারভীন,আমি যা করেছি একদম ভুল করেছি।আমি তোমাকে আর আমাদের সন্তান নিয়ে খুব ভালো থাকতে চাই।পারভীন আরো ভেবেছিলেন,এমন হলে লিটনকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন।সব কিছু ভুলে গিয়ে লিটনকে আরো একটা সুযোগ দিবেন।কিন্তু,তা আর হলো না।একসময় পারভীন নিভু নিভু চোখ নিয়ে আরো একবার দরজার দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
—-
সকালে হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো বুরাগ।কালকের রাতের কথা মনে আসতেই বুরাগের অসম্ভব রকমের কষ্ট হতে লাগলো।তার ফুপিকে এইরকম কষ্ট পেতে সে কখনোই দেখে নি।বুরাগের ছোটবেলার অনেকটা সময় কেটেছে তার ফুপি পারভীনের সাথে।ভাই-বোন না থাকায় বুরাগ সবসময় একা থাকতো।তখন তার ফুপি মনে হয় অনার্স প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট ছিলেন।সেই হিসেবে বুরাগের থেকে তার ফুপি পারভীনের আহামরি বয়সের পার্থক্য নেই।তাছাড়াও,পারভীন এইখান থেকেই পড়াশোনা করেছেন।যতো রকমের মজা করা যায় ততো রকমের মজাই করেছে ফুপি ভাইপো মিলে।তাই তো বুরাগের অন্যরকম একটা টান আছে ফুপির প্রতি।
পাশে বেলীকে এলোমেলো ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে, বুরাগ ঠিকভাবে শুয়ে দিতে গেলেই বেলীর ঘুম ভেঙে যায়।বেলী চোখ খুলে বুরাগের মুখের দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।বুরাগের চেহারাই বলে দিচ্ছে সে কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত।বুরাগ বেলীকে সজাগ হয়ে পড়তে দেখে মুখে এক টুকরো হাসি টেনে বললো,
–“ভালো করে একটু শুয়ে ঘুমিয়ে নাও বেলী।না হলে শরীর খারাপ করবে।”
বুরাগ উঠতে নিলেই বেলী বুরাগের হাত ধরে আটকিয়ে দিয়ে বুরাগের মাথাটা নিচের বুকের উপর চেপে ধরলো।মাথায় আলতো ভাবে ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।বুরাগ ছোটবাচ্চাদের মতো বেলীর বুকে মুখ লুকিয়ে রেখেছে।বেলী কোমল কন্ঠে বলে উঠলো,
–“কি হয়েছে বলুন না আপনার?কালকে কেন কান্না করেছিলেন?”
বুরাগ থম মেরে বেলীর বুকের উপর শুয়ে রইলো।বেলীর প্রশ্নের প্রতি উত্তরে সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।বুরাগের মাথা ধরে আসছে।সে কীভাবে বলবে বেলীকে,তার ফুপা শ্বশুড় কতোটা নিচুস্তরের মানুষ।তার ফুফা শ্বশুড় যে তাকে ছুঁয়ে দেখতে চায়।
বেলী বুরাগের চুলের আস্তরণে একটা চুমু খেলো।পুনরায় বুরাগকে বললো,
–“বলুন না কি হয়েছে?আপনি কেন এমন করছেন।”
বুরাগ কিছু না বলেই বেলীর বুকে,গলায় চুমু খেয়ে উঠে পড়লো।ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললো,
–“আমার কিছু হয় নি।আমি ঠিক আছি।”
বেলী আর কিছু না বলে শুয়ে রইলো।মনটা কেমন উশখুশ করছে।তার কিছুতেই ভালো লাগছে না।কেমন জানি মনটা খুবই অস্থিরতা করছে।কালকে রাতেও বেলীর এমন অনুভব হয়েছিলো।
খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে।বুরাগ আজকে অফিসে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।খাবার টেবিলেই আজাদ রহমানকে জানিয়ে দিয়েছে।আজাদ রহমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,ঠিক আছে।বুরাগ অফিসে যাবে না এই কথা টা শুনে বেলী ঠিক হজম করতে পারলো না।তার মনের অস্থিরতা যেনো আরো গাঢ় হচ্ছে।তাও সে কিছু না বলে আফিয়া আর কোহিনূরের পাশে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।তবে চোখ দুটি সারাক্ষণ বুরাগের উপর ছিলো।
আফিয়া একটা প্লেটে খাবার রেডি করছেন।বেলী শ্বাশুড়ি আফিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“মা!এইটা ফুপির খাবার তো তাই না?আমি নিয়ে যাবো আজকে।”
আফিয়া হেসে বললেন,
–“হ্যাঁ!এইটা পারভীনের খাবার।ঠিক আছে আজকে তুই নিয়ে যাবি।”
বুরাগ বাধা দিয়ে বলে উঠলো,
–“বেলী তোমার কোথাও যেতে হবে না।আমিই নিয়ে যাবো ফুপির কাছে।আমার খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।”
আফিয়া ছেলের কথায় বললেন,
–“আরে বুরাগ এমন করছিস কেনো?আজকে বেলীই যাবে।”
অগ্যাতা বুরাগ আর কিছু বলার সাহস পায় নি।আফিয়া খাবার রেডি করে বেলীর হাতে ধরিয়ে দিলেন।বেলী খুশি মনে খাবার নিয়ে চললো পারভীনের রুমে।
হুট করেই বুরাগের মনে পড়ে যায় পারভীনের গেস্ট রুমে থাকার কথাটা।এখন নিশ্চিয় লিটন রুমে শুয়ে ভুস ভুস করে ঘুমোচ্ছে।তাই বুরাগ বসা অবস্থায় বললো,
–“বেলী গেস্ট রুমে যাবে।ফুপি ওইখানেই আছে।”
বেলী বুরাগের কথা সম্পূর্ণ কর্ণপাত করে ছুটলো গেস্ট রুমের দিকে।কিন্তু,আফিয়া কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো,
–“পারভীন গেস্ট রুমে ছিলো কাল রাতে কিন্তু কেনো?”
বুরাগ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।কি বলবে কিছুই মাথায় আসছে না।কিছুক্ষণ চুপ করে আমতাআমতা করে বললো,
–“ফুপির নাকি একা থাকতে ইচ্ছা করছিলো তাই কাল রাতে গেস্ট রুমে ছিলো।”
–“ওহহ্!সবার খাওয়ার পর আমি আর কোহিনূর একটু দেখে আসবো পারভীন কে।মেয়েটা কি অসুস্থ হয়ে পড়লো নাকি মুড সুইং হয়েছে।অবশ্য,এই সময় টায় সব মেয়েদেরই এমন হয়।”
বুরাগ আর কিছু বলে নি।চুপ করে খেতে লাগলো।আফিয়া আর কোহিনূরও ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাইকে খাওয়াতে।
—-
বেলী গুটিগুটি পা’য়ে গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।দরজা খোলাই ছিলো তবে ঘন করে পর্দা দেওয়া।গেস্ট রুমটার সামনে আসতেই বেলীর বুরাগ আর তার প্রথম মিলনের রাতের কথা মনে পড়ে যায়।এই রুমেই তো হয়েছিলো সব কিছু।বেলী লজ্জায় মুখটা নামিয়ে ফেললো।মিটিমিটি হেসে রুমে ঢুকে পড়লো।পারভীন কে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেলী ধীর গতিতে এগিয়ে গেলো।খাবার গুলো টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,
–“ফুপি!আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।খেয়ে নিন।”
পারভীন বেলীর কন্ঠ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।পারভীন ঘুরতেই বেলী আঁতকে উঠলো।পারভীনের বিধস্ত চেহারা দেখে বেলী অনেকটাই ভয় পেয়ে গেছে।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে,সুন্দর মুখশ্রীতে ফ্যাকাসের ছাপ।চোখের কোণে পানি শুকিয়ে আছে।বেলী পারভীনকে পর্যবেক্ষণ করে মনে মনে আওড়াতে লাগলো,
‘ফুপির কি কিছু হয়েছে?উনাকে এইরকম লাগছে কেন।মনে হয়ে রাতে খুব কান্না করেছেন।আচ্ছা কালকে তো উনিও কান্না করেছিলেন।তাহলে,কি কিছু গোলমাল আছে এইখানে!’
পারভীন নিষ্পলক চেয়ে আছে বেলীর দিকে।সুন্দর প্রিন্টের একটা লম্বা জামা পড়ে আছে।পেট টা একটু ফুলেছে।চেহারাটাও আগের থেকে বেশি সতেজতা লাগছে।পারভীন ভাবছেন,ইসস!কি সুন্দর মেয়েটা তাই না!এই মেয়েটাকেই তো আমার স্বামী ছুঁয়ে দিতে চায়।কিন্তু,মেয়েটা তা না জেনেই কি সুন্দর করে গুটিগুটি পা’য়ে সারা বাসা ঘুরে বেরাচ্ছে।যখন জানবে তার আশেপাশে একজন খারাপ লোক আছে তাকে ছোঁয়ার জন্য তখন কি এইভাবেই হাসি মুখে থাকবে মেয়েটা!!!
পারভীন বেলীর কাছে এগিয়ে গেলেন।আস্তে করে বিছানায় বসে বেলীকে নিজের কাছে চেপে ধরে বেলীর কপালে কয়েকটা চুমু খেলেন।বেলীর থুঁতনীতে হাত রেখে বললেন,
–“তুই একদিন অনেক সুখী হবি মা!বুরাগ তোকে খুব ভালোবাসবে।তুই কিন্তু,বুরাগ কে ছেড়ে কোনোদিনও যাবি না।”
বেলী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ফুপি শ্বাশুড়ির দিকে।ফুপি শ্বাশুড়ির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
দূর থেকে পর্দার আঁড়ালে বুরাগ এইসব দেখছে।সে দেখতে এসেছিলো ফুপির মনের অবস্থা টা।বেলী আর ফুপিকে একসাথে দেখে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো বুরাগ।এখন রুমে গিয়ে রায়ানকে ফোন করবে বাসায় আসার জন্য।অত্যন্ত এইসব কথা শেয়ার করার জন্য একজন সঙ্গী খুব প্রয়োজন।
চলবে..