উপন্যাস প্রপর্ণ পর্ব-৩৪

0
2836

(শব্দ-চয়ন অনেক এলোমেলো।অনেকদিন পর লিখেছি তাই।একটু রেসপন্স করবেন আপনারা❤️।

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(৩৪)
#কুরআতুল_আয়েন

বেলী হাজারবার ডেকেও বুরাগকে থামাতে পারে নি।তবে,বুরাগের পিছু ছাড়ে নি।বুরাগ থমথমে মুখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।আর,এইদিকে শিউলি গলা ফাটিয়ে কান্না করছে।ছলছল চোখে বেলী শিউলির দিকে তাকালো।কপালের পাশ টা ফুলে নীলবর্ণ ধারণ করেছে।বেলী আর না পেরে দৌড়ে বুরাগের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।বুরাগকে কিছু বলার আগেই বুরাগ বেলীকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়।যার ফলস্বরূপ বেলী ধপাস করে নিচে পড়ে যায়।বুরাগ সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়।বেলী বুরাগের এমন খাপছাড়া আচরণ দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

বুরাগ আফিয়ার রুমের সামনে এসে থামলো।পর্দা সরিয়ে রুমে ঢুকে একপ্রকার চিল্লিয়ে বললো,

–“মা!!”

আফিয়া রুমের যাবতীয় কাজ করছিলেন।বুরাগের গলার আওয়াজ পেয়ে চট করে দরজার সামনে তাকান।ছোট্ট শিউলিকে কাঁদতে দেখে আফিয়া ভ্রুকুটি কুঁচকে বললেন,

–“কি ব্যাপার!বুরাগ!!শিউলি এইভাবে কান্না করছে কেনো।বেলী কোথাও?শিউলির খিদে লেগেছে বুরাগ।এইজন্য এইভাবে কান্না করছে।”

বুরাগ শিউলিকে আফিয়ার কোলে দিয়ে দিলো।কপালে দু আঙুল ঘঁষে বললো,

–“আমি না আসা পর্যন্ত ওকে তোমার কাছেই রাখবে।সবার কোলে দিলেও বেলীর কোলে দিবে না।”

আফিয়া অবাক নয়নে তাকিয়ে আছেন বুরাগের দিকে।এমতাবস্থায় বললো,

–“এইটা কি ধরনের কথা বুরাগ।দুধের বাচ্চাটাকে আমি ওর মায়ের কোলে দিবো না।তাহলে কি খেয়ে থাকবে ও।ওর তো এখনেই খিদে লেগেছে।দেখো তুমি তাকিয়ে!!খিদের জন্য কীভাবে কান্না করছে।”

–“করুক কান্না!তাও আমার মেয়েকে ওর কোলে দিবে না।আমার মেয়ের প্রতি যার কোনো খেয়াল নেই তার কাছে আমি কিছুতেই আমার মেয়েকে দিবো না।”

–“কি হয়েছে বলো তো।”

–“সেইটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে তোমার আদরের বউকে জিজ্ঞেস করো।”

বুরাগ হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।বেরুনোর সময় করিডোরের সামনে বেলীকে দেখে মাথায় রাগ চড়ে যায়।রক্তাক্ত চোখ নিয়ে তাকিয়ে বুরাগ চলে গেলো।বুরাগের চাহনি দেখে বেলী নিজেকে গুটিসুটি মেরে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো।হতাশা চোখে বেলী বুরাগের দিকে তাকিয়ে থেকে শ্বাশুড়ির রুমে ঢুকে পড়লো।

রাতে বুরাগ শিউলিকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছে।কোলে নিয়ে হাঁটছে তাও শিউলি চোখ দুটো বড়বড় করে মুখে আঙুল চুঁষে তাকিয়ে আছে বুরাগের দিকে।বুরাগ শিউলির এরূপ চাহনি দেখে মুহুর্তেই হেসে দিলো।শিউলির গালে একরাশ চুমু খেয়ে নিলো।বুরাগের চুমু খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শিউলি বুরাগের দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।ব্যাস!!বুরাগের রাগ,কষ্ট,দুঃখ সব গলে পানি হয়ে গিয়েছে।কিন্তু,মুহুর্তেই কপালের পাশে ফোলা টা দেখে বুরাগ চোখ,মুখ শক্ত করে নিলো।বুরাগের কঠিন মুখ দেখে শিউলির ছোট্ট মনটায় একরাশ ভয় এসে ভিড় করলো।মুহুর্তেই ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলো।বুরাগ শিউলির মতিগতি বুঝতে পেরে হতাশ চোখে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো,

–“আচ্ছা!!আমি আর চোখ,মুখ কঠিন করবো না।তোর বাবা সবসময় হাসি খুশি মুখ করে থাকবে।”

বুরাগ ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে আবারও বললো,

–“এই দেখ!তোর বাবা হাসছে।এবার তুই কান্না থামা মা।তুই কান্না করলে আমার কষ্ট হয়।সকালে যখন তুই পড়ে গিয়েছিলি আমার মনে হয়েছিলো আমার কলিজাটাকে কেউ কেটে দিয়েছে।আর দেখ!তোর কপালের ফোলা দাগ টা দেখলে আমার খুব কষ্ট হয় মা।আর,এখন তুই কান্না করলে নিজেকে কীভাবে ঠিক রাখি বল।”

শিউলি অবুজ চোখে তাকিয়ে আছে বুরাগের দিকে।হুট করেই বুরাগের বুকে মাথা এলিয়ে দেয়।বুরাগের বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে।বুরাগ শিউলিকে আরেকটু আগলে নিলো।বুরাগের ভিতর অন্যরকম এক শান্তিতে ছুঁয়ে গিয়েছে।তবে,বেলীর জন্য বুকে ব্যথা অনুভব করছে।কিন্তু,বেলীর আজকের বেখেয়ালিপনা টা মনে পড়তেই মুহুর্তেই বুরাগের চোখ,মুখে রাগ ফুটে উঠেছে।

দরজায় দাঁড়িয়ে সব কিছুই শুনেছে বেলী।বুরাগের কথাগুলো শুনে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।তবে,রুমের ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না।

শিউলি ঘুমিয়ে পড়তেই বুরাগ শিউলিকে শুইয়ে দিলো।দুপাশে বালিশ দিয়েও শিউলিকে ঠিকঠাক করে দিয়েছে।দরজার কাছে এসে বেলীকে কান্না করতে দেখে বুরাগ কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে খড়খড়ে গলায় বললো,

–“বাহিরে দাঁড়িয়ে ড্রামা বাদ দিয়ে ভিতরে আসলে ভালো হয়।আমার এতো সময় নেই দাঁড়িয়ে থেকে ড্রামা দেখার।”

বেলী এখনো দাঁড়িয়ে আছে।বুরাগের কথাতেও ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না।বুরাগ বেলীকে হেঁচকা টেনে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।বেলীকে পাত্তা না দিয়ে বিছানায় গিয়ে শিউলিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।বেলী গুটিগুটি পা’য়ে বিছানার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই বুরাগ হিসহিসিয়ে বললো,

–“আমার আর আমার মেয়ের পাশে তোমার জায়গা নেই।আলমারি থেকে কাঁথা বালিশ নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ো।”

বেলী চমকপ্রদ হয়ে তাকালো বুরাগের দিকে।বুরাগের মুখে এমন একটা কথা শুনবে তা ভাবনার বাহিরে ছিলো।বেলীর নিজেকে কেমন অসহায় লাগছে সেই সাথে পাগল পাগলও।এক দিকে,জাবেদা জেলে!অন্যদিকে অলি সাহেব প্যারালাইজড।আর এই দিকে বুরাগের এমন আচরণ।বেলী আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদে বারান্দায় চলে গেলো।বারান্দায় যাওয়ার সময় থাই গ্লাস টা একটু বেশি জোরেই লাগিয়ে দিয়েছে।যার ফলস্বরূপ!থাইগ্লাসের শব্দে শিউলি ঘুমের মাঝেই নড়েচড়ে উঠলো।বুরাগ বেলীর যাওয়ার পানে রাগান্বিত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।ধপাধপ্ পা’য়ে বারান্দায় গিয়ে থাইগ্লাস টা আস্তে করে লাগিয়ে দিলো।

বেলীকে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে বুরাগ বেলীর হাতের কব্জি ধরে টেনে তুললো।কিছুটা মিহি গলায় বললো,

–“তোর সাহস!তো কম না।এতো রাগ তোর কোথা থেকে আসে বল।তুই কি দেখতে পাস নি শিউলি ঘুমোচ্ছে।আজকে,যদি শিউলির ঘুম ভাঙতো তাহলে তোর খবর ছিলো।তোকে রুমে জায়গা দেওয়াটাই ভুল হয়েছে।”

বেলী চোখের পানিটুকু মুছে নিলো।বুরাগের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো,

–“আপনার মনের ইচ্ছাই পূরণ হবে।থাকবো না আমি আপনাদের সাথে।চলে যাবো।তাহলে,আপনার আর আমার মতো এমন বউ আর মা’য়ের জায়গা দিতে হবে না।তবে,তার আগে আমার দিকটা একটু বিবেচনা করে দেখবেন।আমি কি সময় টা পার করছি!আমার মনের ভিতর কি অস্থিরতা চলছে।আপনাকেই তো আমার এখন পাশে পাওয়ার কথা তাই না!কিন্তু,সেই আপনিই আমার সাথে এইরকম আচরণ করছেন।আপনিই বলুন তো!একদিকে আম্মা আব্বার এমন অবস্থা শুনে কোনো সন্তান কি ঠিক থাকতে পারে?পারে না!আমিও ঠিক নেই।আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।সত্যি আমি আর এইসব নিতে পারছি না!”

বেলী আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলো।বুরাগ অসহায় চোখ নিয়ে তাকালো বেলীর দিকে।আসলেই তো!বেলীর এখন তাকে খুব দরকার।আর সেই কিনা বেলীকে এতোটা কষ্ট দিয়ে দিলো।বুরাগের এবার খুব মায়া হচ্ছে বেলীকে দিকে।আজকে সকালে কিনা তাকে থাপ্পড়ও মেরেছে।বেলী বুরাগকে কিছু বলতে না দিয়ে বারান্দা ছেড়ে রুমে চলে আসলো।বিছানার কাছে এগিয়ে এসে ঘুমন্ত শিউলিকে কোলে তোলে নিয়ে আদর করে মিনমিনে গলায় বললো,

–“সরি মা!আমাকে ক্ষমা করে দে।তোকে আমি অনেক টা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।মা তোকে খুব ব্যথা দিয়েছে তাই না সোনা।আমাকে ক্ষমা করে দে সোনা।”

বেলী শিউলির চোখে,মুখে চুমু খেয়ে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।সোজা গেস্টরুমে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।বুরাগ চোখের সামনে এতোকিছু দেখেও বেলীকে কিছুই বলার সাহস পায় নি।তার নিজেকে কেমন নিস্তেজ মনে হচ্ছে।
—-
শিউলির কান্নার আওয়াজে বুরাগের ঘুম ভেঙে গেলো।ঘুমঘুম চোখে বুরাগ শিউলির পেটে হাত বুলিয়ে দিয়েও শিউলির কান্না কিছুতেই থামাতে পারছে না।বুরাগ শিউলিকে কোলে নিয়ে ডায়াপার চেক করে দেখলো ডায়াপারের খুব বিদঘুটে অবস্থা।বুরাগ আর দেরি না করে তাড়াহুড়ো করে উঠে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো।ডায়াপার নিয়ে এসে শিউলিকে পরিপাটি করে দিয়ে বুরাগ পুনরায় বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।শিউলিকে নিজের বুকের উপর শুইয়ে দিয়ে দু’হাত দিয়ে আগলে ধরে রেখেছে।

ভোরের আগেই বেলীর ঘুম ভেঙে যায়।ফজরের নামাজ টা আদায় করে রান্নাঘরে ঢুকলো।অনেকদিন পর রান্নাঘরে এসেছে।সবার জন্য নাস্তা তৈরি করতে লাগলো।আফিয়া হাতে তসবিহ গুনতে গুনতে সিঁড়ি বিয়ে নিচে নেমে আসলেন।উদ্দেশ্য চা’য়ের পানি বসানো।রান্নাঘরে বেলীকে বসে থাকতে দেখে আফিয়া কিছুটা চমকে উঠে বললেন,

–“কিরে!বেলী এতো সকাল সকাল তুই রান্নাঘরে কি করছিস।তোকে তো একটু সাবধানে থাকতে হবে!ঠান্ডা লাগানো যাবে না,ঠান্ডা লাগলেই শিউলিরও ঠান্ডা লেগে যাবে।বুকের দুধ খায় তো এইজন্য।আর কয়েকদিন পরেই শীতের মৌসুম।আবার বিকেলের দিকে কিছুটা শীতও পড়ে।”

বেলী শান্ত জবাবে বললো,

–“কিছু হবে না মা আমার।একা একা ভালো লাগছিলো না তাই একটু রান্নাঘরে এসেছি।”

আফিয়া বেলীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,

–“বুঝেছি!বাপ বেটি ঘুমোচ্ছে তাই তো।তবে,এখন গিয়ে দেখ!বুরাগ উঠে গিয়েছে অফিসের সময় হয়ে গিয়েছে তো তাই।তার আগে বল!তোর,মুখ,চোখ এইভাবে লাল হয়ে আছে কেনো?আর,ক্যামন ফ্যাকাসেও।কিছু কি হয়েছে বেলী তোর আর বুরাগের মধ্যে।”

বেলী মাথা নিচু করে বললো,

–“না মা!আমি ঠিক আছি।”

–“বুঝেছি!আম্মা,আব্বার জন্য কষ্ট হচ্ছে তাই তো।দেখ বেলী!জাবেদা আইন নিজের হাতে তোলে নিয়ে মোটেও ঠিক করে নি।তাঁর অত্যন্ত তোদের সবার কথা ভাবা উচিত ছিলো।মানছি!আমাদের শিউলির সাথে যা হয়েছে একদম এই ঠিক হয় নি।তবে,অলি ভাইজানের জন্য খুব খারাপ লাগছে।এতো কষ্ট সহ্য করতে পারে নি।একদিন সময় করে দেখে আসিস।”

বেলী নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে কথার কোনো বুলি নেই।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।আফিয়া বেলীর চোখের পানিটুকু মুছে দিয়ে বললেন,

–“তুই উপরে গিয়ে দেখ!বুরাগের কি কি লাগবে।আর,আমি এইদিক টাই আছি।”

বেলী অনিচ্ছাকৃত ভাবেই সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলো।সে যেতে চায় না বুরাগের সামনে।তবে,এখন আর কিছুই করার নেই।তাকে যে যেতেই হবে।না গেলে যে আফিয়া উল্টো কিছু ভেবে বসবেন।

বুরাগ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে।দোলনায় শিউলি শুয়ে দোল খাচ্ছে।বেলী রুমে ঢুকে নিঃশব্দে দাঁড়ালো।চোখ বারবার শিউলির দোলনায় চলে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে শিউলিকে আগলে ধরতে নিজের সাথে।বুরাগ আয়নায় বেলীর প্রতিবিম্ব দেখে পিছন ফিরে তাকালো।বেলীর শুষ্ক মুখটা দেখে বুরাগের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।বেলী বুরাগের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।বুরাগ অস্ফুটস্বরে বললো,

–“বেলী!”

বেলী এইভাবেই দাঁড়িয়ে জবাবে বললো,

–“কিছু লাগবে আপনার।মা পাঠালো।

–“মা বলেছে বলেই কি এসেছো।না হলে কি আসতে না।”

–“আমার তো আসার কথা না।আমি তো আপনার কথাই মেনে চলছি।”

বুরাগ কিছু না বলে আহত চোখে তাকালো বেলীর দিকে।বেলী মাথা নিচু করে থাকায় বুরাগের আহত দৃষ্টি বেলীর চোখের নাগালে আসতে পারে নি।বুরাগ ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

–“আমি অফিসে যাচ্ছি।শিউলিকে দেখো।”

বেলী চট করে বুরাগের দিকে তাকালো।চোখ দুটিতে পানি টুইটুম্বুর।ঠোঁট কামড়ে কান্নাটাকে দমিয়ে রেখেছে।বুরাগ বেলীর মুখপানে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো।ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটিয়ে শিউলির কাছে এগিয়ে গেলো।শিউলিকে কোলে তোলে আদর করে বেলীর সামনে গিয়ে বললো,

–“নাও!তোমার মেয়েকে।কালকে আমাকে অনেক জ্বালিয়ে তোমার মেয়ে বেলী!ওর ডায়াপার পাল্টাতে গিয়ে আমার খুব হিমশিম খেতে হয়েছে।তার উপর কান্না তো আছেই।”

বেলী বুরাগের কথাগুলো কর্ণপাত করেই বুরাগের কোল থেকে চট করে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।উল্টো ঘুরে শিউলিকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো।সেই সাথে,চোখের বন্যা তো আছেই।বুরাগ বেলীর কানে কাছে ফিসফিস করে বললো,

–“খুব কষ্ট দিয়েছি তাই না।ব্যাপার না!রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করো।আমি এসেই তোমার রাগ ভাঙিয়ে দিবো।তৈরি রেখো নিজেকে।”

অশ্রুসিক্ত নয়নে বেলী বুরাগের দিকে তাকালো।চোখে পানি থাকলেও মুখে রয়েছে একরাশ ভয়।যা দেখে বুরাগের খুব হাসি পাচ্ছে।বুরাগ বেলীকে পাত্তা না দিয়ে শিস বাজিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।
—-
স্নিগ্ধা বিছানা থেকে উঠতে নিলেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নেয়।দূর থেকে লিটন দেখেও এগিয়ে আসে নি।অন্যসময় হলে হয়তো লিটন এগিয়ে আসতো।এখন তার আর স্নিগ্ধার মধ্যে আগের মতো সম্পর্ক নেই।দুজন দু’জনের প্রতিপক্ষ হয়ে গিয়েছে।তবে,রাতে দুজন শারীরিক খেলায় মেতে উঠে।সেখানে তারা কেউই কাউকে ছাড় দেয় না।

স্নিগ্ধা কিছুক্ষণ পরেই মুখভর্তি করে বমি করে দিলো।শরীর টাও ম্যাঁচম্যাঁচ করছে।তবে,লিটনের মনে অন্যরকম সন্দেহ বাঁধা বাঁধছে।কারণ,প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগেও পারভীনের মধ্যে এইসব লক্ষ্মণ দেখেছে।কথাটা মাথায় আসতেই লিটন দৌড়ে স্নিগ্ধার কাছে এসে বললো,

–“তুমি কি পিল মিস দিয়েছিলে??”

স্নিগ্ধা চমকে তাকালো লিটনের দিকে।হুট করে মনে পড়ে যায় সে তো পিল মিস দিয়েছে তা বেশ কয়েকদিন ধরেই।এতো ঝামেলার মধ্যে সে পিল খেতে ভুলেই গিয়েছিলো।তাহলে,কি সে প্রেগন্যান্ট।স্নিগ্ধার শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে।লিটনও ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।
___
একদিন বিকেলে সবাই ছাঁদে মাদুর বিছিয়ে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।খুশির কোলে শিউলি হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে আছে।পাশেই হাসি বসা।বেলী রান্নাঘরে গিয়েছে সবার জন্য চা,নাস্তা তৈরি করতে।বুরাগও হাসি খুশির মাঝে বসে ফোন স্ক্রোল করছে।একমুহূর্তে বুরাগের ফোনে রায়ানের ভিডিও কল আসতেই বুরাগ বিরবির করে বলতে লাগলো,

–“শালারপুতের মনে পড়ছে তাহলে আমাকে।”

বুরাগ ফোন রিসিভ করে শিউলির মুখের কাছে ধরলো।যার ফলস্বরূপ খুশিও চলে আসে ফোনের স্ক্রিনে।শিউলি গোলগাল চোখে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনের দিকে।হাত বাড়িয়ে ফোন ধরার চেষ্টা করছে।কিন্তু,খুশির ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই মন খারাপ হয়ে যায়।কারণ,রায়ানের পাশে অতিসুন্দর মেয়েটিকে দেখে খুশি থম মেরে গিয়েছে।

রায়ান অবাক হয়ে দেখছে শিউলিকে আর খুশিকে।মনে মনে আওড়াচ্ছে,

–“নিজেই তো এক বাচ্চা তার উপর আরেকজনকে নিয়ে বসে আছে।”

রায়ান আর অনামিকা হাসছে আর ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে শিউলির সাথে কথা বলছে।ওইদিনের পর থেকে রায়ান আর অনামিকার মধ্যে অনেক ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।কথায় কথায় একপর্যায়ে অনামিকা খুশিকে দেখিয়ে বললো,

–“রায়ান এই মেয়েটাও কিন্তু পুরো পুতুল তাই না।”

রায়ান খুশির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,

–“আমার বউ যে তাই।দেখতে হবে না কার বউ।রায়ানের বউ মানেই পুতুল।”

–“তুমি কি কিছু বলছো রায়ান?”

রায়ান অনামিকার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“না অনা!আমি কিছুই বলছি না।একজনকে শুধু দেখছিলাম।”

রায়ানের মুখে অনা নামটা শুনলেই অনামিকার মনের গহীনে একরাশ লজ্জা এসে ভিড় করলো।রায়ানের মুখে ছোট্ট করে অনা নামটা শুনতে বেশ ভালো লাগে তার।ভালো তো লাগারেই কথা নিজের ভালোবাসার মানুষটির মুখ থেকে এইসব কথা শুনতে যে কারোর এই ভালো লাগবে।আস্তে আস্তে কখন যে সে রায়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে তা সে নিজেও জানে না।তবে,রায়ানকে ছাড়া সে একদন্ডও থাকতে পারবে না।
আর,এইদিকে রায়ান নিষ্পলক চেয়ে আছে খুশির দিকে।খুশি যে একটু বড় হয়েছে তা রায়ান ঠিকই বুঝতে পেরেছে।আচমকাই রায়ানের চোখ পড়লো খুশির কাঁধের দিকে।খুশির জামা থেকে বেরিয়ে আসা ইনার টা দেখে রায়ান অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।নিজেই নিজেকে বলছে,”তোর খুশি একটু না অনেকটা বড় হয়েছে।আর একটু বড় হলেই ওকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসবি।আগের ডিসিশন ক্যান্সেল!!বিদেশ থাকা আর চলবে না।বিডিতে যেতে হবে।অত্যন্ত খুশির জন্য।বিয়েসাদী করে অনেকগুলো বাচ্চার বাপ হতে হবে।খুশির উপর একটু প্রেসার যাবে!সমস্যা নেই আমি খুশিকে একদম শোপিস বানিয়ে রেখে দিবো।কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।তবুও আমার খুশিকে চাই আর সেই সাথে হালি হালি বাচ্চাও।”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here