#উপন্যাস_প্রপর্ণ(৮)
#কুরআতুল_আয়েন
কয়েক সপ্তাহের মতো কেটে যায়।বুরাগ বেলী আগের থেকে অনেকটাই কাছে এসেছে।বেলীর মনে বুরাগের নামটা যেন একদম গেঁথে গিয়েছে।সেই সাথে বুরাগ নামের মানুষটিও অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।যেখানে শুধু বুরাগের বসবাস।না থাকবে কারোর অস্তিত্ব আর না কেউ পারবে সেই জায়গা দখল করে নিতে।প্রতিটা মুহুর্তে বেলী বুরাগকে অনুভব করে।বুরাগের ছোঁয়া যেনো বেলীর মনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে।চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে দরজার পানে কখন বুরাগ আসবে।এমনকি বুরাগের আসতে একটু দেরি হলেই বেলীর মনটা কেমন যেনো অন্ধকারে ডুবে যায়।মনমরা হয়ে বসে থাকে।যখন বুরাগের উপস্থিতি টের পায় তখন তার মন শুধু একটা কথাই ভেবে উঠে তার মতো সুখী মেয়ে মনে হয় আর কেউ নেই।বেলী স্নিগ্ধা আর বুরাগের ওই রাতের ঘটনাটা প্রায়ই ভুলে গিয়েছে।কিন্তু,যখন আবার মনে পড়ে যায় ঠিক তখনই তার হৃদয়ের গহীনে একপ্রকার বিষে ভরে উঠে।তবুও নিজেই নিজের মনকে স্বান্তনা দিয়ে উঠে।আর শুধু ভাবতে থাকে বুরাগের এক একটা স্পর্শের অনুভূতি।বুরাগের স্পর্শে সে তো অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়ে।নিজেকে ঠিক রাখতে কষ্ট হয় তখন।নিজেকে অনেক শক্ত করে রাখলেও ঠিকই পরমুহূর্তেই বুরাগের স্পর্শেই উন্মাদ হয়ে উঠে।বুরাগের প্রতিটি স্পর্শ বেলী ভালোবসার স্পর্শ বলে নাম দিয়েছে।কারণ,বেলী ইদানীং মনে করে বুরাগ তাকে ভালোবেসেই নিজের কাছে টেনে নেয়।কিন্তু,অন্যদিকে বুরাগ বেলীকে কাছে টেনে নিলেও আসলেই কি সে বেলীকে ভালোবাসতে পেরেছে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।এখনো তার মন স্নিগ্ধার জন্য মাঝেমধ্যে হাহাকার করে উঠে।কিন্তু,বুরাগ কিছুতেই বেলীর সামনে নিজের স্নিগ্ধার প্রতি এই দূর্বলতা টাকে দেখাতে চায় না।মেয়েটা ওইদিনের ঘটনাটার পর থেকে অনেক টাই কষ্ট পেয়েছে।এমনকি ওইদিনের ঘটনাটার জন্য প্রায় সময় তার বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্না করে উঠে।তখন বুরাগের বুকটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে।কেন জানি তার খুব কষ্ট হয় বেলীর কান্নায়।বেলীর কান্নামাখা মুখটায় বুরাগ নিজেকে একদম ঠিক রাখতে পারে না।বুরাগ ভেবে পায় না তার সাথে কি হচ্ছে।কেমন একটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছে সে।স্নিগ্ধার জন্য তার এখনো কষ্ট হয় আবার বেলীর কান্নাটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।হয়তোবা বেলী তার সহধর্মিণী এইজন্য বেলীর কান্নায় সে অনেকটা কষ্ট পায়।
আকাশের পশ্চিমের দিকটা যেনো গোধূলির লাল আভায় ভরে উঠেছে।সুর্যটা টাও একদম ডুবে যাচ্ছে।তার সাথে সাথে আশপাশের পরিবেশটাও কেমন অন্ধকারের দিকে গনিয়ে যাচ্ছে।বেলী অনেকটা নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়।কাজের অভ্যাস বলতে গেলে একদমই নেই।আজকে সব কাজ একা হাতে সামলাতে গিয়ে অনেকটাই হিমশিম খেয়েছে।মূলত অনেকটা শখ বশতই সব কাজগুলো করেছে বেলী।বেলীর শ্বাশুড়ি আফিয়া অনেকটাই নারাজ ছিলেন।তিনি কিছুতেই সব কাজ বেলীকে করতে দিবেন না।কিন্তু নাছোড়বান্দা বেলী সব কাজ নিজের হাতেই করবে।যার ফলস্বরূপ এখন শরীর টা অনেকটাই মিহিয়ে গিয়েছে।ঘুমের ঘোরে আশেপাশের কিছুই হুশ থাকে না বেলীর।
লিটন অনেকটা হাসফাস করছে।দিনদিন যেনো বেলীকে পাওয়ার আকাঙ্খা টা আরো বেড়ে উঠছে।মাঝেমধ্যে নিজের পুরুষত্ব ঠিক রাখতেই কষ্ট হয়ে যায়।আজ ভেবে নিয়েছে যে করেই হোক বেলীকে একটু হলেও ছুঁয়ে দিবে।বিছানায় বিদ্যমান পারভীন ঘুমিয়ে আছেন পেটে হাত দিয়ে।অবশ্য,এই সমটায় সবাই ঘুমে থাকে।যার ফলে অনেক কিছুই করা সহজ হয়ে যায় লিটনের জন্য।আগে,যখন স্নিগ্ধা এই বাসায় ঘুরতে আসতো ঠিক এই সময়টায় লিটন স্নিগ্ধা ছাদের চিলেকৌঠার ঘরটার মধ্যে দুজনে এক অপরের শরীর খেলায় মেতে উঠতো।স্নিগ্ধার কথাটা ভাবতেই লিটন মুচকি হাসি দিয়ে দিলো কারণ,আজকে রাতটা হোটলে কাটাবে স্নিগ্ধার সাথে।অনেক ভেবে চিন্তা করে লিটন বের হয়ে আসলো।লম্বা করিডোর টার আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো কেউ আছে কিনা।কারোর ছায়া দেখতে না পেয়ে অনেকটাই দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলো বুরাগের রুমের দিকে।বুরাগ এখন অফিসে আছে তাই অনেকটাই সাহস জুগিয়েছে লিটনের মনে।বুরাগের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে দরজাটাকে আস্তে করে খোলে করে ঢুকে পড়লো।দরজাটাকে মোটামুটি চাপিয়ে রেখে রুমের দিকে আস্তে আস্তে পায়ে অগ্রসর হলো।রুমটা অনেকটাই অন্ধকার হয়ে আছে।পর্দার একটু একটু ফাঁক দিয়ে গোধূলির শেষ আলো রুমটায় এসে পড়ছে।লিটন বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো।বেলী সোজা হয়ে শুয়ে পেটের কাছে হাত দুটো রেখে ঘুমিয়ে আছে।লিটন অনেকবার লালসাযুক্ত চোখ দিয়ে বেলীর দিকে তাকিয়ে নিলো।হঠাৎ চোখ গিয়ে পড়লো শাড়ি সরে যাওয়া মসৃণ পেটটার দিকে।অন্ধকারের মধ্যেও বেলীর ফর্সাযুক্ত মসৃণ পেট টা লিটনের মনকে উত্তপ্ত করে যাচ্ছে।লিটন আর না পেরে বেলীর দিকে এগিয়ে গেলো।খারাপ দৃষ্টি নিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো পেটটার দিকে।আলতো হাত করে ছুঁয়ে দিলো বেলীর পেটটায়।বেলী আগের মতোই শুয়ে আছে।এমনকি একটু নাড়াচাড়াও করে নি।লিটনের ছুঁয়েও মন ভরেনি।তাই আর না পেরে ঠোঁট দুটো এগিয়ে নিয়ে গেলো বেলীর পেটের দিকে।যখনই বেলীর পেটে ঠোঁট দুটো চেপে ধরতে যাবে ঠিক তখনই বেলী ঘুমের ঘোরেই কেশে উঠলো।এতে অনেকটা ভয় পেয়ে যায় লিটন।ভয়ে অনেকটাই পিছিয়েই গেলো।চোখে মুখে তার ভয়ের রেশ।তাড়াহুড়ো করে আর কোনোকিছু না ভেবে দৌড়ে দরজা ভেদ করে বেরিয়ে আসলো।যার ফলে দরজায় অনেকটাই বিকট শব্দ হয়েছে।দরজার বিকট শব্দের জন্য বেলী ঘুমের মধ্যেই লাফিয়ে উঠে।কি হয়েছে তা বুঝার জন্যই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো।দরজা টা হালকা খোলা দেখে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলো।তার স্পষ্ট মনে আছে সে দরজা চাপিয়ে রেখে শুয়েছিলো।কিন্তু এখন খোলা দেখে অনেকটাই খটকা লাগছে।তার উপর একটা শব্দ তার কানে ঠিক এসেছে।বেলী কিছুটা চিন্তিত হয়ে বসে রইলো।তার মাথায় সবকিছু কেমন ঘুরপাক খাচ্ছে।মাগরিবের আজানের ধ্বনি কানে আসতেই এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো।ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।
নামাজ পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো বেলী।এখনো তার মাথায় একটু আগের কাহিনিটা ঘুরপাক খাচ্ছে।কেন জানি খুব সন্দেহ লাগছে।কিছু একটা ছিলো তাই ভেবে।পরমুহূর্তেই ভাবে,হাসি খুশিও থাকতে পারে।হয়তো আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাই না ডেকে দৌড়ে চলে গিয়েছে।তাই আর না ভেবে সিড়ি বেয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।নাস্তা তৈরি করতে হবে।কেটলিতে চা বসিয়ে দিলো বেলী।সিঙ্গারা বানানোর জন্য যাবতীয় জিনিস তৈরি করে নিচ্ছে।বাকিটা শ্বাশুড়ি আফিয়া এসে সাহায্য করবেন।লিটন সোফায় পায়ের উপর পা তোলে বসে ছিলো।এতোক্ষণ সে বসে বেলীকেই দেখছিলো।গলাটাকে একটু ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে ঢুকে পড়লো।বেলীর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বললো,
–“বেলী এককাপ চা হবে।”
বেলী চমকে পিছনে তাকালো।বলতে গেলে অনেকটাই ভয় পেয়ে গেছে।রান্নাঘরে সে একাই ছিলো।এমনকি কেউও এখনো নিচেও নামেনি।তাই হঠাৎ করেই এমন চমকে উঠেছে।পিছনে ফিরে ফুফা শ্বশুড়কে দেখে নিজেকে ঠিক করে নিলো।ছোট করে উত্তর দিলো,
–“জ্বি ফুফা।”
লিটন চলে যায়।কিন্তু যাওয়ার আগে পিছনে ফিরে তাকিয়ে বেলীকে আর একটু দেখে নিয়েছে।বেলী তাড়াহুড়ো করে একটা কাপে দুধ,চিনি পরিমাণমতো দিয়ে নিলো।কেটলির পানিটা হয়ে আসতেই চাপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে কাপটাতে ঢালতে যাবে তখনই হাত ফসকে গিয়ে গরম চাপাতা মিশ্রণের পানিটা বেলীর হাতে পরে যায়।সাথে সাথে জায়গাটা লাল বর্ণ ধারণ করে ফেলে।কোনোমতে চা টা করে গিয়ে ফুফা শ্বশুড়কে দিয়ে আসে।লিটন চা নেয়ার সময় ইচ্ছা করে বেলীর হাতটা স্পর্শ করে দেয়।এতে বেলী অনেকটাই অস্বস্তিতে পড়ে যায়।চা টা দিয়েই চলে আসতে নেয় তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।বেলী দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে।দরজার অপাশে বুরাগকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেকটাই খুশি হয়।বুরাগও বেলীকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লো।বেলী দরজা লাগিয়ে বুরাগের পিছুপিছু এগিয়ে আসছে।
সোফার রুমে শুধু লিটনকে বসা দেখে বুরাগ বেলীর দিকে চোখে আড়চোখে হয়ে তাকালো।হুট করে চোখ পড়লো বেলীর হাতের দিকে।ফর্সা হাতটা লাল হয়ে আছে।বুরাগ আরো একবার সূক্ষ্ম চোখে লিটনের দিকে তাকালো।হাতে চায়ের কাপ দেখে বুঝে নিলো বেলীই চা টা করে দিয়েছে।বুরাগের খুব রাগ হয় এতে।কিছু না বলেই চোয়াল শক্ত করে ধপাধপ্ পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।বেলী বুরাগকের আচরণে অনেকটাই অবাক হয়।তাকে দেখে কিছুই বললো না ভেবে মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়।মন খারাপ করে সেও উপরে চলে গেলো।
লিটন বুরাগকে এতো তাড়াতাড়ি আসতে দেখে বিরবির করে বলে উঠলো,ভাগ্যিস যখন রুমে গিয়েছিলাম তখন আসে নি।নাহলে আজকে আমার অবস্থা খুব বেগতিক হয়ে যেতো।
—————————————
পড়ার টেবিলে মনমরা হয়ে বসে আছে শিউলি।কিছুই ভালো লাগছে না তার।মন শুধু মত্ত হয়ে আছে করিমের ভাবনায়।করিম আর তার ভালোবাসাটা খুব জমে উঠেছে।স্কুলের পথে সবসময় দেখা হয় তাদের।মাঝেমধ্যে শিউলি অর্ধেক ক্লাস করে অসুস্থার নামকরে ছুটি নিয়ে করিমের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে।ইদানীং স্কুলের কোনো ক্লাসেই মন বসে না।মন শুধু করিমের ভাবনায় বিভোর থাকে।
জাবেদা শব্দহীন ভাবে ঘরে ঢুকলেন।টেবিলে শিউলিকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন।কয়েকদিন যাবত জাবেদা শিউলিকে অনেক পরোক্ষ করছেন।মেয়েটা তাঁর অনেক পরিবর্তন হয়েছে।একা একা মিটিমিটি হাসে তার উপর সাজগোছ একটু বেশিই করে।জাবেদা ভেবে পান না শিউলির কি হয়েছে।শিউলি যে তাঁর থেকে কিছু লুকাচ্ছে তা জাবেদা বুঝে নিয়েছেন।শিউলির পাশে গিয়ে বসে পড়লেন জাবেদা।শিউলি এখনো আগের মতো মনমরা হয়ে বসে আছে।সামনে তার বই খোলা থাকলেও চোখ তার বইয়ে নেই।এমনকি মনও নেই।জাবেদা কিছুটা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে শিউলিকে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,
–“পড়তে না চাইলে পড়বি না।কিন্তু বই খোলে রাখবি না।”
শিউলি পিলে চমকে তাকালো পাশে বসা আম্মার দিকে।ভাবনার জগতে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যার ফলে আম্মার উপস্থিতি সে টেরই পায়নি।এমনকি আম্মা যে আজকে কিছুটা কঠিন হয়ে আছে তা শিউলি আম্মার গম্ভীর কন্ঠের আওয়াজ পেয়ে বুঝে গিয়েছে।কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না শিউলি।মাথাটা নিচু করে রেখেছে।
শিউলির এমন আচরণে জাবেদার মনের সন্দেহ টা যেনো আর একটু গাঢ় হয়ে গেলো।জাবেদা তা বাহিরে প্রকাশ করলেন না।টেবিলের উপর থাকা বইটা বন্ধ করে দিয়ে আগের মতো গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
–“কি হয়েছে তোর বল তো।কিছু কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে?”
শিউলি ভয়ে জমে গিয়েছে অনেকটাই।হাতের ছোট ছোট লোমকূপের ভিতরে ঘামের আস্তরণ তৈরি হচ্ছে।এমনকি কপালেও তার চিকন ঘামের সূচনা।আম্মাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা আমতাআমতা করে বললো,
–“না আম্মা আমি তোমার থেকে কিছুই লুকাচ্ছি না।”
বলেই বই টা নিয়ে খোলে বইয়ে চোখ গুজে দিলো শিউলি।
জাবেদা আর কিছু বলে না।শিউলির দিকে কিছুক্ষণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে উঠে পড়লেন।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে না বেলীর।ঘুম না আসারই কথা।দুপুরে গাধার মতো ঘুমিয়েছে যার ফলে এখন আর ঘুম আসছে না।তার উপর পোড়া জায়গা টা জ্বলে উঠছে।কিছুই লাগানো হয়নি পোড়া জায়গাটাতে।পাশে বুরাগ একপাশ হয়ে শুয়ে আছে।বেলী দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো।রাত প্রায় দুটো বাজে।বেলী আর না শুয়ে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো।ধীরগতিতে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো।
বুরাগ একপাশ হয়ে শুয়ে থাকলেও ঘুমোয়নি।বলতে গেলে তার ঘুম আসছে না।ভিতর টা কেমন অস্থির করছে।তার উপর এক অজানা ভয়ের কাজও করছে।কিছুতেই মানতে পারছে না বেলীর লিটনকে চা করে দেওয়াটা।শুধুমাত্র নিজের ফুপির কথাটা ভেবে কিছুই বলতে পারছে না।তার উপর তার ফুপি অনকটাই অসুস্থ।বুকে হাত গুজে একপাশ হয়ে শুয়ে থেকেও তার ভালো লাগছে না।পিছনে ফিরে পাশে বেলীকে না দেখে মাথাটা উঁচু করে বারান্দার দিকে চোখ নিক্ষেপ করে তাকালো।বারান্দার থাইগ্লাস টা খোলা দেখে বুঝতে পারে বেলী বারান্দায় আছে।শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো বুরাগ।পাশের সাইড বক্স টা থেকে একটা মলম নিয়ে এগিয়ে গেলো।
বেলী বাহিরের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত।ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে চারপাশ থেকে।বুরাগ বেলীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।হাত টা ধরে নিজের দিকে ফিরালো।বেলী চমকে পাশে তাকালো।পাশে বুরাগকে দেখে বললো,
–“ঘুমান নি আপনি।”
বুরাগ বেলীর কথায় কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।পোড়া জায়গা টায় মলম লাগিয়ে দিচ্ছে খুব মনোযোগ সহকারে।মলম লাগানো শেষ হলেই বলতে শুরু করলো,
–“হাত পুড়িয়ে চা খাওয়ানোর দরকার টা কি।”
বেলী মুচকি হাসি টেনে বললো,
–“ফুফা বলেছিলেন তাই না করতে পারি নি।আর,এইটা তো আমার কর্তব্য তাই না।এই বাসার বউ আমি।”
বুরাগ কিছু না বলে ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।আস্তে আস্তে বেলীর কিছুটা গা ঘেঁষে দাঁড়ালো।বেলী বুরাগের হাবভাব বুঝতে পেরে শুধু মিটিমিটি হাসছে।বেলীর মিটিমিটি হাসিটা ঠিকই বুরাগের চোখে পড়েছে।বুরাগ কিছুটা সরু চোখে তাকিয়ে বেলীকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে।বুরাগ বেলীকে নিজের সাথে অনেকটাই জোরে চেপে ধরে বললো,
–“হাসছো কেন?”
বেলী আমতাআমতা করে বললো,
–“না এমনেই।”
বুরাগ আস্তে করে নিজের মুখটা বেলীর গলার কাছে নিয়ে গেলো।নিজের সরু নাক টা দিয়ে বেলীর গলায় স্লাইড করতে করতে বললো,
–“কি এমনেই!”
বেলী ঝটপট উত্তর দিলো,
–“কিছু না!”
বুরাগ ভ্রু কুঁচকে তাকালো বেলীর দিকে।বেলী মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।বুরাগ মুচকি হাসি টেনে বেলীর ডান গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বসলো।পরক্ষণেই বেলীকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।বেলীও নিজের মাথাটা বুরাগের বুকে এলিয়ে দিলো।অনেকক্ষণ হলো দুজনে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছে।বেলী কিছুটা কোমল কন্ঠে বলে উঠলো,
–“ভালোবাসেন আমাকে?”
বুরাগের হাত দুটো আলগা হয়ে গেলো।নিজের থেকে বেলীকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ালো।খুব উশখুশ করছে সে।বেলীর প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।বেলী এখনো উত্তরের অপেক্ষায় বুরাগের মুখপানে চেয়ে আছে।বুরাগ কিছুটা তাড়া দিয়ে বললো,
–“অনেক রাত হয়েছে বেলী ঘুমোতে আসো।”
বুরাগ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলো রুমের দিকে।বিছানায় আগের মতো একপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো।বেলী ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে বুরাগের দিকে।আর কিছু না বলে গ্রিলে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।চোখের কার্ণিশ ভিজে উঠছে তার।ঠোঁট কামড়ে শুধু কান্নাটাকে দমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
চলবে..
(ছোট হয়ে গেছে পর্বটা।তাও আমার কিছুই করার নাই।🙂)