#উমা [কপি করা নিষেধ]
৪৪তম_পর্ব
রাজশ্বী চলে গেলে গভীর চিন্তায় পড়ে যায় শাশ্বত। সে কখনো গভীরভাবে চিন্তা করে নি। অভিনব সিংহের পতনে কার লাভ হবে! রকিবুল মাষ্টার নাকি অন্য কেউ! হঠাৎ ফোনের শব্দে চিন্তায় ভেদ ঘটে। ফোনটা রিসিভ করতেই শাশ্বতের মুখশ্রী বদলে গেলো। এক চিলতে হাসি বিস্তৃত হলো ঠোঁটের কোনায়। নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
“আমি আসছি, অপেক্ষা করুন”
ফোন রেখে উঠে দাঁড়ালো শাশ্বত। মানিব্যাগটা পকেটে পুড়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। শাশ্বতের চলে যাওয়া দেখে রাজশ্বী সুমনকে প্রশ্ন করে,
“স্যার কি সর্বদা দৌড়ের উপর ই থাকে?”
“খানিকটা থাকে, আসলে সিনিয়র রিপোর্টার কি না, যেখানে নিউজের কিছু পান কভার করার চেষ্টা করেন। এই পাড়ের সবচেয়ে দাপটে সাংবাদিক উনি। বড় বড় নেতা গোতারাও ভয় পায় তাকে। জানো বহুবার তাকে বলা হয়েছে ঢাকা যেতে, স্যার ই রাজী হন নি। কেনো হন ন উনি ই জানেন”
রাজশ্বী সুমনের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছে, কিন্তু দৃষ্টি শাশ্বতের যাবার পানেই রয়েছে। লোকটিকে খুব অদ্ভুত ঠেকে রাজশ্বীর কাছে। কেমন যেনো রহস্যময়ী, সর্বদা কিছুর খোঁজে থাকে। কিসের খোঁজ জানা নেই তবে সর্বদা কিছু না কিছু খুজতেই থাকে। রাজশ্বী শাশ্বতকে খুব সূক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এই তপ সেদিন একজন নামী ব্যাবসায়ী তার অফিসে এসে তার সামনে একটা মোটা বাক্স রাখলো, অনুরোধ করলো যেনো কোনো খবর না করে। কিন্তু শাশ্বত এসবের ধার ধারে না। সে স্পষ্ট স্বরে বলে দিলো,
“এখন ই এই পেটি নিয়ে বেড়িয়ে যাবেন৷ আমি যেনো আপনার মুখখানা দ্বিতীয় বার না দেখি”
রাজশ্বীর মাঝে মাঝে ইচ্ছে জাগে, লোকটির মতো হবার। লোকটির ন্যায় ন্যায়পরায়ণ, সাহসী সাংবাদিক হবার মনোবাঞ্ছা তাকে বিচলিত করে। তাইতো মন দিয়ে কাজ করে সে। যেনো শাশ্বত ভুল ধরতে না পারে। কিন্তু শত চাইবার পর ও কেনো যেনো সব গুবলেট হয়ে যায়। তখন সুমন ধীর স্বরে বলে,
“আচ্ছা রাজশ্বী, এবারে তোমাকে যদি পুরো একখানা খবর কভার করতে দেই কেমন হবে?”
“ঠিক বুঝি নি”
“বলছি, শিবপুর ইউনিয়নের দিকে বেশ কিছু জমি দখল করা হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম ফাকা হয়ে যাচ্ছে। তুমি কি আমার সাথে অদিকটা যেতে পারবে?”
“কবে যাবেন”
উৎসাহিত কন্ঠে প্রশ্নটি করে রাজশ্বী। সুমন কিঞ্চিত অবাক হয়, তার ধারণা নারী মানেই ভীতু। সে কল্পনা করেছি রাজশ্বীকে প্রশ্নটি করলে সে ভয়ে শিটিয়ে যাবে। কিন্তু তা হলো না। উলটো তার মাঝে এক অদম্য জ্যোতি জ্বলজ্বল করে উঠলো। দূর্দান্ত প্রেরণা নিয়ে উদ্যমী কন্ঠে সে প্রশ্নটি করলো। সুমন স্মিত হেসে বললো,
“তোমার কলেজ বন্ধ না শুক্রবার?”
“শুক্রবার ব্যাতীত যাওয়া যাবে না?”
“সারাদিনের কাজ তো শুক্রবার গেলেই ভালো হয়”
রাজশ্বী কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,
“আসলে দিদি জানে না আমি সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েছি। সে জানে আমি বাচ্চা পড়াই। তাই চাচ্ছিলাম অন্য এক দিন যেতে।”
“সমস্যা নেই, বলবে ছাত্রীর পরীক্ষা। যেহেতু ওদিকে যাচ্ছি এক বেলা তো লাগবেই।”
“ঠিক আছে তাহলে কথা বলবো নে”
“খুব বড় খবর, তোমার নিজের জন্য ই ভালো”
রাজশ্বী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর নিজ কাজে লেগে পড়ে। সত্যি অনেক বড় একটা খবর, সুমনের সাথে এটায় কাজ করলে সাংবাদিকতায় সে একটি বড় ধাপ পাড়ি দিবে। ভেবেই মন প্রসন্নতায় ছেয়ে গেলো রাজশ্বীর, লক্ষের দিকে একপা দুপা করে এগিয়ে যাচ্ছে সে। একদিন ঠিক লক্ষ্যজয় হবেই_________
২৩.
সূর্যোস্তের সময়, নীল আকাশ লাল আভায় ছেয়ে গিয়েছে। পাখিরা বাড়ি ফেরার তাগিদে ছুটছে। আযানের ধ্বনি কানে আসছে। শীতের প্রতাপটা কমছে না, গতরাতে বরফ পড়ার মতো ঠান্ডা লাগছিলো উমার। মাঘের শেষ সপ্তাহ চলছে। গাছের পাতাগুলো খয়েরি হয়ে গিয়েছে। নতুন কচি পাতা মাথা চিরে উঠছে। শীতের প্রকোটতা শেষের লগ্নে, বসন্ত আছসে জানান দিয়ে। বরই গাছটা কেটে ফেলেছে রুদ্র। তুলসি গাছে পানি দিয়ে হাত জড়ো করে প্রনাম করে উমা। ফুলির মা শাখ বাজাচ্ছে। পেটটা একটু ভারী হয়েছে। ডাক্তার তাকে বলেছে বেশি বেশি মাছ মাংস খেতে, ছিপছিপে গড়নের শরীরটা নাকি একটু বেশি দূর্বল। বাচ্চা হবার সময় ঝুকি থাকবে। তাই ক্ষণে ক্ষণে কিছু না কিছু নিয়ে হাজির হয় ফুলির মা। উমা প্রণাম করে প্রদীপ জ্বালায়। তখন ফুলির মার তীক্ষ্ণ কন্ঠ শোনা যায়। মিনুর সাথে লেগেছে। ফুলির মার আসার পর থেকে মিনুর সাথে লেগেই থাকে। উমার মুখে এক রাশ বিরক্তি ভেসে উঠে। সে শালটা ঠিক করে ভেতরে যায়। গোপালের উচ্চস্বরে পড়া শোনা যাচ্ছে। উমা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কি হলো ফুলির মা, চিৎকার করছো! যে? গোপাল তো পড়ছে নাকি”
“আমি কিতা করাম, এই মাইয়া একটা কাম চোর”
“মিনু আবার কি করেছে?”
ফুলির মার ধারণা মিনু একজন অকর্মণ্য মেয়ে। তার বিয়ে হলে সে স্বামীর ঘরে কিছুই করতে পারবে না। উমার প্রশ্নে সে কালো পোড়া পাতিল এগিয়ে বলে,
“দেখো বউ, আমি ওরে বললাম, আমি শাখ বাজাতে যাচ্ছি তুই বউ এর জন্য আপেলটা কাটে দে আর দুধ গরম কর। মাইয়া টিভি দেখতে বইছে। দুধ টা পুড়ায়ে দিছে। কতবড় অমঙ্গল হইলো”
“এগুলো কুসংস্কার, এসব কিছুই হয় না”
“তুমি জানো না বউ, দুধ পোড়া অশুভ। না জানি কোনো অঘটন ঘটবে। এই ছেড়ীরে কইলাম ল, দুধ পোড়াবি না। কিন্তু সারাডাক্ষণ শুধু ডিব্বার সামনে বইসে গীত শুনে।”
উমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সময় এগোলেও মানুষগুলো এখন আগের মতোই আছে। কুসংস্কারে ঘেরা। শীতল কন্ঠে বললো,
“ফুলির মা, এমন কিছুই হয় না। অসর্তকতায় দুধ পুড়ে গেছে। ব্যাপারটি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই নিয়ে এতোটা চিন্তা করার কি আছে তাতো বুঝছি না। আর মিনু, তোমাকে বারংবার বোঝাতে বোঝাতে আমি ক্লান্ত। ঠিক সময়ে ফুলির মা যদি না দেখতো একটা অঘটন ঘটে যেতে পারতো। পাতিল দেখে বোঝা যাচ্ছে আগুন ধরে গিয়েছিলো। তাই বলি একটু সতর্ক হও। অঘটন৷ ঘটতে সময় লাগে না। গ্যাসের চুলো। আগুন ধরলে রক্ষে নেই। তাই বলছি একটু সতর্ক হও। ফুলির মা, তুমিও রবার ক্ষান্ত দেও। বাচ্চা মেয়ে, বুঝালে বুঝবে।”
উমার কথায় শান্ত হলো ফুলির মা, কিন্তু মন কু ডাকছে। কেনো যেনো তার মনে হচ্ছে কোনো অঘটন ঘটবে। তাও অতি শীঘ্রই।
উমা নিজের ঘরে পড়তে বসে। গর্ভাবস্থায় ও পড়ালেখায় কোনো ঘাটতি রাখে নি উমা। কলেজে যাচ্ছে, পরীক্ষাও দিচ্ছে। ছয়মাসের সময় শিক্ষকদের বলে বন্ধ দিবে সে, রুদ্রের সাথে তেমনটাই কথা হয়েছে। এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠে তার। অচেনা নম্বর দেখে কপাল কুঞ্চিত হয়ে আছে উমার। ফোনটা ধরতেই এক অচেনা কন্ঠ কানে আসে উমার,
“উমা রায় বলছেন?”
“জ্বী, বলুন”
“আমি কালীগঞ্জ থানার ওসি শ্রাবণ মুখোপাধ্যায় বলছি, বিগত সপ্তাহে আপনি একজন নিখোঁজ মানুষের নামে রিপোর্ট করান। সেই বিষয়ে কিছু কথা বলতাম”
“জ্বী, উনার পরিবারের মানুষের খোঁজ পাবার জন্য রিপোর্টটি করিয়েছিলাম। উনি হাসপাতালে ভর্তি এখনো। তার চিকিৎসা চলছে। জ্ঞান ফিরেছে উনার?”
উমার প্রশ্নে শ্রাবণ ধীর কন্ঠে বলে,
“জ্বী, উনার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু একটা খারাপ খবর ও আছে।”
“খোলশা করে বলুন তো”
“উনার জ্ঞান ফিরেছিলো গতকাল রাতে, কিন্তু আজ সকালেই উনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না……….
চলবে
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব আজ রাত পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ]
মুশফিকা রহমান মৈথি
৪৩তম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/444874670567644/