#উমা [কপি করা নিষেধ]
৪৭তম_পর্ব
রুদ্র হাটু গেড়ে নিয়ে বসে। মনোযোগ দিয়ে দৃষ্টি দেয় তার ছোট বউটির দিকে।তার ষোড়শী এখন আর ষোড়শী নেই। একজন পূর্ণ নারী। কিছুদিন বাদে একজন সন্তানের মা হবে সে। সন্তান জন্ম দেওয়া কতোটা কঠিন তা উমার চেহারা দেখলেই আন্দাজ করা যায়। বমি করার দরুন চোখগুলো বসে গেছে উমার। খুব ক্লান্ত লাগছে তাকে। ঘুমটাও গত ল্রাতে ভালো হয় নি। উমার কোমড় জড়িয়ে ধীর স্বরে বলে,
“আমার উপর কখনো রাগ হয় না তোমার?”
“কেনো বলুন তো?”
“এই যে! আমি তোমাকে সময় নিতে পারি না, ব্যাস্ত থাকি নিজেকে নিয়ে। তোমার যত্ন নেই না।”
উমা মুচকি হেসে বলে,
“আপনি যা দিয়েছেন আমার জন্য যথেষ্ট। ভালোই তো আছি। আমার কোনো আক্ষেপ নেই।”
রুদ্র জড়িয়ে ধরে উমাকে। গরম নিঃশ্বাসে পুড়ে যাচ্ছিলো উমার ভেতরটা। তখন রুদ্র ধীর স্বরে বলে,
“তোমার এই উষ্ণ হৃদয়টা কখনো শীতল হবে না তো?”
রুদ্রের প্রশ্নে অবাক হয়ে যায় উমা। কিছু বলার আগেই রুদ্র স্নিগ্ধ কন্ঠে আওড়ালো,
“আজ
ফাগুনের সকাল বেলায় আলোর
রঙটা ভিন্ন রকম
চাইছে সে রং রঙের দোলায়
আজ ফাগুনে তোমায় প্রথম
আজ ফাগুনের হাওয়ায় দখিন
ভালোবাসা আলোর ভেলায় দুলছে কুসুম
ভোরের
থেকে বাড়িয়ে দিচ্ছে মিষ্টি একটা কি পিপাসা তোমার
ঘ্রাণে আমার আমি যাচ্ছি মেখে
আজ ফাগুনে কিছু খোপায় ফাগুনের ঘর
তারই থেকে একটুকু দেয়
বাসন্তি প্রেম তার জন্য আমার
আমি ফাগুন বিভোর ফাগুন ছন্দ দুহাত
ভরে দিয়ে দিলেম”
ভোরের স্নিগ্ধ কিরণে গভীর নয়নে চাইলো উমা। রুদ্রের চোখের অজানা মায়ার সাগরে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পারছে। উমা আলতো হাতে রুদ্রের মুখখানা তুলে ধরলো, নিবিড় চুম্বন আকলো রুদ্রের ললাটে। রুদ্র নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো উমাকে। সময়টা যেনো থমকে গেছে। শীতল আবহাওয়ায় উষ্ণ আবেশে মত্ত রুদ্রের বিচলিত হৃদয়ে প্রসন্নতার ছোয়া বুলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কোথাও যেনো উমার হৃদয়ের কর্ণিশে নিকষকৃষ্ণ ভয় উঁকি দিচ্ছে। ভয় হচ্ছে এই ভালোবাসার কোমল আবেশটি নীল বিষাক্ত যন্ত্রণায় পরিণত না হয়ে যায়। নামহীন ভয়ের কারণটি জানা নেই। তবে ভয়ের চিত্রটি খুব বিশ্রী দেখতে। বিশ্রী তার হাতপা। উমা আলিঙ্গন দৃঢ় করলো। এই মানুষটিকে হারাতে নারাজ সে। আপন বলতে তো এই কটা মানুষ ই রয়েছে।
রাজশ্বী চটের ব্যাগখানা কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। আজ শুক্রবার, সুমনের সাথে শিবপুরের ওখানে যেতে হবে। বেশ কটা গ্রাম রাতারাতি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দখলে চলে আসছে অন্য মানুষ। অথচ ব্যাপারখানা সম্পূর্ণ ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে সূক্ষ্ণ নিপুনভাবে। দিদিকে মিথ্যে বলতে ভালো লাগে না রাজশ্বীর, কিন্তু সত্যটাও বলতে পারছে না। তাই সত্য লুকাতে হচ্ছে। মহাভারতেও যুধিষ্ঠির সত্য লুকিয়েছিলেন। রাজশ্বী তো পাপ কার্য করছে না, সে ন্যায়ের জন্য পথ বেছে নিয়েছে। পথখানা দূর্ঘম বিধায় দিদির হয়তো আপত্তি হবে৷ সেকারণেই সত্য লুকানো। রাজশ্বী ঘর থেকে বের হতেই মুখোমুখী হলো রুদ্রের। রাজশ্বীকে তৈরি দেখে সে সরু দৃষ্টিতে চাইলো। শান্ত কন্ঠে বলল,
“যতদূর জানি আজ তোমার কলেজ নেই, কোথায় যাচ্ছো?”
“আজ ছাত্রের পরীক্ষা নিবো তো তাই”
বলেই তাকে পাশ কাটিয়ে হাটা ধরলে রুদ্র বলে উঠে,
“ছাত্রের বাসাটা কি ” সময়ের খবর” অফিস? শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করবো, কি লুকাচ্ছো?
শান্ত কন্ঠের কথাটা হিম ধরিয়ে দিলো রাজশ্বীর শিরদাঁড়ায়। ভীত সন্ত্রস্ত চোখে তাকালো সে। রুদ্র তখন বললো,
“আমি মানুষটা ভয়ংকর হলেও এতোটা খারাপ নই যে আমাকে মিথ্যে বলা লাগবে, যদি সত্যিটা বলো এমন ও হতে পারে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো।”
রাজশ্বী কিছুসময় চুপ থেকে বলে,
“আমি ওখানে ইন্টার্ণ হিসেবে কাজ করছি। বেশ কিছু মাস শাশ্বত দায়ের অফিসে কাজ করছি। দিদিকে জানাবেন না জামাইবাবু, দিদি রাগ করবে”
“যখন তোমার দিদি জানতে পারবে তখন? তখন কি বলবে”
“জানা নেই, তবে এখন জানাতে চাচ্ছি না।”
“সাংবাদিকতা ভয়ংকর পেশা। জীবনের ঝুকিও রয়েছে।”
“জানি, জীবনের ঝুকি তো সর্বত্র ই। আপনি রাজনীতিতে আসেন, ওখানে কি ঝুঁকি নেই? আছে। তাহলে শুধু ভয় পেয়ে লাভ আছে?”
রুদ্র রাজশ্বীর যুক্তিতে চুপ করে গেলো। বাঁকা হাসি হেসে বললো,
“আমার নাম্বারটা রাখো, যদি কখনো কোনো ঝুঁকি অনুভব হয় আমাকে ফোন করবে, মনে থাকবে”
রাজশ্বী ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো। এর পর সে বেড়িয়ে গেলো। রুদ্র সরু দৃষ্টিতে রাজশ্বীর যাবার পানে তাকিয়ে রইলো। তারপর বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হলো তার।
২৪.
উষ্ণ রোদে আরাম কেদারায় বসে রয়েছেন অভিনব সিংহ। তার হাতের পাশে কাঠের টেবিলটিতে উষ্ণ গরম চা এবং আজকের খবরের কাগজটি রাখা৷ বার্ধক্য চোখে সোনালী বর্ডারের চশমাটা পাঞ্জাবির কোনা দিয়ে পরিষ্কার করলো সে। তারপর খবরের কাগজটা হাতে নিলো সে। কাগজটি খুলতেই কপাল কুঞ্চিত হয়ে আসলো তার। তখন ই দীপঙ্কর কড়া নাড়লো দরজায়। অভিনব চোখ ঘুরায়। দীপঙ্গকর ভীত চাহনীতে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। অভিনব সিংহ অভয় দিয়ে বলে,
“কি হয়েছে দীপঙ্কর?”
“পুলিশ এসেছে জ্যেঠু……..
চলবে
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল বিকেলে পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ]
মুশফিকা রহমান মৈথি
৪৬তম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/446088660446245/