#উমা [কপি করা নিষেধ]
৯ম_পর্ব
অন্দর মহলে যেতেই নিখিলের ভীত মুখটা নজরে পড়লো। রুদ্রের দিকে চাইতেই হিম ধরে আসলো তার। চোখ জোড়া লাল হয়ে রয়েছে, চোয়াল শক্ত। অবাক উমা কারণ বুঝলো না। এতোক্ষণ তো ভালোই ছিলো। হুট করে কি এমন হলো! রুদ্রের নজর উমার দিকে পড়তেই বললো,
“বাড়ি চলো এখনই। এখানে এক মূহুর্ত নয়”
“কিন্তু….”
“কথা কি কানে গেলো না নাকি? এক কথা ক বার বলতে হয় তোমাকে! তোমার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য যে আমি এই ছোটলোকের ঘরে কদম রেখে ছিলুম৷ কিন্তু সেটাই আমার ভুল৷”
রুদ্রের রাগের স্পষ্ট কারণ বুঝতে পারছে না উমা। নিখিল বাবুর লম্বাটে মুখখানি আরোও লম্বা হয়ে গেলো। তাকে নিতান্ত অসহায় ভীত কন্যের পিতার মতো লাগছে যার প্রতি মূহুর্ত একটাই চিন্তা, জামাই যেনো সন্তুষ্ট হয়। নতমস্তকে এগিয়ে এলেন তিনি। আকুল আবেদনের স্বরে বললেন,
“বাবা জীবন কি গোসা করলে?”
নিখিল বাবু অসহায়ত্বের ভনীতা সহ্য হলো না রুদ্রের। নিখিল বাবুর মতো মানুষেরা শিরদাঁড়াহীন হয়, ভীতু হয়, কাপুরুষ হয়। শুধু তাই নয় তাদের নিজস্ব সত্তা থাকে না। তারা পরজীবের ন্যায় বাঁচে। অন্যের সাহায্য দয়া ব্যাতীত একমূহুর্ত ও তারা জীবিত থাকতে পারে না। নিখিলবাবুর এই স্বভাব রুদ্রকে বিরক্ত করতো না যদি না উমাকে নিয়ে রতীরাণী কটুক্তি করতো।
কিছুক্ষণ পূর্বের কথা, রুদ্র বাড়ির পেছনের কলপাড়ে হাত ধুতে গিয়েছিলো। হেসেলে তখন রতীরাণী এবং গ্রামের কিছু মহিলারা পিঠা বানাচ্ছিলো। চেয়ারম্যান পুত্রের আপ্পায়নের কমতি রাখবে না সে। এর মাঝেই এক নারী হিনহিনে স্বরে বললো,
“রাজীর মার তো ভাগ্য খুলে গেলো লো। মেয়ে এখন অভিনব সিংহের বাড়ির বউ। এখন তোমার ভাব ই তো আলাদা। উমার শাড়িখান দেখেছো, কি দামি! অন্তত পাঁচশ-হাজার টাকা তো হবেই। আর গয়না, বাবা রে পুরো সোনায় মুড়িয়ে রেখেছে। তা তোমাদের জন্য তো তেমন কিছু আনলো না!”
“আরে সবুরে মেওয়া ফলে। মাত্র তো কদিন হলো বিয়ের। এখন কি সব হাতাতে পারবে। আস্তে আস্তে সব ই হবে।”
“উমা রাজী হবে? অত্যাচার, খোটা তো কম দাও নি। দেখো মেয়ে না আবার চোখ উল্টায়”
রহিমার কথায় খানিকটা বিরক্ত বোধ হলো রতীর। মুখখানা বাঁকিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“কেনো গো! দেখবে না কেনো? আরে চেয়ারম্যানের বাড়ির বউ হয়েছিস কি নিজ যোগ্যতায়। হয়েছিস আমার জন্য। আমি তোরে খাওয়াইছি পড়াইছি! মা তো ছেড়ে গেছিলো সেই ছোটকালেই। ওই অলক্ষীরে ঘরে না রাখলে এতো ধিঙ্গি কেমনে হতো? এখন টাকা হয়েছে বলে তুই চোখ উল্টাবি! এতো সহজ হয় গো! এতো সহজ নয়। আমার নামও রতী, দেখো না এই বছরেই এই চালা ঘর পাকা যদি না করি আমার নাম ও রতী না।”
“তাহলে কি ডাকবো, ফুলবানু?”
হেসেলে হাসির ঢল পড়লো। কিন্তু অপরদিকে রুদ্রের মাথায় আগুন জ্বললো, মাথার শিরা ফুলে উঠলো অসম্ভব ক্রোধে। পত্নীর মাতা না হলে জিব ছিড়ে ফেলতো সে। কিন্তু রতী সম্পর্কে তার শ্বাশুড়ি। উপরন্তু গতরাতে যা করেছে তারপর পুনরায় একই কাজ করাটা ভালো হবে না। কিন্তু রুদ্রের রাগ ও পড়লো না। আরোও রাগ হলো উমার প্রতি। এতো অবুঝ মানুষ কি করে হয়! যে বাড়িতে তার আপ্পায়ন শুধুমাত্র পয়সার লোভে হয় সেই বাড়িতে আসার জন্য এতো উতলা ছিলো এই মেয়ে। রুদ্র এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না। বসার ঘরে এসে হুংকার ছাড়তে লাগলো। বিষের মতো গায়ে বিধছে এই বাড়ি। এক মূহুর্ত এই বাড়িতে থাকলে হয়তো তার গা ঝলছে যাবে।
নিখিলের প্রশ্নে অগ্নিদৃষ্টি প্রয়োগ করলো রুদ্র। নিখিল বাবুকে দেখে রাগ সংবরণ হচ্ছে না। ঘাড়টা শক্ত করে ধরে বললো,
“তুই কি ভাবিস? আমি নেশা করি বলি আমার মাথা কাজ কররে না? তোরা তলে তলে জাহাজ চালাচ্ছিস সেই খবর আমার আছে। অভিনব সিংহের আত্নীয় হয়েছিস বলে বেশি উড়িস না। ডানা ভেঙ্গে মাটিতে পড়লে একেবারেই চিত পটাং”
রুদ্রের এমন ব্যাবহারে উমা ছুটে আসে। রুদ্রের হাত থেকে বাবাকে ছাড়ায় সে। তীব্র স্বরে বলে উঠে,
“পাগল হয়ে গেলেন নাকি? কি করছেন?বাবার লাগবে?”
“লাগুক, ইচ্ছে তো করছে এখানেই পুতে ফেলতে।”
উমা নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। সবকিছুর সীমা থাকে। আজ রুদ্র সীমা লঙ্গন করছে। শেষমেশ তার বাবার অসম্মান করতেও পিছপা হচ্ছে না। এক বাড়ি লোকের সামনে নিজের বাবার অপমান সইতে পারলো না উমা। রুদ্রকে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলো। তাল সামলাতে না প্পেরে দু কদম পিছিয়ে গেলো রুদ্র। উমা কাঁপছে, শুকনো কাঠির নেয় শরীরটা কোনো মনে মাটি আকড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। উমার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়াচ্ছে। কিন্তু তেজ দমলো না। রুদ্রের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রইলো সে। রুদ্র অবাক হলো, উমার এমন রুপ যেনো ধাতস্থ হতে পারলো না। এদিকে জড়ানো কন্ঠে তীব্র স্বরে উমা বললো,
“অনেক হয়েছে, এবার থামুন। রেহাই দেন আমাদের। আপনি বাড়ি যাবেন তো। চলুন, এক মূহুর্ত থাকবো না আমি এখানে। আমার সামনে আমার বাবাকে অপমান করবেন আর আমি সেটা মুখ বুজে মেনে নিবো তা হতে পারে না।”
উমার কন্ঠ কাঁপছে, চোখ লাল হয়ে আছে। এক বাড়ি লোকের সামনে নিজের অপমান যেনো হজম হলো না রুদ্রের। ক্রোধে গা কাঁপছে। রোষের তাড়নায় নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না সে। উমার নরম হাতটা শক্ত করে ধরে টানতে টানতে বেড়িয়ে গেলো সে। নিখিল বাবু মেয়েকে বাঁচানোর আকুতি করলো,
“বাবা, উমার ভুল হয়ে গেছে। ও বাচ্চা মেয়ে। বুঝে নি।”
কিন্তু কে শুনে কার কথা! টানতে টানতে ভ্যানে তুললো সে। ভ্যান ওয়ালা রুদ্রের শক্ত মুখখানা দেখে কিছু বলতে পারলো না। এদিকে কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে বিধছে উমার। ব্যাথায় রীতিমতো কুকিয়ে উঠছে সে। কিন্তু সেই আর্তনাদ রুদ্রের কানে গেলো না। সে তার বাঁধন হালকা করলো না। ভ্যান থামলো চেয়ারম্যান বাড়ি। উমাকে টানতে টানতে দোতালায় নিয়ে গেলো সে। রুদ্রের রুদ্রমূর্তি যেনো সবার অবগত, ফুলির মা চেয়েও কিছু বললো না। মালিনী নিজের ঘরে চলে গেলো। লক্ষী দেবী তার ঠাকুরের ঘরেই বসে রইলেন। উমার আকুল নিবেদন কারোর কারে গেলো না। বারংবার বললো,
“আমার ব্যাথা লাগছে ছাড়ুন। ব্যাথা লাগছে”
ফুলির মা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মনে মনে বললো,
“এই বাড়িতে সব মাইয়াগোর এই একই হাল”
রুদ্র ঘরে ঢুকেই ডোর দিলো। ছুড়ে ফেললো উমাকে মাটিতে। তারপর হাটু গেড়ে বসলো তার সামনে। মুখটা শক্ত করে ধরে নিজের দিকে নিলো। দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
“খুব তেজ না? খুব তেজ? বাপের বাড়ি গিয়ে তোর তেজ বেড়েছে! একটু আদর কি করেছি মাথায় উঠে নাচতে লেগেছিস? আজ এমন শাস্তি দেবো চিরটাকাল মনে রাখবি”
উমা কোনো কথা বলার পূর্বেই……..
চলবে
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল রাতে দিবো।]
মুশফিকা রহমান মৈথি
৮ম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/417216826666762/