#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২১
_________________
আততায়ী লোক দুটো সম্পূর্ণ একদিন বন্দি অবস্থায় ছিল এন্ডারসন হাউজের বেজমেন্টে। আজ সকালে ছাড়া পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ সে চিন্তা নাকচ করেছে ক্যানিয়ল। লোক দুটোকে মারধর করে আটকে রেখেও বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। কারণ, তারা তেমন কিছুই জানে না। লিডারের কথায় তারা ক্যানিয়লকে আক্রমণ করে ওর মনে ভয় ঢোকানোর কাজে নিযুক্ত হয়েছিল। তারা কেবলই হুকুম পালন করার জন্য এসেছিল। কার নির্দেশে তাদের গ্যাং এই কাজ করছে সে ব্যাপারে কিছুই জানে না তারা। একজন আততায়ীর ফোনে তাদের লিডারের কল এসেছিল। ক্যানিয়ল কল ধরে অনেকক্ষণ যাবৎ বকাবকি করেছে লোকটাকে। অতঃপর এক সময় ক্লান্ত হয়ে গিয়ে শান্তভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে বলেছে,
“দেখো, আমাকে বলে দাও, কার হয়ে এমন করছো? ট্রাস্ট করো, তোমরা কেউই বিপদে পড়বে না। তোমাদের সাথে কিছুই করবো না আমি। বরং বলে দিলে সুরক্ষিত থাকবে।”
ওপাশ থেকে কর্কশ কণ্ঠ ভেসে এলো,
“বলে দিলে আমাদের কাস্টমারের সাথে আমাদের প্রতারণা করা হবে। আর এমন হলে এটা আমাদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে। ভালো হয় যদি তুমি আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করো। তুমি তোমার ড্যাডকে…”
লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই বিরক্ত হয়ে লাইন কেটে দেয় ক্যানিয়ল। মি. হেনরির দিকে তাকিয়ে বলে,
“এরা কেমন গ্যাং মি. হেনরি? এত বকবক করে কেন এরা? এদেরকে তো আমার ছ্যাঁচড়া গ্যাং বলে মনে হচ্ছে!”
মি. হেনরি কিছু না বলে বিশেষ কিছু চিন্তা করতে থাকে। এক সময় বলে,
“আমার মিসেস ইয়াদা আর মিসেস সালেমকে সন্দেহ হচ্ছে ক্যানি!”
ক্যানিয়ল সচকিত চোখে তাকায়,
“এই দুইজনকেই কেন সন্দেহ হচ্ছে তোমার?”
“কারণ ওরা বলেছিল ওদের বস বোধহয় কোনো মহিলার সাথেই এসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিল। যদিও এটা অতটা শিওর নয় ওরা।”
ক্যানিয়ল চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল।
“তো এটা তুমি আগে বলোনি কেন আমাকে?”
“তাড়াহুড়ো করে কিছু করতে যেয়ো না। আমরা শিওর নই। আরও অপেক্ষা করে দেখতে হবে আমাদের।”
“তুমি অপেক্ষা করো, আর ভাবো। আমি যাচ্ছি।”
ক্যানিয়ল ওভার জ্যাকেট পরতে পরতে দরজার দিকে এগোলো।
“কোথায় যাচ্ছ তুমি?” প্রশ্ন করলো মি. হেনরি।
“কিছু কেনাকাটা করার আছে আমার।” বলতে বলতে দরজার কাছে দাঁড়ালো সে। হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বললো,
“ওহ, মি. হেনরি!”
মি. হেনরি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ক্যানিয়ল খানিক ইতস্তত কণ্ঠে বললো,
“তুমি কি আমাকে ভালো কোনো উর্ডু ভাষা শেখার বই সংগ্রহ করে দিতে পারবে? বা সহজে উর্ডু শেখা যায় এমন কোনো অ্যাপস ডাউনলোড করতে পারবে?”
মি. হেনরি ভ্রু কুঁচকে বললো,
“হঠাৎ তোমার উর্দু শেখার এত তাগিদ কেন? এমন তো না যে নেক্সট ট্রিপে আমাদের পাকিস্টান যাওয়ার কোনো প্ল্যান আছে। উর্দু শিখে কী করবে?”
“মানুষজন আমাকে উর্ডুতে গালাগালি করে! গালির মিনিংটা জানতে আগ্রহী আমি।”
মি. হেনরির কুঁচকানো ভ্রু অধিক কুঁচকে গেল,
“উর্দুতে গালাগালি করে তোমাকে? কারা?”
ক্যানিয়ল ঠোঁট টেনে নিভৃত হেসে বললো,
“একটা ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে!”
“ওই মেয়েটা?”
ক্যানিয়ল মাথা নেড়ে বললো,
“হু, ছাড়ো ওসব। আমি নিজেই উর্ডুর ব্যবস্থা করে ফেলবো।”
ক্যানিয়ল যেতে নিলেই মি. হেনরি বললো,
“কী গালি দিয়েছে তোমাকে? আমাকে বলো। আমি তো কিছু কিছু উর্দু ভাষা পারি। দেখি এর ইংলিশ মিনিংটা জানা আছে কি না আমার।”
ক্যানিয়ল মনে করার চেষ্টা করে বললো,
“পা…পাপ্পা…নো নো…পা…পাজাইই। ইয়াহ পাজাইইই।”
“কী?”
“এরকমই ছিল গালিটা।”
মি. হেনরি চিন্তায় পড়ে গেল। ‘পাজাইইই’ জিনিসটা কী হতে পারে?
ক্যানিয়ল মি. হেনরির মুখ দেখে যা বোঝার বুঝে নিয়ে ঢিমে গলায় বললো,
“ঠিক আছে, তুমি ভাবতে থাকো। যাচ্ছি আমি।”
ক্যানিয়ল বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা শপে এসেছে। আজব হলেও সত্যি যে সে হিজাব কিনতে এসেছে। তাও এমন একজনের জন্য হিজাব কিনতে এসেছে যা দুর্ভাবনীয়! যে মেয়েটাকে ভালো করে চেনে না, জানে না, সেই মেয়েটার জন্য হিজাব কিনতে এসেছে সে! হঠাৎ কী হলো তার? ভাবছে সেই সকাল থেকেই। কিঞ্চিৎ পাগলামিতে ধরেছে বোধহয়!
_________________
যতটা ব্যস্ত হয়ে বাসায় ছুটে এসেছিল ইরতিজা, আসার পর ততটাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিল জোনাস এসেছে, কিন্তু এসেছিল অর্টন। অর্টনকে দেখে যেন কয়েক মুহূর্ত পাথর হয়ে গিয়েছিল সে। এই ছেলেটা এতকিছুর পরও তার সাথে দেখা করতে আসতে পারে ধারণা ছিল না।
অর্টন সিয়াটল এসেছিল একটা কাজে। যাওয়ার আগে ভাবলো সিয়াটল যখন এসে গেছে ইরতিজার সাথে একবার দেখা করে তারপরই নিউ ইয়র্ক ফিরুক। ইরতিজার সাথে দেখা করে গতকাল বিকেলের ফ্লাইটেই চলে গিয়েছে।
অর্টনের সাথে ইরতিজার কথোপকথন ছিল স্বাভাবিক। যতটা সম্ভব স্বাভাবিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করছিল। তাও কোথায় যেন একটা অস্বস্তির কাঁটা রয়েই গিয়েছিল। বাবা তখন বাসায় ছিল না, কেবল মা একা ছিল।
বাবা বাসায় ফেরার পর বললেন,
“অর্টন এসেছিল বাসায়?”
ইরতিজা খানিক জড়তা নিয়ে বললো,
“হুম।”
“কী বলে গেছে?”
“তেমন কিছুই বলেনি। টুকটাক কথাবার্তা শুধু। মানে কুশল বিনিময় আরকি।”
“অস্বস্তি হচ্ছিল তোমার ওর সাথে কথা বলতে?”
“হচ্ছিল একটুখানি।”
“ও তোমার সাথে দেখা করতে আসায় তোমার কি আনন্দবোধ হয়েছিল?”
ইরতিজা বাবার প্রতিটা প্রশ্নেই চমকাচ্ছে। বাবা এমন করে জেরা করছে কেন তাকে? তাও সে শান্ত কণ্ঠে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেল,
“না।”
আজাদ চৌধুরী একটু হেসে বললেন,
“কাল ছুটির দিন। দুপুরে সাজিদ আসবে। নিমন্ত্রণ করেছি ওকে।”
ইরতিজা অযথাই চমকে উঠলো,
“কেন?”
“নিমন্ত্রণ কেন করে মানুষ?”
“জানি না।” বোকার মতোই কথাটা বলে ফেললো।
জানালা দিয়ে মি. ফলক্রফটের বাসার সামনের আপেল গাছটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে এসব ভাবছিল ইরতিজা। সকালের সোনালি রোদ আদুরে পরশ বুলাচ্ছে লাল আপেলগুলোর উপর। শুনেছে মেরিমুর পার্কেও না কি আপেল গাছ আছে। থোকায় থোকায় আপেল ধরে তাতে। অতি শ্রীঘই একবার পার্কে গিয়ে সেই আপেল খেয়ে আসতে চায় সে।
বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে এনে জানালার কাচ বন্ধ করে দিলো ইরতিজা। বাড়িতে রান্নাবান্না চলছে। খাবারের লোভনীয় ঘ্রাণ ঘুরঘুর করছে বাড়ির এক কোণা থেকে আরেক কোণা। একটু পর…হয়তোবা এখনই এসে পড়বে সাজিদ।
সাজিদ এসে গেল একটু পরই। একা আসেনি, সাথে তার এক বন্ধুও এসেছে। বন্ধুর নাম আরমান। ইন্ডিয়ায় বাড়ি। তার সাথে ইরতিজার এই প্রথম দেখা। সে ইরতিজাকে দেখেই সালাম দিলো,
“আসসালামু আলাইকুম ভাবি।”
ভাবি সম্বোধনে তটস্থ অনুভব করলো ইরতিজা। তাকালো সাজিদের দিকে। সাজিদের চেহারা প্রাঞ্জল, সে স্বাভাবিক। কিন্তু ইরতিজার কাছে ভাবি ডাকটা মোটেই স্বাভাবিক লাগেনি। সাজিদের সাথে কি তার বিয়ে হয়ে গেছে যে লোকটা তাকে ভাবি ডাকবে? সুন্দর করে আপুই তো ডাকতে পারতো। যাই হোক, ইরতিজা এ নিয়ে কিছু বললো না, মুখে একটু হাসি টেনে শুধু সালামের উত্তর দিলো।
খাওয়া-দাওয়ার পালা সারা হলো সর্বপ্রথম। তারপর খোশগল্পের আসর বসলো। খোশগল্পের কিছুক্ষণ পর সাজিদ ইরতিজাকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে গেল।
“এখানে এসেছি কেন আমরা?” ইরতিজার প্রশ্ন।
সাজিদ একটা গিফট বক্স বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“নেবে? নাকি নেবে না?”
“কী আছে এর ভিতর?”
“ছোটো একটা নেকলেস।”
“আমাকে কেন দিচ্ছেন?”
“বর হিসাবে হবু বউকে কিছু উপহার দিতেই পারি।”
“কিন্তু আমি নেবো না এটা। যে কেউ কিছু একটা দিলেই সেটা আমি গ্রহণ করতে পারি না।”
সাজিদ স্মিত হাসলো। তা দেখে ইরতিজা বললো,
“আমি কি হাসার কথা বলেছি?”
“হয়তো বলোনি, আবার বলেছো।”
ইরতিজা কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললো,
“স্যরি! আমি নিতে পারলাম না আপনার গিফটটা। আপনার এইমাত্র বলা কথাটা আপনার গিফট নেওয়ার আগ্রহ পুরোপুরি কমিয়ে দিয়েছে।”
ইরতিজা বাসায় প্রবেশের জন্য পা বাড়ালো। কয়েক পা হেঁটে আসা মাত্রই সাজিদ পিছন থেকে এসে বক্সের ভিতর থাকা নেকলেসটা পরিয়ে দিলো ওর গলায়। থেমে গেল ইরতিজা। সাজিদের এমন আচরণ স্তব্ধীভূত করে দিলো তাকে। নেকলেস পরানো হলে সাজিদ সামনে এসে বললো,
“আপনি মোটেও ভালো মেয়ে নন ইরতিজা।”
“আপনি আবারও আমাকে ‘আপনি’ করে বলছেন। এই তুমি, এই আপনি! দুটো সম্বোধনের জগাখিচুড়ি পাকাতে চান আপনি? যা বলার একটা বলে সম্মোধন করেন।”
“এই মুহূর্তে আপনাকে আপনি ছাড়া অন্য কিছু সম্বোধন করতে পারছি না। আচ্ছা আপনি বলুন, কোন সম্বোধনটা কম আপন মনে হয়? যেটাতে কম আপন মনে হয় সেটা বলেই ডাকবো আপনাকে।”
ইরতিজার খুব রাগ লাগছে হঠাৎ করে। বললো,
“তুই ডাকটা আমার সবচেয়ে বেশি আপন লাগে।”
“তার মানে ‘আপনি’, ‘তুমি’ দুটোই আমার জন্য উন্মুক্ত। তাহলে আমি আপাতত ‘আপনি’তেই থাকছি। আপনার মনে আছে, যেদিন আপনারা সিয়াটলের ফ্লাইট ধরেছিলেন সেদিন সকালে আপনার ফ্রেন্ড জোনাস এসেছিল আপনাদের বাড়িতে?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই মনে আছে।”
“ও আপনাকে একটা গিফট দিয়েছিল। আমার খুব আগ্রহ হয়েছিল গিফটটা নিয়ে। জানার ইচ্ছা হলেও আমি কখনও জিজ্ঞেস করিনি ওই গিফট বক্সে কী গিফট ছিল। আজ খুব করে জানতে ইচ্ছা করছে, এবং আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, আপনার ওই ফ্রেন্ড কী গিফট দিয়েছিল আপনাকে?”
“ওই গিফট বক্সটা ফাঁকা ছিল, কোনো গিফট ছিল না ওটার ভিতর।”
সাজিদ একটু ধাক্কা খেলো। অবিশ্বাস্য সুরে বললো,
“কোনো গিফট ছিল না?”
“না। ও আমাকে ঘৃণা করে। বলতে পারেন খালি গিফট বক্স দিয়ে ও আমাকে ঘৃণা করে এটারই একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।”
কথাটা সাজিদের কাছে প্রকাশ করতে গিয়ে হঠাৎ একটু কষ্ট অনুভব করলো ইরতিজা।
“কিন্তু আমার মনে হয় না আপনার ফ্রেন্ড আপনাকে ঘৃণা করে।”
“শুনুন, ও আমার ফ্রেন্ড নয়। অনেক আগেই আমাদের ফ্রেন্ডশিপের ইতি ঘটে গেছে! বলতে পারেন আমরা এখন একে অপরের শত্রু।”
“কখনো কখনো কিছু শত্রুরা মিত্রর থেকেও অধিক আপন হয়।”
“কী?” সাজিদ অস্পষ্ট গলায় বলার কারণে ঠিক ভাবে শুনতে পেল না ইরতিজা।
“আপনি অর্টনকে পছন্দ করেন?”
সাজিদ হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন করায় বিস্মিত হলো ইরতিজা। বললো,
“কী যা-তা বলছেন!”
“পছন্দ করেন না অর্টনকে? তাহলে কি জোনাসকে পছন্দ করেন?”
ইরতিজা খুব খ্যাপা অনুভব করছে। সাজিদ হঠাৎ এসব প্রশ্ন করে কী প্রমাণ করতে চাইছে? বললো,
“এসব কী আজেবাজে প্রশ্ন করছেন আপনি?”
“আজেবাজে প্রশ্ন হলেও আশা রাখছি এর উত্তরটা দেবেন আপনি। ভালোবাসেন জোনাসকে?”
ইরতিজা উত্তর দিলো না। হঠাৎ এত অস্থির, রাগ কেন অনুভব করছে নিজেই বুঝতে পারছে না।
সাজিদ ইরতিজাকে নিশ্চুপ দেখে বললো,
“উত্তর দেবেন না? তাহলে কি আমি ধরে নেবো আপনি আসলেই জোনাসকে…”
“অবশ্যই না…” সাজিদের কথার মাঝেই প্রায় উচ্চ কণ্ঠে বলে উঠলো ইরতিজা।
“অবশ্যই আমি জোনাসকে ভালোবাসি না। আগেও কখনও ভালোবাসিনি, আর ভবিষ্যতেও ওকে ভালোবাসার কোনো সম্ভাবনা নেই। যার কারণে আমার জীবনে এত কিছু ঘটে গেছে, আমার এনগেজমেন্ট পর্যন্ত আমার চোখের পলকে হয়ে গেছে, তাকে অবশ্যই আমি ভালোবাসতে পারি না। ও আমার কাছে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি! অযথাই ওকে আমার প্রেমিক ভেবে ভুল করবেন না।”
সাজিদ কিয়ৎক্ষণ পলকহীন তাকিয়ে রইল ইরতিজার দিকে। ইরতিজার দৃপ্তকণ্ঠে বলা দৃঢ়তা জড়িত কথাগুলো শুনতে ভালো লেগেছে তার। তবুও কোথাও একটা সংশয় বহাল রয়ে যাচ্ছে। বললো,
“আপনি প্রতিটা কথা দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, কিন্তু আজবভাবে আপনার দৃঢ়তা জড়িত কথাগুলোও আমার কাছে দুর্বল মনে হচ্ছে। এটা কেবল আমার ভ্রম কি না বুঝতে পারছি না!”
সাজিদ সরল হাসির মাধ্যমে ব্যাপারটা ঢাকা দিয়ে বললো,
“আপনি জোনাসকে ঘৃণা করলেও আমি কিন্তু ওকে খুব পছন্দ করি। আমার কাছ থেকে ওর একটা থ্যাংকস প্রাপ্য।”
ইরতিজা চোখ কপালে তুলে বললো,
“কেন?”
সাজিদ এবার একটু অন্য রকম হেসে বললো,
“কারণ আমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পিছনে ওর বিরাট একটা অবদান আছে। ওর ক্যামেরাবন্দি করা ছবির কারণেই তো এতকিছু হলো।”
সাজিদ হাসতে হাসতে বাসায় প্রবেশের জন্য এগোতে লাগলো। লন থেকে সিঁড়িতে কেবল এক পা রাখতেই ইরতিজা বললো,
“আপনি কি ভাবছেন আপনার সাথেই আমার বিয়ে হবে? আমি আপনাকে কখনোই বিয়ে করবো না। সত্যিই বিয়ে করবো না আপনাকে। এ বিয়েতে আমার কোনো মত নেই!”
সাজিদ তাকালো। চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
“আমাকে বিয়ে করবেন না, অর্টনকেও না কি পছন্দ করেন না, আবার বললেন জোনাসকেও ঘৃণা করেন! তাহলে আপনি ঠিক কাকে বিয়ে করবেন? উমমম…সেদিন যার কাছে আমাকে ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন তাকে বিয়ে করবেন না কি?”
কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দিলো সাজিদ। কৌতুকপূর্ণ হাসি হাসতে হাসতেই ঢুকে গেল ঘরের অভ্যন্তরে।
কিন্তু তার ওই কৌতুকপূর্ণ কথা ইরতিজাকে স্তব্ধীকৃত নির্বাক করে দিলো। সাজিদ এইমাত্র ক্যানিয়লের কথা বললো?
(চলবে)