উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ২২

0
622

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২২
_________________

“তুমি আসলেই একজন সন্ত্রাসী। আমার সাথে এরকম করতে পারো কীভাবে?”

ক্যানিয়ল অবাক হয়ে তাকালো,
“কী করেছি আমি তোমার সাথে?”

“তুমি আমাকে কি’ড’ন্যা’প করেছো।”

“কিডন্যাপ কাকে বলে তুমি জানো?”

“অবশ্যই জানি। কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়াই হলো কিডন্যাপ।”

“কিন্তু আমার কিডন্যাপের ধরনটা মোটেই এরকম থাকতো না। আমি তোমাকে কিডন্যাপ করলে অবশ্যই সুস্থ স্বাভাবিক নিয়ে আসতাম না তোমাকে। কষ্ট করে একটু পিছনের আসনে তাকাও।”

ইরতিজা তাকালো। একটা হকিস্টিক দেখতে পেয়ে পিলে চমকে উঠলো।

“তোমাকে কিডন্যাপ করলে আগে এটা দিয়ে মে/রে র’ক্তা’ক্ত করে তারপর নিয়ে আসতাম।”

ভয় সর্বপাশ দিয়ে জাপটে ধরলো ইরতিজাকে। কিন্তু নিজের দুর্বল ভাব প্রকাশ করলে মানুষ আরও বেশি সুযোগ পায়। তাই মনে ভয় থাকা সত্ত্বেও সে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বললো,
“তুমি কি ভেবেছো আমাকে মারার চেষ্টা করলে তুমি নিজে অক্ষত থাকতে?”

“থাকতাম না?”

“না।”

ক্যানিয়ল সহাস্যে বললো,
“কে মারতো আমাকে? তুমি? ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে আবার মারতেও পারতো? ইন্টারেস্টিং তো!”
সে একটু থেমে বললো,
“এ পর্যন্ত আমি কতজনকে মেরেছি জানো?”

“কতজনকে?”

“সংখ্যাটা গণনা করিনি।”

“মারামারির জন্য পুলিশ স্টেশনে যাওনি কখনো?”

“গিয়েছি। কিন্তু ওখানে আটকে থাকিনি কখনও। বড়ো লোকদের সহজে আটকে রাখা যায় না কোথাও। একেক বার বলে দেয় ফারদার এই কাজ করলে আটক থাকতে হবে, কোর্টে তোলা হবে মামলা, আসলে এমন কিছুই হয় না।”

ইরতিজা বললো,
“তোমার তো পুলিশদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। উল্টো পুলিশদের ঘৃণা করো কেন? বলেছিলে সতেরো বছর বয়স থেকে ঘৃণা করো পুলিশদের। কী ঘটেছিল তোমার সতেরো বছর বয়সে?”

“কী আর ঘটবে, সতেরো বছর বয়সে তো আমি কার লাইসেন্স পাইনি। কিন্তু তাও লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালিয়েছিলাম। বাস, বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর অপরাধে ওরা আমাকে ক্যাচ করে নিলো। ঝামেলা করলো। ওইদিন থেকেই ওরা আমার মনে ঘৃণার জায়গা দখল করেছে।”

“ঠিকই তো আছে, বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালাবে কেন তুমি?”

ক্যানিয়ল পাশ ফিরে ইরতিজার দিকে তাকালো। তার শক্ত চোখের চাহনিতে ভয় পেল ইরতিজা। ক্যানিয়ল বললো,
“একদম চুপ করে বসে থাকবে। একটা শব্দও যেন না বেরোয় মুখ দিয়ে। আমার কাছে কিন্তু ছুরিও আছে। সামনের ড্রয়ার খুলে দেখতে পারো। একটা রূপবতী ছুরি চকচক করছে ড্রয়ারের ভিতর।”

ইরতিজার নিঃশ্বাসে যেন ছুরি চালানো হচ্ছে। দমবন্ধ লাগছে তার। ক্যানিয়ল চোখ সরিয়ে নেওয়ার পর খানিক স্বস্তি অনুভব করলো। একটা কথাও বললো না আর। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। পাহাড়গুলো দেখে হঠাৎ পাহাড়ে হাইকিং করার শখ জাগলো। কবে আসবে গ্রীষ্ম? কবে করবে হাইকিং? আকাশের দিকে তাকালো এবার। মনে হচ্ছে না আজ আবহাওয়া খারাপ করবে। সারাদিনই বোধহয় সানলাইট পাওয়া যাবে। দুই মিনিটের ভিতর গাড়ি এন্ডারসন হাউজের সামনে এসে থামলো। ক্যানিয়ল নেমে গেল। ইরতিজাও নামলো। ছোটো লনের এক পাশে নানান রঙের টিউলিপ ফুল চোখে পড়লো। ফুলের সামনেই বসার জন্য ছোটো চেয়ার, টেবিল। অন্য পাশে তিনটা ম্যাপল ট্রি চোখে পড়লো। বাড়িটা দুই তলা হবে। চেনা চেনা লাগছে জায়গাটা। সে ক্যানিয়লকে বললো,
“এটা কোন জায়গা? আমাদের তো রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা ছিল। বলেছিলে নামিদামি একটা রেস্টুরেন্টে তোমাকে ব্রেকফাস্ট করাতে হবে।”

ক্যানিয়ল একদৃষ্টে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“ইট’স মাই সেকেন্ড হোম।”
এরপর ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভিতরে চলো। এখানে এর আগেও একবার এসেছো তুমি।”

ক্যানিয়লের কথায় ইরতিজা মনে করতে সক্ষম হলো। হ্যাঁ, এসেছিল তো সে। প্রথম যেদিন ক্যানিয়লের সাথে দেখা হয়েছিল। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর ক্যানিয়ল এখানেই নিয়ে এসেছিল তাকে। ক্যানিয়ল যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে ইতোমধ্যে। ইরতিজা যাবে কি যাবে না ভাবলো। যাওয়াটা অনুচিত মনে হলো, তবুও আবার পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য।
দরজার লক খুলে ভিতরে ঢুকলো ক্যানিয়ল, পিছন পিছন ইরতিজাও প্রবেশ করলো। বড়ো হলরুমটা নজরে পড়লো। এখানেও চকচকে সব আসবাবপত্র দেখা গেল। আর সহজে এটাও বোঝা গেল যে এগুলো অত্যন্ত দামি। প্রথম দিনে এতকিছু লক্ষ করে দেখা হয়নি, কিন্তু আজ দেখলো। হলরুমের মধ্যখানে সোফা রাখা। দেয়ালের একপাশে রয়েছে বইয়ে ঠাসা বুকসেলফ। দেয়ালের এক পাশ ঘেঁষে উঠে গেছে উপর তলায় যাওয়ার সিঁড়ি। সিলিংয়ে ঝুলছে বিলাসবহুল ঝাড়বাতি। বাড়িটা অদ্ভুত রকম নিস্তব্ধতায় ঘেরা। একটা পাতা পড়লেও তার শব্দ শোনা যাবে বলে মনে হচ্ছে। এত নিস্তব্ধতা কেন? ভয় করছে ইরতিজার। সে প্রশ্নটা না করে থাকতে পারলো না,
“এ বাড়িতে কি আর মানুষজন নেই?”

ক্যানিয়ল সহজ গলায় উত্তর দিলো,
“না, শুধু আমরা দুজন আছি।”

ইরতিজার চোখ কপালে উঠলো,
“হোয়াট? মি. হেনরি নামের লোকটাও নেই?”

“না, কেবল আমি এবং তুমি আছি।”

ইরতিজা ভয়ে আঁতকে উঠলো,
“ও মাই গড! তুমি একটা খালি বাড়িতে নিয়ে এসেছো আমাকে?”
বলেই সে দ্রুত পিছন ঘুরে পা বাড়িয়ে দিলো দরজার দিকে।
ইরতিজা চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই ক্যানিয়ল এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সামনে দাঁড়ালো।

“হোয়াট’স ইওর প্রবলেম পাকিস্টানি গার্ল?” ভারি বিরক্তি নিয়ে বললো ক্যানিয়ল।

ইরতিজার কানে ঢোকেনি সে কথা। তার দৃষ্টি, মনোযোগ সব গিয়ে আটকেছে একটু দূরে পড়ে থাকা রক্তে ভেজা তুলোর উপর। মুখ ফসকে বিস্ময়ের সাথে আপনা আপনি বেরিয়ে এলো শব্দটা,
“রক্ত?”

ক্যানিয়ল ইরতিজার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো। ইরতিজা এগিয়ে গেল পড়ে থাকা তুলোর দিকে। হাঁটুভেঙে বসে ভালো করে দেখতে লাগলো। ক্যানিয়লের কণ্ঠ শোনা গেল এরই মাঝে,
“ওটা আমার রক্ত!”

ইরতিজা তাকালো। তার দু চোখে ভয়, কৌতূহল, উদ্বিগ্নতা, সন্দেহের ছাপ। ক্যানিয়লকে চোখ সরু করে কেমন অদ্ভুতভাবে দেখে নিয়ে বললো,
“তুমি মিথ্যা বলছো, এটা তোমার রক্ত নয়। কাকে মেরেছো তুমি? কার রক্ত এটা?”

“বললাম তো ওটা আমার। আঘাত পেয়েছি আমি আজ সকালে। ক্ষত স্থান মুছে ওই টেবিলে রেখেছিলাম, বাতাসে নিচে পড়ে গিয়েছে বোধহয়।”

ইরতিজা টেবিলে তাকালো। তার সামনেই টেবিল। টেবিলের কাছেই পড়ে রয়েছে তুলো। টেবিলের উপর ওষুধপত্র দেখা যাচ্ছে। ইরতিজা তাও বিশ্বাস করতে পারলো না। দাঁড়িয়ে বললো,
“কোথায় আঘাত পেয়েছো তুমি? দেখাও।”

“পেটে আঘাত পেয়েছি, দেখবে?”

ক্যানিয়ল গায়ের গেঞ্জি উপরে ওঠাতে উদ্যত হলেই চোখ সরিয়ে নিলো ইরতিজা। বিব্রত বোধ করলো সে। কিন্তু এতে তার সন্দেহ একটুও কমেনি। জিজ্ঞেস করলো,
“পেটে আঘাত পেয়েছো কীভাবে?”

“সেটা আমার মাথা ব্যথা, তোমার নয়।”

ইরতিজা আর কিছু বললো না। তার কৌতূহল বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। সে যদি এখন কথায় কথায় ক্যানিয়লকে রাগিয়ে দেয় সেটা নিশ্চয়ই তার জন্য ভালো হবে না। এই বাড়িতে কেবল সে আর ক্যানিয়ল আছে এখন। ক্যানিয়ল যদি রেগে গিয়ে তাকে আঘাত করে, আর সেই আঘাতে যদি তার মৃত্যুও হয়, তাহলে সেটা অন্যদের জানতেও কষ্ট হবে। এমনকি তাকে খুন করার অপরাধে ক্যানিয়লের মৃত্যুদণ্ডও হবে না। কারণ ক্যানিয়ল খুব ধনী। ধনীরা সহজে শাস্তি পায় না। ক্যানিয়ল নিজেও তো এ ব্যাপারে বলেছিল। আর তার তো সন্দেহ হচ্ছে, কেবলই মনে হচ্ছে ক্যানিয়ল তাকে এখানে নিয়ে এসেছে মারার জন্য। সে চুপচাপ দরজার দিকে এগোতে লাগলো।
ক্যানিয়ল বললো,
“কী করছো তুমি? এখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছো?”

ইরতিজা দাঁড়িয়ে গেল। বললো,
“হ্যাঁ, এই বাড়িতে কেবল আমরা দুজন থাকতে পারি না যেখানে অন্যদের উপস্থিতি নেই।”

বলে সে আবারও পা বাড়ালো। ক্যানিয়ল বললো,
“কে বললো কেবল আমরা দুজন আছি এখানে?”

ইরতিজা দাঁড়িয়ে গেল। অবাক চোখে ক্যানিয়লের দিকে চেয়ে বললো,
“তুমিই তো বললে।”

“হ্যাঁ মানুষ হিসেবে কেবল আমরা দুজনই আছি, কিন্তু আমরা ছাড়াও এখানে অন্যদের উপস্থিতি আছে।”

“বুঝলাম না।”

ক্যানিয়ল ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো,
“আমি মৃত আত্মাদের কথা বলছি। আমার ধারণা তোমার ডানে-বামে, সামনে-পিছনে চারটা মৃত আত্মা দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটা আত্মা হয়তো তোমার হিজাব ধরে টানাটানি করছে, একটা আত্মা হয়তো আবার তোমার ঘাড় ধরে ঝুলে আছে, একটা আত্মা হয়তো তোমার নাক দিয়ে প্রবেশ করে তোমার ভিতরের কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি চেক করছে। হতেই পারে, তুমি তাদের দেখছো না, কিন্তু তারা তোমার সাথে এসব কাণ্ড ঠিকই ঘটাচ্ছে।”

ইরতিজা হতভম্বের মতো চেয়ে রইল। কী বলছে এসব ক্যানিয়ল? ওর মাথা ঠিক আছে?

“শুধু তোমাকে ঘিরেই মৃত আত্মাদের ভিড় নয়। আমি শিওর আমাকেও তারা চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আমার কাঁধটা খুব ভার ভার লাগছে। আমি নিশ্চিত–কোনো সুন্দরী মেয়ে আত্মা বোধহয় আমার কাঁধ জড়িয়ে ধরে আছে।”

“কী বলছো তুমি এগুলো?”

“মিথ্যা নয়, সত্যি। এই বাড়িটায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে! এক কালে অনেক মানুষ বসবাস করতো এখানে। একবার সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে সবাইকে হত্যা করে। তাদের আত্মাগুলো এখনও বন্দি এই বাড়িটায়।”

ক্যানিয়ল ইরতিজাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু ইরতিজার মাঝে ভীত ছায়া দেখা গেল না মোটেই। ক্যানিয়ল গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো,
“তোমায় আমি এখানে কেন নিয়ে এসেছি জানো?”

ইরতিজা হ্যাঁ অথবা না কিছু বললো না। এমনকি জানার আগ্রহও দেখালো না। ক্যানিয়ল নিজ থেকেই বললো,
“তোমাকে কিছু দেবো আমি।”

“কিছু দেওয়ার জন্য কি এখানে নিয়ে আসতে হবে এই মৃত আত্মাদের মাঝে?”

“নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল না, তবে আমি সবকিছু একটু ভিন্ন ধরনের করতেই পছন্দ করি।”

বলে উঠে দাঁড়ালো ক্যানিয়ল। হলরুম থেকে সদৃশ্যমান একটা দরজা দিয়ে একটা রুমে ঢুকলো। ফিরে এলো হাতে মাঝারি আকৃতির একটা বক্স নিয়ে।

“কী আছে এর ভিতর?”

“সেটা বাড়ি গিয়ে নিজেই খুলে দেখো, ধরো।”

“কখনোই না। যে কেউ কিছু দিলেই তা আমি গ্রহণ করতে পারি না।”

“ও আচ্ছা, নেবে না তুমি এটা? দয়া করে ওই টেবিলটার দিকে একটু তাকাও।”

সোফার সামনে থাকা টি-টেবিলটাকে ইঙ্গিত করলো ক্যানিয়ল। টেবিলের উপর ধারালো ছুরিটা দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো ইরতিজার।

“ছুরিটা দেখতে সুন্দর না?”

ভীত সন্ত্রস্ত চোখে তাকালো ইরতিজা। ক্যানিয়ল বক্সটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“নাও।”

ইরতিজা ছুরিটার দিকে তাকিয়ে আছে। দু চোখে স্পষ্টতর ভয়ের ছাপ পড়ে আছে। আর সেই ভয় আরও একধাপ বেড়ে গেল ক্যানিয়লের কথায়। ক্যানিয়ল বললো,
“এখন যদি তোমাকে আমি মে/রে ফেলি তাহলে কেমন হয় পাকিস্টানি গার্ল? যদি মে/রে তোমার লা/শ গুম করে দিই তাহলে?”

ইরতিজার হৃৎপিণ্ড খাঁমচে ধরলো ভয়। বক্ষস্থলে আর্তনাদের চিৎকার শোনা গেল। সে তাকালো ক্যানিয়লের দিকে। ক্যানিয়লের দু চোখে দৃষ্টি পড়তেই থমকে গেল। তার হঠাৎ মনে হলো এই চোখ কোনো স্বাভাবিক মানুষের হতে পারে না। কারণ এই চোখ দুটোয় এখন কোনো মনুষ্যত্ব নেই। ভয়ে দ্রিম দ্রিম করছে ইরতিজার বুক। ক্যানিয়ল এক পা কাছে এগিয়ে আসতেই ইরতিজার হাতে থাকা বক্স হাত ফসকে পড়ে গেল। কিন্তু সে নড়তে পারলো না একটুও। ভয়ে নড়ার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here