উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ৪৪

0
486

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৪৪
_________________

ইরতিজা ক্ষুব্ধ চৈতন্যে বাসার দিকে আসছে। রাগে কাঁপছে তার প্রতিটা কোষ। মাথার উপর সন্ধ্যার পাঁচমিশালি রং ছড়ানো আকাশ। বাতাস মৃদুমন্দ থেকে একটু বেশি বেগবান। ইরতিজার চুলগুলো উড়ছিল সেই বাতাসে। মুখে তার রাগের লেপন। আজাদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে ছিলেন বাড়ির সম্মুখে। দূর থেকে সে সাজিদ আর ইরতিজাকে দেখছিলেন। ইরতিজা তার পাশ কাটিয়ে যাওয়া দিলেই তিনি বললেন,
“ছেলেটা এই সন্ধ্যাকালেও তোমায় দেখার জন্য ছুটে এসেছে। বুঝতে পারছো এখন, ছেলেটা কত ভালো?”

বাবার কথা শুনে দাঁড়ায় ইরতিজা। সন্ধ্যার আবছা আলোয় বাবার সরল মুখখানিতে তাকিয়ে কণ্ঠ রাগ ও বিরক্ত নিমজ্জিত করে বললো,
“ভালো না ছাই, খারাপের বাপ উনি। ওনাকে বিয়ে করা অসম্ভব। আমি ওনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না আব্বু।”
বলে দ্রুত পদে বাসার অন্দরে প্রবেশ করলো সে।

আজাদ চৌধুরী কিঞ্চিৎ অবাকপূর্ণ হয়ে মেয়ের গত পথে চেয়ে রইলেন। হঠাৎ এত রাগ, বিরক্তি কেন ইরতিজার মাঝে?

তখন সন্ধ্যার আবছা আলো কেটে গিয়ে গাঢ় কালো হয়েছে প্রকৃতি। কৃত্রিম আলোর বিভিন্ন উৎস জ্বলে উঠেছে শহরের বুকে। ইরতিজা সন্ধ্যার ঘটনাটা নিয়ে এখনও বেশ রাগান্বিত। রুমের ভিতর বসে সে সাজিদের বলা কথাটাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না ভুলে যাওয়া।

নওরিন এখন অবসাদ সময় পার করছে। ঘটনাটা জানার পর সেই যে বিষণ্নতায় ধরলো, আর ছাড়ছে না তাকে। সে পিছনের লনে বসে ভাবছিল পরিবারকে জানিয়ে দেবে ঘটনাটা সম্পর্কে। কিন্তু কীভাবে বলবে বুঝতে পারছিল না। বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছিল তার। পরিবারের সদস্যদের থেকে সে আড়াল রাখছে নিজেকে। কারণ যে কেউ তাকে দেখলে প্রশ্ন করবে, তার কী হয়েছে? আর তখন তাকে পুরো বিষয়টা জানাতে হবে। কিন্তু এটা সে জানানোর জন্য প্রস্তুত নয়। শারমিন আহমেদ অবশ্য নওরিনকে একবার প্রশ্ন করেছিলেন,
“তোমার কি কিছু হয়েছে?”

নওরিন জবাবে কিছু হয়নি বলেছে। শারমিন আহমেদ বলে এড়িয়ে যেতে পেরেছে, কিন্তু বাবা হলে কিছুতেই পারতো না এটা। অবশ্যই কারণটা তখন জানাতে হতো।

শারমিন আহমেদ আজাদ চৌধুরীর জন্য গ্রিন টি দিয়ে লিভিং রুম হতে প্রস্থান করলেন। আজাদ চৌধুরী গ্রিন টি এর কাপটা হাতে তুলে নিলেন। অন্য হাতে সে কানে ফোন ধরে আছে। সাজিদকে কল করেছেন তিনি। কয়েক বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ হলো। সাজিদ সালাম দিলো,
“আসসালামু আলাইকুম আঙ্কল।”

টুকটাক বাক্যলাপ হলো আজাদ চৌধুরী আর সাজিদের মধ্যে। এরপর আজাদ চৌধুরী হঠাৎ জানতে চাইলেন,
“তুমি আমার মেয়েকে কী বলেছো সাজিদ?”

“কখন?”

“আজ সন্ধ্যায়।”

“আপনার মেয়ে কি আপনার কাছে নালিশ দিয়েছে কিছু? আমাকে বিয়ে করবে না এমন কিছু বলেছে?”

“হু। তোমার সাথে দেখা করার পর এত রেগে গেল কেন? কী বলেছো ওকে?”

“তেমন কিছু না আঙ্কল। বিয়ের পর আমাদের কয়টা বাচ্চা-কাচ্চা হবে সে ব্যাপারে ডিসকাস করছিলাম। ও বললো, একটা বেবিই যথেষ্ট। সেটা শুনে আমি বললাম, একটা? মিনিমাম দশটা বেবি তো প্রয়োজনই সংসারে। এটা শুনেই রেগে গেল। বললো, আমি না কি সুখী পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ!”

সাজিদের কথায় শব্দ তুলে হাসলেন আজাদ চৌধুরী। হাসতে হাসতে বললেন,
“তোমার কথায় হাসবো, না লজ্জা পাবো আমি কনফিউজড হয়ে যাই সাজিদ। আমি তোমার হবু শ্বশুর সেটা কি মনে আছে তোমার?”

“হুম, মনে আছে আপনি আমার হবু শ্বশুর। তবে আপনার মেয়ে আমার হবু স্ত্রী এটা মাঝে মাঝে ভুলে যাই। মনে হয় ও হবু নয়, আমার বিয়ে করা স্ত্রী।”

আজাদ চৌধুরী আবারও হেসে উঠলেন। বললেন,
“মজা করার জন্য তুমি শ্বশুরকেই পেলে?”

“কী করবো? আপনার মেয়েকে তো পাওয়া যায় না!”

আজাদ চৌধুরী হাসি নিবারণের চেষ্টা করলেন। বললেন,
“এবার সত্যি করে বলো কী বলেছিলে যার কারণে ইরতিজা অত রেগে গিয়েছিল?”

“আপনার মেয়েকে রাগলেও ভীষণ সুন্দর লাগে আঙ্কল। আপনার মেয়ে এত সৌন্দর্য নিয়ে জন্মগ্রহণ কেন করেছে বলুন তো?”

“সৃষ্টিকর্তা চেয়েছেন তাই।” নমনীয়তার পরশ অনুভব করা গেল আজাদ চৌধুরীর কণ্ঠে।

“সৃষ্টিকর্তা কি এটাও চেয়েছেন, আমি আপনার মেয়ের সৌন্দর্যের গভীর প্রেমে পড়ি?”

আজাদ চৌধুরী থমকে গেলেন। এই প্রশ্নের উত্তর আদৌ কি সে দিতে পারবে? এবার সত্যি সত্যি গভীর লজ্জাবোধ করলেন তিনি। চাইছেন দ্রুত এই কথোপকথনের সমাপ্তি ঘটাতে। তাই বললেন,
“আচ্ছা ভালো থাকো সাজিদ, একটু কাজ আছে। সময় পেলে বেড়াতে এসো।”

“বেড়াতে আসলে যদি আপনার মেয়ে আমাকে মে’রে-টেরে বসে তখন?”

“তাহলে ও নিজেই ডক্টর হয়ে তোমার ট্রিটমেন্ট করবে। ফ্রি সময় পেলে এসো কিন্তু।”

সাজিদ দুই ওষ্ঠকোণ প্রশস্ত করলো হাসিতে।

_____________

১১:৩২ এএম। সামনের চমৎকার দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে আছে ইরতিজা। সে এখন অবস্থান করছে শপের ফিশ বিক্রিত স্থানে। এখানে দেখা যাচ্ছে একজন ফিশ সেলার অন্য এক ফিশ সেলারের দিকে একটি মাছ ছুঁড়ে দিচ্ছে। এবং সেই সেলার খুব দক্ষতার সাথে মাছটি ক্যাচ করে সেটি আবারও ছুঁড়ে দিচ্ছে অপর জনের কাছে। নিজেদের মধ্যে অনেকখানি দূরত্ব রেখে তারা এই কাজটা করছে। এটা মূলত আকর্ষণ বাড়ানোর একটা প্রক্রিয়া। অনেক মানুষ তাদের এই কাজটায় আকৃষ্ট হয়ে মুগ্ধ চিত্তে চেয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ দেখার পর সে চলে এলো ওখান থেকে। শপের গ্রোসারি এরিয়ার দিকে যেতে লাগলো। আজ সবাই একটু ব্যস্ত থাকার ফলে তাকে একাই আসতে হয়েছে শপে। শপ ঘুরে ঘুরে সে কিনলো মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়শ, থানকুনি পাতা, কচু, কাঁচা আম ও লেবু। কাঁচা আম ও লেবুর দাম এখানে তুলনামূলক একটু বেশি। লেবুর দাম বেশি হলেও টমেটোটা আবার কম দামে পাওয়া যায়। ইরতিজা মিষ্টি আলুর কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। মিষ্টি আলু নেবে কি নেবে না ভাবছিল। এখানে দুই ধরনের মিষ্টি আলুই পাওয়া যাবে। সাদা এবং লাল। ইরতিজা একটা আলু হাতে নিয়ে দেখছিল, হঠাৎ একটা নারী কণ্ঠ তার পাশ থেকে বললো,
“তুমিই সেই মেয়ে? ইরটিজা?”

ইরতিজা চমকে উঠলো। চকিতে পাশ ফিরে তাকিয়ে যাকে দেখতে পেল তার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিল না। সে বিস্ময় স্ফীত চোখে চেয়ে রইল। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন মহিলা। যার চেহারায় মায়া। দু চোখে সরলতা। ঠোঁটের কোণে সুমিষ্ট একটা হাসি ঝরছে। ঠোঁটের হাসির সাথে সাথে চোখের হাসিও উপেক্ষা করার মতো নয়। কমলা রঙা চোখ দুটো হাসছে নিজ মাধুর্য ছড়িয়ে। ইরতিজার মনে প্রশ্ন জাগলো সহসা, ক্যানিয়ল কি এই মহিলাটির কারণেই এত সুন্দর হয়েছে? কিন্তু চোখের রং ছাড়া চেহারায় তো মিল নেই দুজনের। অন্য মিল না থাকলেও যে কেউ দুজনের চোখ দেখলেই বোধহয় বলতে পারবে এই দুজনের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে।

“তোমার নাম ইরটিজা, তাই না?” আবারও মিষ্টি কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন বেলা লিমাস।

ইরতিজা হতবিহ্বলের মতো মাথা নেড়ে সায় জানালো,
“ইয়েস, আই অ্যাম ইরতিজা।”

বেলা লিমাসের ঠোঁটের সুমিষ্ট হাসিটা আরও প্রশস্ত হলো। সে দুই হস্ত দ্বারা ইরতিজার কুসুমকোমল গাল দু খানি স্পর্শ করে মায়া ভরা চোখে বললো,
“কত সুন্দর তুমি! কত মিষ্টি!”

ইরতিজার বুক ধকধক করছিল। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে আসছিল কলেবর। হঠাৎ বেলা লিমাস তার সাথে কথা বলতে এসেছে কেন? আর তার নামই বা জানে কীভাবে? কিছু বুঝতে পারছিল না বা অনুধাবন করতে পারছিল না ইরতিজা। সে মনেপ্রাণে চাইছিল এখান হতে ছুটে পালাতে। কিন্তু বেলা লিমাস তাকে ছাড়লেনই না। সে ইরতিজাকে নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। কিন্তু ইরতিজা যাওয়ার জন্য সহমত পোষণ করলো না। সে বললো, তার কাজ আছে।
কাজের কথা বলে বেলা লিমাসকে এড়ানো গেল না। যেতে না চেয়ে বেশি অমত করা বেয়াদবি হিসাবে গণ্য হতো। সে অতিরিক্ত বেয়াদবি কী করে করতে পারে ক্যানিয়লের মমের সাথে? একরাশ অস্বস্তির কাঁটা অন্তরে নিয়ে তাকে শেষমেশ আসতে হলো বেলা লিমাসের সাথে। বেলা লিমাস থাকেন একটা এপার্টমেন্টের পনেরো নাম্বার ইউনিটে।
ইরতিজা বেলা লিমাসের এপার্টমেন্টে যখন প্রবেশ করছিল তখন তার শরীর কাঁপছিল। মুখে সংশয়ের ছাপ তো সুস্পষ্ট। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে তবুও সে পিছন পিছন এগিয়ে চললো বেলা লিমাসের সাথে। বেলা লিমাস ওকে লিভিংরুমের সোফায় বসার জন্য বললেন,
“দয়া করে এখানে বসো ডিয়ার।”

ইরতিজা বসলো। বেলা লিমাস হাসি হাসি মুখে চলে গেলেন কিচেনে। মহিলা পুরো সময়টিই হাসিখুশি ছিলেন। ইরতিজা আসলেই বুঝতে পারছে না কিছু। তাকে এখানে নিয়ে এলো কেন? তার হঠাৎ চিন্তাও হতে লাগলো। ক্যানিয়ল যদি জানে সে ওর মমের বাসায় এসেছে তাহলে? ইরতিজার হৃদয় ছ‍্যাত করে উঠলো ভয়ে। ক্যানিয়ল জানতে পারলে নিশ্চয়ই খুশি হবে না ব্যাপারটাতে। রাগারাগি করবে। ইরতিজার খুব চিন্তা হতে লাগলো বিষয়টি নিয়ে। এক ঝামেলার উপর কেন আরেক ঝামেলা পতিত হয় তার উপর?
বেশ কিছুটা সময় পরও এলেন না বেলা লিমাস। ইরতিজা একা একা বসে চুপচাপ বাসার উপর নজর বুলাচ্ছিল। বুঝতে পারছিল বেলা লিমাস খুব গোছানো গোছের মানুষ। টেবিলের উপর একটা ছোটো ফ্রেম বাঁধানো একটা ফটো দেখতে পেল ইরতিজা। ফটোটা একটা ছোটো বাচ্চার সাথে সুন্দরী এক যুবতীর হাস্যজ্জ্বল মুখের ছবি। ইরতিজা সহজেই চিনতে পারলো ছবির মানুষ দুজনকে। সুন্দরী যুবতীটা হলেন বেলা লিমাস, যে কি না এখনও দারুণ সুন্দর দেখতে। আর ছোটো যে কিউট বাচ্চাটাকে দেখা যাচ্ছে ওটা ক্যানিয়ল। ইরতিজা হাতে তুলে নিলো ফটোর ফ্রেমটা। ছোটো বেলায় কত সুন্দর দেখতে ছিল ক্যানিয়ল। তবে তার ধারণা ক্যানিয়ল যেন এখন আরও বেশি সুন্দর দেখতে হয়েছে। শুভ্র মুখ, লালচে দুটি ঠোঁট, কমলা রঙা আঁখি, কালো ভ্রু, কালো-বাদামির সংমিশ্রিত চুল।
ইরতিজার মনে হলো সে এ যাবৎ যত ছেলে দেখেছে তাদের সবার থেকে ক্যানিয়ল নিঃসন্দেহে বেশি সুন্দর।

বেলা লিমাস ফিরে এলেন লিভিং রুমে। ইরতিজা হাত থেকে ছবিটা নামিয়ে রাখলো টেবিলে। বেলা লিমাস টেবিলের উপর চিকেন নাগেট এবং তিনটি গ্লাসে তিন রকমের ভিন্ন পানীয় রাখলেন।
ইরতিজার খাবার দেখেই সংকোচ বোধ হলো। বেলা লিমাস ইরতিজার পাশের সোফাতে বসলেন। খাবারের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন,
“দয়া করে উপভোগ করো।”

ইরতিজার কুণ্ঠাবোধ হওয়া সত্ত্বেও সে মুখে সৌজন্যস্বরূপ হাসি ফোঁটালো। সংকুচিত হাতে তুলে নিলো সবুজ দেখতে পানীয়র গ্লাসটি। এক চুমুক পান করলো। স্বাদ টক, মিষ্টি সংমিশ্রিত। ভালোই লাগলো ইরতিজার কাছে।
বেলা লিমাস বললেন,
“তোমাকে কেন আমি এখানে নিয়ে এলাম জানো?”

ইরতিজা জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো।

“কারণ, তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

ইরতিজার হঠাৎ লজ্জা বোধ হলো। লজ্জিত মুখে হাসলো একটু।

বেলা লিমাসও হাসলেন। অতঃপর বললেন,
“তুমি ক্যানিয়লের গার্লফ্রেন্ড নও, তবে ক্যানিয়ল তোমাকে পছন্দ করে, তাই তো?”

ইরতিজার লজ্জার মাত্রা বৃদ্ধি পেল। সাথে অস্বস্তিও। এমন এক প্রশ্ন কেন করলেন বেলা লিমাস? তিনি কি ক্যানিয়ল আর ওর ব্যাপারে জানেন সবকিছু? ইরতিজা ইতস্তত বোধ করছে। প্রশ্নের জবাবে তার সত্য না মিথ্যা বলা উচিত বুঝতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত সত্যই বললো,
“হ্যাঁ।”

“তুমিও পছন্দ করো ওকে?”

ইরতিজা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো,
“হ্যাঁ।”
শব্দটা উচ্চারণ করতে গলার সাথে যুদ্ধ করতে হলো ইরতিজার।

বেলা লিমাস মৃদু হেসে জানালেন,
“তোমায় যখন প্রথম এন্ডারসন হাউজে দেখতে পেয়েছিলাম, ওই দিনই বুঝতে পেরেছিলাম ক্যানিয়লের বিশেষ দৃষ্টি আছে তোমার প্রতি। কারণ এন্ডারসন হাউজে তোমার উপস্থিতি ছিল বিস্ময়কর। আমি শুনেছি ও তোমাকে ট্রি হাউজেও নিয়ে গিয়েছিল, বেলভিউয়ের ট্রি হাউজেও নিয়ে গিয়েছিল। এমনকি তোমার কারণে একটা ছেলেকে খুব কঠিনভাবে মেরেছে। আমি মনে করি এগুলো সত্যিকার অর্থে পছন্দ করার নিদর্শন। আগে ক্যানিয়লের জীবনে তুমি ছিলে না। আগে ওর জীবন এখনকার জীবনের থেকে ভিন্ন ছিল। আমি মনে করি ওর আগেকার জীবনের থেকে এখনকার জীবন উন্নত। আর এই উন্নতির কারণ তুমি। ও নিজ থেকে তোমার সাথে মিশছে। তোমার প্রতি ওর আগ্রহ রয়েছে। এখান থেকে সহজেই বোঝা যায় তুমি ওর ভালো থাকার একটা মাধ্যম। কারণ মানুষ ভালো থাকার মাধ্যমকেই আগলে রাখে, আর…”

“আর খারাপ থাকার মাধ্যমকে বর্জন করে।” বেলা লিমাসের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো ইরতিজা।
“ক্যানিয়লকে কেন আপনি বর্জন করেছেন? ও আপনার খারাপ থাকার মাধ্যম ছিল?”

অকস্মাৎ এই প্রশ্নে বেলা লিমাস থমকে গেলেন। তার হৃদয় মরুভূমির বালুকণা হঠাৎ কাঁপতে শুরু করলো দুর্বার গতিতে। স্বচ্ছ চোখে হঠাৎ নেমে এলো আবছায়া।

ইরতিজা বললো,
“আমি জানি আমি ওর ভালো থাকার মাধ্যমের ভিতর একটি। আমি জানি আমি ওর সত্যিকার পছন্দ। সবকিছু জানি আমি। শুধু জানি না যে ব্যাপারটা ওর কষ্টের কারণ সেটা ঘটার কারণ কী! কেন আপনি ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন? কী কারণ এটার?”

সত্যিটা জানার এটাই সুন্দর একটি সুযোগ মনে হলো ইরতিজার। কেন বেলা লিমাস ক্যানিয়লকে ছেড়ে এসেছিল এই কারণটা ক্যানিয়লেরও জানা নেই। ইরতিজার এই মুহূর্তে কারণটা জানার আগ্রহ প্রবল। কিছুক্ষণ আগের কুণ্ঠাবোধ তাই আর প্রভাব ফেলছে না তার মাঝে।

বেলা লিমাসের ভিতর ব্যথারা চিনচিন করছে। দু চোখের তারায় ভাসছে জল। তার হৃদয় তিক্ত করে তুলছে অজস্র কষ্টের হাতছানি। ওই হাতছানিতে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে সে।

_______________

ইরতিজা বেলা লিমাসের এপার্টমেন্ট থেকে বের হলো দুর্বল পা নিয়ে। সারা শরীর অসাড় হয়ে আসছে যেন তার। ক্লান্তি আলিঙ্গন করে রেখেছে। মাথা ঘুরছে তার। ঘামছে অস্বাভাবিক রকম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে এতক্ষণে। ঢোক গিলে ভিজিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থতা পাচ্ছে কুড়িয়ে। মাথার ভিতরে একই বিষয়ের ভনভন শুধু। এটা কী শুনলো সে? কেন শুনলো? কেন বললো বেলা লিমাস এটা তাকে? ইরতিজার বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে। তবুও কষ্ট করে সে চোখে জল ধরে রাখলো। ক্যানিয়ল কথাটা জানার পর কী হবে? ক্যানিয়লের কথা চিন্তা করে দু চোখ বেয়ে অশ্রু নামলো বাধা নিষেধ না মেনে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here