উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ৫০

0
440

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫০
_________________

আজ ভার্সিটি যায়নি ক্যানিয়ল। মূলত যেতে পারেনি। ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে যখন গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছিল তখন একটা গাড়ি পিছন থেকে এসে তার গাড়িতে আঘাত করে। তিন-চার বারের মতো ধাক্কা দেয় গাড়িতে। গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্যানিয়লও আঘাত পেয়েছে। ক্যানিয়ল জানে এটা নাইলা সালেমের কাজ। তার উপর এমন অ্যা’টাক করার নির্দেশ নাইলা সালেমই দিয়েছে। রাগে ক্যানিয়লের শিরা-উপশিরা দপদপ করছে। গাড়িটা তার গাড়িতে তিন-চার বার আঘাত করার পরই চলে যায়। এরপর ক্যানিয়ল মি. হেনরিকে কল দিয়ে জানায় ঘটনাটা সম্পর্কে। মি. হেনরি এসে ক্যানিয়লকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মুহাম্মদ ইসহাকের কাছে খবরটা পৌঁছানো মাত্র সে পুলিশকে ইনফর্ম করে। যেটা ক্যানিয়লের পছন্দ হয়নি। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন করে। ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালে এসে ক্যানিয়লকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ক্যানিয়ল বিরক্ত হলেও পুরো ঘটনা সম্পর্কে বলে পুলিশদের। বিষয়টা নিউজ পর্যন্ত হয়ে গেছে। সকাল থেকে পুলিশ তদন্ত করেছে। আক্রমণকারী সেই গাড়িটার হদিশ পাওয়া গেছে। গাড়ির মালিক জানিয়েছে তার গাড়ি চুরি হয়ে গিয়েছিল। ৩.০০ পিএম এ তার গাড়িটা ফিরে পেয়েছে আবার। কেউ তার বাসার সামনেই গাড়িটা রেখে গেছে। ক্যানিয়লের কেস তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে গাড়ির মালিকের বয়ান সত্যি। কিন্তু এই গাড়ি কে চুরি করেছিল এবং ক্যানিয়লের উপর এই হামলা কে চালিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। এখনও তদন্ত চলছে। রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজগুলো সংগ্রহ করেছে তদন্ত টিম।

বিকেলের দিকে বাড়িতে এলো ক্যানিয়ল। তার শরীর এখন খানিক দুর্বল। মাথায় ব্যান্ডেজ। গলায় মেডিকেল প্লাস্টার লাগানো। সে বাড়িতে এসেছেই শুধু নাইলা সালেমের সাথে দেখা করতে। ক্যানিয়ল জানে নাইলা সালেম এখন নিজের শখের পিয়ানোর সাথে অবসর সময় কাটাচ্ছে। পিয়ানোটা লাইব্রেরি রুমে রাখা। ক্যানিয়ল সোজা সেদিকেই গেল। দরজাটা ভেজানো ছিল, ক্যানিয়ল নক না করেই খুলে ফেললো দরজাটা। নাইলা সালেম চমকে তাকালেন দরজার দিকে। ক্যানিয়লকে দেখা মাত্রই ঠোঁট টেনে হেসে বললেন,
“তোমাকে হসপিটালে দেখতে যাইনি বলে নিজ থেকেই দেখা দিতে চলে এসেছো?”

ক্যানিয়ল রাগান্বিত। সূর্যের উত্তপ্ত রশ্মির মতোই সে ক্রোধান্বিত। নাইলা সালেমের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“ডু ইউ ওয়ান্ট টু কি’ল মি?”

“উহুঁ, যদি মারতেই চাইতাম তাহলে নিশ্চয়ই ধাক্কা গুলো আরও শক্তিশালী থাকতো। তোমার গাড়ি এতক্ষণে পুরোপুরি ভেঙে চুরমার হয়ে যেত, আর সেই সাথে তুমিও।”
বলে ফিচেল হাসলেন নাইলা সালেম।
ওই হাসি দেখে দু চোখ জ্বলে যাচ্ছিল ক্যানিয়লের।

“লোভ এক মারাত্মক জিনিস মাদার সালেম। তুমি বুঝতে পারছো না তুমি কত বড়ো অন্যায় করে চলেছো। সামান্য একটা কোম্পানির জন্য তুমি আমার সাথে এমন করছো! ওই কোম্পানির প্রতি কখনও ইন্টারেস্ট ছিল না আমার। কিন্তু তুমি আমার মাঝে সেটা তৈরি করে দিয়েছো। ওই কোম্পানি আমারই হবে। তুমি আটকাতে পারবে না। আর তোমার দেখানো এসব ভয় সব অকার্য। সুতরাং আর এটার পুনরাবৃত্তি করো না। এতে কোনো লাভ হবে না। আমি ভয় পেয়ে কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করবো না এটা ভাবা ভুল।”

নাইলা সালেম রাগে ফুঁসতে শুরু করলেন।
ক্যানিয়ল বললো,
“ড্যাড এসব জানতে পারলে কী হবে ভেবে দেখেছো? নির্ঘাত কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে তোমার। আমি চাইনি ড্যাড এসব সম্পর্কে জানুক। কিন্তু তুমি এখন অতিষ্ঠ করে তুলেছো আমায়। নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারছি না আমি।”

নাইলা সালেমের রাগের পাশাপাশি এবার ভয়ও জমতে শুরু করলো। সে তটস্থ হয়ে বলে উঠলো,
“তুমি ইসহাককে জানাতে চাইছো?”

ক্যানিয়ল ঠোঁট একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন না করে হাসলো। শান্ত হাসি অথচ ভয়ংকর অদ্ভুত! এমন অদ্ভুত হাসি অনেকদিন তার ওষ্ঠতে সৌন্দর্য ফোঁটায়নি। আজ যখন দীর্ঘ সময় পর এই হাসি আবারও তার ওষ্ঠাধরে প্রস্ফুটিত হলো তখন তা এক টুকরো বিষাক্ত চাঁদের মতো সুন্দর দেখালো, আর হৃদয়ে সৃষ্টি করলো ভীতির ধ্বনি। সে তুষারের মতো শীতল কণ্ঠে বললো,
“ভয় কেন পাচ্ছ মাদার সালেম? এসব করার আগে তোমার নিশ্চয়ই এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল যে তোমার এই কথাগুলো চাপা থাকবে না সারাজীবন। একদিন না একদিন ড্যাড ঠিকই জানতে পারবে। হয়তো তুমি অস্বীকার করবে, কিন্তু ড্যাড আর তখন সত্যকে অবিশ্বাস করবে না। আমি জানা মাত্রই এসব কথা ড্যাডকে জানিয়ে দিলে কেমন হতো? উচিত ছিল জানানো? ছিল হয়তো। কিন্তু আমি চাইনি কোনো সিনক্রিয়েট হোক। আমি চেয়েছিলাম বলে তুমি এখনও এত উচ্চতায় আসন পেতে বসে থাকতে পারছো। নইলে এতদিনে জমিনে বসে কাতরাতে হতো।”

নাইলা সালেম ক্ষুব্ধ দৃষ্টি ক্ষেপণ করে তাকিয়ে রইলেন একইভাবে। ক্যানিয়ল বললো,
“মনে হচ্ছে না ড্যাডকে আমার নিজ থেকে কিছু জানাতে হবে। তুমি নিশ্চয়ই জানো না যে, আজকের ঘটনাটা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। ড্যাড পুলিশদেরকে সমস্ত বিষয়টা খতিয়ে দেখতে বলেছে। এবং তারা যতটা খতিয়ে দেখেছে তাতে এই তথ্য উঠে এসেছে যে, যেই গাড়িটা আমার গাড়িতে হামলা করেছিল ওটা একটা চুরি হওয়া গাড়ি ছিল। তবে তারা এখনও এটা বের করতে পারেনি যে চোরটা কে। চোরকে ধরা সম্ভব হলে চোরের মালিককেও ধরা সম্ভব হবে, আর মালিককে ধরা সম্ভব হলে মালিক কার কথা অনুযায়ী এই কাজগুলো করছে তাও ধরা সম্ভব হবে। আমি পুলিশদের পছন্দ করি না, কিন্তু মনে হচ্ছে না তারা এই কেসটার তদন্তে খারাপ করবে। আমি সব সময় পুলিশ ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গেছি। কিন্তু এবার আমি অতিষ্ঠ! একটু পরীক্ষা করে দেখা যাক পুলিশরা কতটা কাজের। পুলিশদের প্রতি আমার ধারণায় কোনো পরিবর্তন আসে কি না দেখা যাক।”

ক্যানিয়ল হাসলো। আগের হাসির থেকে এই হাসির ধরনটা খানিক শুভ্র। তাচ্ছিল্য পুষছে হাসিটাতে। সে বিপরীতে ঘুরে দরজার দিকে এগোতে লাগলো। যেতে যেতে পিছনে কিছু একটা চুরমার হওয়ার শব্দ কানে এলো তার। আসলে নাইলা সালেম রাগে একটা কাচের বস্তু ছুঁড়ে মেরেছে ফ্লোরে, সেটারই শব্দ। শব্দটা ক্যানিয়লের হাসিতে আরও প্রসারিত ভাব এনে দিলো। ক্যানিয়ল বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই রুমে প্রবেশ করলেন ইয়াদা। ফ্লোরে পড়ে থাকা টুকরোগুলো দেখে তার ভ্রু কুঁচকে গেল। নাইলা সালেমের দিকে চেয়ে দেখলেন তার সমস্ত শরীর রাগে কাঁপছে। মুখে রাগের রক্তিম আভা। ইয়াদা বুঝতে পারলেন না ক্যানিয়ল আর নাইলা সালেমের মাঝে কী নিয়ে কথা হয়েছে। এত রেগে কেন নাইলা সালেম?
সে জানতে চেয়ে বললেন,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

নাইলা সালেম ইয়াদার প্রশ্নের গুরুত্ব দিলেন না। অস্ফুট স্বরে বললেন,
“ভুল হয়েছে। উচিত ছিল বেলার সাথে সাথে এই ছেলেটাকেও তাড়িয়ে দেওয়া!”

“কী?” ইয়াদা ঠিকঠাকভাবে না শুনতে পেয়ে প্রশ্ন করলেন।

_______________

ডিভানে শুয়ে চোখ বুজে আছে ক্যানিয়ল। সকালের ঘটনাটা এখনও ভাসছে তার মনশ্চক্ষে। হঠাৎ গা ছমছম করে উঠলো। খুলে ফেললো দু চোখের পাতা। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো। অকস্মাৎ অনুভব করলো তার মাথায় কারো হাতের স্পর্শ। সে মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করলো। এবং দেখা মাত্রই উঠে গেল শোয়া থেকে। বসেও থাকলো না, দাঁড়িয়ে গেল একদম।

“তুমি? আবার এসেছো? কীভাবে প্রবেশ করেছো বাড়ির ভিতরে?” ক্যানিয়লের কণ্ঠ শান্ত থেকে হঠাৎ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো।

তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বেলা লিমাস। তার চেহারাটা আজ বড়ো নিস্তেজ দেখাচ্ছে। তবুও সে নিস্তেজ চেহারাটাকে যথেষ্ট সতেজ রাখার চেষ্টা করছে। একটু নিকটে এসে ক্যানিয়লের কপাল স্পর্শ করলেন। যেখানে ক্ষতটা আছে। আকুল কণ্ঠে বললেন,
“খুব বেশি ব্যথা করছে?”

বেলা লিমাস স্পর্শ করার সাথে সাথে ক্যানিয়লের হৃদয়ে জ্বালা-পোড়া শুরু হলো। অসহ্য কষ্ট অনুভব হতে লাগলো অন্তঃকরণে। সে হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললো,
“স্পর্শ করবে না আমায়। তোমার স্পর্শে আমার ত্বক দগ্ধ হয়!”

বেলা লিমাস অন্তরে কষ্ট নিয়েও মুখে হাসলেন।

ক্যানিয়ল থমথমে কণ্ঠে বললো,
“কেন এসেছো? তোমাকে বলেছিলাম আমার সাথে আর দেখা করতে আসবে না, তুমি এলে আমি বিরক্ত হই! চলে যাও।”

“বিরক্ত হয়ো না। এটাই আমাদের শেষ দেখা। এরপর আর আসবো না তোমাকে বিরক্ত করতে। শেষ বারের মতো আমার একটা আবদার পূরণ করবে ক্যানিয়ল?”

“কী?”

“মমকে জড়িয়ে ধরবে একবার?”

ক্যানিয়ল হতবাক হয়ে গেল।
“এমন আবদার করছো কীভাবে? এখনই চলে যাও। ঘৃণাবোধ আমার গলা টিপে ধরছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।”

“এত ঘৃণা করো? ভালোবাসো কতখানি? ঘৃণার চেয়ে বেশি?”

প্রশ্নটা হৃদয়ে আঘাত করলো। প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় উন্মাদের মতো হেলেদুলে ওঠা তরুর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো মস্তিস্ক জুড়ে। সে বেলা লিমাসের চোখে পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে জোর গলায় বলতে চেষ্টা করলো,
“ভালোবাসি না তোমাকে। কারণ, তুমি আমায় ভালোবাসোনি। একজন মায়ের কখনোই উচিত না তার সন্তানকে ছেড়ে চলে যাওয়া। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আগলে রাখা উচিত সন্তানকে। কিন্তু তুমি আমায় আগলে রাখোনি, বরং ত্যাগ করেছো!”

“হুম, আগলে রাখার বদলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি। কিন্তু তোমার প্রতি আমি আমার ভালোবাসা ত্যাগ করিনি। মৃত্যু পর্যন্ত আমি এই ভালোবাসাকে আগলে রাখবো।”

ক্যানিয়ল তুচ্ছজ্ঞানে হেসে বললো,
“ড্রামা করার জন্য না আসলেও পারতে, বিরক্ত না করলেও পারতে। আমার দিনটা এমনিতেই খারাপ ছিল, তোমার আগমনে আরও বিদঘুটে হয়ে গেল।”

বলে ক্যানিয়ল অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। সে অনুভব করছে তার হৃদয় পুড়ছে।

বেলা লিমাস খানিক সময় চুপ থেকে বললেন,
“ইরটিজা মেয়েটা ভীষণ ভালো। আমি জানি মিরান্ডার সাথে তুমি স্বেচ্ছায় এনগেজমেন্ট করোনি। নিজের ড্যাডের কাছে সাহসের সাথে ইরটিজার কথা বলো। যাতে এটা নিয়ে কখনও আফসোসের স্বীকার না হতে হয়।”

ক্যানিয়ল একটু বিস্মিত হলো। বেলা লিমাস কীভাবে জানলো ইরতিজার কথা? প্রশ্নটা নিয়ে সে অতও আগ্রহ দেখালো না। বললো,
“আমি জানি কীভাবে ভালোবাসার মানুষদের আগলে রাখতে হয়। আশা করি তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে না এটা। আর আফসোস? আফসোসের স্বীকার হবো বলে তো আমি ভালোবাসিনি, আফসোস থেকে বিরত থাকতে ভালোবাসি।”

ক্যানিয়ল এখান থেকে যেতে উদ্যত হলে বেলা লিমাস বললেন,
“মমকে একবার জড়িয়ে ধরবে না? পূরণ করবে না মমের শেষ আবদার? পরে না এটা নিয়ে আবার আফসোস করতে হয় তোমার!”
বলতে বলতে এগিয়ে এলেন ক্যানিয়লের কাছে।

“তুমি নিজেই সবচেয়ে বড়ো আফসোস আমার জীবনে!”

ক্যানিয়ল কথা শেষ করা মাত্রই বেলা লিমাস দুহাতে জড়িয়ে ধরলেন ক্যানিয়লকে। কান্না ভেজা কণ্ঠে বললেন,
“ঘৃণার আড়ালে মমকে এত বেশি ভালো কেন বাসো ক্যানিয়ল?”

ক্যানিয়লের দৃষ্টি জোড়া ঝাপসা হয়ে এলো অশ্রুতে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। যন্ত্রণায় পারলে সে এখন নিজের হৃৎপিণ্ড খাঁমচে ধরতো।

________________

এই তীব্র শীতের মাঝে মেয়েটার গায়ে কোনো শীতবস্ত্র নেই। কেবল একটা টি-শার্ট গায়ে। মেয়েটার কি শীত লাগছে না? হাতে আবার কোল্ড ড্রিংকসের বোতল। এই সময় এই মেয়েটাকে দেখলে যে কেউ পাগল বলবে। ইরতিজা চেয়ারে বসে এক নাগাড়ে পায়চারি করতে থাকা জুহিকে দেখছে। জুহির চুলগুলো এলোমেলো। জুহির উত্তেজনা দেখে ইরতিজার মনে হচ্ছে জুহি এই মুহূর্তে পাগলই হয়ে গেছে। টিপ টিপ করে বৃষ্টি ঝরছে আকাশ থেকে। শীতকে আরও বেশি প্রখর করে তুলেছে এই বৃষ্টি। জমাট বাঁধা বরফগুলো গলতে অবশ্য বৃষ্টির বিশেষ একটা ভূমিকা লক্ষণীয়।
জুহি উত্তেজিত ভাবে পায়চারি করতে করতে মুখে আওড়াতে লাগলো,
“কী ভেবেছে ও? ওর মতো খোঁড়া একটা ছেলের জন্য কষ্ট পেয়ে আমি ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে কাঁদবো? না, কখনোই না। ওর থেকে অনেক বেস্ট একটা ছেলের সাথে ডেটে গিয়ে দেখিয়ে দেবো। বেয়াদব! বলে কি না আমাকে ভালোবাসে না!”

জুহি ঠান্ডা পানীয়র খানিক অংশ পান করলো। রাগে কাঁপছে সে। এতটা পরিমাণ রেগে আছে যে সেই রাগ নিবারণের জন্যই এমন ঠান্ডা পরিবেশে উন্মাদের বেশ ধরেছে। জুহি হঠাৎ ইরতিজার কাছে এলো। ওর হাতের ড্রিংকসের বোতলটা ইরতিজাকে দিয়ে বললো,
“এটা ধরো, খাও। আমাকে এখন ঘুমাতে হবে। খুব সকালে উঠে ডিসাইড করতে হবে যে আমি কার সাথে ডেট করবো। এটা ডিসাইড করা ডিফিকাল্ট। খুব শান্ত মাথায় ডিসাইড করতে হবে। এর জন্য এখন একটা শান্তির ঘুম খুব প্রয়োজন।”

জুহি চলে গেল ইরতিজার রুমে। আজ সে এখানেই ঘুমাবে। এতক্ষণে বাসার সবাই-ই ঘুমিয়ে গেছে। ইরতিজা লিভিং রুমের লাইট অফ করে নিজের রুমে এলো। জুহি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরতিজা চলে এলো বারান্দায়। বাতাসের শীতল ঝাপটা এসে তার চামড়ায় দাঁত বসিয়ে দিলো। কেঁপে উঠলো সে। বৃষ্টি টিপটিপ করে ঝরছে বলে বারান্দায় এসে পৌঁছচ্ছে না। তার এখন হঠাৎ ইচ্ছা হলো বৃষ্টিতে ভিজতে। তবে একাকি না, ক্যানিয়লের সাথে। ক্যানিয়ল আজকে ভার্সিটি যায়নি কেন ভাবছে। কেন যেন ক্যানিয়লকে তার বেশি বেশি মনে পড়ছে আজকে। মনে পড়লেও সে কল করে খোঁজ নিতে পারছে না একবার। ক্যানিয়লের সাথে মোবাইলে তার যোগাযোগের পরিমাণ খুব সীমিত। কল দিতে বিব্রত, অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। আর ক্যানিয়লও তো তাকে একবার কল দিতে পারতো। দেয়নি তো। আজকে দিনে একেবারে ফেরারি হয়ে গেছে সে!

ইরতিজা বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল বারান্দায়। জুহি এতক্ষণে শুয়ে পড়েছে। রুমে ফোনটা বেজে উঠলে ইরতিজা রুমে এলো। এতক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে তার হাত-পা সব জমে গেছে। ক্যানিয়লের নামটা দেখে হঠাৎ খাঁখাঁ জমিনে এক পশলা বৃষ্টির ছোঁয়ার মতো তার হৃদয় সিক্ত হলো। সে অপেক্ষা না করে কলটা রিসিভ করে ফেললো তাড়াতাড়ি। নিজে কিছু বললো না। ওপাশ থেকে ক্যানিয়লের কথা শোনার প্রতীক্ষায় রইল। আজ হৃদয়ের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করছে ইরতিজা। তার হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে চলছে। উদ্বিগ্ন উদ্বিগ্ন ভাব বিরাজ করছে।

“পাকিস্টানি গার্ল, নিউজ দেখোনি?”

ক্যানিয়লের কণ্ঠ শোনা মাত্র হৃদয় আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। সে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
“কীসের নিউজ?”

“আমি যে অসুস্থ।”

“তুমি অসুস্থ?” উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেল ইরতিজার কণ্ঠে।

“হুম। মনটার শরীর খারাপ। সাথে আবার শরীরটারও শরীর খারাপ। এত খারাপ নিয়ে কি থাকা যায়? আমি পারছি না থাকতে।
পাকিস্টানি গার্ল!”
ডাকলো ক্যানিয়ল।
ইরতিজা সাড়া দিলো,
“হুম?”

“তুমি কি জানো? আমি মৃত!”

“কী?” অগাধ বিস্ময়ে শব্দটা আপনাআপনি বেরিয়ে এলো ইরতিজার মুখ থেকে।

“হ্যাঁ, আমি মৃত। আমার অন্তঃসত্তা মরে গিয়ে নতুন এক অন্তঃসত্তার জন্ম নিয়েছে। যেহেতু আমার অন্তঃসত্তা মরে গিয়েছে সেই হিসেবে আমি মৃত। নতুন যে অন্তঃসত্তা আমার মাঝে জন্ম নিয়েছে এটা মোটেই আমার ধরনের না। এটা পাগলাটে। পাগল না হলে এই মধ্যরাতে তোমাকে দেখার তেষ্টা অনুভব করবে কেন আমার দু চোখ?”

ইরতিজা চুপচাপ শুনে যেতে লাগলো ক্যানিয়লের কথা। নিজে কিছু বললো না। ক্যানিয়ল গলা কেমন ফিসফিস করে বললো,
“পাকিস্টানি গার্ল, সাবধানে থেকো। আজ রাতে তোমার কিডন্যাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

“হ্যাঁ?” চোখ কপালে উঠলো ইরতিজার।

“উমরান উইল কিডন্যাপ ইউ মিসেস উমরান।”

______________

সূর্যের আলোর দেখা নেই। আকাশ গম্ভীর। আর প্রকৃতি বিবর্ণ। তুষার, পানি সব জায়গায়। জমাট বাঁধা বরফ অনেকটাই গলে গেছে। ইরতিজা আজ একা। জুহি ইউনিভার্সিটি যাবে না। সকাল সকাল ছেলে খুঁজতে বের হয়েছে ডেটে যাওয়ার জন্য। আর রিশন গিয়েছে কোন একটা দর্শনীয় স্থানের ভিডিয়ো শ্যুট করতে। ইরতিজা রিশনকে বলেছিল, সে রিশনের সঙ্গে যাবে, রিশনকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু রিশন জানালো সে তার বন্ধুদের নিয়ে যাবে, তাই ইরতিজার সহযোগিতার দরকার পড়বে না। অগত্যা ইরতিজার একারই রওনা হতে হলো। তাকে এখন যেতে হবে বাসে করে। বাস স্ট্যান্ড তাদের এরিয়া থেকে বেশ কিছুটা দূরে। ইরতিজা শান্ত রাস্তাটি ধরে হেঁটে চলছিল। শুনসান পরিবেশ। এমন নীরবতাই বজায় থাকে সব সময়। দুই একটা গাড়ি কিছুক্ষণ পরপর তার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা ট্যাক্সি এসে তার পাশে থামলো। ট্যাক্সি থেকে নামলো জোনাস।
জোনাসকে দেখে ইরতিজা দ্রুত চলে যেতে উদ্যত হলো। কিন্তু জোনাস তার সামনে এসে দাঁড়ালো। থামতে হলো ইরতিজার। সে বিস্ময় নিয়ে জোনাসের মুখে তাকালো।
জোনাস বললো,
“আমার সাথে একটা জায়গায় যাবে টিজা?”

“আমি তোমার সাথে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতেই অনিচ্ছুক।”
বলে সে জোনাসকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে জোনাস আবারও তার সামনে এসে দাঁড়ালো। আকুতি ভরা কণ্ঠে বললো,
“প্লিজ টিজা, এভাবে ইগনোর করো না। আমি তোমার বন্ধু। হয়তো তুমি এখন আমাকে বন্ধু ভাবো না। কিন্তু আমি অতীতে তোমার বন্ধু ছিলাম। একজন সেরা বন্ধু ছিলাম।”

‘একজন সেরা বন্ধু’ কথাটা বিশেষ প্রভাব ফেললো ইরতিজার মনে। তার মনে পড়লো নিউ ইয়র্ক ফেলে আসা তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কথা। মনে পড়লো বন্ধুদের সাথে কাটানো কিছু সুন্দর স্মৃতি। ওগুলো এখন সব অতীত। ভেঙে চুরমার তাদের বন্ধুত্ব। কোনো বন্ধুর সাথেই এখন আর জোরালো সম্পর্ক নেই। অথচ এই বন্ধুদের সাথেই কত হাসি, কত আড্ডা, কত ঘোরাঘুরি করেছে। সময় গুলো কত ভালো ছিল। এখন সব শেষ!
ইরতিজা বললো,
“তুমি একজন সেরা শত্রু আমার! সেরা ঘৃণার মানুষ তুমি!”

ইরতিজা জোনাসকে পাশ কাটিয়ে কয়েক পা সামনে এগোনো মাত্রই জোনাস পিছন থেকে ওর হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ফেরালো। ইরতিজার হৃৎপিণ্ড হঠাৎ জোরে কম্পিত হলো। ধুকধুক করতে শুরু করলো বুক। জোনাসের দু চোখে নরম চাহনি। মুখখানি সরল, কোমল। ইরতিজা থমকে গেল। জোনাসের মাঝে সে আজ তার পুরোনো বন্ধুকে দেখতে পাচ্ছে। তার শত্রু জোনাসের সব সময় যে চাহনি, বা তার আচরণ যেমন তাতে আজ ভিন্নতার উপস্থিতি লক্ষণীয়। জোনাস আবারও আকুল কণ্ঠে বললো,
“প্লিজ টিজা, এমন কঠিন আচরণ করো না আমার সাথে। আমি চাই না আমাদের মাঝে আর কোনো কঠিনতা থাকুক। আমি তোমাকে শেষ অনুরোধ করছি। বন্ধু হিসেবে শেষ অনুরোধ তোমার কাছে, প্লিজ চলো আমার সাথে।”

ইরতিজা জোনাসের কথাবার্তায় ভীষণ চমকে যাচ্ছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না জোনাস এত নরম করে এমনভাবে কথা বলছে তার সাথে। পুরোনো বন্ধুর ছায়া দেখতে পেয়ে তার মন একটু-আধটু হলেও নরম হয়েছিল। কিন্তু তা জোনাসের প্রতি থাকা এখন ঘৃণার অনুভূতির কাছে অতি তুচ্ছ। সে বললো,
“আমি স্যরি! আমি…”

ইরতিজা কথা শেষ করতে পারলো না। ট্যাক্সিটা এগিয়ে এসে তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। পিছনের আসনের দরজা ছিল খোলা। জোনাস ইরতিজাকে ধাক্কা দিয়ে ট্যাক্সির ভিতর ঢুকালো। ইরতিজা সঙ্গে সঙ্গে রাগে চিৎকার করলো,
“জন!”

ইরতিজা বের হওয়ার চেষ্টা করলে জোনাস এগিয়ে এসে আরও ভিতরের দিকে ঠেলে দিলো ইরতিজাকে। তারপর নিজেও উঠে বসলো ইরতিজার পাশে। ইরতিজা জোনাসের এই কাজে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে তার হৃৎপিণ্ড ডিগবাজি খাচ্ছে। ঘেমে যেতে লাগলো সে। জোনাস তার হাত দুটি আলতো করে ধরে বললো,
“আমি তোমার বন্ধু টিজা। তুমি আগের মতোই আমার কাছে নিরাপদ এবং মূল্যবান!”

ইরতিজা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। দু চোখে ভয় ঠিকরে বের হচ্ছে তার। মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগলো।

ট্যাক্সি এসে থামলো নদীর পাড়ে। ইউনিভার্সিটি যাওয়ার পথেই এই নদীর দেখা মিলে। জোনাস সেখানে নিয়ে এসেছে ইরতিজাকে। ইরতিজা ট্যাক্সিতে থাকাকালীন অনেকবার বলেছে জোনাসকে, তাকে নামতে দিতে। কিন্তু জোনাস তা করেনি। সে নিজ গন্তব্যে আসার পরই ট্যাক্সি থামানোর নির্দেশ দিয়েছে। জোনাস ইরতিজাকে একেবারে নদীর পাড়ে নিয়ে এলো। ইরতিজা খুব রাগান্বিত জোনাসের উপর। গমগমে কণ্ঠে বললো,
“এখানে কেন এনেছো?”

“শসসস…কথা বলো না। কিছুক্ষণ নীরবভাবে এই প্রকৃতি দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটানো উচিত।”

জোনাস খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো আশপাশ। নদীর পানিতে তাকিয়ে ইরতিজার অকস্মাৎ মনে পড়লো, জোনাস তাকে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে প্রপোজ করেছিল। কথাটা মনে পড়ার পর তার হৃৎকার্য যেন থেমে গেল। জোনাসও বললো,
“মনে আছে টিজা? তোমাকে আমি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রপোজ করেছিলাম?”

ইরতিজা তাকালো জোনাসের দিকে।

“এটাও একটা নদী। ঠিক সেই নদীটার মতোই সুন্দর!”
বলে জোনাসও তাকালো ইরতিজার দিকে। ইরতিজার মুখোমুখি এসে দাড়ালো সে। শান্ত ধীরে বললো,
“একটা কথা কি জানো টিজা? মানুষ বন্ধু থেকে খুব সহজে প্রেমিক হতে পারে, এর জন্য শুধু কারো এক ধাপ এগিয়ে আসা প্রয়োজন।”
বলে জোনাস এক পা সামনে এগিয়ে এলো ইরতিজার। ইরতিজার হৃৎপিণ্ড ধক করে উঠলো তখন।

“আমি দ্বিতীয়বারের মতো তোমার কাছে এগিয়ে এলাম টিজা। এবার দয়া করে সেই প্রথমবারের মতো আচরণ করো না। এটা দ্বিতীয়। দ্বিতীয়বারের মতো আচরণ করো।”

জোনাস আরও কাছে এগিয়ে এসে ইরতিজার দু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। হঠাৎ এমন করায় চমকে গেল ইরতিজা, কেঁপে উঠলো।

“আই লাভ ইউ টিজা। আই লাভ ইউ ভেরি মাচ। দয়া করে আমাকে ভালোবাসো। প্লিজ?”

ইরতিজা স্তব্ধ। এই ছেলেটা কি পাগল? মুখে সব সময় ঘৃণার কথা আওড়িয়ে এখন এভাবে ভালোবাসার কথা বলছে? জোনাসই তো বলেছিল, “যে ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না ওগুলো ঘৃণাতেই রূপ নেয়!”
তাদের সম্পর্ক তো ঘৃণারই হয়ে গেছে। তাহলে এখন আবার কেন এই ভালোবাসার প্রসঙ্গ আসবে?

ইরতিজা রুষিত হয়ে বললো,
“তুমি কী বলছো জন! ভালোবাসা? আর ইউ ম্যাড? আমরা এখন একে অপরের শত্রু। আমরা দুজনই একে অপরের কাছে ঘৃণার মানুষ। আমাদের সম্পর্কে এটাই চরম সত্যি। তুমি তাহলে ভালোবাসার কথা কীভাবে বলছো? সব সময় তুমি মুখে ঘৃণারই উচ্চারণ ঘটিয়েছো। তাহলে আজ এটা কী? এটা হাস্যকর! আমরা একে অপরের কাছে ঘৃণার মানুষ আছি, আর ঘৃণারই থাকবো। বুঝেছো? আমি তোমাকে চরম ঘৃণা করি!”

ইরতিজার আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হলো না। সে যত দ্রুত সম্ভব চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। দ্রুতগামী পা কয়েক পা সামনে এগোনো মাত্রই জোনাস পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো ইরতিজাকে। ইরতিজার মুখ হা হয়ে গেল। হৃৎপিণ্ড উঠে গেল গলার কাছে।

“এরকম করো না টিজা। প্রথম বারও এমনভাবে চলে গিয়েছিলে। দ্বিতীয় বার অন্তত এটা করো না। আমি তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি না। তুমি জানো না আমার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে। তুমি আমার মস্তিষ্ক থেকে এক চুলও নড়ো না। সর্বদা তুমি বিরাজমান আমার চেতনায়। দয়া করে আমাকে ভালোবাসো!”

ইরতিজা জোনাসের হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। মরিয়া হয়ে উঠলো জোনাসের থেকে সরে যাওয়ার জন্য।
“ছাড়ো জন! তোমার স্পর্ধা হয় কীভাবে আমাকে এমনভাবে স্পর্শ করার? এখনই ছেড়ে দাও। নইলে খুব খারাপ হবে।”

জোনাস ছাড়লো না। দেখতে লাগলো তার প্রেয়সীর তার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ব্যাকুল প্রচেষ্টা।
বললো,
“আমার প্রয়োজন তোমার ভালোবাসার। খারাপ ঘটবে কি ভালো ঘটবে সেটা দেখার প্রয়োজন আমার নেই। আমি শুধু তোমার মাঝে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে চাই। এটা দেখা এত কঠিন কেন?”

ইরতিজা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে জোনাসের হাতের বাঁধনটা ছিন্ন করার চেষ্টা করে বললো,
“ছাড়ো, আমি তোমায় মে’রে ফেলবো কিন্তু।”

জোনাসের মাঝে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা গেল না। সে যেন বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে। হেসে বললো,
“পারবে না মারতে। আর এই বাঁধনও ছিন্ন করতে পারবে না।”

ক্যানিয়লের গাড়িটা থমকে গেল অদূরবর্তী দৃশ্যটা দেখে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো তার। রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলতে আরম্ভ করলো। ভিতরে গর্জে উঠলো একটা হিংস্র দানব। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, নদীর পাড়ে জোনাস ইরতিজাকে জড়িয়ে ধরেছে এবং ইরতিজা জোনাসের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here