#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫৩
_________________
রঙিন মুহূর্তে কালো রং ঝরে পড়তে লাগলো মুষলধারে বৃষ্টির ন্যায়। মনের সবটুকু রং তলিয়ে গেল ধীরে ধীরে কালোর অতলে। এত সুন্দর, স্নিগ্ধ মুহূর্তগুলো বার বার কেন এমনভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়? কেন মনে পড়ে যায় ওগুলো সম্পর্কে? কেন জীবনে এত বড়ো একটা কাঁটা সৃষ্টি হয়ে আছে?
ক্যানিয়ল দেখলো ইরতিজা তার সম্মুখেই কেঁদে উঠেছে। সে ঘাবড়ে গেল এবং সচকিত হয়ে উঠলো।
“পাকিস্টানি গার্ল! হোয়াই আর ইউ ক্রায়িং?”
ইরতিজার কান্না আরও বিস্তৃত হলো। ক্যানিয়ল বুঝতে পারলো না কোত্থেকে কী হচ্ছে! হঠাৎ কাঁদছে কেন ইরতিজা? ক্যানিয়ল ইরতিজার চিবুক স্পর্শ করে বললো,
“হেই, কেন কাঁদছো? কী হয়েছে?”
ইরতিজা এবার ক্যানিয়লের চোখে চোখ রেখে চাইলো। ক্যানিয়ল দেখলো মায়াবী আঁখি জোড়া থেকে কীভাবে অনর্গল স্বচ্ছ জল গড়িয়ে পড়ছে! ইরতিজা কান্না সিক্ত কণ্ঠে বললো,
“আই অ্যাম এনগেজড ক্যানিয়ল!”
“হ্যাঁ তুমি এনগেজড, এই মাত্রই আমি তোমাকে রিং পরিয়েছি। কিন্তু এখানে কান্নার কী বিষয় রয়েছে? রিং পরানোয় তুমি অখুশি?”
“ব্যাপারটা এমন নয়। কীভাবে যে বলবো তোমায়!”
ইরতিজা একটুখানি বিরতি নিয়ে ভাবলো একটু। তারপর এক শ্বাসে বলে দিলো,
“তুমি রিং পরিয়ে দেওয়ার আগে থেকেই আমি এনগেজড! এটা অন্য কেউ।”
“কী?”
“হ্যাঁ। ওয়াশিংটন আসার আগেই সাজিদ নামের একজনের সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছিল!”
ক্যানিয়ল ইরতিজার চিবুক থেকে হাত সরিয়ে এক পা পিছিয়ে গেল। তার দু চোখ ধারণ করছে চমকানোর গভীর খাদ। বিস্ময় স্ফীত চোখে সে তাকিয়ে রইল বেশ কিছু সময়। অনন্তর বললো,
“তাহলে এটা সত্যি ছিল? আমি তো ভাবতাম এটা তুমি এমনিই বলতে। আমার উডবি ওয়াইফ আছে শুনে নিজেও উডবি হাসব্যান্ডের গল্প বানাতে। কিন্তু এটা সত্যি ছিল!”
নীরব কেটে গেল অনেকটা সময়। ক্যানিয়ল এবার নিজের বিস্ময় কাটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বললো,
“এই জন্য কাঁদছো তুমি? উডবি হাসব্যান্ড আছে তো কী হয়েছে? ভুলে কেন যাচ্ছ আমারও অন্য একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এটা তেমন জটিল কোনো ব্যাপার নয়।”
“আমি কাঁদছি আমার আব্বুর কথা চিন্তা করে। তাকে কীভাবে বোঝাবো আমি? সবটাই খুব বেশি জটিল লাগে আমার কাছে। অনেক ভেবেও কী থেকে কী করবো কিছু বুঝে উঠতে পারি না আমি। আব্বু চায় সাজিদের সাথেই আমার বিয়ে হোক। তাকে আব্বু খুবই পছন্দ করে…”
“তুমি পছন্দ করো?” ইরতিজাকে থামিয়ে দিলো ক্যানিয়ল, “তুমি চাও ওকে বিয়ে করতে?”
“না। আমি এই এনগেজমেন্ট নিজ ইচ্ছায় করিনি। এই বিয়েতে আমার কোনো মত নেই। আমি কিছুতেই বিয়ে করতে চাই না তাকে।”
“তাহলে এটা নিয়ে আর ভেবো না। শুধু একটা কথাই মনে রাখবে, তুমি আমার। ওই লোক তোমায় ছাড়া ভালো থাকবে, খারাপ কাটবে না তার দিন। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার প্রতিটা দিন খারাপ কাটবে। কারণ তুমি আমার ভালো থাকা। আমার হ্যাপিনেস!”
ইরতিজা এবার আনন্দে কেঁদে ফেললো। বললো,
“আর তোমাকে ছাড়া আমার দিন গুলো কাটবেই না।”
_______________
ইরতিজা বাসায় ফিরলো সন্ধ্যায়। ফিরে দেখতে পেল জুহি একটা ছেলের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়েছে বাসার সামনের রোডে। ভুল না হলে খুব সম্ভবত ছেলেটার নাম পিটার। এই ছেলের সাথেই জুহি ডলারের বিনিময়ে ডেট করছে। ইরতিজা দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলো ওদের ঝগড়া শেষ হওয়ার। শেষ হলে এগিয়ে এসে শুধালো,
“কোন বিষয়ে ঝগড়া হচ্ছিল?”
জুহি ভীষণ বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
“আর বলো না টিজা, ও বলছে ডলারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। ওর কাছে না কি এক সেকেন্ড সময়েরও মূল্য অনেক বেশি। অযথাই ও নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে পারবে না আমার সাথে ডেটে গিয়ে।”
ইরতিজা একটুখানি হাসলো জুহির কথায়। জুহি নিজের বিরক্তি দূরে ঠেলে দিয়ে হঠাৎ সোল্লাসে ইরতিজার এক হাত চেপে ধরে বললো,
“জানো, আমার মনে হচ্ছে আমি উচিত শিক্ষা দিতে পারছি আন্দ্রেজকে। ও বুঝে যাচ্ছে ওর নিজের জায়গাটা। আমাকে বলে কি না আমি পাগল? পাগল ও নিজে। ধীরে ধীরে সেটা বুঝতে পারছে।”
জুহি খুশি মনে ফড়িংয়ের মতো লাফাতে লাফাতে চলে গেল ঘরে। ইরতিজাও পা বাড়ালো ঘরের দিকে।
ঘরে এসে লিভিং রুমে নওরিনকে শুয়ে থাকতে দেখলো। হঠাৎ খারাপ লাগা অনুভব হলো তার। সে নিজেও কখনও ভাবেনি হামাদ ওরকম করতে পারে। নওরিন মানুষ চিনতে ভুল করেছিল। পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ মানুষ চিনে ওঠা। তবে সে নিশ্চিত মানুষ চিনতে ভুল করেনি সে। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলেই নওরিন ডাকলো,
“ইরতিজা…”
ইরতিজা পিছন ফিরে সাড়া দিলো,
“হ্যাঁ?”
নওরিন কাছে আসতে আসতে বললো,
“কোথায় গিয়েছিলে? কল করেছিলাম কিন্তু…”
কাছে এসে দাঁড়ালেই প্রথমে নওরিনের চোখ গেল ইরতিজার অনামিকায়। আর তখনই থেমে গেল সে। ইরতিজার অনামিকায় আংটি দেখে চমকালো সে। এই আংটি সাজিদের পরানো সেই আংটি নয়। নওরিনের চিনতে সময়ই লাগলো না। সে ইরতিজার দিকে তাকালো। খুব সহজেই অনুমান করে নিতে পারলো এই আংটি কেন, কে পরিয়ে দিয়েছে ইরতিজাকে। ইরতিজার মাঝে সে কখনও সাজিদের জন্য অনুভূতির লক্ষ করেনি। আর সাজিদের প্রতি অনুভূতি ছিল না বলেই হয়তো…
ইরতিজা বোনের পর্যবেক্ষণ দৃষ্টি বুঝতে পারলো না। বললো,
“কেন কল করেছিলে? আমার ফোন তো আমি ভুলে রুমে ফেলে রেখে গেছি।”
“মার্কেটে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে যাব। তাই কল করেছিলাম।”
“এখনও তো যাওয়া যায়, চলো।”
“দরকার নেই। সকালে যাব।”
নওরিন যেতে উদ্যত হয়ে পিছন ফিরলো আবার। ইরতিজার অনামিকায় তাকালো। আংটিটা চকচক করছে। নওরিন ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“সেটাই করো, যেটা তোমার মন চায়। সেটা করো না যেটা তোমার মনের অনিচ্ছায় তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে।”
নওরিন চলে গেল। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ইরতিজা। নওরিন হঠাৎ এ কথা বললো কেন? ইরতিজার চোখ চলে গেল অনামিকায়।
_______________
কালো রাতের মাঝে কী দারুণ সাদার অস্তিত্ব। ন্যাড়া গাছ গুলোর মাথায় শ্বেত তুষারের প্রলেপ পড়ে আছে। রাস্তার দুই পাশে বরফের চিহ্ন। ক্যানিয়লের গাড়িটা সেই রাস্তা ধরে এসে প্রবেশ করলো রাজপ্রাসাদের ন্যায় বাড়িটায়। লনে পার্ক করে নামলো সে গাড়ি থেকে। পুরো বাড়িটায় আলো জ্বলছে। বাইরে থেকে সেসব আলো আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে বাড়িটাকে। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে তার দৃষ্টি আটকালো প্রথমে সোফায় বসে থাকা অপরূপা মেয়েটির উপর। মেয়েটি ধূসর চোখ জোড়া তার উপর নিক্ষেপ করে হাসলো। ক্যানিয়লও হাসলো। জানে মেয়েটার এখনকার শান্ত, আনন্দের আচরণ কিছুক্ষণ পর রূঢ় হয়ে উঠতে চলেছে। ক্যানিয়ল একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো পুরো হলঘরে। ড্যাড, মাদার সোফিয়া, ইয়াদা, সালেম, আর ভাই-বোনদের অধিকাংশই এখন এখানে উপস্থিত। পারিবারিক গল্পগুজব চলছে এখানে। মুহাম্মদ ইসহাক ছেলেকে দেখে বললেন,
“এতক্ষণ কোথায় ছিলে উমরান?”
ক্যানিয়ল সহাস্যে উত্তর দিলো,
“আমার উডবির কাছে।”
“কিন্তু ও তো এখানে!”
মুহাম্মদ ইসহাক হাতের ইশারায় মিরান্ডাকে দেখিয়ে দিলেন।
ক্যানিয়ল বললো,
“ও তো মিরান্ডা। আমি মিসেস উমরানের সাথে ছিলাম।”
সবাই একটু চমকালো। কারো কারো তো ভ্রুর মধ্য স্থলে ভাঁজের সৃষ্টি হলো। মিসেস উমরান বলতে কাকে বোঝালো ক্যানিয়ল?
মুহাম্মদ ইসহাক বললেন,
“তোমার কথা বুঝতে পারছি না উমরান! ইদানীং তোমার কথা ঠিক বুঝে ওঠা যায় না।”
“তোমার যেন বুঝতে অসুবিধা না হয় সেজন্য আমি স্পষ্টভাবে একটা কথা বলতে চাই তোমায়। যদি তুমি অনুমতি দাও তাহলে আমি কথাটা বলবো। আমি কি বলবো?”
“কী বলতে চাও?”
“আমি যেটা বলবো সেটা আমি মজা অথবা মানসিক কোনো সমস্যা থেকে বলছি না। আমার পক্ষে মিরান্ডাকে বিয়ে করা একদমই অসম্ভব ব্যাপার ড্যাড। আমি বিয়ে করবো না মিরান্ডাকে। আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি। ভালোবাসি ওকে। ভালো লাগে ওকে আমার।”
ক্যানিয়লের কথা শেষ হওয়ার পর পিনপতন নীরবতা গ্রাস করলো হলরুমকে। মুহাম্মদ ইসহাক ব্যতীত বাকি সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো একে অন্যের। মুহাম্মদ ইসহাক বেশ কিছু সময় ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললেন,
“কী বলছো তুমি?”
“আমি দ্বিতীয়বার কথাগুলো রিপিট করলেও কথাগুলো পরিবর্তন হবে না ড্যাড।”
মুহাম্মদ ইসহাক দাঁড়িয়ে গেলেন,
“তোমার সাহস কীভাবে হলো এমন একটা কথা বলার? ভালোবাসো? অন্য একজনকে?”
ক্যানিয়ল বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। বললো,
“আজ আমি ওকে রিং পরিয়েছি। আমি আশা রাখি খুব শীঘ্রই আমাদের বিয়েতে তোমার মত পাবো।”
মুহাম্মদ ইসহাক হুংকার করে উঠলেন,
“খামোশ! আর একটা কথাও বলো না এ ব্যাপারে।”
“তুমি মেনে নিলে বলতে হবে না, কিন্তু মেনে না নিলে কথা বলতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা তুমি মেনে নিচ্ছ।”
“ড্যাডের সাথে বেয়াদবি করার চেষ্টা করো না।”
“আমি তেমন চেষ্টা করছি না।”
“তাহলে আর একটা কথা না বলে নিজের রুমে চলে যাও।”
“মেয়েটা আমার তেমন ভালোবাসা না যাকে ‘ভুলে যাব’ বললেই ভুলে যেতে সক্ষম হবো। মেয়েটা আমার তেমন ভালোবাসা না যার জন্য হৃদয়ে অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও তুমি অন্য একজনের সাথে আমায় জোর করে বিয়ে দিতে সক্ষম হবে। এটা এমন ভালোবাসা যা…”
“বন্ধ করো তোমার এই ভালোবাসার ব্যাখ্যা। আমি এখনই তোমাকে নিজের রুমে চলে যেতে আদেশ করছি। যাও।”
ক্যানিয়ল নিজের অসমাপ্ত কথাকে সমাপ্ত করলো,
“এটা এমন ভালোবাসা যা মানুষের অমতকে মতে পরিণত করবে।”
মুহাম্মদ ইসহাক কাঁপছেন রাগে। ক্যানিয়ল তা নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে সহজেই প্রত্যক্ষ করলো। বললো,
“যাচ্ছি নিজের রুমে। তোমার অমতের মতে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। নিশ্চয়ই তুমি নিজের ছেলের মনে কষ্ট দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না।”
ক্যানিয়ল চলে গেল। সবাই অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে রইল ওর পথের দিকে। ক্ষণিকের ভিতর শুরু হয়ে গেল ওকে নিয়ে উপস্থিত সকলের মন্তব্য। প্রথমে শুরু করলেন নাইলা সালেম। প্রথমে সে ক্যানিয়লের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কটমট করে বললেন,
“বেয়াদব ছেলে!”
তারপর মুহাম্মদ ইসহাকের দিয়ে চেয়ে বললেন,
“ওর সাহস কীভাবে হলো ইসহাক তোমার সাথে এমনভাবে কথা বলার? ওকে শাসন করা প্রয়োজন। তুমি আজ ওকে এত স্বাধীনতা দিয়েছো বলে ছেলেটা আস্ত একটা শয়তানে পরিণত হয়েছে।”
নাইলা সালেম মনের খায়েশ মিটিয়ে ক্যানিয়লের নামে নিন্দা প্রকাশ করতে থাকলো। এমন সুযোগ সে পায় না বললেই চলে। মুহাম্মদ ইসহাকের কাছে ক্যানিয়লের সমন্ধে কিছু বলতে গেলেই ইসহাক তা শুনতে নারাজ হন। কিন্তু আজ ইসহাক ছেলের এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। উনি যেন একটা পাথরের মূর্তি এই মুহূর্তে। তাই যার যা ইচ্ছা তাই বলার সুযোগ পেল তার কানের কাছে। কিন্তু সেসব কথা তার কর্ণ শ্রবণ হচ্ছিল না আসলে।
নাইলা সালেমের মনের খায়েশ অবশ্য ক্যানিয়ল সমন্ধে এত কিছু বলেও মিটছিল না। তার মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় ক্যানিয়লকে খু’ন করতে। ক্যানিয়লের তাজা র’ক্তের স্রোত, ওর শেষ নিঃশ্বাস, শেষ আকুতি শুনতে পারলে হয়তো তার মনের খায়েশ মিটতো। ইদানিং এই ইচ্ছাটা তার মাঝে বেজে যাচ্ছে বিরতিহীন। কিন্তু এটা সে করার সাহস পাচ্ছে না।
এক ছিল বেলা লিমাস, আর এখন ক্যানিয়ল। এই দুটো মানুষে নাইলা সালেমের গভীর বিতৃষ্ণা। নাইলা সালেমের দিন এখন কিছুটা ভয়ে ভয়েও কাটছে। কারণ পুলিশ এখনও তদন্ত করছে সেই কেসটা নিয়ে। তদন্তে এখনও কোনো সফলতার মুখ তারা দেখতে পায়নি। কিন্তু একবার যদি গ্যাংয়ের কাউকে ধরে ফেলে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। কারণ সে যে গ্যাংটাকে এসব করার জন্য ডলার দিচ্ছে রাশি রাশি তারা কিছুটা স্বার্থপর আর বেইমান গোছের, যেটা সে উপলব্ধি করতে পেরেছে। তার নামটা পুলিশের কাছে বলে দিতে একটা বার গলা কাঁপবে না শুঁয়োর গুলোর। এখন তো তার মনে হচ্ছে এইসব কাজের জন্য ওই জা’নো’য়া’র গুলোকে বাছাই করা ভুল হয়ে গেছে তার। কিন্তু এখন আর কোনো উপায় নেই এই ভুল শুধরানোর।
ক্যানিয়ল চলে যাওয়ার একটু পরই মিরান্ডাও হলরুম ত্যাগ করেছে। সে ক্ষুব্ধ বাঘিনীর ন্যায় এগোচ্ছে ক্যানিয়লের রুমের দিকে। চোয়াল শক্ত হয়ে আছে তার। দু চোখে ক্রোধের আগুন দাউদাউ করছে। রুমের দরজাটা দুই হাতে ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেললো।
ক্যানিয়ল সবে একটু গা এলিয়েছিল বিছানায়। দরজা খোলার শব্দ কানে এলেই চোখ খুলে ফেললো। দরজা বন্ধ করার শব্দ হলো এর মাঝে। শুনতে পেল মিরান্ডার জোর গলা,
“তোমার আচরণ দেখে আজ আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি ক্যানি। কখনও ভাবতেও পরিনি তুমি তোমার ড্যাডের কাছে এমন অকপটে সবকিছু বলে দেওয়ার সাহস রাখো। তোমার সাহস কীভাবে হলো আমাকে বিয়ে করবে না এটা তোমার ড্যাডকে এমন স্ট্রেইট বলে দেওয়ার? ওই মেয়েটার জন্য করছো এসব তাই না? ওই মেয়েটা এখানে আসার পর থেকেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। আমাদের সম্পর্কটা আজ নড়বড়ে ওই মেয়েটার জন্য। ওই মেয়েটা তোমার মগজ ধোলাই করেছে!”
ক্যানিয়লের শিরা-উপরিশায়ও রাগ বইতে শুরু করলো। সে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বললো,
“গলা নিচু করে কথা বলো মিরান্ডা।”
মিরান্ডা ঝড়ের মতো ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে এসে ধা’ক্কা দিলো ক্যানিয়লকে। ক্যানিয়লের মাথা ধাক্কা খেলো বিছানার নরম গদিতে। মিরান্ডা নুয়ে পড়লো ক্যানিয়লের উপর। দু চোখে রাগ, মুখ কঠিন, কাঁপছে রাগে। কর্কশ কণ্ঠে বললো,
“আমাকে বিয়ে করবে না এই সিদ্ধান্ত তুমি খুব ভালোভাবেই নিয়ে ফেলেছো, তাই না? মনে রেখো চরম ভুল একটা সিদ্ধান্ত এটা। যে ঝড়ের সৃষ্টি তুমি করেছো এই ঝড় ওই মেয়েটার উপর বয়ে তবেই শেষ হবে। মনে রেখো।”
রাগে ক্যানিয়লের মুখও কেঁপে উঠলো। হিংস্র সত্ত্বা গর্জে উঠলো ওর মাঝে। মিরান্ডাকে জোরে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নিজের কাছ থেকে। ধাক্কাটা এত শক্তিশালী ছিল যে মিরান্ডা ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পড়লো। ব্যথায় মৃদু স্বরে এক আর্তনাদ নির্গত হলো ওর মুখ থেকে। ক্যানিয়লের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো। ক্যানিয়ল এসে বসলো মিরান্ডার কাছে। ওর ঠান্ডা চোখের চাহনি ভয়ংকর লাগছে। তবুও তটস্থ হলো না মিরান্ডা।
ক্যানিয়ল বললো,
“তুমি মেয়ে এবং ছোটো বেলা থেকে আমরা একসাথে বড়ো হয়েছি, তা না হলে এতক্ষণে তোমার এই সুন্দর গলাটায় আমার হাতের ছাপটা আরও সৌন্দর্য নিয়ে ছেপে যেত। শ্বাস রুদ্ধ হতো তোমার।”
মিরান্ডা বললো,
“সেটা তো তুমি পারবে না। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, যাকে তুমি মিসেস উমরান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছো তার গলায় আমার হাতের ছাপ স্পষ্টভাবে এঁকে দেবো আমি। শ্বাস রু’দ্ধ করে দেবো। তোমাকে আমি কাঁদিয়ে ছাড়বো, মনে রেখো।”
(চলবে)