#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫৮
_________________
সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছিল ইরতিজা। ওই বেয়াদব জোনাসের সাথে একবার দেখা না করলেই নয় তার। কোন সাহসে জোনাস এমনটা করেছে? শত্রুতার সীমাও অতিক্রম করে যাচ্ছে দিনকে দিন। বন্ধুত্ব তো ভেঙেছে অনেকদিন আগে, আজ দেখা করে শত্রুতাও ভেঙে ফেলবে। কোনো রকমের সম্পর্ক রাখবে না জোনাসের সাথে।
ইরতিজার শরীর দুর্বল। আগে থেকেই দুর্বল ছিল, কিন্তু গতরাতে বৃষ্টিতে ভেজার পর আরও খারাপ করেছে। তবুও সে জোনাসের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলো। সূর্য ঢাকা পড়েছে ধূসর মেঘের আড়ালে। গত রাতের বৃষ্টির কারণে এখনও সবকিছু স্যাঁতস্যাঁতে। আজ বোধহয় আবারও বৃষ্টি হবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ইরতিজা। জোনাসের বাসায় পৌঁছে যখন দরজায় করাঘাত করতে যাবে তখন দরজাটা নিজ থেকেই খুলে গেল। জোনাস ইরতিজাকে দরজার বাইরে দাঁড়ানো দেখে অবাক হলো। বললো,
“আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম গতকাল থেকে, বুঝতে পারিনি স্ব শরীরে এসে হাজির হবে আমার সামনে। কেন এসেছো? আমাকে মারতে?”
ইরতিজা দু চোখে ঘৃণার ফোয়ারা ঝরিয়ে বললো,
“তোমাকে মা’র’লেই আমার মন শান্তি পেতো। তুমি প্রচণ্ড খারাপ। তুমি ধীরে ধীরে কেমন মানুষে পরিণত হচ্ছ নিজেই বুঝতে পারছো না। এমনই যদি হতে থাকো এক সময় সবার ঘৃণাই কুঁড়িয়ে পাবে।”
“তোমার ঘৃণা সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত! সবচেয়ে বেশি হৃদয়ে লাগে।”
ইরতিজা ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বললো,
“তোমার আবার হৃদয়ও আছে? সেই হৃদয় দিয়ে অনুভবও করতে জানো? তুমি একটা সাইকো! কীভাবে তুমি এমন করলে? ওইভাবে ছবি তুলে তুমি মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করতে চাও? তুমি এত খারাপ? তুমি চরম বেয়াদব! আমার ইচ্ছা করছে তোমার দুই গাল চ/ড় মেরে লাল বানিয়ে ফেলি।”
জোনাস এগিয়ে এলো ইরতিজার কাছে।
“মারো, চ/ড় মারো। শেষ সময়ে চ/ড়ে/র মাধ্যমে তোমার হাতের একটুখানি পরশ পেয়ে যাই।”
ইরতিজা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বললো,
“বিকৃত মানব!”
ঘৃণায় তার দু চোখ থলথল করছে।
“আমি তো খারাপই তোমার কাছে। চলে যাওয়ার আগে আরেকটু খারাপ হওয়ার ইচ্ছা ছিল। হতে পেরেছি। আমি স্বার্থক!”
বলতে বলতে জোনাস হঠাৎ কেমন অন্য রকম হয়ে গেল। দু চোখে অশ্ৰু এলো এবং তা ঝরেও পড়লো। বললো,
“আমি এবার প্রবল মনোবল নিয়ে রেডমন্ড এসেছিলাম টিজা। আমার মনে হয়েছিল আগের বার যেমন প্রত্যাখ্যান হয়েছিলাম এবার তেমন হবে না। কিন্তু এসে বুঝতে পারলাম পরিস্থিতিটা তার চেয়ে অনেক ভিন্ন। আমি শেষ চেষ্টা করলাম, তোমায় প্রোপোজ করলাম। তুমি আবারও প্রত্যাখ্যান করলে, আমি ব্যর্থ হলাম! এত কষ্ট তুমি দিলে টিজা!”
জোনাস আরও আবেগি হয়ে কাঁদলো। ইরতিজা অবাক হয়ে দেখতে লাগলো জোনাসকে। এই ছেলেটাকে দেখলে সে শুধু অবাকই হয় আজকাল। জোনাসের কি সত্যিই একজন সাইকোলজিস্টের কাছে যাওয়া প্রয়োজন নয়? ছেলেটা সত্যিই পাগল হয়ে গেছে! আজ জোনাসের কান্না দেখে কষ্ট লাগছে না ইরতিজার। হৃদয় অন্তরালে কোনো কষ্টের ঢেউ তুলতে সক্ষম নয় এই ক্রন্দন ধ্বনি। হয়তো সে কিছুটা হলেও কষ্ট পেতো, যদি এই কান্না সুইমিং পুলের ঘটনার আগেকার হতো। কিন্তু ওই ঘটনার পর তার মনে আর মায়া খুঁজে পাচ্ছে না জোনাসের প্রতি।
জোনাস কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“আমি আসতাম না, যদি জানতাম আমি এবারও ব্যর্থ হবো। বিশ্বাস করো আমি আসতাম না তাহলে। এমন ভুল কখনও করতাম না। আমি আসতাম না রেডমন্ড। রেডমন্ড এসে আমি ভুল করেছি টিজা। এই ভুল ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে আমাকে, ভীষণ!”
বলে আরও তীব্র করলো কান্না। অশ্রু ভেজা নয়নে তাকালো ইরতিজার দিকে।
“তুমি আমার মন থেকে খসে পড়ো টিজা। তুমি মনে থাকা মানে আমার মনে কঠিন অসুখ করা।”
জোনাস ক্ষণিকের বিরতি নিয়ে বললো,
“আমি চলে যাচ্ছি তোমার শহর ছেড়ে, তুমিও তেমনি চলে যাও আমার হৃদয় থেকে। আর কখনও আমার হৃদয়ের আশেপাশে এসো না। যে কষ্ট তুমি আমাকে দিয়েছো, সেই কষ্ট নিয়ে তোমাকে মনে রাখা বড়ো কষ্টের!”
জোনাস সিঁড়ির দিকে এগোলো। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ট্যাক্সিতে উঠে বসার আগে একবার তাকালো ইরতিজার দিকে। ট্যাক্সিটা কিয়ৎক্ষণ পূর্বে এসে এখানে দাঁড়িয়েছে। ট্যাক্সিটা জোনাসকে নিয়ে চলে গেল অল্প সময়ের ভিতর।
ইরতিজা অনেকক্ষণ যাবৎ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। নড়লো না অবস্থান থেকে।
সহসা তার ভিতরের সকল গ্লানি মুছে বেরিয়ে এলো এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস। জোনাস চলে গেছে রেডমন্ড থেকে? তার জীবনের একটা ঝামেলা কি মিটে গেল? না কি এটা কিছুদিন চুপচাপ ঘাপটি মেরে থেকে আবার গর্জে উঠবে?
ইরতিজা নিজের বাসার দিকে যেতে যেতে ভাবলো, ক্যানিয়লের সাথে তার দীর্ঘ সময় ধরে কোনো যোগাযোগ নেই। গতকাল সকালে দেখা হয়েছিল। বিকেলে যখন ওর সাথে দেখা করার জন্য বের হয়েছিল তখন পথিমধ্যে সাজিদের সাথে দেখা হয়। তারপর সৃষ্টি হয় যত ঝামেলা। তারপর থেকে এই সময়টার মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি ক্যানিয়লের সাথে। ক্যানিয়ল এখন কেমন আছে? ইরতিজার এখনই ক্যানিয়লের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করলো। সে বাসায় না গিয়ে ক্যানিয়লের বাসায় যাওয়ার পথ ধরলো। নিজেদের এরিয়া থেকে বের হয়ে কিছুদূর এগোলেই একটা বড়ো-সড়ো গাড়ি এসে থামলো তার সামনে। গাড়ির দরজা খুলে নেমে এলো মিরান্ডা। ইরতিজার সামনে এসে দাঁড়ালো। মিরান্ডার শরীর থেকে দামি পারফিউমের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। গায়ের পোশাকটাও আভিজাত্যপূর্ণ। মিরান্ডাকে দেখে ইরতিজা বাক শূন্য হয়ে গেল। মিরান্ডা এমনভাবে তার পথ রোধ করলো কেন? ইরতিজার অবাকপূর্ণ দৃষ্টি জোড়ায় তাকিয়ে হাসলো মিরান্ডা,
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
ইরতিজা নিজের ধারণা শক্তি দিয়ে অনুভব করতে পারছে ব্যাপারটা মোটেও সুবিধাজনক কিছু নয়। মিরান্ডা কী বিষয়ে কথা বলতে চায় তার সাথে? এটা কি ক্যানিয়লের ব্যাপারে কিছু? ইরতিজা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললো,
“কিন্তু আমার ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। আমার হাতে সময় নেই।”
“ইম্পরট্যান্ট কাজ? ক্যানির সাথে? তুমি তো এখন ক্যানির কাছে যাচ্ছ, তাই না? ক্যানির সাথে ওর বাসায় কী ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে তোমার?”
ইরতিজা আরও অবাক হলো। মেয়েটা কী করে বুঝলো সে ক্যানিয়লের কাছে যাচ্ছে?
ইরতিজা বললো,
“আমি ওর কাছে যাচ্ছিলাম না। আমার লাইব্রেরিতে কাজ আছে। আমি ওখানে কাজ করি। দুঃখিত! তোমার সাথে কথা বলার সময় নেই।”
ইরতিজা চলে যেতে পা বাড়ালেই মিরান্ডা ওর একটা হাত ধরে বাধা দিয়ে বললো,
“হেই ক্যানির গার্লফ্রেন্ড, অত্যাধিক স্মার্ট সাজার চেষ্টা করো না। আমি যখন তোমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী তখন তোমারও আগ্রহ থাকা উচিত। চলো।”
ইরতিজা যেন বাঁধা পড়ে গেল। মিরান্ডাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্যি তার নেই। মিরান্ডা ইরতিজাকে গাড়িতে উঠে বসতে বললো। ইরতিজা বসলো। সে টের পাচ্ছিল, তার হৃৎপিণ্ড ঢিপঢিপ করে চলেছে ভয়ে।
_______________
দূর পাহাড়ের চূড়ায় একটানা অনেকক্ষণ যাবৎ তাকিয়ে ছিল ক্যানিয়ল। তারপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আকাশ পানে। আকাশে মেঘ করেছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে। ধূসর মেঘেরা ওড়াউড়ি করছে। ক্যানিয়ল আজ আকাশের মাঝে নিজের মনের অবস্থাকে উপলব্ধি করছে। তার মনেও মেঘ জমে আছে। বৃষ্টিতে ভার বক্ষ। সে নিজের কথা ভাবছিল, মমের কথা ভাবছিল, ড্যাডের কথা ভাবছিল, ইরতিজার কথাও ভাবছিল। ইরতিজা তাকে একটা কলও দেয়নি। এত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কেন? ইরতিজা কি অসুস্থ? অসুস্থতার কথা মনে হতেই ক্যানিয়ল উৎকণ্ঠা হয়ে কল দিলো ইরতিজাকে। রিং বাজলো, বাজতে বাজতে কেটে গেল। আশ্চর্য! মেয়েটা কি সত্যিই অসুস্থ? ক্যানিয়লের হৃদয় ছটফট করে উঠলো। একবার ইরতিজার খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন তার। মি. হেনরির কাছে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হচ্ছিল। কিন্তু বের হওয়ার আগে মি. হেনরিই রুমে ঢুকলো। ক্যানিয়ল কিছু বলার আগেই মি. হেনরি একটা পেনড্রাইভ দিয়ে বললো,
“এটা ল্যাপটপে প্লে করে দেখো, এটা তোমার জন্য।”
“এটা কী?”
মি. হেনরি আর কিছু না বলে চলে গেল। ক্যানিয়ল বুঝতে পারলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়তো। সে এখন এটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করলো। পেনড্রাইভটার ভিতর শুধু একটা ভিডিয়ো পেল সে। আর কিছু নেই। ভিডিয়োটা প্লে করা মাত্রই বেলা লিমাসের মুখ ভেসে উঠলো ল্যাপটপ স্কিনে। ক্যানিয়লের হৃদয়ে চিনচিন করে ব্যথা আরম্ভ হলো মমকে দেখে। ভিডিয়োটা চলছে। এটা বেলা লিমাস মৃত্যুর আগে বানিয়েছিলেন। একা একা ভিডিয়োটা বানিয়েছে বোঝা যাচ্ছে। সে চেয়ারে বসা, ক্যামেরাটা ঠিক তার সামনে রেখেছে। ভিডিয়োর ভিতর বেলা লিমাস বলছেন,
‘কেমন আছো ক্যানিয়ল? ভিডিয়োটা যখন দেখছো, তখন আমি মৃত! আমি জানি আমার মৃত্যু তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে। জানি তুমি খুব কষ্ট পাচ্ছ। আমি চেয়েছিলাম তুমি আমার মৃত্যুর পর এই বিষয়টা সম্পর্কে জানো। তার জন্যই এই ভিডিয়োটা তৈরি করা। তোমার মনে সব সময় একটা প্রশ্ন ছিল, আমি কেন তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম? আজ সেই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানাবো তোমায়। আমি তোমার জন্যই তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। ওই বাড়িটা আমার জন্য নরক হয়ে গিয়েছিল। ওখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল ক্রমশ। আমি তোমাকে নিয়ে শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমার নিঃশ্বাসের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তোমার ড্যাডের তৃতীয় স্ত্রী নাইলা সালেম। ও ভাবতে পারেনি ইসহাক ওর পর অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে। তোমার ড্যাড আমাকে বিয়ে করেছিল এটা মেনে নিতে পারেনি ও। অথচ নাইলা তোমার ড্যাডকে বিয়ে করেছিল অন্যায়ভাবে ট্রাপে ফেলে।
নাইলা সব সময় আমাকে কীভাবে হেনস্থা করা যায় সেই সুযোগ খুঁজতো। বিয়ের পর থেকেই ওর এমনটা সহ্য করে আসছিলাম আমি। ইয়াদাও আমাকে সহ্য করতে পারতো না, কিন্তু নাইলার কাছে খুব বেশিই অসহ্যকর ছিলাম আমি। তাও সবকিছু সহ্য করে টিকে ছিলাম। কিন্তু তুমি জন্মগ্রহণ করার পর আমার নিঃশ্বাস আরও রোধ করে দাঁড়ালো নাইলা। ও আমাকে হিংসা করতো। ও মনে করতো তোমার ড্যাড আমাকে ওর চেয়ে বেশি ভালোবাসে। হয়তো আমি সুন্দর সেজন্য। ও আমার সৌন্দর্যকে হিংসা করতো। ও এক সময় মরিয়া হয়ে উঠলো আমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য। ওর বর্বরতা আরও বৃদ্ধি পেল। গায়ে হাত তুলতেও কার্পণ্য করেনি ও! যা অসহ্যময় ছিল। আমি তোমার ড্যাডকে বলেছিলাম এসব সম্পর্কে। এরপর তোমার ড্যাড কথা বলেছিল নাইলার সাথে। কিন্তু নাইলা তাকে অন্য রকম বুঝ দিতো। নাইলা ওরকম বোঝানোর পর ইসহাকও ব্যাপারটা হালকা করে দেখতো। সে আমাকে বলতো, ‘মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করো। আমাদের সংসারটা তুলনামূলকভাবে অনেক বড়ো। এখানে একটু ঝামেলা হবেই। এটাকে মানিয়ে থাকতে শিখতে হবে।’
ইসহাকের কাছে নালিশ দিলে নাইলা সালেমও উল্টাপাল্টা বোঝাতো ইসহাককে। আসল ঘটনা পর্যন্ত কখনও পৌঁছাতে পারেনি ইসহাক। ইসহাক এই একই কথার রিপিট করতে থাকলো। নাইলা সালেম আরও সুযোগ পেয়ে গেল এমন হওয়ায়। আমি বুঝতে পারলাম ইসহাকের কাছে বলে আর লাভ হবে না। নাইলা সালেম এক সময় আমাকে বললো, আমি যাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই, না হলে ও তোমার ক্ষতি করবে। মে/রে ফেলবে তোমাকে! এমন কথায় আমি ভয় পেলেও পিছ পা হইনি। এতে ও রাগান্বিত হয়ে আমার বাবাকে খু/ন করালো! তখন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। আমার মনে হচ্ছিল আমার বাবার সাথে যেটা ঘটেছে তেমনটা তোমার সাথেও ঘটবে। তোমাকেও মে/রে ফেলবে ও। আমি জানতাম আমার বাবাকে ও খু/ন করিয়েছে, ও নিজে এই কথা স্বীকার করেছিল আমার কাছে। কিন্তু আমি ওর কিছুই করতে পারছিলাম না। কারণ ওর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছিল না আমার কাছে। আমি যদি ইসহাককে বলতাম ও খুন করেছে আমার বাবাকে, ইসহাক বিশ্বাস করতো না, অন্য কেউও বিশ্বাস করতো না। প্রমাণ ছাড়া কেউ কিছু বিশ্বাস করতে চায় না। ও আমাকে বার বার বলতে লাগলো, আমি যদি বাড়ি এবং ইসহাককে না ছেড়ে যাই তাহলে আমার ছেলেরও ঠিক আমার বাবার মতোই অবস্থা হবে। এতবার এই কথাটা শোনার পর আমার হৃদয়ে ভয় জমতে জমতে একটা পাহাড়ের সৃষ্টি হলো। এর মধ্যেই নাইলা এক কঠিন শপথ করলো, আমি চলে না গেলে ও তোমাকে সত্যিই খু’ন করবে। তোমাকে খু/ন করে ও জেলে থাকতেও রাজি। তাও তোমাকে খু/ন করে আমাকে পোড়াবে ও। এরপর আর এ বাড়িতে থাকার সাহস পেলাম না কোনো মতেই। সিদ্ধান্ত নিলাম চলেই যাব। এমনিতেও এখানে থাকলে মারা যাব আমি। সুতরাং এখানে থেকে গিয়ে তোমাকেও কেন মারবো শুধু শুধু? বরং চলে গেলে তুমিও শান্তিতে থাকবে আর আমিও একটু ভালোভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারবো। এভাবেই, এই কথা চিন্তা করে চলে এলাম তোমায় ছেড়ে! চাইলে নিজের সাথে নিয়ে আসতে পারতাম তোমাকে। কিন্তু আনিনি কারণ আমি দরিদ্র ছিলাম। নিজে কোথায় থাকবো, কী খাবো এ বিষয়েই শঙ্কিত ছিলাম। তোমাকে রাজপ্রাসাদ থেকে নিজের সাথে নিয়ে এসে কী করে একটা সুন্দর সুখী জীবন উপহার দিতাম? তার চেয়ে ভাবলাম তুমি তোমার ধনী বাবার কাছেই ভালো থাকবে। উচ্চবিত্ত একটা জীবন পাবে। সমাজের উঁচু স্থানে থাকতে পারবে। ভালোই আছো তুমি, তোমার জীবন সুন্দর এখন। আমার কাছে থাকার চেয়ে অনেক অনেক ভালো আছো তুমি। অনেক কিছু পেয়েছো জীবনে। তোমাকে ওসব দেওয়ার সাধ্যি আমার কখনোই হতো না!
যখন আমি বুঝতে পারলাম তোমার হৃদয়ের এক অংশে আমার জন্য ভালোবাসা আছে, সেই সময় আমি খুব করে চেয়েছিলাম বেঁচে থাকতে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ভাগ্য আমার সহায় হলো না। আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় বরং তখন আরও ঘনিয়ে এসেছে। আমি তোমাকে ভালোবাসি আমার ছেলে! ভীষণ ভালোবাসি তোমায়। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকো তুমি। আল্লাহ সব সময় তোমার সহায় থাকুক। তোমাকে ভালোবাসি ক্যানিয়ল!’
বলতে বলতে কাঁদতে শুরু করলেন বেলা লিমাস। কান্না যখন আরও অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছিল তখন সে ক্যামেরা বন্ধ করে দিলো।
এদিকে ক্যানিয়লের চোখ থেকেও নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। কাঁদছে সে। ভিডিয়োটা সম্পূর্ণ দেখে তার হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অজস্র ব্যথা ঝেঁকে বসেছে হৃদয়ে। কান্নার শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরো কক্ষ। ক্যানিয়ল চেয়ার ছেড়ে উঠে বিছানায় এসে বসলো। বুকের কাছ থেকে আঁকড়ে ধরলো জাম্পার সোয়েটারের অংশ। হৃদয়ে প্রচুর ব্যথা উপলব্ধ মান। প্রচুর! এই ভিডিয়োটা কেন দেখলো সে? ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এখন! মম এই কারণে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তাকে? এত কষ্টের মাঝে ছিল মম? অনেকক্ষণ যাবৎ কাঁদলো ক্যানিয়ল। কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ হয়ে শুয়েছিল বিছানায়। এরই মধ্যে কানের কাছে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। প্রথম কলটা রিং বাজতে বাজতে কেটে গেল। দ্বিতীয় বার আবার কল এলো। এবার কলটা রিসিভ করলো সে।
নিষ্প্রভ কণ্ঠে বললো,
“হ্যালো!”
“কেমন আছো ক্যানি?” ওপাশ থেকে বেশ আনন্দিত স্বরে কথা বললো মিরান্ডা।
“কেন কল করেছো?”
“জানতে চাও? বলছি তবে।”
মিরান্ডা যা বললো তাতে আর নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকার মতো অবস্থা থাকলো না ক্যানিয়লের। সে দ্রুত শয়ন থেকে উঠে একটা ওভার কোট পরেই বেরিয়ে পড়লো। রাগে তার ভিতরের মনুষ্যত্ব কাঁপছে। মিরান্ডার এত বড়ো সাহস কীভাবে হলো? ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে ক্যানিয়ল। মি. হেনরি লনে ছিল। ক্যানিয়লকে এমন অস্বাভাবিক গতিতে হন্তদন্ত হয়ে বেরোতে দেখে বললো,
“যাচ্ছ কোথায়?”
উত্তর দিতে গিয়ে সময় নষ্ট করলো না ক্যানিয়ল। দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
গাড়ি থামালো এন্ডারসন হাউজ থেকে অনেক দূরবর্তী একটা স্থানে এসে। একটা বাড়ির সামনে। বাড়িটা পুরোনো ধরনের। ক্যানিয়ল একটুও সময় নষ্ট না করে ভিতরে ঢুকলো। দরজা ঠেলে ঢোকার পরই দেখতে পেল বিশাল হলঘর। বিশাল হলঘরের সবকিছু উপেক্ষা করে ক্যানিয়লের চোখ মেঝেতে পড়ে থাকা মেয়েটার উপর গিয়ে রুদ্ধ হলো। হৃদস্পন্দন থমকে গেল তার। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। সে ধীর পায়ে সামনে এগোতে লাগলো।
মিরান্ডা আর্ম চেয়ারে বসে ছিল, ক্যানিয়লকে দেখে দাঁড়িয়ে বললো,
“এসে গেছো তুমি? এত তাড়াতাড়ি চলে এলে কীভাবে? নিশ্চয়ই আইন ভঙ্গ করে গাড়ি চালিয়েছো।”
ক্যানিয়লের কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো না মিরান্ডার কথা। ক্যানিয়ল এগিয়ে গেল সামনের দিকে। হলঘরে মিরান্ডা ছাড়াও আরও কিছু ছেলে-মেয়ে উপস্থিত আছে। এদের মূলত মিরান্ডা ভাড়া করে এনেছে। এমন ক্ষেত্রে কয়েকজন ছেলে মেয়ে সাথে না রাখলেই নয়।
ক্যানিয়ল এসে থামলো মেঝেতে পড়ে থাকা মেয়েটার সামনে। দু চোখ বন্ধ করে ফেললো ক্যানিয়ল। পরিচিত স্নিগ্ধ মুখের এমন করুণ রূপ তার দৃষ্টিতে সইলো না। মনে হলো তার হৃদয় ছিদ্র করে দুটো ধারালো ফলার তীর ছুটে বেরিয়ে গেল। সে ধীরে ধীরে আবার চোখের পাতা খুললো। ইরতিজাকে দেখে নিলো পা থেকে মাথা অবধি। ইরতিজার নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে। গলার কাছটা একটু কাঁপছে শুধু। কিছু বলার চেষ্টা করছে কি? কালো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে। মুখের উপরও এসে পড়েছে। এই শীতল আবহাওয়ার মাঝে ইরতিজার গায়ে কেবল একটা কালো টি-শার্ট। ক্যানিয়ল একটু দূরে মেঝেতে তাকিয়ে দেখতে পেল ইরতিজার জ্যাকেট আর হিজাব পড়ে আছে। সে আবারও ইরতিজার দিকে তাকালো। ইরতিজার দৃশ্যমান হাত দু খানায় অনেক আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। ক্যানিয়লের দু চোখ অশ্রুতে ভরে এলো। টুপ করে ঝরে পড়লো তা চোখ দিয়ে। পা দুটো দুর্বল হয়ে গেল। হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো ইরতিজার পাশে। ইরতিজার মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিলো। ইরতিজার দু চোখের পাতা বন্ধ। তবে সে সম্পূর্ণ রূপে চেতনাহীন নয়। অস্পষ্ট চেতনাযুক্ত। ক্যানিয়ল দেখলো ইরতিজার মুখেও আঘাতের চিহ্ন। ঠোঁট কেটে গড়িয়ে পড়া রক্ত শুকিয়ে গেছে। ক্যানিয়ল কাঁপা স্বরে ডাকলো,
“ই-ইজা!”
ইরতিজা সাড়াহীন। ক্যানিয়ল অবচেতন ইরতিজাকে বুকের মধ্যিখানে জড়িয়ে ধরলো। কোমল স্বরে ডাকলো,
“ইজা!”
ইরতিজার কণ্ঠ থেকে অস্পষ্ট ভাবে একটা গড়গড় শব্দ বের হলো শুধু। ক্যানিয়ল আরও ভালো করে ইরতিজাকে আঁকড়ে ধরে বললো,
“ইট’স অল রাইট! কিছুই হয়নি। ঠিক আছো তুমি। কিছু হয়নি তোমার। তুমি সম্পূর্ণ ঠিক আছো। কিছু হয়নি। কিচ্ছু না।”
ইরতিজার নিস্তেজ শরীর ক্যানিয়লের উষ্ণ বক্ষের আশ্রয়ে এসে সম্পূর্ণ রূপে চেতনাহীন হয়ে পড়তে চাইলো। ক্যানিয়ল সময় নষ্ট করলো না। ইরতিজাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
মিরান্ডা বললো,
“উহুঁ, এভাবে তো তুমি ওকে নিয়ে যেতে পারবে না ক্যানি!”
ক্যানিয়ল অগ্নি চোখে তাকিয়ে রুষিত কণ্ঠে বললো,
“তোমার সাথে পরে বোঝাপড়া হবে আমার।”
বলে দরজার দিকে যেতে লাগলো। মিরান্ডা বললো,
“কিন্তু আমি ওকে কিছুতেই এভাবে নিয়ে যেতে দেবো না।”
ক্যানিয়ল দাঁড়িয়ে পড়লো।
মিরান্ডা চোখের ইশারা করলো উপস্থিত সবচেয়ে লম্বা ছেলেটাকে। ছেলেটা এগিয়ে গেল ক্যানিয়লের দিকে। ক্যানিয়লের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জাগ্রত হয়ে উঠলো। সে পিছন থেকে এগিয়ে আসা ছেলেটার গতিবিধ এবং আক্রমণ সম্পর্কে অনুমান করতে পারছে। সে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,
“নিজের দুর্ভাগ্য নিজে কেন বয়ে আনো মিরান্ডা?”
বলে সে ইরতিজাকে মেঝেতে নামিয়ে রাখতে বাধ্য হলো। ক্যানিয়লের দিকে এগিয়ে আসা ছেলেটা কাছে চলে এলেই একহাত দিয়ে ছেলেটার গলা পেঁচিয়ে ধরে ছেলেটাকে উল্টিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো ক্যানিয়ল। আরও একটা ছেলে এমন সময় এগিয়ে আসলো ক্যানিয়লের দিকে। ক্যানিয়লও ছেলেটার দিকে দৌড়ে গেল। হাত দিয়ে ছেলেটার গলায় আঘাত করলো জোরে। ছেলেটা পড়ে গেল। এরপর কয়েকজন মিলে এগিয়ে আসতে লাগলো একজোট হয়ে। ক্যানিয়ল সেই জোটটাকে পাশ কাটিয়ে ফেলে দৌড়ে এগিয়ে গেল পরবর্তী প্রস্তুতি নিয়ে থাকা একটা কৃষ্ণাঙ্গ ছেলের দিকে। ছেলেটাকে সর্ব শক্তি দিয়ে প্রায় ছুঁড়ে ফেললো। ফ্লোরে পড়ে গিয়ে ব্যথায় আর্তনাদ করলো ছেলেটা। কিছুক্ষণের ভিতর হলঘর ভরে উঠলো ব্যথার আর্তনাদ সুরে। ক্যানিয়ল ঘেমে একাকার। রক্তে মেখে গেছে তার হাত। একবার পুরো হলঘরে চোখ বুলালো। ব্যথায় কাতরাচ্ছে সবাই। হাতের রক্তের দিকে তাকালো ক্যানিয়ল। এই রক্ত তার নয়, এখানে উপস্থিত একটা মেয়ের। যখন ক্যানিয়লের সাথে সকলের মারামারি চলছিল তখন মেয়েটা গিয়েছিল ইরতিজাকে আঘাত করতে। এটা দেখার পর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে সে মেয়েটার মাথা দেয়ালে আঘাত করছিল। মেয়েটার মা’থা ফেঁটে রক্ত পড়েছে। ক্যানিয়লের ঘন শ্বাস পড়ছে। সে বার কয়েক চোখের পলক ফেললো। তারপর একবার ঘুরে তাকালো মিরান্ডার দিকে। তার তাকানোর দৃষ্টি মিরান্ডার বুকে ভয়ের ধ্বনি তুললো। মিরান্ডা অবাক হয়ে দেখছিল হলঘরের আক্রমণগুলো। জানতো ক্যানিয়ল মারামারিতে পারদর্শী, কিন্তু এতটা পারদর্শী জানা ছিল না। এতগুলো দক্ষ ছেলে-মেয়েকে কীভাবে এরকমভাবে মারলো? না কি প্রচণ্ড রাগ ক্যানিয়লকে এত বেশি শক্তিশালী করে তুলেছে?
ক্যানিয়ল ফ্লোরে পড়ে থাকা হাতুড়িটার দিকে তাকালো। হাতে তুলে নিলো সেটা। মিরান্ডার হৃৎপিণ্ড খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলো এই মুহূর্তে। ক্যানিয়ল হাতুড়ি তুলে নিয়েছে কেন হাতে? ক্যানিয়ল মিরান্ডার দিকে এগোতে লাগলো।
মিরান্ডা ভয় পেয়ে গেল ভীষণ। তার ধারণা ক্যানিয়ল ওটা দিয়ে তাকে আঘাত করবে। তাকে আঘাত করার জন্যই তুলে নিয়েছে ওটা। সে আতঙ্কিত হয়ে বললো,
“কী করতে চাইছো ক্যানি? স্টপ…”
মিরান্ডা থামতে বললো, কিন্তু ক্যানিয়ল তবু রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে আসছে। মিরান্ডার ভয়ে এবার কান্না পাচ্ছে। সে পিছু হটতে লাগলো ভয়ে। বললো,
“স্টপ…স্টপ। আমার কাছে এসো না। বলছি তো এসো না। চলে যাও। প্লিজ স্টপ!”
ক্যানিয়ল শুনলো না অনুরোধ। মিরান্ডার পিঠ দেয়ালের সাথে গিয়ে ঠেকলো। হৃৎপিণ্ড ধক করে উঠলো তার। ক্যানিয়লের কঠিন মুখ, কঠিন চাহনি। দেয়ালের গায়ে একহাত ঠেকিয়ে দাঁড়ালো সে। মিরান্ডা ভীত চোখে তাকিয়ে রইল ক্যানিয়লের দিকে। ক্যানিয়লের কপালে ছোটো একটা কাটা দাগ। রক্ত জমাট বেঁধেছে ওখানে। ক্যানিয়লের ক্ষুব্ধ চোখের পিছনে ঘৃণার পর্দা ছলছল করে উঠলো। বললো,
“আজ তুমি এত নীচ কাজ করেছো যা সম্পর্কে বলতে আমার কণ্ঠ কাঁপছে। তোমার অবস্থা ঠিক তেমনই করা উচিত যেমন অবস্থা তুমি ইজার করেছো। উহুঁ, এর থেকেও শোচনীয় অবস্থা করা উচিত তোমার!”
মিরান্ডা ভয়ে কাঁপছে। তবুও সে নিজেকে ভীতহীন দেখাতে চাইলো। কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে বললো,
“সেই ছোটো বেলা থেকে তোমায় ভালোবাসি। তুমি আমার থেকে দুই বছরের ছোটো তারপরও তোমায় ভালোবেসেছি। কত ধনী সুদর্শন ছেলেরা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তাও তোমাকে বিয়ে করার আশায় বসে ছিলাম। অথচ তোমার মনে আমার জন্য অনুভূতি তৈরি হয়নি। শেষমেশ কি না ওই মেয়েটার প্রেমে পড়েছো তুমি! এটা কেমন করে মেনে নেবো আমি?”
“তুমি কোনোদিন ভালোইবাসোনি আমায়। ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি এমন হয় না। তোমার এই হিংসাত্মক কাজের জন্য আমি তোমায় কখনও ক্ষমা করবো না। কখনও না।”
ক্যানিয়ল মিরান্ডাকে প্রচণ্ড জোরে এক চ’ড় মারলো। আর এতে মিরান্ডার মাথা দেয়ালের সাথে জোরে আঘাত প্রাপ্ত হলো। মুহূর্তেই নাক দিয়ে রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়লো মিরান্ডার। ব্যথায় চিৎকার করলো সে।
ক্যানিয়ল সরে দাঁড়ালো। হাতের হাতুড়িটা ছুঁড়ে ফেললো ফ্লোরে। ইরতিজাকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এলো। ইরতিজা এখন আর অবচেতন নেই, সম্পূর্ণ চেতনাই বিলুপ্ত হয়েছে তার। ইরতিজার দিকে তাকিয়ে ক্যানিয়লের চোখ আবারও অশ্রুপূর্ণ হলো।
(চলবে)