এই_ভালো_এই_খারাপ #পর্ব_২৭ #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
124

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_২৭
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

ছাদে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। আয়জার কয়েকজন বান্ধবী এসেছে। তারা আর ফুপাতো মামাতো খালাতো ভাইরা মিলে স্টেজ সাজিয়ে ফেলেছে। আজলান জানে এরা এসবে ওস্তাদ। সেখানে যদি কয়েকটা মেয়ে থাকে তাহলে কাজ আরও সহজ।

কেক চলে এসেছে। পার্লারের মেয়েও চলে এসেছে। পার্লারের মেয়েদের এনেছে তিথি। আজলান শেখ তা শোনার পর আর কিছু বলার জন্য খুঁজে পাননি।

ডোডো এমনিতেই অন্যদিন খেলনা দিয়ে বসিয়ে দিলে খেলে। আজ মায়ের কোল ছাড়তেই কান্না। তিথি গালে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,

” সারাক্ষণ ম্যা ম্যা করা ছাড়া আর কিছু পারিস না? ”

ডোডো চড় খেয়ে এমন জোরে কাঁদা শুরু করেছে বিরিয়ানির ডেকচি পাকাতে থাকা বাবুর্চির সাথে কথা বলতে থাকা আজলান শেখ পর্যন্ত থমকে গেল। আবার হলোটা কি? আম্বিয়া বেগম ডোডোকে কোলে নিয়ে ফেলে তিথিকে বলল,

” আমি ওর বাপকে দিয়ে আসি। ”

” দাও। সারাক্ষণ হাওয়া খেয়ে বেড়ানো ছাড়া আর করছেটা কি? সব আমার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এ এসেছে ম্যাম্যা করতে। একচড় দেব। ”

ডোডো ঠোঁট টেনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তিথি উপহাস করতেই সে আরও জোরে কাঁদতে লাগলো। আজলান এসে বলল,

” কি হয়েছে? সমস্যা কি? ওকে এভাবে কাঁদাচ্ছ কেন?”

তিথি মুখ ফিরিয়ে নিল। আম্বিয়া বেগম বললেন,

” ওর মাকে জ্বালাচ্ছে। ওকে একটু রাখ। আর কারো কোলেই যাচ্ছে না। কতজন নিতে চাইলো, তোর ছেলে কারো কোলে যাবে না। ”

আজলান হাত বাড়িয়ে ডোডোকে কোলে নিয়ে নিল। ডোডোর কান্না তারপরও থামে না। মা তাকে বকেছে, তাই মাকে আদর করে দিতে হবে। তার আগে কান্না থামবে না।

আজলান তাকে শান্ত করানোর জন্য হাতের ঘড়িটা খুলে দিল। ডোডো সেটা দেখে কান্না থামিয়ে হাতে নিল। তার পরপরই ঘড়িটা ভারী হওয়ায় টুপ করে ফেলে দিল নীচে। আম্বিয়া বেগম আঁতকে উঠলেন। ডোডো চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো পুনরায়।
আজলান হতভম্ব। এই ছেলে কি শুরু করেছে? তিথি আর না পারতে ডোডোকে কোলে নিয়ে হনহনিয়ে যেতে যেতে বলল,

” বাপের মতো হয়েছে। ”

আজলানের ভুরু যুগল দ্বিগুণ কুঁচকে গেল। আম্বিয়া বেগম তা দেখে বললেন,

” হয়েছে আর ওদিকে অমন করে তাকিয়ে থাকতে হবে না। ভুল কিছু বলেনি। ”

যেতে যেতে শেষের কথাটা একটু আস্তে বলেছেন উনি। আজলান যদিও শুনেছে কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখানোর ফুরসত পায়নি। আজলান ঘড়িটা তুলে দেখলো কাচ ভেঙে গিয়েছে। “চ” কারান্ত শব্দ করলো সে মুখ দিয়ে।
আফতাব শেখ এসে বললেন,

” বিরিয়ানি মনে হচ্ছে ভীষণ ঝাল হবে। ”

আজলান অতিষ্ঠ এই মানুষটার জ্বালায়। কিছুক্ষণ আগে এসে বললো, মশলাপাতি কম হয়েছে। মাংস কম পড়েছে। এখন এসে বললো ভীষণ ঝাল হবে। অসহ্য!

গটগট পায়ে হেঁটে সেখান থেকে চলে গেল সে। যে জন্ম দিয়েছে সে শান্তি দেয় না, যাকে জন্ম দিয়েছে সে বুঝবে কি করে? এত যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না।

হলুদ সিল্ক কাতানের মৌচাক শাড়ি পড়েছে তিথি। চুলে ফুলের মালা পড়েছে। পার্লারের মেয়েগুলো তাকে সাজিয়ে দিয়েছে। ন্যুড লিপস্টিক পড়িয়ে দিয়েছে। আম্বিয়া বেগম বললেন,

” ভালো লাগছে দেখতে। আমার নাতিটাকে একটা নতুন দেখে গেঞ্জি পড়িয়ে দে। ”

তিথি ডোডোকে উপুড় করে ধরে বলল, ” ডোডো আম্মাকে কেমন লাগছে বল। ”

ডোডো তার নাক কামড়ে দেয়ার জন্য ঝুঁকে এল। তিথি ঝাড়ি মেরে বলল,

” সবসময় ফাইজলামি করতে থাকে। মার খেয়েছিস বেশিক্ষণ হচ্ছে না আবারও দুষ্টুমি করছিস! ”

ডোডো ঠোঁট টানলো। তিথি আদর করে বলল,

” আচ্ছা আর বকবো না। আমার ছেলের মতো লক্ষ্মী ছেলে আর দুটো নেই। ”

আজলান ডার্ক গোল্ড কালারের একটা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়েছে। ডোডোকে একটা ওই রঙের টিশার্ট পড়িয়ে, পায়ে জুতো পড়িয়ে, মাথায় হ্যাট পড়িয়ে দিয়েছে। ডোডো হ্যাট খুলে দূরে ছুঁড়ে মারলো। আজলান ধমক দিয়ে হাতে একটা ঘড়ি পড়িয়ে দিল। তারপর বলল,

” দুষ্টুমি করলে মারবো আইজান। ”

ডোডো হাতের বাঁধা ঘড়িটা কামড়াচ্ছে।
আজলান চিরুনীতে পারফিউম স্প্রে করে চুল আঁচড়ালো। হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে ডোডোর কাছে এসে দেখলো ঘড়িটার মধ্যে অন্য হাতটাও ঢুকিয়ে বসে আছে সে। রাবারের ঘড়ি হওয়ায় হাতটা ঢোকাতে সহজ হয়েছে। আজলান কোমরে হাত দিয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলো। ডোডোও তার দিকে চোখ তুলে চেয়ে রইলো।

তিথি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখলো তাদের বাপ ছেলের কান্ড। এমনভাবে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে মায়া না লেগে যাবে কোথায়? আজলান কোলে তুলে বলল,

” এত জ্বালালে আমি যাব কোথায়? ”

ডোডো তিথিকে দেখে ফেলেছে। আম্মাহ বলে চিৎকার দিল তক্ষুণি। আজলান ঘাড় ফিরিয়ে তাকে দেখলো। তিথি মুখ পাশ করে দাঁড়িয়েছে। আজলান ঘর থেকে বের হতেই সে ঘরে ঢুকলো।

খাওয়াদাওয়ার পর্ব চুকে গিয়েছে। আজলান যতকেজি চাউল ততকেজি মাংস দিয়ে বিরিয়ানি করেছে। সবাই খেয়ে বেশ প্রশংসা করছে। আফতাব বুক ফুলিয়ে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন “আমার ছেলে কাঁচা কাজ করে না। ও চেয়েছে এমন হোক।”

আজলান ভাবলো, ” কেমন পল্টিবাজ লোক তার নিজের বাবা! ”

খাওয়াদাওয়ার ঝামেলা চুকে যাওয়ার পর স্টেজে কেক কাটতে উঠেছে অবিবাহিত মেয়েগুলো। গান বাজনা করছে সবাই মিলে। আজলানের এসব পছন্দ নয় কিন্তু পোলাপানগুলোকে বারণ করতে যেতেই আম্বিয়া বেগম বাঁধা দিয়ে বললেন,

” ওরা বিয়েবাড়িতে ঘুমানোর জন্য আসেনি। আনন্দ করতে এসেছে। খবরদার কিছু বলবি না। ”

আজলান পেছনে হাত ভাঁজ করে আয়জাকে দেখতে লাগলো। সাজানোর পর তাকে আর চেনা যাচ্ছেনা। যদিও সাজটা কুৎসিত হয়েছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে কিন্তু নিজের চেহারা বোঝা না গেলে সেজে লাভ কি? আতিফাকে একদমই চেনা যাচ্ছে না। তার উপর ক্ষেপে গেলে আতিফা বলল,

” ভাবির চেহারা তো পাল্টায়নি। আমাদের চেহারা ওরকম তাই চেঞ্জেস এসেছে। সবার ফেস কাটিং একরকম না। ”

আজলান বলল, ” তোর বর তোকে চিনতে পারছে? এতক্ষণ ধরে এসব সাজছিস সবাই মিলে? ”

আতিফা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আম্বিয়া বেগম এসে সবটা শুনে বললেন,

” তুই তোর বউয়ের পাশে গিয়ে বসে থাক তো। ওদের দেখিস না তুই। ”

আজলান বলল, ” তোমাদের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। ”

তিথি পার্লারের মেয়ে দিয়ে হেনাকেও সাজিয়েছে। সে লজ্জায় বের হচ্ছে না ঘর থেকে। সবাই একেকরকম কথা বলছে। তিথি তাকে টেনে নিয়ে এল। বলল,

” লজ্জা পেলে সবাই আরও লজ্জা দেবে। ওসব বাদ দেন তো। ”

হেনা, আতিফা আতিফার মেয়ে আভিরাকে নিয়ে তিথি স্টেজে উঠেছে। ডোডো তিথির কোলে। কেক এখনো পুরোটা অক্ষত রয়ে গেছে।
চোখের পলকেই ঘটে গেল এক দূর্ঘটনা। ডোডো একলাফ দিয়ে থাবা বসিয়ে দিল কেকের উপর। সবাই হৈচৈ করে উঠলো। তিথি হাতটা খপ করে ধরে ধীরেসুস্থে বের করে এনে ধমক দিয়ে বলল,

” এটা কি করলি ডোডো? ”

ডোডো কেকমাখা হাতটা মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিল। তিথি হাতটা থেকে কেক খেয়ে নিয়ে বলল,

” তোর ফুপুকেও দে। ”

ডোডো আয়জার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই আয়জাও একটু করে খেয়ে তার গালে আদর করে দিয়ে বলল,

” আব্বা সব শেষ করে দিয়েছে। ”

তিথি তাকে নিয়ে নেমে এল। ডোডো গালের ভেতর হাতটা রেখে কেক খেতে খেতে আবারও তিথির দিকে বাড়িয়ে দিল। তিথি বলল,

” তোর বাপকে খাওয়া তোর লালা। বজ্জাত ছেলে।”

ডোডো ঠোঁট টানলো। তিথি ওকে নিয়ে নীচে নামতে যাবে তখুনি আজলান তাকে ডাকলো।

” আইজান এখানে এসো। ”

তিথি তাকে নিয়ে এল। আজলান তাকে বাহ্বা দিয়ে বলল,

” দারুণ কাজ করেছ। ”

ডোডো তার কোলে ঝাঁপ দিল। তিথির গালে হাত লাগিয়ে দিয়েছে ডোডো। সে মোছার জন্য নীচে যাওয়ার জন্য রওনা দিতেই আজলান বলে উঠলো,

” হোয়াট ইজ দিজ আইজান? ”

তিথি ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো, ডোডো তার হাতটা আজলানের মুখে ধপাস ধপাস মেরে মেরে খেলছে। তিথি ফিক করে হেসে ফেলে আবারও হাসি আটকালো। আজলানের সারামুখে কেক লেগে রইলো। তিথি হাসি চেপে ডোডোকে কোলে টেনে নিয়ে বলল,

” দারুণ কাজ করেছিস। ”

আজলান তাদের মা ছেলের পিছুপিছু ঘরে চলে এল। তিথি টিস্যু দিয়ে কেক মুছে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আজলান মুখ ধুয়ে ডোডোর হাতটাও ধুয়েমুছে দিয়ে বলল,

” তুমি আজকাল বড্ড পাজি হয়েছ আইজান। এসব যে শেখাচ্ছে তাকে বলে দেবে এর ফল ভালো হবে না। ”

তিথি সাথে সাথে বলল,

” কার ফল কেমন ভালো হয়েছে দেখতেই পাচ্ছি। ”

আজলান শাণিত দৃষ্টিতে তাকালো। তিথি চলে গেল আবারও।

আজলানকে আম্বিয়া বেগম টেনেটুনে নিয়ে গেলেন ডোডোকে সহ। কেক কাটার জন্য দু’জনকে ঠেলেঠুলে একসাথে তুলে দিলেন। তিথি ডোডোকে সাবধানে কোলে নিয়েছে। হাতে একটা কমলা ধরিয়ে দিয়েছে সে সেটা নিয়ে আপাতত ব্যস্ত। আয়জাকে কেক কেটে খাওয়ানোর পর আয়জা ভাই আর ভাবিকে খাইয়ে দিল। ডোডোকেও খাইয়ে দিল। ডোডো মায়ের মতো আয়জার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই আয়জা তার হাতে আদর দিয়ে আমআম করে খাওয়ার ভান করতেই ডোডো খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। আজলান দ্রুতপায়ে নেমে আসবে ঠিক তখুনি ক্যামেরাম্যান বলল,

” ভাইয়া ভাবিকে কেক খাইয়ে দিন তারপর ভাবি আপনাকে খাওয়াবে। ”

তিথি আর আজলান দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। আজলান কেক কেটে অন্যদিকে চোখ রেখে তিথিকে খাইয়ে দিল। কিন্তু সেটা তিথি খেল না। ডোডো খেয়ে নিয়েছে। আম্বিয়া বেগম ক্যামেরাম্যানকে বলল,

” বউকে বড় টুকরো খাইয়ে দিতে বল। ”

ক্যামেরা ম্যান বলল, ” এবার ভাবির জন্য কেক বড় করে কাটেন ভাইয়া। ”

আজলান হতবাক! ডোডো কেক খেতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। আজলান পুনরায় কেক কেটে তিথির দিকে বাড়িয়ে দিল। তাকিয়ে রইলো ক্যামেরার দিকে। তিথির দিকে ভুলেও তাকালো না।
তিথি ঝুঁকে বড় পিসের কেক থেকে একটুখানি খেল। এমনভাবে খেল যেন আজলান শেখের হাত তার ঠোঁট লাগলেই আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাবে।

আজলানের এতবড় অপমান সইলো না। মুখটা স্বাভাবিক রাখলো বহুকষ্টে। তিথিও কেক কেটে এমনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, মানুষ ভিক্ষুককেও এর চাইতে যত্ন করে কিছু খেতে দেয়। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রইলো। অথচ হাতটা আজলানের বুকের কাছটায়। আজলান তার হাতটা শক্ত করে ধরে কেক খেল। তিথি প্রাণ যায়যায় অবস্থা। রাক্ষসটা হাতটা এমনভাবে ধরেছে যেন সব অপমানের বদলা নিয়ে নিল। ডোডোর হাতের উপর হাত রেখে তিথি কেক কেটে ছেলের হাতে কেক খেল। ততক্ষণে আজলান নেমে গিয়েছে। তিথির গলা শুনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তিথি ক্যামেরা ম্যানকে বলছে,

” আমার ছেলে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে এটার একটা ছবি তুলুন। ”

ডোডোর হাত থেকে কেক খেল তিথি। তারপর গালে আদর করে বলল,

” আমার সোনা ছেলে। ”

আজলান গটমট পায়ে হেঁটে নীচে চলে গেল। তিথি ডোডোর জন্য একটা প্লেটে কেক কেটে নিয়ে নেমে যাওয়ার সময় আয়জা বলল,

” ভাবি তুমি কি বলোতো। ভাইয়া অতবড় কেক কেটে দিল, খেলে একটুখানি। ডোডোর হাতে একা একা কেক খেলে, ভাইয়াকে দিলে না। ভাইয়া তো রেগে বোম। ”

তিথি বলল,

” তোমার ভাই ঠান্ডা ছিল কখন? ”

আতিফা আম্বিয়া বেগমকে বলল,

” দেখলে আম্মা? ও সারাক্ষণ আমার ভাইয়াকে রাগিয়ে দেয়ার তালে থাকে। ”

আম্বিয়া বেগম বললেন,

” ও কিভাবে কেক বাড়িয়ে দিয়েছে দেখলিনা? ওর কাছ থেকেই তো শিখছে। তোর ভাই ধোয়া তুলসী পাতা নয়।”

আতিফা বলল, ” তুমি ওকে মাথায় তুলছো আম্মা।”

” সংসার টিকিয়ে রাখা এত সহজ না। শ্বাশুড়ি হ তারপর বুঝবি। ”

আতিফা তর্কে না জড়িয়ে তার বরের কাছে চলে গেল।

ডোডোকে কেক খাওয়াচ্ছিলো তিথি। যতটা না খাচ্ছে ততটা নিজেরে হাতে মুখে লাগিয়েছে ডোডো। মাকেও খেতে বলছে। কত দরদ তার! পাশ থেকে মেঝ ফুপু বলল,

” ছেলেটাকে সারাক্ষণ খাওয়াতেই থাকো নাকি? এত খাওয়াও বদহজম হয় না? সেও দেখছি খেতেই থাকে। ”

তিথির মেজাজ সপ্তমে উঠলো। সে আশ্চর্য হয়ে বলল,

” আজব ব্যাপার! আমার ছেলে কি খাবে, কতটুকু খাবে,কখন খাবে এসব আমার ব্যাপার। আমি ওকে দরকার পড়লে একটা বিরিয়ানির ডেকচি পুরো খাওয়াবো। আপনার তাতে কি? সবকথা মুখবুঁজে সহ্য করছি বলে, শুনেও না শোনার ভান করে থাকছি বলে আমার ছেলেকে নিয়ে কথা বললে তা শুনে চুপ থাকবো না। কেমন মানুষ আপনি একটা বাচ্চার খাবারে নজর দেন? ”

ডোডো মায়ের চিৎকার শুনে কেঁদে উঠেছে। মেঝ ফুপু আম্বিয়া বেগমকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

” দেখছো ভাবি তোমার ছেলের বউ কেমন সুরে কথা বলে? আমি আগেই ভাবছি এই মেয়ে এত ভালো হয়ে গেল কিভাবে? এখন আসল রূপ বেরিয়ে এল। ”

আম্বিয়া বেগম বলল,

” কি হলো রে আবার। কে কি বলছে তোকে?”

তিথি রাগে ফুঁসছে। মেঝ ফুপুর আহাজারি আর বিলাপ শুনে জড়ো হয়েছে সবাই। তিথিকে বললেন,

” ফকিন্নির মেয়ের বড়ঘরে বিয়ে হলেও কি মুখের ভাষা পরিবর্তন হয়? একটা জুটছিলো আমার ভাইয়ের কপালে, আরেকটা জুটছে আমার ভাইপোর কপালে। কি ভাষা! কোথাকার বস্তি, ছোটলোকের মেয়ে। সামান্য কথা জিজ্ঞেস করছি সে উত্তর কিভাবে দিল দেখলে সবাই? ”

সবার বাকবিতন্ডার মধ্যে সবার পেছনে এসে দাঁড়ালো আজলান। জলদগম্ভীর স্বরে ” কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই” মেঝ ফুপু ছুটে এসে বলল,

” তোর বউ কি ভাষায় কথা বলছে জানিস? আমি কি এত অপমানিত হওয়ার জন্য আসছি এতদিন পর? এই মেয়ের সাথে তুই ঘর করিস কেমনে? কি মুখের ভাষা? আমি শুধু বললাম এতটুকুনি একটা বাচ্চাকে এসব খাওয়ানোর কি দরকার? এত খাওয়ালে বদহজম হবে। শুনেছি ওর এমনিতেই মাঝেমধ্যে পেট ব্যাথা হয়। মাগোমা তোর বউ ক্ষেপে গেল আমার উপর। যেন আমার উপর তার অনেক ক্ষোভ। মেয়ে তো আমিও পেটে ধরছি। মুরব্বির মুখে মুখে এমন জবাব তো ও দেয় না বাপু। ”

তিথি রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ নিয়ে টলমলে চোখে আজলানের দিকে চেয়ে রইলো। চোখ দিয়ে যেন আগুনের স্ফূলিঙ্গ বের হচ্ছে। আজলান তাকাতেই চোখ সরিয়ে ডোডোকে নিয়ে হনহনিয়ে নীচে চলে গেল সে। হেনা এসে মাকে জোর করে টেনে নিয়ে যেতে চাইলো। তিনি বললেন,

” তুই কেমন ছেলে! আর কেমন বউ জুটলো। তোর মা কেন সারাক্ষণ তাকে তেল মাখে এবার বুঝলাম। আস্ত বেয়াদব একটা মেয়ে। দূর করে তাড়িয়ে দে।”

আজলান চুপচাপ নীচে নেমে গেল।

চলমান….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here