এই_ভালো_এই_খারাপ #পর্ব_২ #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
71

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_২
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

” আমার মুখের সামনে থেকে খাবার কেড়ে নিয়েছে ওই লোক। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করলে সেটা মুখ ফুটে বলতে পারিনি। কিছু বলার আগেই চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় করে। মেঝেতে কখনো ঘুমিয়েছ আম্মা? আমি ঘুমিয়েছি। মুখে অনেক কিছু বলে ফেলা যায়। আমি কি তোমাদের সব কথা বলি? বলিনা। তাই তোমরাও পেয়ে বসো। আমি কি ইচ্ছে করে ওই বাড়ি থেকে চলে এসেছি?”

মালেকা বেগম বললেন, ” মুখ পাকাবি না। বিয়ে দিয়ে দিয়েছি যখন তখন ওখানে থাকতে হবে। এত তেজ কেন তোর? জামাই ওরকম বকতেই পারে। বেরও করে দিবে তাই বলে সোজা চলে আসবি? আর এখন ও যে তোকে ডিভোর্স দিবে বলছে! ডিভোর্সিদের এই সমাজ কোন চোখে দেখে সেটা জানিস? গায়ে রক্তমাংস কিছু আছে তোর যে বাচ্চাটা নষ্ট করবি? ওর অভিশাপে মরে যাবি। নিষ্পাপ প্রাণটা নিয়া খেলা শুরু করছোস সবাই মিলে। ”

” এখন তো সব আমার দোষ। সবাই এখন ধোঁয়া তুলসী পাতা। ওই লোকটাকে কিছু বলতে পারো না? ”

” নিজের মেয়ে আমাদের কথা শোনেনা, সেখানে পরের ছেলে কোন ছাঁই। ”

তিথি বলল, ” তুমি বলছো আমি ওখানে লাথি খেয়েও পড়ে থাকি? ”

” হ্যা থাকবি। তোর বাপের কি অট্টালিকা আছে যে জামাই কিছু বলতে না বলতেই ঠ্যাং দেখিয়ে চলে আসবি? কত্তবড় বেয়াদব তুই ওই বাড়িকে ঠ্যাং দেখিয়েছিস!”

তিথি বলল, ” আমার বমি পাচ্ছে। আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করবে না আম্মা। আমি একদম বেরিয়ে যাব এই বাড়ি থেকে। কেউ খুঁজেও পাবে না। ”

” পারবি না কোথাও যাইতে। তুই এত সহজে কাউরে নিস্তার দিবি না। ”

তিথি চুপটি করে পড়ে রইলো বিছানায়। এবার শক্তি ফুরিয়েছে। আর কথা বলতে পারবে না। গলার উপরে কিছু একটা উঠে আসার চেষ্টা করছে। একদৌড়ে বেসিনের কাছে ছুটে গেল সে। গলগল করে বমি করতেই মালেকা বেগম ছুটে এসে পিঠে মালিশ করে দিতে দিতে তুষারকে ডাকলো,

” তোর আপার জন্য লেবুপাতা ছিঁড়ে নিয়ে আয় তো কয়েকটা। ”

তুষার লেবুপাতা এনে দিল। তিথি সেগুলো নাকের কাছে কচলে শুঁকতে শুঁকতে বলল,

” আম্মারে আমি বোধহয় মরেই যাবো। ”

মালেকা বেগমের চোখ টলমল করে উঠলো। মেয়েকে বুকে চেপে ধরে দোয়া পড়ে ফুঁ দিতে দিতে বলল,

” এমন অলক্ষুণে কথা বলিস না তো। মা হওয়া কি মুখের কথা? এজন্যই তোকে বলছি ওই বাড়িতে চলে যেতে। ভালোমন্দ খেতে তো পারবি। শুধু তিনবেলা ভাতপানি খেলে হয় না। ফলমূল খাওয়া লাগে। তোর বাপের এত হেডম আছে তোকে ফলমূল খাওয়ানোর? ”

তিথি বলল, ” না না আমি মরে গেলেও আর ওই বাড়িতে যাব না। আমাকে দু পয়সার দাম দেয় না। আমি এক পয়সারও দেব না। ”

তিথির বাবা মফিজুর রহমান মেয়ের জন্য ফুচকা নিয়ে এলেন আসার সময়। তিথি পইপই করে বলেছে ” বাবা ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। বেশি করে আনিও। ”

মফিজ সাহেব তাই বেশি করে নিয়ে এলেন। তিথি বড় তৃপ্তি নিয়ে সেগুলো খেল। মনে পড়লো বিয়ের পরের দিনগুলোর কথা। বিয়ের মাত্র তিনদিন পার হয়েছে। বাড়িভর্তি মানুষ। আয়জা কোথাথেকে ফুচকা এনে দিল। বলল, ” ভাবি ভাবলাম তুমি খেতে পছন্দ করবে। তাই নিয়ে এলাম। ভাইয়া আসার আগে খেয়ে নাও। ”

তিথি তো মহাখুশি। প্লেট নিয়ে গপাগপ মুখে পুরছিলো একটার পর একটা। ঠিক তখনি কোথাথেকে লোকটা এসে চেঁচাতে চেঁচাতে তার হাত থেকে ফুচকার প্লেট কেড়ে নিল।
এমনকি অনেক কটুকথাও শুনিয়ে দিল। সে নাকি কোনোদিন খেতে পায়নি তাই খাবার দেখলে অমন করে এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাকে। নীরবে চোখের জল ফেলেছিলো সে সেইদিন। নতুন বউকে কি করে মানুষ অমন কটুকথা বলতে পারে?

লোকটা যে এমন বেয়াদব গাদ্দার হবে তিথি সেটা বিয়ের দিনই বুঝতে পেরেছে। ভরা বিয়ের আসরে তাকে দেখে এমনভাবে নাকমুখ কুঁচকে ফেললো যেন তার সুন্দর টলটলে মুখটাতে গু লেগে আছে।

কেন মুখটা অমন করে ফেললো তিথি সেটা জানতে পারলো বিয়ে পড়ানো শেষে। যেন অধিকারবোধটুকু অর্জন করার জন্য এতক্ষণ চুপ করে ধৈর্য ধরে বসে ছিলো লোকটা।

তার ঘরে এসে মুখটাকে বাদুড়ের পাছার মতো বিকৃত করে সাফ সাফ বললো, ” এই মেয়ে মুখে এসব কি দিয়েছ? লাগছে কিরকম? এইসব সাদা বেসন তাড়াতাড়ি ধুয়েমুছে নাও। নইলে তোমার আর ওই বাড়িতে যাওয়া হবে না। সময় দশ মিনিট। ”

তিথিকে এমন অপমান জীবনে আর কেউ করেনি। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় সে অনেক কেঁদেছে। মা বাবা আর ভাইয়ের জন্য নয় তার সাজ ধুয়ে ফেলতে হয়েছিলো বলে। লাক্স সাবান দিয়ে ডলে ডলে মুখটা ধুয়েমুছে তাকে গাড়িতে তোলা হয়েছিলো। একটু ফেয়ার লাভলী পর্যন্ত মুখে মাখতে দেয়নি ওই দামড়া গন্ডারটা। তিথি এই দুঃখে অনেক রাত অব্ধি কেঁদেছে ফুলের বিছানার উপর বসে বসে।

তারপর লোকটা যখন ঘরে এল তখন সে কান্না থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু লোকটা যে মহাবাদড় সে কথা তিথি তখনই জানতে পারলো যখন আদরটাদর করা শেষে তাকে বললো, ” খবরদার একদম লজ্জা পাওয়ার ভান করবে না। তুমি যে লজ্জাবতী নও সেটা আমি ভালো করেই জানি। ”

তিথি বলল, ” আমার আজ ঘুম পাচ্ছে খুব। ”

লোকটা যেন শুনলো না। তিথির অবশ্য একটা অপরিচিত লোকের চুমু খেতে মন্দ লাগেনি। আরও পেতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু দামড়া ব্যাটা মাঝপথে তাকে ছেড়ে দিয়ে ভসভস ভসভস করে ঘুমাতে লাগলো।

ভোররাতে তাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে গোসল করালো। ঘুম থেকে ডেকে তোলায় তিথি তখন মহাবিরক্ত। লোকটার গায়ে আঙুলের গুঁতো মেরে যখন বলল, ” আমি এত সকালে ঘুম থেকে উঠিনা।”
লোকটা আচমকা এমন রেগে গেল। ছিটকে দূরে সরে বলল, ” তোমার এত সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়ার? তুমি বেকুব সেটা জানতাম। এতটুকু ম্যানার্স জানো না সেটা তো জানতাম না। ফারদার এমন গায়ে হাত দিয়ে কথা বললে সোজা বাড়ি থেকে বের করে দেব। ”

তিথি স্তব্ধ। লোকটার হুমকিধামকি খেয়ে যখন সে কাঁদছিলো। শ্বাশুড়ি এসে বলল, ” আরেহ কাঁদিস না। একটু মানিয়ে নে। দেখবি তোকে অনেক ভালোবাসবে। আর গায়ে হাত দিয়ে কথা বলিস না। নিজে নিজে আগ বাড়িয়ে কাছে যাস না বুঝলি। ওর মতো করে চল। ”

তিথি তখন কথাগুলো চুপটি করে শুনলেও মনে মনে ঠিক করলো, ” কচু কচু। আমি কেন তার মনের মতো করে চলবো? আমার কিসের দায় পড়েছে? আমি কি অশিক্ষিত বকরি নাকি? আমি হলাম এন্ট্রান্স পাস মেয়ে। আমি গায়ে হাত দিতে না পারলে আমার গায়েও হাত দিতে আসুক। ”

আর ঝামেলাটা লাগলো সেখানে। শাড়ির আঁচলটা ঠিকঠাক করে দেয়ার বাহানায় তিথিকে ছুঁতে আসলে তিথি একলাফে দূরে সরে গিয়ে বলল,

” নারীপুরুষ সমান অধিকার। বুঝলে? পারমিশন নিয়ে তবেই গায়ে হাত দেবে। ”

লোকটা এমনভাবে গলা ফাটিয়ে ” অ্যাই চুপ ” বললো যেন সে সিনেমার ফাটাকেষ্ঠ! আর তিথি হচ্ছে রানুমন্ডল।

চলমান…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here